চার্লস বুকোস্কির কবিতা <br />  অনুবাদ  দীপ শেখর চক্রবর্তী

চার্লস বুকোস্কির কবিতা
অনুবাদ দীপ শেখর চক্রবর্তী

মুখবন্ধ
………………………………………………
আমরা আমেরিকান কবিতার দ্বারা উদ্বেলিত হয়েছি। কবিদের নিয়েও কি হইনি? এর মধ্যে এক আশ্চর্য বিস্ময় হেনরি চার্লস বুকোস্কি। জার্মানিতে জন্মে আমেরিকায় চলে এসেছিলেন দু’বছর বয়সে। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্প লেখক। তবে তার কবিতাই প্রথম আমাদের উন্মাদ করে তুলেছিল। আমেরিকান শহর, সমাজ, সুরা, সুন্দরী ও যৌনতার আশ্চর্য প্রকাশ তার কবিতায় দেখা যায়। আমেরিকা দেশটি বারবার আমাদের আশ্চর্য করে বটে। হুইটম্যান থেকে শুরু করে সিলভিয়া প্লাথ। এলিয়ট থেকে শুরু করে গিন্সবারগ। কবিতায় বারবার বিপ্লব এনে দিয়েছে আমেরিকা দেশটি। আপাতত বুকোস্কিকে বাংলায় অনুবাদ করে ফেলার পালা। বুকোস্কিকে অনুবাদ করতে গেলে তার অন্তঃস্থলকে অনুভব করতে পারা আমার জরুরি মনে হয়েছে। বিশেষত, মুখের কথাকে যেভাবে কবিতায় প্রয়োগ করেছেন বুকোস্কি। তার চরিত্রের বেপরোয়া ভাবটি না তুলে আনলে অনুবাদের কিছুই হয় না। এ ক্ষেত্রে আমি পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়েছি। পাঠক, আশা করি, আমার এই বিশেষ প্রয়োগটির মাহাত্ম্য বুঝবেন। আমার দীর্ঘদিন বুকোস্কি চর্চার ফলে যেভাবে তাকে চিনেছি তার কিছু কিছু এখানে অনুবাদক হিসেবে প্রয়োগ করলাম। অনুবাদ করা কবিতাগুলো হল যথাক্রমে –
So now
Alone with everybody
The laughing heart
Blue bird
The genius in the crowd


এখন, অতয়েব

শব্দগুলো এসেছিল
চলে গেছে
আমি বসে আছি, বিষণ্ণ, ব্যধিগ্রস্ত
ফোন বেজে চলেছে, বেড়ালটি নিশ্চিন্ত ঘুমে
লিন্ডার হাতে শূন্য হয়ে উঠছে সব
আমার অপেক্ষা শুধু জীবনের নয়
মৃত্যুরও
ভেতরে ভেতরে কিছু বাহাদুরিকে ডেকে আনতে
ইচ্ছে হয়
কিন্তু তা একান্তই ছেলেখেলা হবে
পড়ন্ত বিকেলের রোদে বাইরের গাছগুলোকে দেখি
হাওয়ায় অল্প অল্প দুলছে
তারা কেউই আমার কথা জানে না
এখানে কিছুই বলার নেই আমার
শুধু অপেক্ষাটুকু ছাড়া
সকলেই সকলের মুখোমুখি দাঁড়ায় একা
আশ্চর্য একদিন কতখানি তরুণ ছিলাম
আমি, এই আমি ছিলাম আশ্চর্য সুন্দর সেই তরুণটি।


সকলের সাথে একা

হাড়ের নগ্নতাকে ঢেকে রাখে মাংস
মাঝে মাঝে কেউ তার ভেতর দয়া করে
একটু চিন্তা রাখে
কখনও বা সামান্য অনুভব
রমণীরা দেওয়ালে আছড়ে ভেঙে ফেলছে সুদৃশ্য ফুলদানিগুলোকে
পুরুষেরা পান করার মাত্রা ছাড়িয়ে ফেলছে
কেউই এখানে কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না
তাদের হাতের মুঠোয় উঠে আসছে বিছানার চাদরের শূন্যতা
হাড়ের নগ্নতাকে ঢেকে রাখা ছাড়াও
মাংস খুঁজে পেতে চায় সামান্য স্পর্শ
অথচ কোথাও সুযোগ নেই এই পৃথিবীর বুকে
ভাগ্যের পরিহাস আমাদের বন্দী করে রেখেছে
তাকে খুঁজে পায় না কেউ
যাকে খুঁজে পাওয়া প্রয়োজন ছিল
ভাগাড়গুলো ভরে উঠছে
আবর্জনায় ভরে উঠছে পৃথিবী
পাগলা গারদগুলোতে আর লোক ধরছে না
হাসপাতালের বেড সব ভর্তি
কবর দেওয়ার জন্য আর মাটিও অবশিষ্ট নেই কোথাও
সবই ভরে উঠছে
শুধু কিছুতেই ভরছে না
আমি ও আমার এই বিশুদ্ধ আত্মাটি।


একটি হৃদয়ের হাসি

তোমার জীবন আদতে তোমারই
কারুর বাপের সাধ্য নেই তাকে বন্দী করে রাখার
সতর্ক থাকো
সমস্ত পথ কিন্তু এখনও বন্ধ হয়ে যায়নি
আলো জ্বলছে এখনও
ক্ষীণ শরীর তার
তবে অন্ধকারকে তাড়ানোর জন্য সেটুকুই যথেষ্ট
আবারই বলছি, সতর্ক হও
ঈশ্বর সুযোগ দেবেই তোমাকে
সুযোগকে চেনো, গ্রহণ করো দুটি হাত ভরে
কেউই অমর নই আমরা
তবু জীবন মানে ছোট ছোট মৃত্যুকে পরাজিত করতে শেখা
যত তাড়াতাড়ি একথা বুঝবে তুমি, দেখবে
আলোটি উজ্জ্বল হয়ে উঠছে
তোমার জীবন আসলে তোমারই জীবন
যতদিন আছো, তাকে জানো
দেখো, কী আশ্চর্য তুমি
তোমার এই আশ্চর্য আলো দেখে এমনকী ঈশ্বরেরাও খুশি হয়ে উঠছে।


আহত নীলাভ পাখি

এক আহত নীলাভ পাখি আছে আমার বুকের ভেতরে
সে প্রকাশ্যে আসতে চায়
অথচ, অতটাও নরম নই আমি
তাকে শাসাই- খবরদার, কেউ যেন কখনও তোমার কথা জানতে না পারে
এক আহত নীলাভ পাখি
ছটফট করে
আমার বুকের ভেতর থেকে বের হতে চায়
আমি তাকে চুবিয়ে রাখি মদের ভেতর
ধূমপান করে দমবন্ধ করে রাখি
বেশ্যারা, বারটেন্ডাররা, মুদি দোকানের লোকগুলো
তার কথা কিছুই জানে না
পাখিটিকে শাসাই আমি
অহেতুক ঝামেলা কোরো না
কাজগুলো তুমি নষ্ট করতে চাও?
তুমি কি চাও ইউরোপে আমার একটিও বই আর বিক্রি না হোক?
এক আহত নীলাভ পাখি
শুধুই বের হয়ে আসতে চায়
আমি ধূর্ত , মাঝে মাঝে রাতের বেলায় তাকে বের করে আনি
যখন ঘুমিয়ে পড়ে সকলে
তাকে সান্ত্বনা দিই
বলি- জানি তুমি আছো, তাই আমি আছি
তারপর বুকের খাঁচার ভেতর তাকে ঢুকিয়ে নিই আবারও
ঘুমের ভেতর তাকে অল্প অল্প গান গাইতে শুনি
তাকে পুরোপুরি মেরে ফেলতে চাইনি কখনওই
ঘুমোই, পরস্পরকে বিশ্বাস করে, গভীরতর ঘুম
বিশ্বাস, মাঝে মাঝে মানুষকে কাঁদাতে পারে
অথচ
কান্নার কেউ নই আমি?
তুমি?


ভিড়ের মাঝে অনন্য এক মুখ

মানুষের ভেতর এতটাই
বিশ্বাসঘাতকতা, ঘৃণা ও সন্ত্রাস লুকিয়ে আছে
যে কোনও সেনাবাহিনীকে
যে কোনও সময়
সে ভরিয়ে দিতে পারে
সবথেকে বড় খুনী তারাই যারা এটিকে অস্বীকার করে
সবথেকে ঘৃণ্য তারাই যারা ভালোবাসার বিপক্ষে
যুদ্ধাপরাধীরা সর্বদা শান্তির বিরোধিতা করে চলেছে
যারা সর্বক্ষণ ঈশ্বরের প্রচার করে বেড়ায়
তাদেরই ঈশ্বর প্রয়োজন
যারা শান্তির প্রচার করে তাদের মনে সামান্য শান্তিটুকুও নেই
এমনকী উধাও ভালোবাসাটুকুও
বাতেলবাজদের থেকে তাই সাবধান
সবজান্তাদের থেকে তাই দূরে থাকাই ভালো
সারাক্ষণ বইয়ে মুখ গুঁজে রাখা লোকগুলোকে এড়িয়ে চলো
নিজেদের দারিদ্র্য নিয়ে প্যানপ্যান অথবা গর্ব করা লোকগুলোকে ভাগিয়ে দাও
যারা এমনি এমনি প্রশংসা করে তারা বদলে প্রশংসাই চায়
নিন্দুকেরা তীব্র ভয় পায় অজানাকে
আর যারা সবজায়গায় একটা ভিড় নিয়ে চলে তারা বড় বেশি দুর্বল, একা
মধ্যমেধাদের থেকে দূরে থাকো
মধ্যমেধার ভালোবাসা থেকে দূরে রাখো নিজেকে
তাদের ভালোবাসা শুধুই ঘৃণা করতে শেখাবে
এমন ঘৃণা, যা যে কোনও কাউকেই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে
নিঃসঙ্গতা, তাদের জন্য একদম নয়
যা কিছু বুঝতে পারে না সকলই ধবংস করতে চায় এরা
শিল্প বোঝে না
নিজস্ব ব্যর্থতাকে শিল্পের ব্যর্থতা বলে চালিয়ে দিতে চায়
নিজেরা সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসতে না পারলেও
তোমার ভালোবাসার মধ্যে অন্ধ কুয়োটি ঠিক খুঁজে বের করবে
তারপর ঢেলে দেবে অফুরন্ত ঘৃণা
তাদের এই আশ্চর্য ঘৃণা
চকমকে হিরের মতো
ধারালো ছুরির মতো
উচ্চতম পাহাড়ের মতো
ক্ষুধার্ত বাঘের মতো
হেমলক বিষের মতো
ঘৃণাই তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পপ্রতিভা।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (1)
  • comment-avatar
    শীর্ষা 2 years

    এই কবির কবিতা প্রথম পড়লাম। বেশ সাবলীল অনুবাদ। আকৃষ্ট করল।

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes