আলোকের সাধনা (টমাস আলভা এডিসনের জীবন কাহিনি) হোমেন বরগোহাঞি মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস

আলোকের সাধনা (টমাস আলভা এডিসনের জীবন কাহিনি) হোমেন বরগোহাঞি মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস

টমাস টেলিগ্রাফের প্রতি আকৃষ্ট হল

সব সময় দেখতে থাকা বা ব্যবহার করতে থাকা জিনিসের প্রতি মানুষের কৌতুহল থাকে না। উদাহরণ স্বরূপ বিদ্যুতের আলোকের কথাই বলা যেতে পারে। সূইচ টিপে দিলেই বিদ্যুতের বাতি জ্বলে উঠে। আমাদের কাছে যা ভাতের সঙ্গে জল খাওয়ার মতো স্বাভাবিক কথা। কিন্তু ইতিহাসে প্রথমবারের জন্য পৃথিবীর কোনো একটি জায়গায় যখন বিদ্যুতের বাতি জ্বলেছিল, তখন মানুষ এত বেশি আশ্চর্য হয়েছিল যে সেটাকে তারা কোনো একটি অলৌকিক ঘটনা বা যাদুকরের ভেলকি বলে মনে করেছিল।
টেলিগ্রাফির ক্ষেত্রেও এই একই কথা বলা যেতে পারে। প্রায় দেড়শো বছর ধরে টেলিগ্রাফ ব্যবহার করার পরে মানুষ এখন তার প্রতি কোনো ধরনের কৌতূহলই আর অনুভব করে না। কিন্তু ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দের কোনো একটি দিনে টেলিগ্রাফের আবিষ্কারক স্যামুয়েল মোর্স যখন প্রথমবারের জন্য টেলিগ্রাফের মাধ্যমে ওয়াশিংটন থেকে বাল্টিমোরে খবর পাঠিয়েছিলেন, তখন মানুষের পক্ষে বিশ্বাস করা শক্ত হয়েছিল যে মাত্র একটি তারের মাধ্যমে এভাবে খবর পাঠানো সম্ভব। মানুষ সেটাকেও যাদুকরের ভেলকি ভেবেছিল।
টেলিগ্রাফ আবিষ্কারের সময় টমাসের বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর। কিন্তু বারো বছর বয়সে তিনি যখন রেলগাড়িতে ফেরিওয়ালার কাজ করতে শুরু করেছিলেন, তখন রেলগাড়িতে টেলিগ্রাফের ব্যবহার ভালোভাবে শুরু হয়ে গেছে। একটি স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে আগের থেকে খবর পাঠানোর কাজে টেলিগ্রাফ খুব সাহায্য করছিল। সমস্ত ধরনের যান্ত্রিক এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের প্রতি তীব্র কৌতূহল অনুভব করা টমাসের মনে টেলিগ্রাফের জাদুবিদ্যা আয়ত্ত করার জন্য স্বাভাবিকভাবেই তীব্র ইচ্ছা জেগেছিল। সেই উদ্দেশ্যে তিনি রেলগাড়ির টেলিগ্রাফ অপারেটরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করার চেষ্টা করলেন।
একদিন তিনি একজন টেলিগ্রাফ অপারেটরকে জিজ্ঞেস করলেন–’এক জায়গা থেকে অন্য একটি জায়গায় মুহূর্তের মধ্যে কীভাবে খবর পাঠানো সম্ভব হয় সে কথা আপনি অনুগ্রহ করে আমাকে বুঝিয়ে দেবেন কি?’
