অমিত সরকারের কবিতাগুচ্ছ

অমিত সরকারের কবিতাগুচ্ছ

 

দ্রৌপদীর শূন্য থালায় খেলা করছে আনন্দভৈরবী   

 

রাত্রি পাশ ফিরছে আর একটু দরজা খোলার দিকে

তন্দ্রা থেকে জেগে উঠে নিজেকেই খাচ্ছে বাক্য ও যতিরা

সাদা ভাত উপুড় হয়ে শুয়ে ঝলসানো খাতার পাতায়

পাশে বাটিভর্তি সাজানো সমস্ত যৌথ দোষ ও ভ্রূকুটি

আমিও সাজিয়ে রাখছি অপয়া বৃষ্টি ও মেঘেদের আশ্বাস

সাজাচ্ছি সংকুচিত চোখ, হেরে যাওয়া হাসিদের চুল্লি

অন্ধকারের আগুনে পুড়ে ঝামা আমাদের অন্নবৃত্তান্ত

শুধু দ্রৌপদীর থালা জুড়ে ফুটে উঠছে আনন্দভৈরবী…

 

গোত্রনাম জানি না বলে আমার পুজোতে হান পড়ে গেল

শারীরিক মাঠ জুড়ে কাশফুলের আগুন ছিটিয়ে ছড়িয়ে

অপবিত্র শব্দেরা এই স্পর্শে পবিত্র হয়ে উঠুক

ঝরে পড়ুক দুচোখে জমানো কৃষ্ণা ও কাবেরীর জল

মেহগিনি বুকের বোঁটায় ঘটপুজোর স্বস্তিকা আঁকা

ব্রতকথারা ছড়িয়ে আছে তোমার প্রতিটি যোনিরোমে

এই মুহূর্তে চোখ মেললে দেখবে

লক্ষীসরার সাদা আলপনা উপচে পড়ছে হিরণ্ময় আনন্দ

ঈশ্বরের সন্তান হেঁটে আসছেন ভাতের রানওয়ে ধরে…

 

‘জলেহস্মিন সন্নিধিং কুরু’ মন্ত্রে হুইসেল বেজে উঠল

ক্রসফায়ার পেরিয়ে খোলামাঠ চেয়ে আছে আচমন হয়ে

ফুরোনো আশ্বিন থেকে কুড়িয়ে এনেছি মাতৃভাষাদের

এরপর পাথরের ঠোঁট চুমু খাবে, অঞ্জলিতে কুশ ও শূন্যতা

ধিকি ধিকি আগুন জ্বলছে দমবন্ধ শব্দের ভেতর

জলের ভেতর থেকে আমি খুঁজছি রাস্তাদের বোতাম

শব্দ থেকে গোবিন্দভোগের সুগন্ধ, তিলকাঞ্চনের উচ্চারণ

আগুনের অপেক্ষা করছে সপিণ্ডকরণের নাস্তাপানি…

 

ঈশ্বরকে খেতে খেতে ক্রমাগত বড় হয়ে উঠছি

নামিয়ে রাখা বাজারের ব্যাগ থেকে উপচে পড়ছে জন্নতের নূর

তামাটে জ্যোৎস্নার মাংস রান্না করে সাজিয়ে দিয়েছে বউ

ছেলেমেয়েদের থালা জুড়ে এক উঠোন চাঁদের পিকনিক

টগর বোষ্টমী গান শোনাতে শোনাতে খমকে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে

মহঞ্জোদারোর কালো মেয়েটা নেচেই চলে উত্তর শিয়রে

এইসময়েই রোজ রিকশা চড়ে বেড়াতে আসেন আনন্দভৈরবী

ভাড়াটা অবশ্য আমিই দিয়ে দিই…

 

শাস্তাকে বুকে নিয়ে জপে বসেছেন মহাথের

খানিকটা নশ্বর লেগে আছে ওলটানো দীপের কাজলে

মৈরেয় ও বাটি ভর্তি ময়ূরের হাড় গড়াগড়ি কলঙ্কের ঘরে

অন্ধকার অক্ষরেরা বৈঠা মারছে নাও-এর মগজে

বজ্রযোগিনীর চোখের মনিতে ধুপ, সিঁদুর, ধানশিস ভরা কুলো

সেইজন্মের গোপন আনন্দ আজ আর মনে নেই

শুধু মনে আছে

গর্ভের ছোট্ট জানলা দিয়ে প্রথম এসে পড়েছিল অবগাহনের আলো…

 

‘ওম মনিপদ্মে হুম’ মন্ত্রে পুড়ে যাচ্ছে শরণার্থী আকাঙ্খা

আনন্দের দাঁত চিবিয়ে খাচ্ছে আঁচলের খুঁটে বাঁধা কথোপকথন

যেভাবে ছড়িয়ে আছ তুমি, একদিন ঠিক কফিনের ডালা ভেঙে

উঠে আসবে মাটির বেহালা

‘নদী’ বলে একবাটি মায়া

সেদিন আমার পাতে ঢেলে দিয়ে ছিলে

ভাতের গরম ভাপে ভিজে গিয়েছিল আহত ব্যান্ডেজ

সেইসব তেহাই মনে পড়ছে আজ

আর আনন্দের গরাস জাল পেতে রাখছে থালার উল্লাসে…

 

