জীবনানন্দ ক্রোড়পত্র – সায়ন ভট্টাচার্য

জীবনানন্দ ক্রোড়পত্র – সায়ন ভট্টাচার্য

ট্রামের চাকার পাশে মৃত্যুহীন এক হেঁটে চলা!

“বাড়ি ফেরার আগে চশমার ফাঁক দিয়ে খুব সাবধানে তোমায় একবার দেখে নিই
আপাতত আমার আত্মহত্যাপ্রবণতা স্লিপিং পিল খেয়ে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে,
আমাদের বেঁচে থাকাগুলো আসলে আমাদেরই হাতে
অতীত বলে কিছু হয়না, যা হবার, তা আগেই হয়ে গেছে..

মাইরি বলছি আমি দিব্বি আছি
ব্যস্ত শহরে আজ কবুল করছি
ভালবাসার মত সুন্দর কিছু নেই আর!”
এ কবিতা এক নারীর, যার বয়স আমার চেয়ে ঢের কম— সৃজনী দত্ত। এমন লেখা খাতায় ছড়িয়ে গেছে তার হঠাৎ উল্টে যাওয়া সুলেখা কালির মতো। ১৭ই ফেব্রুয়ারি একটা স্তব্ধ তারিখ, তোমার কথা মনে হয়। আর কোনও তারিখ নেই! একটা রক্তচিহ্ন একটা জোড়া ট্রামলাইন একটা ট্রাম আর সময় মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়ে যাবে অনন্ত কালের “নক্ষত্রের আলো জ্বেলে পরিষ্কার আকাশের ‘পর”।

– জীবনানন্দ দাশকে চেনেন?
– একটা আচমকা ধাক্কায় আমরা লাইনের নিচে গড়িয়ে গেলাম। শুধু নতুন করে জন্ম নেবো বলে…

বারবার ৩৬৫ দিন অন্তর ক্যালেন্ডার ছিঁড়ে ফেলে দিলে তবুও এই মাস ফিরে আসে, আর আমি “আমার দেহের গন্ধে পাই তার শরীরের ঘ্রাণ,—/
সিন্ধুর ফেনার গন্ধ আমার শরীরে আছে লেগে।” ট্রাম লাইনের নিচে কি চাপা আছে সিন্ধুর বিরাট
পলিমাটির চরাচর! ওখানে চলে যাবো— এক অমীমাংসিত কবির হাত ধরে…..
‘বিভা’ উপন্যাসের পাতায় পাতায় তখন বসন্ত বাতাসের চুম্বন। মনে পড়ে,
উপন্যাসের শেষে মোক্ষদাচরণের কাছে বিভা স্বীকার করে যে, ‘প্রায় সাত আট বছর আগে’ বিভা যখন কিশোরী, তখন সে যাকে ভালোবেসেছিল সেই ছেলেটি একদিন বিভাকে ‘পা দিয়ে ঠেলে ফেলে’ দেওয়ার পরেও ‘সেদিনই সন্ধ্যার সময়’ বিভা আবার ‘তার পায়’ ধরে এবং আবারও পদাহত হয়। এরপর মোক্ষদাচরণ ও বিভার প্রশ্নোত্তরটি উদ্ধৃত না করলেই নয়—

মোক্ষদাচরণ : মনে করেছিলে যে প্রেম ?
বিভা : কেনই বা না? তার ভেতরেও মর্ষণের সবচেয়ে পরাকাষ্ঠা ছিল যে–
মোক্ষদাচরণ : মর্ষণ মানে আত্মমর্ষণ? তারপর?
বিভা : তারপর অবিশ্যি ওরকম নিবিড়তা আর একবারও এল না—

সমস্ত সারসের বিপন্ন বিস্ময় আর বন্দুকের গুলি থেকে বার হওয়া বুলেটের পর যে ধোঁয়া, তার কথা লিখেছিলেন কোনও এক আজন্ম চলমান মানব, তিনি জানতেন “শরীর রয়েছে, তবু মরে গেছে আমাদের মন!”
– ওই দেখুন কেমন আমাদের দেখে সবাই চিৎকার করছে!
ভাবলো মাথা দেওয়ার জন্য ট্রাম লাইন আর Y-কে বেছে নিলাম। স্বার্থপর মধ্যবিত্ত.. বিপ্লবহীন বিপন্ন জীবনের পরগাছা। জীবনানন্দ দাশের নিঃশ্বাস কানে আসছে—
যখন বেঁচে ছিলাম কটা লোক আর একপাতা উল্টে দেখেছে, তবুও বলে গেছি— “মুখে রক্ত ওঠে— তবু কমে কই বুকের সাহস! / যেতে হবে,— কে এসে চুলের ঝুঁটি টেনে লয় জোরে! / শরীরের আগে কবে ঝ’রে যায় হৃদয়ের রস!—” তারপরও “মৃত্যুর ঠোঁটের” উপর আমি গাঢ় ভাবে টেনেছি ঠোঁট ভরা ভাষালিপি।
– আপনি ট্রাম লাইনের পাশ দিয়ে কেন হেঁটে এলেন?
বিপন্ন বন্দর থেকে যে জাহাজ, তেলের ভাণ্ডারের খোঁজ না নিয়েই সমুদ্র সঙ্গমের জন্য মেতে ওঠে তার কোনও লোহার চাকার উপরে বা নিচে— কোনও কিছুতেই বিস্ময় বা বিশ্বাস নেই আর “অশান্ত হাওয়ার বুকে তবু আমি বনের মতন/ জীবনেরে ছেড়ে দিছি!— “।

– ওই তো এসে গেছে উনি, এসো আলাপ করাই ।
ওনার নাম— জীবন।
আমি ওকে ভালোবাসা বলে ডাকি। উপেক্ষার ভাষায় যা হয়েছে লাবণ্য।
– এখন শুধু আমাদের কবিতা, গল্প আর উপন্যাস নিয়ে কথা বলা। একটা ট্রাঙ্ক আছে ভরা আমার খাতায় ।

আমরা জীবনপাঠ করতে চাই। সবটাই শুনে যাই গ্রানাইট পাথরের মতো অজর নির্বাক শব্দের নিচে জেগে থাকা হৃদয়ধ্বনি থেকে। ওরা বেঁচে আছে কারণ “মৃত্যুরেও তবে তারা হয়তো ফেলিবে বেসে ভালো! / সব সাধ জেনেছে যে সে-ও চায় এই নিশ্চয়তা!”
সমস্ত উদ্ধৃত বাক্যবন্ধ— কবিতাই বলো কিংবা নেশা, লেখা থাকবে ‘জীবন’ কবিতাগুচ্ছের পাতায়, ট্রামলাইনের গা’য়ে তারপর ওরা আস্তে আস্তে জেগে উঠবে, হাঁটবে, বিপন্ন রাতের তরুণের স্ফিত হৃৎপিণ্ডের দংশনের ভিতর, চলে যাবে ফেব্রুয়ারির প্রতিটা মুহূর্তে যেখানে “নির্জন রাত্রির মত শিশিরের গুহার ভিতরে,—/
পৃথিবীর ভিতরের গহ্বরের মতন নিঃসাড়/ রব আমি;”।
জীবনানন্দ স্বপ্নের ঘোরে ‘সেই সব দিন’-এর কথা মনে পড়ে, মর্মর পাতার মতো জেগে ওঠে সেই রাত যেখানে ‘তোমার মাথার চুল কুয়াশায় মিশে’ গেছে
কুয়াশার মত সে কি শাদা?’
তোমাকে ভালোবাসতে বাসতে বেশ ভালোই দিন কাটছে। দিন কেটে
যাচ্ছে বসন তুবড়ির মশলার মতো। প্রতিদিন মনে হচ্ছে জীবনানন্দের, তার চোখের কাজলে তো ভালো করে ডুবে যাওয়াই হলো না,
ভরা খোঁপা টেনে খোলা হলো না দিনে একবার! বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে আদরের কবিতা লেখা হচ্ছে না ঠিক করে। সিঁদুরে রাঙা হয়ে ওঠে না জামা, এমন সময় ক্যালেন্ডারের পাতায় দেখি কত কত তারিখ নেই!
এইভাবে, এত সামান্য ভালোবাসাবাসি করলে আর হবে না,— আরও ভালোভাবে ভালোবাসার জন্য, তোমার প্রেমে ডুবে যাওয়ার জন্য
‘তোমায় আমি’ লিখেছিলেম— ‘তোমায় ভালোবেসেছি আমি তাই/শিশির হয়ে থাকতে যে ভয় পাই/তোমার কোলে জলের বিন্দু পেতে;/ চাই যে তোমার পাতায় মিশে যেতে/ শরীর যেমন মনের সঙ্গে মেশে।’

স্বপ্ন বলেই এমন স্বাদিষ্ট, এমন জেগে থাকা। ‘ধবল চিতল-হরিণীর’ মতো মেতে থাকার জীবন সম্ভার। তুমি তো এটাও জেনে গেছো, যে স্বপ্নের জগৎ সত্যের ওপারে এক অন্য স্তরের সত্য। এই সত্যের নাম সোহাগ— তার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে মাল্যবান। এক নতুন মাল্যবান, যার হৃদয় ‘পৃথিবীর পাখিদের মতো’ যেন জেগে থাকা থিয়েটারের ঘটমান আলো। এ কথা যদি জলের মত উৎসারণে তুমি আমাকে— সোহাগকে— যাকে তুমি ভালোবাস তাকে বলে যেতে, শুনে নিতাম মহাপ্রাণ বৃক্ষ থেকে যেভাবে শুনে নেয় পাখি কিংবা প্রেত। আমি তোমার মনের ‘নারী শরীরিণী— জানি’ জীবনানন্দ। জেনে গেছি ভালোবেসে দেশ-ক্ষয় রোধ করা যায়।

জেগে উঠি, দেখি, আত্মহত্যারলিপি নয়, বনলতা থেকে ব্যবিলন ব্যপ্ত জীবনভাষার চাদরে ঢাকা আছে জীবনানন্দের মৃত্যুহীন এক দেহ।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes