পাঁচটি কবিতা সারা কে
অনুবাদ- সব্যসাচী মজুমদার
সারা কে ১৯৮৮ সালের আমেরিকায় জন্ম গ্রহণ করেন। নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা সারার মা একজন জাপানি-আমেরিকান ও বাবা ইহুদী বংশোদ্ভূত। সারা ব্রাউন ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে গ্রিনেল ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি VOICE নামক একটি কবিতা প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা এবং সহ পরিচালক। জাতি সংঘের অনুষ্ঠানেও তিনি কবিতা পড়েছেন। সারা তাঁর কবিতায় কথ্য শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করেন। ফাউন্ডলিং রিভিউ, ড্যামসেল ফ্লাইং প্রেস, ডিকমপের মতো পত্রিকায় লিখেছেন। বি (২০১১), নো ম্যাটার দ্য রেকেজ (২০১৪), দ্য টাইপ (২০১৬), অল আওয়ার ওয়াইল্ড ওয়ান্ডার (২০১৮) তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ। প্যারিস রিভিউতে সারা কবিতা সম্পর্কিত কলাম লিখেছেন ' poetry RX' নামে। দৈনন্দিন জীবনের মুহূর্ত গুলিকে সারা দার্শনিক ভাবনায় উদ্বুদ্ধ করেন। তাঁর কবিতায় কোলাহলের বাইরের একটি ধ্বনি অনুরণিত হয়, যার গমন আছে আছে নিভৃতিও। একইসঙ্গে কবিতাগুলিতে টের পাওয়া যায় সামাজিক বিগত বিন্যাসের কোনও কোনও দার্শনিক মূল্যবোধের কাছে ফেরার আততি। সারার কবিতা সন্ধানী। এমন একটি অবস্থানকে সারা খুঁজে পেতে চান, যেখানে মানুষ, তথ্য বিহ্বল মানুষ, কিছুটা স্বস্থ হতে পারে। লিরিক প্রবণতা সারার কবিতাকে আরও স্বচ্ছ করে তুলেছে বলেই অনুভূত হয়।
যখন প্রেম আসে…
প্রেম, কিন্তু, যাকে আশা করেছিলে, সে নয়;
যাকে ভাবতে পেরেছিলে, সেও কিন্তু প্রেম নয়
হতে পারে নিউ ইয়র্কের প্রেম এর মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে
হয়তো ক্যালিফোর্নিয়ায় বা অস্ট্রেলিয়ায় সে উন্মীলিত, জেগে আছে
হতে প্রেম সবসময় ভুল সময়বৃত্তে ঘোরে
হতে পারে প্রেম প্রস্তুত নয় তোমার জন্য
তুমিও প্রস্তুত ছিলে না কখনও
হতে পারে ঠিক বিবাহোন্মুখ নয় প্রেম
হতে পারে বিচ্ছেদের কুড়ি বছর পরেও
প্রেম ঠিক তোমারই আছে
ঠিক যতটা স্মরণকালীন…
হয়তো ভালবাসা এক মাস টিঁকেছিল
অথচ প্রেম ছিল প্রতিটি স্ফুলিঙ্গে, জন্মদিনের উৎসবে,
হাসপাতালের পথে প্রতিটি যাওয়া ও আসায়
হয়তো প্রেম রয়ে যায়, কিংবা প্রেমের থাকার সাধ্য নেই
হয়তো প্রেম ঠিক তেমন, যেমনটি হওয়ার ছিল না
এবং প্রেম থাকে না সেখানে,
যেখানে তার থাকার কথা ছিল ।
এবং যখন প্রেম আসে, বলে, ‘ স্বাগত, নিজের মতো মানিয়ে নাও।’
যদি, প্রেম চলে যায়,
তাকে দরজাটি খোলা রেখে যেতে বোল
আর গান বন্ধ করে
শান্ত, নির্জন সেই গুঞ্জন শুনে নিও,
‘অবসরের জন্য ধন্যবাদ…’
ধরন
তোমার যদি নারীরই হৃদয়,
অযথা সময় নষ্ট কোর না
পুরুষ আঘাত করবেই
যদি সে তোমার সঙ্গে থাকে
তার কর্কশ রবের সচকিত মনে,
তুমিও তবে রবটি শিখে যাবে…
সমুদ্রকে ভালবাসা থামান কঠিন
এমন কি সে যখন তোমাকে
বিধ্বস্ত, লবণাক্ত রেখে চলে যাবে, তখনও…
সুতরাং যা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছ, তার জন্য
নিজেকে ক্ষমা করে দিও
কেবল আর একবার মাত্র তুমি আর ভুল করতে পার—
যখন সেগুলিকে নিজের ভেতরে ঢুকিয়ে নাও
রাতের বেলায়…
এবং জেনে নাও,
সে জানে যে, তুমি সেরকম মেয়ে
যে একটা অবস্থান খুঁজছে যেখানে তোমাকে ডাকা যায়
সমস্ত অবস্থা ভেঙে যাক
তুমিই সবসময় একটা জায়গা হয়ে থেক
তুমি এমন একজন মেয়ে। নিজেকে গড়ে তুলতে পার
তোমার জন্মই তো গড়ে তোলার…
এখানেই রয়েছি
যা আছে ওদের, সবই দিতে পারে
তবে, যতক্ষণ রয়েছি
তবু কিছুতেই ওরা আমাদের নষ্ট করতে পারবে না
আমি এই জুতোগুলোকে ক্ষয়ে না যাওয়া পর্যন্ত
ব্যবহার করেছি
অর্ধেক পৃথিবী ঘুরে আবার
ফিরে এসেছি
অনেকটা রাস্তা, শীত রাত…
আমি নিজের হয়েই বেরিয়েছিলাম
তোমার মুখটা হল ঘরের আলোর মতন
জ্বলে উঠতে দেখে বুঝলাম, ফিরে এসেছি …
এখনও রয়েছি… এখনও রয়েছি…
ভারা
শিখেছি, যা ঘটে না , তাই অদৃশ্য হতে পারে
একবার যদি তারা ঘটে যায়,
তবে, সবসময়ের জন্য ঘটে যায়…
তুমি তাদের ত্যাগ করতে পার, ভুলতে পার,
তবুও, তারা, কোথাও না কোথাও রয়ে যায়…
ফলত, তুমি, যতই তাদের পেছনে ফেল না কেন,
তোমার জন্য অপেক্ষা করে যাবেই ।
এই বাড়িতে আমি বড় হয়েছি, কিন্তু, এটা আমার বাড়ি নয়।
এবং কোনও রকম ভারার সাহায্য ছাড়াই
দেওয়াল গুলো দাঁড়িয়ে থাকতে খুব কষ্ট করছে
ব্যক্তিগত
এমন কোনও গোপনতা নেই ওকে যা বলিনি।
এমন কোনও সময় নেই ওর সঙ্গে ভাগ করিনি
আমরা বেড়ে উঠিনি,অথবা বেড়ে উঠেছি
আইভির ঘন আবরণে একদম ইয়িন আর ইয়াঙের ছাঁচে।
আমরা চুমু খেয়েছি, ওর প্রশ্বাস আমার নিঃশ্বাসে মিশে গেছে …
আমরা অনায়াসে জলের নীচে অথবা মহাশূন্যে
কাটাতেই পারি কেবল নিঃশ্বাস বিনিময় করে !
আমরা বলেছি, প্রেম দা-আ-আ-ও…
আমি কখনও ওর কাছ থেকে শরীর গোপন করিনি
আমার যদি ক্ষমতা থাকত, বাকি যা আছে
সব…সব দিয়ে দিতাম ওকে
আমি জানতাম না
নিজের জন্যেও কিছুটা অবশিষ্ট রাখা যায়…
খুব সুন্দর অনুবাদ হয়েছে।
আপনি পড়লেন, খুব আনন্দ পেলাম দিদি