
অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়-এর কবিতাগুচ্ছ
অমানী
চাপাটি-ঘ্যাঁটের দম্ভ। চা-পাউরুটির দৃপ্ত অহংকার।
দ্যাখো, দেখুন, দ্যাখ্ রে, নানা কিসিমেরই অ্যালকেমি ‘অস্মিতা’…
উপেক্ষা-তাচ্ছিল্য-‘দূর ছেই’—ঝাঁটায় চ’ড়ে পপ্পড়… পগারপার…
‘অহমায়ম’ জ্বালিয়ে দিলুম। চড়চড়িয়ে চড়ন্ত মিটার…
‘আত্মবোধ’ প্রতিষ্ঠার শুরু; ফক্কিকারি ব্যাপারী-ব্যাপার!…
গুরুমুখী-বিদ্যে পুরো… দুরুদুরু… বাবাসকল… হেঁ হেঁ…
ফিস্টিছাড়া-লিস্টিহারা ‘মলিকিউল’… আণবিক ‘ম্যাটার’…
ক্রিয়াশীল প্রতিক্রিয়া নিষ্ক্রিয়া জাগাচ্ছে শবদেহে…
দুর্গন্ধ-বিবমিষায়ও ‘গ্রিপে’ থাকবে স্বকীয়-‘কনট্রোল’…
টানটান-মশারি-ঘন… গোঁজা-গোঁজা নিরাপত্তা এঁটেল…
মশকের বিদ্রুপী-খোঁচা… অবজ্ঞা-মাছির খাটদখল…
ঝাঁঝরি-চুঁইয়ে নেমে-যাচ্ছে ডাহা-ফেল… মুখস্থ ‘ক্যানসেল’…
দুপুরে কী খেয়েছিল? একশো-পাঁচ-ডিগ্রি। বমি। বিকার।
“’মাগল’দের তাড়াতে-আসছে হ্যারি-পটারের অহমিকা”
জিহাদ
সিংহলগ্নে জন্মেছিলাম চেয়ারে-বসলে এখনও কেশর…
থাবায় সূচাগ্র-নখর… শ্বদন্তের ফাঁকে লোভী-কুচি…
পেট থেকে খসেনি কোনও ‘রিঙমাস্টারনি’ পরাবে শেকল…
এখনই তাকেও খাব। যাকে খাওয়া আমার অনুচিত।
যখন বেড়ালটি ছিলাম শিকে-ছিঁড়ে পড়েনি মাছভাত।
অরক্ষিত-হেঁশেল-পেলে শুঁকে-শুঁকে চেটেছি যন্ত্রণা…
ভাবতাম আঁচড়ে-আঁচড়ে ত্যাড়াব্যাঁকা করব সুষম-বরাত—
হেগে-রেখে-দেব কাঁথায়… ঘোরাব থোবড়া ঘটনার…
বিড়ালও কবিতা লেখে। সে-লেখা পড়তে পারে চোখ।
অমোঘ-গন্তব্যে গুঁজে-দিতে-চায় অশান্তির শরীর…
তদ্দিনই ল্যালব্যাল-করে যতক্ষণ সে তুলতুলে শাবক…
সাতবারেও বেঁচে যাব—হেঁটে গেলে থেমে যাবে লরি—
বামন ছেড়ে নৃসিংহ হওয়া—কলজে এবং তপস্যারও জোরে—
তারপর ‘স্যুটেড-বুটেড-টাই’—বোঝা যায় না ওপরে-ওপরে…
বাজার
–আপনার কতগুলো হল? আমার তো ছ-ছটা সাম্প্রতিক—
–আমার? আমার লেটেস্টটাও এইমাত্তর পড়ল চার, না, পাঁচে—
–আমারটাও বাড়ত আরও—মার্কেটই যে স্লোডাউন গতিক…
–আজকাল আগে ‘প্রাইস’ দ্যাখে, তারপরে কী কিনবে সেটা বাছে
–আমার কিন্তু ব্যাপক-রেসপন্স, ‘নামে-নামেই’ দিব্যি কেটে-যায়…
–আমারও প্রবলেম কীসের? আমারও আমার নামেই কাটে…
–যা ছাড়ছি ‘ক্যাচ’ করে নিচ্ছে—পাবলিক বোধহয় ‘সংস্করণ’ খায়…
–আমারগুলো তুলে নিলে ‘প্রকাশক’ই উঠে-যেত লাটে…
–গেলবারে ‘তিন’ ছিল না! ‘নোট’ রেখেছি, মনে হচ্ছে তাই—
–আপনারও ‘ছয়ে’ স্পেলিং-মিসটেক—‘সাতে’ শুধরে দেবেন মনে ক’রে—
–‘নোট’ রাখেন আমার কত! তাহলে লিখুন বাড়ছে সবকটাই…
–আমারই কি থেমে থাকবে? কেটে যাবে আর-একটা বছরে—
–দাদা, আপনি চুপ করে যে! আপনার কটা! কীর’ম ‘পোজিশান’!
–আমার… আমার… ‘বই’ নেই কোনও… সাদাপাতা অনন্ত ‘এডিশান’…
রঙ
ছাদের উত্তরকোণে গোঁত্তা-খেয়ে শুয়ে লাল ঘুড়ি
আকাশে সন্ধেও শেষ—ফ্যাকাশে আলোর আয়ুক্ষয়…
মেঘেরও গভীরে ডুবে তারা কিছু… যেন বা ডুবুরি…
এখনই তো চোখ-জ্বেলে গুলজ়ার পড়ার সময়
মাথাফাটা ঘুড়ি—তার ছেঁড়া বুক আঠা-দিয়ে-জোড়া…
অদূরে ঝিমিয়ে-প’ড়ে—আলকাতরার মতো লাল—
ছেলেবেলা পিঠে-নিয়ে ছুটে এল হাওয়ামুখী ঘোড়া…
বর্ণচোরা মণিদুটো কবে যে শুষেছে মহাকাল
এবার ইজাজ়ত দিন। নিশুতি আসার আগে যাই।
বহুপথ যেতে হবে চাদোকান পার-হয়ে বাড়ি—
রেললাইন-বাঁশবন-ঝিলধারে জোনাকি নাচাই…
এখনে মুখোশ নেই। প্রবেশও করেনি কোনও মারী।
জবাফুলের মতো কালো পেটকাটি ঝুলে-আছে ডালে…
ইজাজ়ত দিন, ওকে পেড়ে আনি স্বস্তির-সকালে
অপূর্ব সব কবিতা। অভিনন্দন জানাই।🙏