শুভ অন্নের ভেতরে এত গলিঘুঁজি, আমি রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি

মনে হয় সমস্ত উদ্ধার বাঁধা তোমার হলুদ মোছা আঁচলে

চাবি উঠে আসছে বাক্যের মাংস থেকে, উঠছে যুদ্ধের সাইরেন

অনভ্যস্ত নক্ষত্রেরা বাজারের ব্যাগ নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে

রান্নাঘরের আগুনতাতে আনন্দের বউয়ের মুখ লাল

নিজেকে শূন্যে লুকিয়ে তার কাছে গচ্ছিত রাখলাম তালা

যদি ভবিষ্যতে কেউ খুঁজে পায় দ্রৌপদীর থালার ডাকনাম…

 

মায়ের পেটের ভেতর কোন কাঁটাতার ছিল না, মেঘ ছিল না

তোমারও মনে নেই আমার সেই শবরজন্মের ফুলপাতা

গর্ভজলে ডুবে গেছে মায়ানৌকা, নাড়িকে কেটেছে কালসাপ

প্রাচীন আয়নার মধ্যে হেঁটে যাচ্ছে ফায়ারিং স্কোয়াড

এসব নিজস্ব বিষ একদিন আমি নিজেই ঝেড়েছি ওঝা হয়ে

সন্ন্যাস নামিয়ে রেখে জন্মের দোহাই তুলেছি শস্যের আলোয়

বিষণ্ণ রাস্তারা হাঁটতে হাঁটতে ঢুকে গেছে উষ্ণ অন্নের থালায়

আনন্দ জানে, মৃত্যু এখন তার পোশাক খুলে রেখেছে ঘড়ির ওপরে…

 

যে চাঁদ সেদ্ধ হয় কাঠের আগুনে, তার স্বাদে তীব্র ম্যানগ্রোভ

গাছেদের ডানা ছেঁটে দিলে ঢেউ ওঠে দ্রৌপদীর আঁচলে

সুতোয় ছুঁচ পরাতে পরাতে ক্রমশ মেধাবী হয়ে উঠছি আমরা

এক হাতা সহবাস আর গেলাস ভর্তি নক্ষত্রদের জন্য

এইসব রাতে আমার পূর্বপুরুষেরা নেমে আসেন ভাতের থালায়

এক এক করে আমি তাঁদের হাতে তুলে দিই জমানো পাথর

আনন্দ পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে…

 

১০

ভাতের থালার থেকে আর ওইভাবে উঁকি মেরো না গো

আমার রাক্ষসজন্মের কথা মনে পড়ে যায়

মনে পড়ে রাধিকাবোধনের সুইচ অন, সুইচ অফ

ডোরাকাটা দাঁতের দিকে চেয়ে আছে আইবুড়ো জীবন

বেঁচে থাকার মর্মরে মিশে আছে যে সব অক্ষরের ডালভাত

তাদের সুরে গলে গলে পড়ছে ইতর ভৈরবী

আজকাল তোমার স্তনে অ্যান্টিবায়োটিকের রাগী স্বাদ

পাথরের পোষাকেরা শাসাচ্ছে আঙুল উঁচিয়ে

হেঁশেলে ঘনিয়ে উঠছে পোড়া ছত্রাকের মেঘ

খিদের হলুদ চোখ, এত ক্রুর, এ জীবন কক্ষনো দ্যাখেনি…

 

১১

রান্নাঘরের ঘ্রাণ থেকে খুঁজে পাই নৌকাদের এলোমেলো গল্প

দ্রৌপদীর বঁটি ও শিলনোড়ায় লেখা আমার জিনম্যাপ

সেইজন্যেই কি আমাদের অন্তরা আর আভোগ ক্রমশ মিশে যাচ্ছে

ষ্টেশনের কারশেড থেকে ছুটে পালাচ্ছে পরিত্যক্ত ইঞ্জিন

শেষবার যে উপত্যকায় জন্মেছিলাম তার মা কখনো সমুদ্র দ্যাখেনি

সেখানে শস্যবীজের ভূমিকায় লেখা থাকত অন্ধদের ডাকনাম

তুমি বহু যত্নে ম্যারিনেট করেছো সেইসব মিথ ও পুরাণ

কুচি কুচি করে কুটেছ প্রসবচিহ্ন, গর্ভফুলের গার্নিশিং

করিডোর মুছতে মুছতে মুছে ফেলেছো আশরীর নক্ষত্রধোয়া জল

 

ভাতের থালায় আনন্দকে আজ কীভাবে খুঁজে পাবে…

 

১২

প্রাকৃত শস্যের ক্ষেতে ফুটে আছে অক্ষরের মায়া

তৃতীয় নয়নে তাকে দেখছে চৌষট্টি আশমান

ঋতুমতী নৌকাদের যোনি থেকে ওঠা গরম ভাপ এড়িয়ে

খেলে বেড়াচ্ছে ম্যাজিক মাশরুমেরা

আনন্দের কফিরঙ সাইকেল এইমাত্র পেরিয়ে গেল মিথ্যে শহর

আমাদের ডানা ছিঁড়ে কারা যেন সেখানে

সেলাই করে দিয়েছিল গোপন ডাইনিদের হাত

সসপ্যানে সেদ্ধ করা মন্ত্রদের বেড়ে দিয়েছিল পাতে পাতে

সেইসব বিষণ্ণ স্প্লিনটার এজন্মেও অবলীলায় হজম করেছি

এরপর মহাপয়ারের ঘ্রাণে

কাল ভোরবেলা আবার জেগে উঠব আগামীজন্মের আকাশে…

 

১৩

রোদ্দুরের ডানা বেয়ে চুঁইয়ে পড়ে যে অন্ধকার

মাঝে মাঝে তার পাশে বসি

পাঁচভাতারি দ্রৌপদী নদী আমার কপালে বুলোয় ঠাণ্ডা আঙুল

তার অসমাপ্ত চাউনি জুড়ে ফুটে ওঠে জ্বরের জলপটি

আমার খুব বমি পায়, থার্মোমিটার পায়, মনকেমন পায়

দেখি সর্বজয়া শূন্যতা বেড়ে দিচ্ছে হরিহরের ভাতের থালায়

বলির বাজনার তালে তালে

দুর্গার শব কাঁধে হেঁটে যাচ্ছে আমার শরীর

নক্ষত্রজলের ঢেউ ভিজিয়ে দেয় কাগজনৌকাদের টেক্সট

দুটি গোধূলির ছায়া পাশাপাশি শুয়ে থাকে গাঢ় অসুখে…

 

১৪

নদী জড়োনো ছেলেদের বুকে আকাশ সাজালে ঢেউ ওঠে খুব

পালকের ধারদেনা মেটাতে মেটাতে

মাতাল মেয়েরাও জলোচ্ছ্বাস হয়ে ভাসিয়ে দেয়

দুমুঠো ভাতের জন্যে দ্রৌপদীর দু’পায়ের ফাঁকে

আমি গুঁজে রাখি মেনস্ট্রিম অক্ষরমালা

আমার আঙুল চেনে পাখিদের পি-এইচ লেভেল

ঘড়ি ও টিশার্টেরা ভিজে ওঠে চিহ্নদের অভিশাপ বৃষ্টিতে

যে সব বাসি কবিতাদের উপুড় করে ফেলে দিই রোজ ভোরবেলা

জিরে ও হলুদে তুমি তাদের সাজিয়ে রাখ বহুমুখী আলপনায়

সেইসব রক্তকোশ ও অপুষ্ট জীবাশ্মরা অপেক্ষা করছে আমার হননের…

 

১৫

যে গানেরা উঠে আসে রাত্রির চিতা থেকে

তারা সবাই জেনো আমার সন্তান

আমিই একদিন তাদের কাঁথা পালটেছি, ঘুম পাড়িয়েছি নদীসুর গেয়ে

আমারই স্তন থেকে তারা চুষে খেয়েছে আর্সেনিক ও সালফার মেশান দুধ

ইস্কুলবাড়ির টানটান ব্যারিকেডে তারা পুঁতে দিয়েছে সমুদ্র সাইরেন

আমিই তাদের হাত ধরে ঘুরিয়েছি ফেরারি বাউলদের মেলায়

দুধারে সমানচিহ্ন, তাদের সমীকরণ আঁকা রয়েছে পেটের দেওয়ালে

সেইসব ফাটা দাগ টনটন করে উঠলে আমি বুঝি আজ তাদের জন্মদিন

ইউটার্ন লুকিয়ে দ্রৌপদী তাদের জন্য আজ সযত্নে পায়েস বানাবে…

 

 

 

১৬

শব্দেরা শীতঘুমে চলে গেল

যতটা কথাপাথর জমানোর কথা ছিল, কিছুই জমানো হল না

হেড টেল খেলতে খেলতে কেটে গেল দ্রৌপদীবয়স

নদীর সঙ্গে ভাবসাব করে নিল অসমাপ্ত নৌকাদের জলপটি

অচানক এই সব স্বপ্নে, তোমাকে আমার পাওয়া ভাতের থালায়

যেখানে ফুটে ওঠে অন্ধ প্রজাপতিদের মৃত্যু আর ঝরানো পাইনপাতা

জ্যোৎস্না আর হরমোন থেরাপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

পাখি ও ডাইনিদের আঁচল থেকে ঝরে পড়া রঙিন চাবিরা

 

এইসব গল্প কুড়োতে কুড়োতে একাই হেঁটে চললাম বেনামী টানেলে

এরপর থেকে আমি না,

দ্রৌপদীর শূন্য থালায় খেলা করবে আনন্দভৈরবী…

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes