সুবর্ণরেখার তীরে <br /> অন্তিম পর্ব <br /> ছন্দা বিশ্বাস

সুবর্ণরেখার তীরে
অন্তিম পর্ব
ছন্দা বিশ্বাস

অষ্টাদশ পর্ব


পঁচিশ

কাপালিকের মন্দিরে

দেবী রংকিণীর থানে যেতে হলে কাপালিকের মন্দির পার হয়ে তবে যেতে হয়।

এদিকে গভীর বন। মহুয়া, পলাশ, নিম, ঘোড়া নিম, তুঁত, বাবলা আর শাল গাছের ঘন জঙ্গল। এ বছর প্রবল বৃষ্টির কারণে জঙ্গল আরো ঘন হয়েছে। গাছের গায়ে আগাছা পরগাছাদের বাড়বাড়ন্ত। দিনের বেলায় সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারে না এমনি গহীন অরণ্য। দিনের বেলাতে সে পথে চলতে গেলে গা ছম ছম করে। এই বুঝি হিংস্র শ্বাপদের মুখে পড়তে হয়। তাছাড়া নানা প্রজাতির ভয়ানক বিষাক্ত সাপের আস্তানা ই জঙ্গল। কয়েক মাইল যাওয়ার পরে শুরু হল শাল- সেগুনের মেহগনির জঙ্গল। নিচেয় লতাগুল্মের আধিক্য হেতু জঙ্গলের ভিতরে কেউ থাকলে সেটা দৃষ্টিগোচর সম্ভব নয়। এ পথে এক কালে দস্যুদের আবাসভূমি ছিল। জগৎদেব কঠিন হাতে সেই সকল দস্যুদের দমন করেছেন।

সুবর্ণারেখার তীর বরাবর চলে গেছে যে সরু পায়ে চলা পথ সেই পথরেখা ধরে ছুটছে অশ্ব। অত্যন্ত বুদ্ধিমান এই অশ্ব। সে যেন চালকের মনের অন্ধিসন্ধি সব বুঝে ফেলেছে।

কাপালিকের মন্দির থেকে মৃদু আলোক রেখা দেখে মেঘমালা বলল, একটু আস্তে করো।

অশ্ব কী বুঝল কে জানে লাগাম টানার আগেই সে আস্তে আস্তে গতি মন্থর করে পথ পার্শ্বে দাঁড়িয়ে পড়ল।

মেঘমালা বলল, চুপটি করে অপেক্ষা করো, আমি আসছি।

– কোথায় যাবে?

যুবকের গলায় বিস্ময়।

– কাপালিকের মন্দিরে।

– কাপালিকের মন্দিরে!

আতংকিত গলায় জানতে চাইল, কী আছে সেখানে?

– দরকার আছে। এখন উত্তর দেওয়ার সময় নেই। পরে জানতে পারবে। আমি না আসা পর্যন্ত কোথাও যেও না কিন্তু।

আর কিছু না বলে মেঘমালা গায়ের উড়নিটা জড়িয়ে অন্ধকারের ভিতর দিয়ে এগিয়ে চলল।

নিরেট অন্ধকারের সঙ্গে সে মিশে গেল মুহূর্তের ভিতরে।

অন্ধকারের ভিতরে দাঁড়িয়ে যুবক আকাশ পাতাল কত কী যে চিন্তা করতে লাগল।

বহুকালের পুরানো পাথরের এক ভগ্ন মন্দির। জায়গায় জায়গায় ভেঙ্গে গেছে। সেই ভগ্ন জায়গা এবং দেওয়াল ফুড়ে বট- অশ্বত্থেরা মাথা তুলেছে। মন্দিরের ছাদেও ঘন আগাছায় পূর্ণ।

এটাই কাপালিকের মন্দির নামে পরিচিত। ভয়ংকর নর পিশাচ নামে কুখ্যাতি আছে এই কাপালিকের। অত শিশু যে তার খড়্গের কোপে বলি প্রদত্ত হয়েছে তার ঠিক নেই। দূর গ্রাম থেকে লুকিয়ে বাচ্চাদের ধরে নিয়ে এসে বলি দেয়। কেউ কেউ বলে সে নাকি নর রক্ত পান করে।

মন্দিরে কালী মূর্তির পায়ের কাছে যে করোটি আছে সেটি লাল তরলে পূর্ণ। নর রক্ত নাকি অন্য কিছু কেউ সেটা পরখ করার সাহস দেখাই নি।

