
সৌম্যদ্বীপ চক্রবর্তী -র কবিতাগুচ্ছ
মাটি
আমার দ্বারা বাগান হয় না
ওরা আমার হাতে বাঁচে না ঠিক
তবু বেশ লাগে ছাদে একা হাঁটতে
ওরাই রোজ তাকিয়ে থাকে আমার দিকে
ঠাকুমা বলত রাতের বেলা গাছ ঘুমায়
হাত দিস না যেন!
ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে অনেকবার
সেদিন ওরা দুজন আমাকে বাইরে রেখে
জোর করে চিলেকোঠার
দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল
কী এক নতুন খেলা খেলবে বলে
দরজার বাইরে সব টব ভেঙেছি সেদিন
উবু হয়ে বসে, নখ দিয়ে
মাটি খুঁড়ে গেছি
সারা বিকেল
বিকেল ফুরোলে ওরা চলে যায় যে যার মতো
কোনো গাছ মরে গেলেও
মাটিতে হাত ডুবিয়ে থাকতে ভালো লাগে
অসমান
কলের মুখের মতো ঠান্ডা তোমার হাত
রাতে অনেকবার টের পেয়েছি নিজের গায়ে
তুমি হাত বুলিয়ে দেখতে
আমি আছি নাকি মিলিয়ে গেছি
ছোটবেলায় এমনটা করতাম আমি
লেপের নিচে ঢুকে পড়লে মিশে যেতাম পুরো
কেউ খুঁজে পেত না আমায়
হ্যাঙ্গারে ঝোলানো জামার ভেতর আমি
পাশ কাটিয়ে তোমাকে চলে গেছি অনেকবার
ভিড় বাসের হাতল ধরে
শুধু কব্জি মিলিয়েছি তোমার সাথে
আমার হাত আজও
তোমার থেকে বেশি নরম
ঘরের চটি
মেয়ের বাড়িতে বেশি দিন ভালো লাগেনা
কিন্তু সন্ধ্যেবেলা মনে হয় এ তো ছেলের বাড়ি
মেজমামী মা’র সাথে রাগারাগি করে
আমার মানুর ঘরে পরার চটিটা পরে চলে গেছে তোমার মা!
ছাদে মেলা সাদা শাড়ি হাওয়ায় উড়ছে
মা দিদাকে একা ছাদে উঠতে দেয় না
কাকভোরে রোজ ঘুম ভেঙ্গে যায় তাঁর
বারান্দায় আলো এসে পড়ে
দিদা রোজ দেখে
একজন খালি পায়ে গঙ্গার দিকে চলে যায়
ছায়া
আমি বিড়ি খুব আস্তে আস্তে খাই
বড় কাকার মতো
বারবার নিভে যায়, দেশলাই নষ্ট হয়
কাকা দুপুরে একা একা হাঁটেন
আমি পুকুরপাড়ে থাকব জানলেও কখনো আসেন না
আমার ভালো লাগে জলের দিকে তাকিয়ে থাকতে
ধার দিয়ে হাঁটলে কখনো ছায়া দেখতে পাই
কিছু গাছ মরে গেলেও
অনেক দিন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।
জল
জল শান্ত হলে
সব থিতিয়ে পড়ে
তুমি খেলা করতে
পা দিয়ে বালতির গায়ে আলতো টোকা মেরে
আমরা জলে ঢেউ দেখতাম
তোমাকে যতবার ছুঁয়েছি
তার থেকে বেশি রাত ভোর হতে দেখেছি
বাইরের চটি
বাইরের শাড়ি ছেড়ে মায়ের কাপড় পরি
চিরুনিতে আমাদের চুল মিলেমিশে জট পাকে
মায়ের ঘরটা ছাড়া আমার এখন কিছু নেই
মানবের আনা বিস্কুটটা অনেকদিন চলত
আমার দিকে তাকিয়ে কথা বললে
আমি দেখতাম ওর জামার কোথায় সুতো বেরিয়ে
প্যান্টটা পায়ের কাছে কতটা ঘষে গেছে
ভাইয়ের সঙ্গে ওর কথা নেই আজ অনেকদিন
ওদের অনেক কিছু আজও জানি না
অসময়ে কেউ বাড়িতে এলে
চৌকাঠের বাইরে চটিগুলো মাঝে মাঝে দেখি
অতনু
খালি বাড়িটা কিছুদিনে কেমন পেয়ে বসেছে
অন্ধকারেও হাঁটতে পারি
ভর-সন্ধ্যেবেলা এমনকি অনেক রাতেও
ছাদে মেলা জামাকাপড় নিয়ে এসেছি
টবের গাছ’দুটো আমার মতো
জানলার পাশে
কাল ওরা ফিরে আসছে
আমার যা ছিল গুছিয়ে নিচ্ছি
এখন
ঘুম থেকে উঠে আমি তখনও হাই তুলছি
ভেজা উঠোন জুড়ে কতগুলো পায়ের ছাপ
আর কিছু না।
দিন এখন দেরিতে ফুরোয়।