অপারেটরটি নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে উত্তর দিল–’একটা কুকুরের লেজ ধরে সজোরে টান মারলে সে মুখ দিয়ে ঘেউ ঘেউ করতে আরম্ভ করবে নাকি? টেলিগ্রাফের তারটিকেও তুমি একটি প্রকাণ্ড লম্বা কুকুর বলে কল্পনা করে নাও। একটি প্রান্তে টিপে ধরলেই অন্যপ্রান্তে তার কণ্ঠস্বর শোনা যায়।’
টমাস সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় একটি প্রশ্ন করল–’কিন্তু লেজ থেকে মাথা পর্যন্ত সংকেত কীভাবে পৌঁছায়? আমি সেই কথাটাই আপনার কাছ থেকে জানতে চাইছি।’
বেচারা অপারেটরের টমাসের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো বিদ্যাবুদ্ধি ছিল না। তিনি টমাসের সামনে থেকে কোনো মতে পালিয়ে বাঁচলেন। টমাসের বুঝতে বাকি রইল না যে অপারেটররা টেলিগ্রাফির আসল রহস্য, অর্থাৎ তার মূলে কাজ করার বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব এবং কারিগরি কৌশলের বিষয়ে কিছুই জানে না। তারা কেবল যান্ত্রিকভাবে কাজ করে।
কিন্তু যে মানুষটি একদিন এক হাজারের চেয়ে বেশি অভিনব বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম আবিষ্কার করে মানুষের জীবনধারার আমূল পরিবর্তন ঘটাবে এবং পৃথিবীর রূপ চিনতে না পারার মতো পরিবর্তিত করে ফেলবেন, তাকে এত সহজে সন্তুষ্ট করা যায় না। টেলিগ্রাফ আসলে কীভাবে কাজ করে সে কথা তাকে জানতেই হবে। সেটা জানার উপায় কি? সেটি জানার উপায় হল–এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সংকেত পাঠানোর চেষ্টা করা।
বলা বাহুল্য যে কেবল একজন মানুষের পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব না। দুই জায়গায় দুজন মানুষের প্রয়োজন। টমাসের বন্ধু ক্লেঞ্চি সেই সমস্যার সমাধান করে দিলেন। টমাসের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজে সাহায্য করার জন্য তিনি নিজেই আগ্রহ প্রকাশ করে এগিয়ে এলেন। একই পাড়ায় দুই বন্ধুর বাড়ি। দুই বাড়ির মধ্যে একটি টেলিগ্রাফের তার টানা হল। তারের মাধ্যমে টেলিগ্রাফের সংকেত পাঠানো হয় বিদ্যুৎ শক্তির সাহায্যে। তাই দুই বন্ধুর প্রথমেই প্রয়োজন হল একটি ব্যাটারি বা বৈদ্যুতিক সেলের। কিন্তু এত দামি জিনিসটা কেনার টাকা আসবে কোথা থেকে? এতদিন নিজের গবেষণাগারে নানা রকম গবেষণা করে হাতপাকানো টমাস নিজেই একটি বৈদ্যুতিক সেল তৈরি করে ফেলল। বৈদ্যুতিক চুম্বক এবং অন্যান্য সরঞ্জাম গুলি জোগাড় করা হল। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দুই বন্ধু একে অপরের কাছে সংকেত পাঠাতে সক্ষম হল।
কিন্তু টেলিগ্রাফের পূর্ণ রহস্য জানার জন্য এই সরল পরীক্ষা-নিরীক্ষা যথেষ্ট নয় বলে টমাস নিজেও বুঝতে পারল। ভালোভাবে টেলিগ্রাফের কাজ শেখার জন্য সুযোগের খোঁজে সে ব্যাকুল হয়ে উঠল। লোকে কথায় বলে–যে মানুষ নিজেকে সাহায্য করে তাকে ঈশ্বর ও সাহায্য করে। টমাসের ক্ষেত্রে এ কথা সম্পূর্ণ সত্যি বলে প্রমাণিত হল।
১৮৬২ সনের কথা। টমাসের বয়স তখন পনেরো বছর। সব সময় করার মতো সেদিনও সে রেলগাড়িতে খবরের কাগজ বিক্রি করছিল। রেল গাড়িটা একটি স্টেশনে এসে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে টমাস প্লাটফর্মে কাগজ বিক্রি করার উদ্দেশ্যে গাড়ি থেকে নেমে গেল। কিছুক্ষণ কাগজ বিক্রি করে সে কিছুটা ক্লান্ত বলে অনুভব করতে লাগল। বিশ্রাম নেওয়ার উদ্দেশ্যে এক জায়গায় বসে সে উদ্দেশ্যহীন ভাবে এদিকে ওদিকে তাকাতে লাগল। তখনই হঠাৎ তার চোখে পড়ল–একটা তিন চার বছরের ছোট্ট ছেলে রেললাইনের উপরে বসে পাথরের টুকরা নিয়ে খেলা করছে।
স্টেশনটিতে রেলগাড়িটা কিছু বেশি সময় অপেক্ষা করার একটি কারণ ছিল। সেখানে দুটি কামরা গাড়িটার সঙ্গে নতুন করে জোড়া লাগানো হয়। যে মুহূর্তে রেললাইনের উপরে বসে আপন মনে খেলতে থাকা ছেলেটি টমাসের চোখে পড়ল, সেই মুহূর্তে রেলের ইঞ্জিনটি কামরা দুটি পেছন থেকে ঠেলতে ঠেলতে গাড়িটর দিকে নিয়ে আসছিল। ইঞ্জিনটা কামরা দুটিকে পেছন থেকে ঠেলছিল বলে ড্রাইভারের পক্ষে বাচ্চা ছেলেটিকে দেখা সম্ভব ছিল না। আর মাত্র কয়েক মুহূর্তের মধ্যে রেলের কামড়া দুটি বাচ্চাটিকে পিষে থেতলে ফেলবে। টমাস লাফ মেরে রেললাইনে পা রাখল এবং ছেলেটিকে কোলে তুলে নিয়ে পুনরায় প্লেটফর্মে লাফিয়ে পড়ল। পরের মুহূর্তে ছেলেটি বসে থাকা জায়গাটুকু অতিক্রম করে রেলের ইঞ্জিন তার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে গেল। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য ছেলেটির জীবন রক্ষা পেল।
ছেলেটির পিতা ছিলেন সেই রেল স্টেশনে টেলিগ্রাফ অপারেটর। নাম ম্যাকেঞ্জি।
যে মুহূর্তে টমাস ছেলেটির জীবন রক্ষা করার জন্য রেললাইনের উপরে লাফিয়ে পড়েছিল ঠিক তার এক মুহূর্ত আগে ছেলেটির পিতা মেকেঞ্জিও
এসে প্ল্যাটফর্মে উপস্থিত হয়েছিল। তিনি কাজে আসার সময় প্রতিদিন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। তিনি কাজ করতে থাকেন, ছেলেটি পাশে বসে খেলতে থাকে। তিনি ছেলের ওপর কড়া নজর রাখেন। কিন্তু সেদিন তিনি একটি জরুরী টেলিগ্রাম পাঠানোর কাজে এত মগ্ন ছিলেন যে ছেলের দিকে তাকানোর মতো সময় পাননি। কাজটা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছেলে সব সময় খেলতে থাকা জায়গাটির দিকে তার চোখ গেল। ছেলেটি সেখানে নেই। ছেলের খোঁজে এদিক-ওদিক দেখতে দেখতে প্লেটফর্মে চলে এলেন। সেখানে উপস্থিত হয়ে তিনি দেখলেন আর মাত্র এক মুহূর্ত পরে রেল গাড়ির ইঞ্জিনটি ছেলের গায়ের ওপর দিয়ে অতিক্রম করে যাবে। রেল লাইনের ওপরে পড়ে থাকবে একটি রক্তাক্ত মাংসপিন্ড। সেই দৃশ্যটি যাতে দেখতে না হয় সেই উদ্দেশ্যে চোখ দুটো বুজে তিনি আর্তনাদ করে উঠলেন।
পরের মুহূর্তে প্লাটফর্মের ওপরে ছেলের কথা শুনে তিনি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখেন ছেলেটি তাকে ডাকছে। তার হাত ধরে পাশেই দাঁড়িয়ে আছে একটি পনেরো ষোলো বছরের কিশোর ছেলে।
কীভাবে ছেলের জীবন রক্ষা পেল সে কথা বুঝতে মেকেঞ্জির আর বাকি রইল না। তার দুই গাল দিয়ে ঝরঝর করে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়তে লাগল। টমাসকে তিনি চিনতে পারলেন, কারণ টেলিগ্রাফ শেখার জন্য কিশোর ছেলেটি প্রায়ই মেকেঞ্জির কাছে উঁকি ঝুঁকি মারে। আবেগে কণ্ঠরুদ্ধ অবস্থায় মেকেঞ্জি বললেন–’তুমি আমার ছেলেকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে কেড়ে এনেছ। এর প্রতিদান দেবার শক্তি আমার নেই। কিন্তু একথা নিশ্চয় জানবে যে আমি তোমার কাছে সারা জীবন ঋণী হয়ে থাকব। আমি বহুদিন থেকে একটা কথা লক্ষ্য করেছি যে টেলিগ্রাফ শেখার জন্য তোমার ভীষণ আগ্রহ রয়েছে। ধন দৌলত দিয়ে তোমাকে পুরস্কৃত করতে না পারলে ও তোমার টেলিগ্রাফ শেখার সখ আমি পূর্ণ করতে পারব।’
মেকেঞ্জির কথা শুনে টমাস হাতে স্বর্গ পেল। সেই মুহূর্ত থেকেই সে টেলিগ্রাফ শিখতে আরম্ভ করে দিল। টমাস অত্যন্ত বুদ্ধিমান, পরিশ্রমী এবং মনোযোগী শিক্ষার্থী ছিল। মাত্র তিন মাসের ভেতরে টেলিগ্রাফ সম্পর্কিত বিদ্যা নিখুঁতভাবে আয়ত্ত করে নিল।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes