টমাস ট্রান্সট্রোমার (১৯৩১ – ২০১৫)
::অনুবাদ- সোনালী চক্রবর্তী
টমাস গোস্তা ট্রান্সট্রোমার ২০১১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। তিনি ছিলেন একজন সুইডিশ কবি, মনস্তত্ত্ববিদ এবং অনুবাদক। তাঁর কবিতায় জাপানি ঐতিহ্যের অবদান বিরাট। কাব্যিক চিত্রকল্পে তিনি ছিলেন একাকিত্বের রাজপুত্র। কবিতায় সম্পূর্ণ নিজস্ব ঘরাণার এক আবেদন তাঁকে তাঁর সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হিসাবে বিশ্বসাহিত্যে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ছান্দ্যোগ্য
এক অদৃশ্য মর্মান্তিক ডানার মতো
জৈষ্ঠ্যের অরণ্য আজীবন আমায় তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়।
তার গান গাওয়া পাখির ঝাঁক,
নিস্তব্ধ পুকুরে উন্মাদের মতো নেচে নেচে
অজস্র জিজ্ঞাসা চিন্হের জন্ম দিতে থাকা মশার শূককীট,
সব কিছুই।
আমি পরিত্রাণ খুঁজে ফিরি
একই গন্তব্যে, একই শব্দের কাছে বারবার।
যখন সূর্য তীব্র হয়ে ওঠে,
বরফ ড্রাগনের ঠান্ডা জিভ দিয়ে
সমুদ্র বাতাস আমার ঘাড়ের পিছন দিকটা চাটে,
আর উড়তে থাকা ডানাটা শীতল রোষে ভস্মীভূত হয়ে যায়।
Find here a lot of useful content about gambling and play penny slots for free
একটি মৃত্যুর পর
কোন এক সময় পাওয়া একটা আঘাত,
ধিকধিক করতে থাকা ধূমকেতুর লেজের পিছনে পড়ে ছিল।
সে-ই চালিয়ে যাচ্ছিল যাবতীয় অন্তর্গত খেলা।
দূরদর্শনের ছবিগুলোকে বরফে মুড়ে দিয়ে,
হিমের দানা হয়ে দূরভাষের তারের উপর সেটাই জমে গেলো অনায়াসে।
ঝোপের ভিতর দিয়ে দিয়ে এখনো শীতের সূর্যের নিচে স্কি করা যেতেই পারে,
পুরনো টেলিফোন ডিরেক্টরি থেকে ছিঁড়ে নেওয়া পৃষ্ঠার মত অবিকল দেখতে কিছু পাতা যেখানে ঝুলে আছে,
শুধু সেখানে লেখা নামগুলোকে শীত গিলে খেয়েছে।
এখনো তো হৃৎস্পন্দনের শব্দ শুনতে সুন্দর লাগছে ভীষণ,
কিন্তু শরীরের সাপেক্ষে তার ছায়াকেই অধিক বাস্তব ঠেকছে।
আসলে যত বড় যোদ্ধাই হোক,
কৃষ্ণকায় ড্রাগনের আঁশের সমতুল
সমরাস্ত্রের পাশে দাঁড়ালে,
তাকেও তো তুচ্ছই লাগে।
সাংহাইয়ের রাস্তা
১।
বাগানের সাদা প্রজাপতিটাকে বহু লোক পড়ে ফেলছে,
আর ফড়ফড় করে উড়তে থাকা সত্যির একটা কোনা ভেবে আমি ভালোবাসছি বাঁধাকপির পোকা।
ভোর থেকে দৌড়তে শুরু করা ভিড়টা আমাদের শান্ত শিষ্ট গ্রহটাকে গতিময়তা দেয়,
তারপরেই পার্কগুলো সব ভরে ওঠে।
প্রতিটি মুখের জন্য উজ্জ্বল পালিশ করা আটটা পাথুরে মাথা আছে,
যাতে কোনও পরিস্থিতিতেই কেউ ভুল না করে বসে।
আরও আছে একটা করে প্রতিবিম্ব, যেখান থেকে প্রতিফলিত হয়,
‘সব বিষয়ে মুখ খোলা অনুমিত নয়’।
তবুও তো কিছু ঘটনা ঘটেই যায় শ্রান্ত কোন মুহুর্তে আর তাদের পরিণতি হয়,
বিষধর গোখরোর চোয়ালে,
আঁশময় দীর্ঘ স্বাদহীনতায়।
পুকুরে পোনার ঝাঁক সতত সঞ্চরণশীল,
ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও সাঁতার কাটে,
সর্বদাই ক্রিয়াশীল থেকে বিশ্বস্ততার নজির স্থাপন করা উচিত বৈকি।
২|
এখন মধ্যাহ্ন।
সাইকেলে চেপে যারা দুর্বোধ্য স্কুলগুলোতে এসে পৌঁছিয়েছে,
সমুদ্র বাতাস তাদের ধোপ দুরস্ত পোশাকে ঝাপটাচ্ছে।
দুটোই বিভ্রান্তিকর,
লখ্য করতে ভুলো না।
গতের চরিত্ররা আমায় ঘিরে রয়েছে যাদের অনুবাদ আমায় দিয়ে সম্ভব না,
একেবারেই নিরক্ষর আমি,
গন্ডমূর্খ যাকে বলে।
কিন্তু যা কিছু ধার কর্জ ছিল সবই শোধ করতে হয়েছে কড়ায় গণ্ডায়,
রসিদও আছে তার যথাযথ।
আমি সঞ্চয় করেছি শুধুই অপাঠ্য রসিদের বিরাট একটা স্তূপ।
এমন একটা বৃদ্ধ বৃক্ষ এখন আমি যেখানে বিবর্ণ পাতারা মাটিতে ঝরে না গিয়ে ঝুলে আছে,
সমুদ্র থেকে দমকা বাতাস এসে সমস্ত হিসেব যার এলোমেলো করে দেয়।
৩|
ভোরবেলা, দলবল যত পায়ে মাড়িয়ে আমাদের নীরব গ্রহটাকে ছুটতে বলে।
আমরা সবাই রাস্তার জাহাজে চেপে বসে ফেরি বোটের মত ঠাসাঠাসি হয়ে যাই।
আমাদের গন্তব্য কী?
সেখানে যথেষ্ট সংখ্যায় চায়ের কাপও কি আছে?
তবে কি এতেই যথেষ্ট সৌভাগ্যবান বিবেচনা করা উচিত নিজেদের যে আমরা জাহাজটার উপরে,
আর এখনো দমবন্ধ হতে হাজার বছর বাকি?
এখানে প্রত্যেকের মাথার উপর যে ছায়াটা হাওয়ায় ঝুলতে ঝুলতে হেঁটে বেড়ায় তা একটা ক্রুশ কাঠ,
সে প্রত্যেকের নাগাল পেতে চায়,
কখনো আমাদের অতিক্রম করে যায়,
কখনো সঙ্গে এসে দলও বাঁধে।
পিছন থেকে উঁকিঝুঁকি মারে,
দু হাত দিয়ে মাঝে সাঝে চোখ চেপে ধরে কানে কানে ফিসফিসিয়ে জানতে চায়,
‘বলো তো আমি কে?’
আমাদের সবাইকে কতই না সুখী দেখায় প্রশস্ত সূর্যালোকে অথচ সেই সময়েই রক্তপাত হতে হতে আমরা মৃত্যুমুখে ঢলে পড়ি এমন এক ক্ষত থেকে যার উৎস অজানাই থেকে যায়…