সকলেই কাপালিককে ভয় করে।

শ্রদ্ধার পরিবর্তে ভয় ও শংকাজড়িত দৃষ্টিতে তাকে দেখে। বাচ্চারা কাপালিকের নাম শুনে মায়ের বুকে সেঁধিয়ে যায়। যুগ যুগ ধরে কত না গল্প কথা শোনা যায় এই কাপালিকের মন্দির ঘিরে। সত্য মিথ্যা মিশিয়ে কিছু কিছু কথা মিথ হয়ে আছে।

যুবক অন্ধকারের ভিতরে তার দৃষ্টি প্রসারিত করতে থাকে। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে অসংখ্য নক্ষত্রমালায় ভরে গেছে। নক্ষত্রের ক্ষীণ আলোতে সে যেন একটু একটু করে অনেক কিছুই দেখতে পাচ্ছে।

মনে নানান বিপদের সম্ভবা উঁকি দিচ্ছে। সে কোথা থেকে কী উদ্দেশ্যে এসেছিল, কী তার কাজ ছিল প্রকৃত উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে সে ভয়ংকর এক বিপাকে জড়িয়ে পড়ল। এখন সামনে তার কী বিপদ অপেক্ষা করে আছে সেটা ভেবেই সে উদবিঘ্ন হয়ে আছে। মেঘমালা তাকে দাঁড় করিয়ে রেখে কোথায় গেল সেটাও পরিষ্কার করে বলে গেল না। মেয়েটিকে বুদ্ধিমতী আর রহস্যময়ী বলে মনে হয়েছে সেই প্রথম দিন থেকে। এতটুকু মেয়ে অথচ কত সূক্ষ্ম বুদ্ধির অধিকারিণী। বরঞ্চ রাজকুমারীকে তুলনামূলকভাবে অপেক্ষাকৃত সরল জীবন সম্পর্কে কম অভিজ্ঞতাসম্পন্না বলে মনে হয়েছে।

সেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। রাজকন্যা জন্ম থেকে প্রাসাদের মুষ্টিমেয় মানুষের ভিতরে বড় হয়েছে। কূট আর ষড়যন্ত্রকারী মানুষ সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা তেমন নেই বললেই চলে। তেমন মানুষের সঙ্গে সে মেলামেশার সুযোগ পায়নি। বরাবর আদর স্নেহে বিত্ত আর বৈভবের ভিতরে মানুষ হয়েছে তাই জীবনের কঠিন সত্য সম্মন্ধে সে তেমন একটা ওয়াকিবহাল নয়। কিন্তু মেঘমালার জীবন দারিদ্র্যলাঞ্ছিত। হাজার মানুষ দেখেছে সে এই জীবনে। বিভিন্ন চরিত্রের বিভিন্ন পেশার। জীবনের পাঠ থেকে সে অনেক কিছু শিখেছে। তাই সে অল্প বয়েসেই কঠিন সত্যকে খুব সহজ ভাবে স্বীকার করতে পেরেছে।

যুবক ভাবছিল মেঘমালা সাহসের কথা। দেবীকে নর রক্ত না দিলে দেবী সন্তুষ্ট হন না। আর সন্তুষ্ট না হলে তিনি বর দেবেন কেন?

যুবক জেনেছে দেবীর পায়ের কাছে রাখা আছে তরল পূর্ণ করোটি। সেই করোটীর লাল তরল নাকি সেই সব বলির শিশুদের রক্ত। দূর গ্রাম থেকে ধরে আনা শিশুদের কাপালিক এইভাবে বলি দেয়?

সত্যি কি দেবী বলি চান? যিনিই জীব সৃষ্টি করেছেন তিনিই কি তাঁর সৃষ্টিকে নিজের হাতে হত্যা করতে পারেন?

দুরুদুরু বুকে যুবক অপেক্ষা করতে লাগল।

মেঘমালার সাহস দেখে সে অবাক হচ্ছে। দিনের বেলায় এই মন্দিরের কাছে আসতে মানুষ ভয় পায় যেখানে সেখানে সে একাই চলে গেল।

এরকম অসমসাহসী মেয়ে সে আর একটিও দেখেনি।

এদিকে যুবককে রেখে সে কাপালিকের মন্দিরে এলো।

ধীর পায়ে মেঘমালা মন্দিরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।

মন্দিরের ভগ্ন কাঠের দরজাটি ভেজান ছিল।

সে নিঃশব্দে কান পাতল।

সামান্য সময় অপেক্ষা করে দেখতে লাগল ভিতরে কেউ আছে কি না।

কিছু সময় দরজার ফুটোতে চোখ রাখল এবং নিশ্চিত হল নাহ, কেউ নেই ভিতরে।

আলতো করে দরজাটা ঠেলা দিতেই সেটা খুলে গেল সামান্য কঁকিয়ে।

কাপালিক সন্ধ্যেবেলায় পূজো দিয়ে প্রদীপ জ্বেলে চলে গেছে। বাতাসে মৃদু কম্পমান হচ্ছে প্রদীপের অগ্নিশিখা। সেই কম্পিত আলোকে দেবীকে ভয়ংকরী দেখাচ্ছে।

অন্ধকার সদৃশ ভয়ংকরী রূপিনী দেবী কালিকা। নরমুন্ড মালিনী, এক হাতে বরাভয় তো অন্য আহতে শয়তানের মুন্ডু ধারণ করে আছেন। আর অন্যহাতে উর্ধ্বে তুলে রেখেছেন ধারালো খড়্গ।

একনজর সেদিকে তাকিয়ে মেঘমালা চোখ নামিয়ে নিল।

এরপরে মেঘমালা মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকে দরজাটা আলতো করে বন্ধ করে দিল।

মন্দিরের গর্ভগৃহে শুধু সে আর দেবীমাতা।

খুব বেশী সময় সে নষ্ট করল না। দেবীর চরণে প্রণাম করে দেবীর কাছ থেকে সাহস, শক্তি, বুদ্ধি আর বিপদে রক্ষা করার প্রার্থণা করল।

তারপরে দেবীর কাছে একটা জিনিস চাইল। যাতে দেবী কূপিতা না হন সেজন্যেও মিনতি জানাল।

এরপরে যে উদ্দেশ্যে এখানে আসা সেই প্রয়োজনীয় জিনিসটিকে ওড়নায় জড়িয়ে ধীর পায়ে বেরিয়ে এলো।

উনবিংশ পর্ব

ছাব্বিশ

রংকিনি দেবীর থানে

সেদিন রংকিণী দেবীর যূপকাষ্ঠে সকলের অজানতে বলি হবে। দেবী বলির রক্ত পান করে তৃপ্ত হবেন।

সারারাত ধরে দেবীর পূজো হবে। আশেপাশে যে সকল আদিবাসী পল্লী আছে সেখানকার আদিবাসী মেয়েরা সকলে একে একে আসতে শুরু করেছে। দেবীর উদ্দেশ্যে যে বলি হয় ছাগ, মহিষ ইত্যাদি বলি দেওয়া হয় সেই বলির রক্তের উপরে তারা নৃত্য করে ঢাকের তালে তালে। বহুযুগ ধরে এই প্রথা চলে আসছে। এই রক্তে পা ভেজালে নাকি তাদের জীবন শুদ্ধিলাভ করে। জীবনে পাপ তাপ, শংকা কিছুই থাকে না। অসূয়া দূর করেন দেবী।

অনেকেই তাই দেবীর কাছে মেষ, পাঁঠা, মহিষ মানত করে থাকেন। যারা খুবই দরিদ্র শ্রেণীর নিদেনপক্ষে তারা পায়রা মানত করে। দেবীর পূজোর দিন সেই সব পায়ারা উড়িয়ে দেওয়া হয়। সারারাত পুরোহিত মন্ত্র পড়েন। সেই গুরুগম্ভীর মন্ত্রধ্বনিতে বনভূমির নিস্তব্ধতা চূর চূর হয়ে খসে পড়ে। জঙ্গলের প্রাণীরা ঢাকের বাদ্যি শুনে জঙ্গল ছেড়ে দূরে পলায়ন করে। শৃগালের পাল ছানাপোণা সহ গর্তে লুকায়।

ঢাকের আওয়াজে চাপা পড়ে যাবে ক্ষীণ আর্তনাদ।

এদিকে কাজল লতা মুরলীকে সেদিন আচ্চাহ্মতো দারু পান করিয়েছে। মদের নেশায় সে এমনি চূর হয়ে আছে যে চোখে সব কেমন কুয়াশাময় দেখছে। তার জিভ জড়িয়ে আসছে, দৃষ্টি ঘোলাটে।

তা ছাড়া আর্তনাদ করার মতো পরিস্থিতিও ছিল না মুরলীর এমনি নেশায় আসক্ত ছিল।

মেঘমালা মুরলীকে দেখে আশ্বতস্ত হল।

যাই হোক সে রাতে মেঘমালা আরো একটি কঠিন কাজ করল।

রাজমাতার নিকট এসে জানাল, রাজকন্যা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। প্রাণ যায় যায় পরিস্থিতি।

কী হয়েছে কন্যার?

রানিমাতা নূতন বস্ত্র পরিধান করেছেন রংকিনী দেবীর পূজোতে যাবেন। স্বর্ণালংকারে নিজেকে সজ্জিত করছিলেন। সেই সময়ে এই সময়ে সেই কঠিন সংবাদ তাঁর কানে গেল। একজন দাসী তাঁকে এই খবরটা দিল। রানিমাতা শশব্যস্ত হয়ে গহনার বাক্স ফেলে ছুটে গেলেন রাজকন্যার শয়ন কক্ষে।

দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখলেন রাজকন্যা চিত্রলেখা বিছানার উপরে লুটিয়ে পড়ে আছে। তার মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বের হচ্ছে। একটা হাত মেঝের দিকে ঝুলে আছে। একেবারে অচৈতন্য অবস্থা।

রানিমাতা আর্তনাদ করে উঠলেন। কে আছো একবার এসো ,-

মহারাজকে খবর দাও, দেখো কী বিপদ ঘটে গেল,-

রানিমাতা ক্রন্দন করে উঠলেন। বিছানার উপর থেকে মেয়ের আলুলায়িত দেহটা কোলের উপরে তুলে মুখের গ্যাঁজলা মুছতে লাগলেন। রাজকন্যাকে জড়িয়ে ধরে দেবী রংকিনীকে ডাকতে লাগলেন করুণ স্বরে, রখা করো মাগো, তুমি যা চাও তাই দেবো, আমার বুকের রক্ত দেবো তোমাকে মা। আমার মেয়েকে তুমি বাঁচাও মা,-

একে একে দাস দাসী সকলে সেই কক্ষে উপস্থিত হলেন। সকলের মুখে একটাই প্রশ্ন, কী এমন হল? কেন হল?

আস্তে আস্তে সত্যিটা প্রকাশ হয়ে পড়ল। এ ওর মুখ চাওয়া চায়ি করতে লাগল, কবে? কখন? কে সে?

সোমদেবের মৃত্যুর খবর শুনে সে বিষ পান করেছে।

রানিমাতা আর্তনাদ করে উঠলেন। অন্দর মহলে কান্নার রোল উঠল। এ কী সর্বনাশ!

রাজকন্যার মুখ দিয়ে গ্যাঁজালা বের হচ্ছে।

এদিকে পূজো তখন মধ্যপথে।

পুরোহিত মন্ত্রপাঠ করছেন। রাজা জগৎদেব এবং পরিবারের আর অনেকেই দেবীর সামনে উপবেশন করে আছেন। নিবিষ্ট চিত্তে দেবীর মন্ত্রোচ্চারণ শুনছেন। দ্বাদশ ঢাকের আওয়াজে জঙ্গলের নির্জনতা খান খান হয়ে যাচ্ছে। আলোক মালায় সেজে উঠেছে মন্দির প্রাঙ্গণ। ঘোর অমানিশায় আলোকোজ্জ্বল মন্দিরটা দেখাচ্ছে যেন এক মায়াপুরী।

এদিকে একজন রক্ষি ছুটে গেছে দেবীর মন্দিরে। দ্রুত অশ্বে চেপে সে শোনামাত্র রওনা দিয়েছে।

দাসদাসী মারফৎ রক্ষীদের কানে পৌঁছে গেল সেই সংবাদ।

তারাই আবার পৌঁছে দিল সেই সংবাদ রংকিনী মাতার মন্দির প্রাঙ্গণে।

মন্ত্রীর, নগরাপালের কানে গেলে তাঁরাই বিচলিত বোধ করলেন। ঘোর অমঙ্গল, নইলে এমন ঘটবে কেন?

হঠাৎ গর্ভগৃহ থেকে নারী কন্ঠ ভেসে এল, ঘোর অমঙ্গল ঘটবে আজ!

নিশ্চিহ্ন হবে বংশ। সব ধবংস হবে। মহা সর্বনাশ। এক্ষুণী গৃহে ফিরে যা।

যা দেখ, কী বিপদ উপস্থিত হয়েছে। আমাকে অমান্য করা!

সকলে শুনতে পেল সেই নারী কন্ঠ!

রাজার কানে গেলে স্বয়ং মহারাজ কূল পুরোহিতকে বলে বেরিয়ে এলেন। এদিকে মন্ত্রোচ্চারণ চলতে লাগল। দুইজন পুরোহিত এদিকটা সামাল দিচ্ছেন।

আসলে রাজা মুরলীকে চেনেন। কূল পুরোহিত সেভাবে কখনো দেখেনি মুরলীকে। দেখলেও মনে রাখার মতো কিছু নয়। তাই যেনতেন প্রকাররেণ মহারাজকে সেই স্থান থেকে সরাতে হবে।

কাজললতা দেবীর পিছনে দাঁড়িয়ে বিকৃত গলায় আদেশ দিলেন, ‘ঘরে ফিরে যা’।

ঠিক তার পরপরেই খবর এলো, রাজকন্যা ঘোরতর অসুস্থ।

দেবী কূপিতা হয়েছেন!

কী হবে উপায়!

মহারাজের গলায় আতংক।

কূল পুরোহিত বললনে, আমি এদিকটা সামালাচ্ছি, আপনি প্রাসাদে ফিরে যান মহারাজ।

সেই মধ্যরাতে রাজা একলা অশ্বে চেপে ফিরে এলেন। জঙ্গলের ভিতর দিয়ে আসার পথে দেখলেন এক নারী তার পথ আটকে দাঁড়াল।

তার পরণে রক্ত চেলী, উড়নি মাথায়, হাতে খড়্গ নিয়ে ঠিক যেন দেবী রংকিনী দেবী।

রাজা চমকে উঠলেন ঘনান্ধকারে এ যে করাল বদনা কালী!

আবারও শুনলেন সেই অমোঘ উচ্চারণ, ভুল করছিস, ভুল!

স্বয়ং মহাকালেশ্বর এসেছেন তোর পুত্রীকে বরণ করে নেবার জন্যে। ছদ্মবেশে সে এ রাজ্যে ঘুরে ঘুরে দেখেছিল সমৃদ্ধি, কেমন প্রজাপালক তুই। আর তাকেই কিনা তুই বলি দিতে চলেছিস?

ছিঃ!

এ কি পাতকের কাজ করছিস?

মহারাজ রক্ষীকে বললেন, রংকিণী মাতার থানে এক্ষুণী ফিরে যাও। গিয়ে বলো, এ বলি বন্ধ হোক। দেবী রুষ্ট হয়েছেন।

মহারাজের সমস্ত শরীর কম্পিত হচ্ছে। তিনি বিস্ময় বিমূঢ় হয়ে বললেন, আমি বুঝতে পারিনি মাতা। এখন উপায়?

উপায় আছে, পরে জানিয়ে দেবো, এখন গৃহে যা-

চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে সেই ভীষণ দর্শনা নারী অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।

মহারাজ প্রাসাদে ফিরে দেখলেন চিত্রলেখা সত্যি সত্যি গুরুতর অসুস্থ। রানিমাতা শিয়রে বসে চোখে জল ফেলছে। দাসীরা কেউ পাখার বাতাস করছে, কেউ বা মাথায় জল ঢালছে।

মহারাজ এলে তারা কিছু সময়ের জন্যে দূরে সরে দাঁড়াল।

ক্ষণে ক্ষণে মূর্চ্ছা যাচ্ছে চিত্রলেখা।

রাজ বৈদ্য জানালেন এ রোগ মানসিক। রাজকন্যাকে সুস্থ করতে গেলে তাকেই দরকার।

তাকে এখন কোথায় পাবো? হায় ঈশ্বর এতক্ষণ সে তো বলি হয়ে গেছে!

মহারাজ শিউরে উঠলেন। রানি কেঁদে ভাসালেন।

মন্ত্রী বললেন, মহারাজ, আমি যাই ছুটে গিয়ে দেখে আসি বলি সম্পূর্ণ হল কিনা।

এদিকে রানি মানত করেছেন বুকের রক্ত দিয়ে রংকিণী মাতাকে সন্তুষ্ট করবেন যদি সে ফিরে আসে।

মন্ত্রী ফিরে এসে ভয়ে ভয়ে বললেন, মহারাজ, যাকে বলি দেওয়ার জন্যে স্নান করানো হচ্ছে দেখলাম সে আগন্তুক নয়।

তাহলে? আগন্তুক কোথায় গেল?

সে তো বলতে পারি না।

এতোসব কথাবার্তার ভিতরে অপূর্ব সেখানে হাজির হয়েছে।

অপূর্ব বলল, তামার খনির ভিতরে একজন পাগলকে সে দেখেছে হুবহু সোমদেবের মতো দেখতে।

তাই?

মহারাজ চমকে উঠলেন।

মহারাজ সে রাতেই একজন গুপ্তচরকে পাঠালেন, সঙ্গে গেল অপূর্ব।

এতোসব কান্ডের ভিতরে রাত প্রায় শেষের দিকে।

সোমদেবকে যখন প্রাসাদে নিয়ে আসা হল তখন পূব আকাশে রঙ্গের প্রলেপ লাগছে। একটু একটু করে উদিত হচ্ছেন দিনমণী।

সোমদেবকে স্নান করিয়ে, নতুন বস্ত্র পরিয়ে মহারাজের মহলে যখন তাকে আনা হল মহারাজ জগৎদেব চোখ ফেরাতে পারলেন না। ইতিপূর্বে তিনি কখনও সোমদেবকে দেখেন নি। শুধু লোক মুখে যা কিছু শুনেছিলেন।

জগৎদেব মাথা নাড়লেন, এ স্বয়ং দেব মহাকালেশ্বর তার সামনে এসে উপস্থিত হয়েছেন। দেবীর লীলা একেই বলে। নইলে যাকে বলি দেওয়ার জন্যে দেবীর সামনে আনা হল সে কী ভাবে পাল্টে গেল?

যে রক্ষীকে সোমের পাহারাদার হিসাবে রাখা হয়েছিল কার্যত দেখা গেল তাকেই যূপকাষ্ঠে বলির জন্যে গৃহে বন্দী করা রাখা হয়েছে।

সেবারে দেবীর পূজায় বলি সম্ভব হল না। কূলপুরোহিত পূজা সমাপন করে ঘরে ফিরে গেলেন।

সাতাশ

জীবনের নতুন অধ্যায় ঃ

রাজকন্যা চিত্রলেখা এখন অনেকটাই সুস্থ। সোমদেবের পরিচয় সবিশেষ জানা গেল।

আদতে সে হল একজন গুজরাটী ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান। দরিদ্র কিন্তু গুণী যুবক। নানা

শাস্ত্রে পারদর্শী। একজন দক্ষ শিল্পী।

সোমদেবের সঙ্গে কথা বলে মহারাজ সন্তুষ্ট হলেন। এমন মার্জিত, রুচিবান আর ধী শক্তি

সম্পন্ন একজনকেই তো তিনি খুঁজছিলেন যার হাতে একমাত্র কন্যাকে সঁপে দেওয়া যায়।

যার হাতে রাজ্যভার তুলে দিয়ে তিনি শান্তিতে দিনাতিপাত করতে পারেন।

রানিমাতার সঙ্গে কথা বলে রাজ কূলগুরুদেবের সঙ্গে পরামর্শ করে রাজা জগৎদেব ঘোষণা

করলেন সোমদেবের সঙ্গেই তিনি রাজকুমারী চিত্রলেখার বিবাহ দিতে ইচ্ছুক।

রাজ জ্যোতিষী পাঁজী দেখে দিন ধার্য করে দিলেন।

জগৎদেব আরো একটি মহৎ কাজ করলেন। তিনি পরে অবশ্য সব কিছুই জানতে

পেরেছিলেন। মেঘমালার বুদ্ধিমত্তার কথা তাঁর অজানা ছিল না। কিন্তু এমন বুদ্ধি যা তাঁকেও

হার মানতে হয়েছিল সেই কৌশিকী অমাবস্যার রাতে। করাল বদনী কে তিনি চিনতেই

পারেননি সে রাতে।

মহারাজ তাই মেঘমালার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে উপহার স্বরূপ অপূর্বকে জঙ্গল মহলের একটা

অংশের জায়গীর প্রদান করলেন।

মহাসমারোহে সোমদেবের সঙ্গে বিয়ে হল রাজকন্যা চিত্রলেখার।

সুবর্ণরেখার তীরে বিশাল ম্যারাপ বেঁধে বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হল।

পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের রাজা জমিদারেরা এলেন সেই বিবাহ অনুষ্ঠানে।

এটাই চিত্রলেখার আব্দার ছিল। বিবাহ অনুষ্ঠান এই নদীতীরেই সম্পন্ন হবে।

কারণটা গোপন রইল। শুধু মেঘমালা জানত এই কথা।

যে স্থানে সোমদেবের সঙ্গে চিত্রলেখার প্রথম দেখা, মন দেওয়া নেওয়া হয়েছিল এই নদী

সাক্ষী ছিল।

তাই জীবনের এই আনন্দঘন মুহূর্তটা নদীকে সামনে রেখেই হোক।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes