অরুণাভ ঘোষ-এর গল্প

অরুণাভ ঘোষ-এর গল্প

হুলোবেড়াল

সাঁইত্রিশ বছর বয়সে সঙ্গীতা তার কৌমার্য হারাল।
ব্যাপারটা এমন নয় যে এই বয়সের আগে কৌমার্য হারানো যেত না। বস্তুত এই কথাটা সে আগেও অনেকবার ভেবেছে। কিন্তু দুটি সমস্যা তার সামনে ছিল। এক, অনির্বাণের সঙ্গে তার সম্পর্কে গড়ে উঠতে অনেক সময় লাগছিল। আর দুই, ওর পুষ্যি বেড়াল পিংকি আরো আগে গর্ভবতী হয়নি।
সত্যি কথা বলতে পিংকির গর্ভবতী হওয়াই সঙ্গীতার মনে এই চিন্তার সূচনা করে। এই বেওয়ারিস মেনিটা এক দুপুরে সঙ্গীতাদের ছোট্ট বাড়িটায় নির্দ্বিধায় ঢুকে পড়ে চুপ করে বসে ওর দাদার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে ছিল আর ওর দাদা শরৎও নির্নিমেষে তাকিয়ে ছিল বেড়ালটার দিকে। একে অপরের দিকে তাকিয়ে একটা দুপুর পার করে দেয় ওরা। বিকেলে স্কুল করে ফিরে সঙ্গীতা ওদের পরস্পরের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে দেখেছিল। সঙ্গীতার চেয়ে কিছুটা বড় শরৎ। মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের রুগী, প্রতি দিনই যার অবস্থার অবনতি হচ্ছে। সঙ্গীতার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল শরৎ আর পরিবার বলতে সঙ্গীতার কাছে কেবল তার দাদা। একভাবে দেখতে গেলে সঙ্গীতার এতদিন কৌমার্য না-হারানোর এটাও একটা কারণ। সিকিমে ছুটি কাটাতে গিয়ে সঙ্গীতার বাবা মা যখন ল্যান্ডস্লাইডের দুর্ঘটনায় মারা যান তখন সঙ্গীতা আটাশ আর শরৎ বত্রিশ। ওর ট্রমা চলে প্রায় তিন বছর। তখনই শরতের অবস্থা প্রাইমারি থেকে সেকেন্ডারি প্রোগ্রেসিভ স্টেজের দিকে এগিয়ে গেছে। কাজেও যেতে পারত না আর। সঙ্গীতাকেই ওর দায়িত্ব তুলে নিতে হয় নিজের কাঁধে। তিরিশ বছর ধরে বাড়িতে কাজ করা মালতি মাসি হাল ধরে সংসারের। এতকালের স্নেহের সম্পর্ক অস্বীকার করেনি মালতি। রান্না আর বাড়ির সব কাজ করে সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত শরতের দেখাশোনা করে মাসি। সঙ্গীতা বরাবরই যুক্তিবাদী তাই বিয়ে যে তার হবে না সেটা সে মেনেই নিয়েছে। দাদাকে ফেলে অন্য একটা সংসারে গিয়ে থাকা তার পক্ষে অসম্ভব সেটা স্পষ্ট ওর কাছে। বাসস্থানের তো গুরুত্ব আছেই। শরৎ বাড়িতে থাকতে কারোকে নিয়ে নিজের ঘরে দোর দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। শরৎ বিশেষ কথাবার্তা বলে না, প্রায় সারাদিনই চুপচাপ থাকে। কিন্তু ওর উপস্থিতি অন্য কারো সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার পক্ষে অনুকূল নয়। তাই একটা বেড়ালকে যখন দাদার দিকে তাকিয়ে নিশ্চিন্তে বসে থাকতে দেখল তখনই বেড়ালটাকে পছন্দ করে ফেলল সঙ্গীতা। তখনও মেনিটার নাম পিংকি রাখা হয়নি।
কিন্তু এই গল্পটা পিংকি আর শরতের নয়। এই গল্পটা সঙ্গীতার বা বলা চলে সঙ্গীতার কৌমার্যের। এবং এখানেই পিংকির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কেন সঙ্গীতা তার বাবা মা মারা যাওয়ার আগে নিজের কৌমার্য হারায়নি সেটা একেবারেই বিবেচ্য নয়। ওটা একটা প্রাণহীন তথ্য মাত্র, কিছু কমও নয় বেশিও নয়। সঙ্গীতার জীবনে পিংকির আসা এবং গর্ভবতী হয়ে পড়াটাই একমাত্র প্রয়োজনীয় বিষয়। সারাদিন বাড়িতে থাকে পিংকি, ঠিক সন্ধ্যাবেলা সঙ্গীতা স্কুল থেকে ফিরলেই কোথায় উধাও হয়ে যায়। আবার রাতের খাবার সময় কোথাও থেকে উদয় হয়, নিশ্চিন্তে খাওয়া সারে, সঙ্গীতার সঙ্গে বসে টিভিতে কোনো শো বা সিরিয়াল দেখে, সঙ্গীতার গায়ে লেপ্টে ওর খাটে শোয় তারপর কোনো একটা সময়ে জানলা দিয়ে আবার গায়েব হয়ে যায়। এ হেন পিংকির গর্ভসম্ভাবনা সঙ্গীতাকে ভাবিয়েছে। পাড়ার কোন হুলোটা পিংকির গর্ভের জন্য দায়ী সঙ্গীতার জানা নেই তবে পিংকির যে একটা যৌন জীবন আছে সে কথাটা সঙ্গীতা বিলক্ষণ বুঝেছে। এটাও বুঝেছে তার নিজের নেই। একটা বেড়াল বছর পনেরো বাঁচে, বড়জোর কুড়ি। পিংকির তো অতখানি বয়সও নয় কিন্তু তারও যৌন জীবন আছে। অথচ সঙ্গীতার নেই।
সেই শুরু। অনির্বাণ কিছুদিন যাবৎ সূক্ষ্মভাবে সঙ্গীতাকে যে ইঙ্গিত দিচ্ছিল সেগুলির দিকে মনোযোগ দেওয়ার সেই শুরু। ডাক্তার হিসেবে গত তিন চার বছর শরৎকে দেখছে অনির্বাণ। অ্যামেচার ফোটোগ্রাফার হিসেবেও নাম হয়েছে। উড়ন্ত পাখির ছবি ওর বিশেষত্ব। মুগ্ধতার থেকে ক্রাশের দূরত্ব কয়েক কদম মাত্র এবং সেই নিয়মে চৌত্রিশ বছর বয়সে অনির্বাণের প্রতি বিপুল আকর্ষণের ঘূর্ণাবর্তে পড়ে গেল সঙ্গীতা।
‘বয়স তোর কাছে কোনো ব্যাপারই নয় বলছিস?’ জিজ্ঞেস করেছিল দীপশিখা। সঙ্গীতার কলেজ জীবন থেকে ঘনিষ্ট বন্ধু দীপশিখা আর এখন তো একই স্কুলে সহকর্মী।
‘লোকে তো বলে বয়স নাকি শুধুই একটা সংখ্যা’। খিলখিলিয়ে হেসে উঠেছিল সঙ্গীতা।
‘ঠিকই। তবে প্রায় ষাটের ঘরে পৌঁছে যাওয়া একজন মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়ে ওঠা একটা সমস্যা হতে পারে’। চোখ টিপে বলেছিল দীপশিখা।
‘ওই যেমন ইংরিজিতে বলে না যখন ব্রিজ আসবে তখন পেরোনোর কথা ভাববো দীপু। আমার মোবাইলে ওর ছবিটা তো দেখ। হ্যান্ডসাম না?’ অনির্বাণের ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল সঙ্গীতা। কাঁচাপাকা চুল দাড়ি শোভিত ছিপছিপে সৌম্য মানুষটির ছবি দেখে দীপশিখাও বেশ মোহিত হল।
‘দেখেশুনে তো মনে হচ্ছে তুই ভালোই দাঁও মেরেছিস। যদি বিছানাতেও ভালো খেলে তাহলে আমার বর ট্যুরে গেলে একটু আধটু ধার দিস ভাই’। আবারও চোখ টেপে দীপশিখা।
‘চান্স নেই। বিজ্ঞাপনে যেমন বলে – এ স্বাদের ভাগ হবে না’। হেসেছিল সঙ্গীতা।
‘কিন্তু তুই তো ভাগই করছিস ওর বউয়ের সঙ্গে! ওর তো দুটো ছেলেও আছে, তাই না? তারাও তো যথেষ্টই বড়, নয়? তাহলে তোর জায়গা কোথায়? ও কি বউকে ডিভোর্স করবে?’
‘কে চাইছে ভাই? আমি তো নয়। আমার পক্ষে বিয়ে করে ওর সঙ্গে চলে যাওয়া সম্ভব নয়, তুই তো জানিস’।
‘তাহলে ভবিষ্যৎ কী তোদের?’
‘অনির সঙ্গে ভবিষ্যৎ কি আমার আদৌ দরকার আছে বলে তোর মনে হয়?’
‘এটা তাহলে কী? ফ্লিং না অ্যাফেয়ার নাকি সুবিধের বন্দোবস্ত কোনটা বলবি?’
‘সম্পর্কের একটা নাম না দিলেই তোর চলছে না!’
এবং সেখানেই ব্যাপারটা দাঁড়িয়ে ছিল।
পরের বার যেদিন ক্যাফে ব্লুতে ওরা দেখা করলো সঙ্গীতা লক্ষ্য করলো ডাক্তার অন্য বারের তুলনায় অনেক বেশি রকম ফ্লার্ট করছে। ক্যাফে ব্লু সঙ্গীতা অনির্বাণের দেখা করার জায়গা, ডেটিং-এর জায়গাই বলা চলে। ফলে সঙ্গীতা নিজেও অনেক স্বচ্ছন্দে ফ্লার্টের পাল্টা দিতে পারে।
‘তাহলে বলতে চাও যে রাত্তিরে কোথাও থাকা তোমার পক্ষে সম্ভব নয়?’
‘কেন জানতে চাইছ?’ অনির্বাণের প্রশ্নের জবাবে গলায় দুষ্টুমি মাখিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে সঙ্গীতা। যারা সঙ্গীতাকে চেনে তারা সেই মুহূর্তে ওকে দেখলে ধাঁধায় পড়ে যেত। একটু গাম্ভীর্য বজায় রেখে চলা মেয়েটা যেন স্বভাব বিরুদ্ধভাবেই প্রগল্‌ভ এখন। অনির্বাণ একটু বিব্রত হয়ে পড়ে। সঙ্গীতার সঙ্গে ফ্লার্ট করা ব্যাপারটা মেলাতে পারে না একদম। নিজের অপ্রস্তুত ভাব ঢাকতে একটু উগ্রভাবেই জিজ্ঞেস করে, ‘সম্ভব কিনা সেটা তো বলো’। সঙ্গীতা এই কথোপকথনে মজা পায় যদিও নিজের মনোভাব প্রকাশ করে না।
‘তুমি কি আমাকে একটা রাত বা একাধিক রাত তোমার সঙ্গে থাকতে বলছ?’
‘আসলে আমি ভাবছিলাম আমরা যদি শহরের বাইরে যেতে পারি পাখির ছবি তুলতে তাহলে বেশ হয়। শহরের বাইরে বেশ কয়েকটা জায়গা জানা আছে আমার’।
‘গিয়ে থাকতে হবে? এতটা দূর?’
‘ঠিক তা নয় তবে রাতটা থাকতে পারলে সুবিধে হয়’।
‘কীসের সুবিধে?’
‘ওই মানে . . .’
‘মানে ওই-এর জন্যে?’ হেসে ওঠে সঙ্গীতা।
একটা ফিকে হাসি ডাক্তারের ঠোঁটে জেগে উঠে মিলিয়ে যায়। সঙ্গীতার ভাবমূর্তির সঙ্গে এই নতুন সঙ্গীতাকে মেলাতে না পেরে অনির্বাণ রীতিমত অস্বস্তি বোধ করে। আবার অন্যদিকে পরিস্থিতি খানিকটা সহজও হয়ে যায় ওর কাছে কারণ যে কথা সঙ্গীতা প্রায় স্পষ্ট করেই বলছে সেটা বলতে ডাক্তারের সংকোচ হচ্ছিল।
‘ঠিক ধরেছ, একদম সঠিক’।
‘তাহলে রাত্তিরের আলাদা করে গুরুত্ব কোথায়? যদি কিছু করার ইচ্ছেটাই প্রধান হয় তাহলে দুপুর, সকাল, বা দিনের যে কোনো সময়েই তো ব্যাপারটার রোমাঞ্চ একই থাকবে। নয় কি?’
পেশায় ডাক্তার হলেও এবং সঙ্গীতার চেয়ে কুড়ি বছরের বেশি বড় হওয়া সত্ত্বেও একটি মেয়ের সুস্পষ্ট বাসনার মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল না অনির্বাণ। তিন বছর আগে দাদার স্নায়ু রোগের চিকিৎসা করাতে আসা স্কুলশিক্ষিকা সঙ্গীতাকে খুঁজে পাচ্ছিল না অনির্বাণ। সঙ্গীতার পরবর্তী পদক্ষেপ একেবারেই আন্দাজ করতে না পেরে অনির্বাণ সাবধানে পা ফেলে।
‘ভাবছিলাম আমরা যদি ছবি তোলার একটা ট্রিপ করি কেমন হয়’।
অনির্বাণের দ্বিধাগ্রস্ত মনোভাব সঙ্গীতার নজর এড়ায় না।
‘দিব্য হয়, আমরা ট্রিপ করতেই পারি। শুধু সে দিনই ফিরে আসার ব্যবস্থা থাকলে। দেরি হলে ক্ষতি নেই কিন্তু কোথাও রাত কাটান আমার পক্ষে সম্ভব নয়, তুমি তো ভালই জান’।
শরতের ডাক্তার হিসেবে সঙ্গীতাদের পারিবারিক ব্যবস্থার কথা অনির্বাণের অজানা নয়। সঙ্গীতা রাতে বাড়ি না ফিরলে কতটা চাপ শরতের ওপর পড়বে তা বিলক্ষণ আন্দাজ করতে পারে অনির্বাণ। তার ওপর আছে মালতি মাসি। তার কাছে জবাবদিহি করা সঙ্গীতার পক্ষে সহজ হবে না। সঙ্গীতাকে লুকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল অনির্বাণ। পরের উইকএন্ডে ওর স্ত্রী বিদিশার নিজের মায়ের কাছে যাওয়ার কথা। হাতে অনেকটাই সময় পাওয়া যেত। কিন্তু কী আর করা, যা পাওয়া যাচ্ছে তাই দিয়েই চালিয়ে নিতে হবে। নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো একথা কে না জানে? পরিস্থিতির হাতে নিজেকে সঁপে দিয়ে অনির্বাণ খুশির মখোশটা পরে নেয়। বিদিশার না-থাকার কথা চেপে গিয়ে মেলে ধরে একটা প্ল্যান।
‘পরের শনিবার যদি ফাঁকা থাকো তাহলে আমরা পাখির ছবি তুলতে যেতে পারি। তোমার ক্যামেরাটাও নিও’।
‘ওটা তো অটোম্যাটিক ক্যামেরা একটা। ছোট্টো, একদম বেসিক’।
অনির্বাণ মৃদু হাসে। বেসিক থেকে ‘বেসিক ইন্সটিংকট’-এর যোগসূত্র ওর মনে ভেসে উঠতেই হাসিটা আপনা থেকেই চলে এল। এই দুষ্টু তথ্যটা সঙ্গীতাকে বলার কোনো চেষ্টাই করল না অনির্বাণ।
রাতের খাওয়া হয়ে গেছিল। সঙ্গীতার কোলে বসেছিল পিংকি। একটু অস্থির ভাব। বোধহয় সঙ্গীতার অতিরিক্ত আদর থেকে পালাতে চাইছিল।
‘আমার কথার জবাব না দিয়ে কোত্থাও যাবি না’। শাসনের সুরে বলে সঙ্গীতা। ‘এবার বল তুই কি মাসখানেকের মতো প্রেগন্যান্ট? তোর পেট দেখে কিন্তু তাই-ই মনে হচ্ছে’।
‘ম্যাও’।
‘ভেট কে দেখাতে চাস?’
পিংকি উত্তর দেয় না, কান চুলকায়।
‘আর একমাস বাদেই তোর অনেকগুলো ছানা হবে। বারান্দায় তোর জন্যে একটা বাক্স রাখব কাপড়ের গদি বানিয়ে? বেশ আরামদায়ক কিছু?’
‘ম্যাও’।
‘এবার বল গর্মি ধরলে ঠিক কী করিস’।
পিংকি্র ভাব দেখে মনে হল ও এরকম একটা বোকা-বোকা প্রশ্ন শুনে বোর হয়ে গেছে।
‘বাচ্চাদের বাবা কে পিংকি? পিংকি আমি কিন্তু তোমার সঙ্গে কথা বলছি’।
জবাব নেই।
‘আমার দাদার দিকে তাকিয়ে থাকিস কেন? সে-ই বা তোর দিকে চেয়ে থাকে কেন?’
পিংকি আবার কান চুলকায়।
‘শরৎকে পছন্দ তোর? রিলেশনশিপে আছিস?’
‘ম্যাও’।
‘মানে কী?’
‘ম্যাও’।
কোল থেকে মাটিতে নামিয়ে দেওয়া মাত্র পিংকি খোলা জানলা দিয়ে হাওয়া হয়ে যায়। পুষ্যির সঙ্গে যে আগলপাগল কথোপকথন চালাবার চেষ্টা করছিল সেটা ভেবেই সঙ্গীতা দমফাটা হাসিতে লুটিয়ে পড়ল। তার নিজেরও একটা হুলোবেড়াল চাই, স্থির করে ফেলল সঙ্গীতা। বিয়ে নয়, একসঙ্গে থাকা নয়। শরীর মনের সাহচর্য যখন যেমন দরকার, ব্যাস আর কিছু নয়। না এত কিছুরও দরকার নেই। ওর শুধু একটা হুলোবেড়াল দরকার। মানুষ যদিও। কোনো কমিটমেন্ট নয়, কোনো অধিকারবোধ নয়, কোনো ঈর্ষা নয়।
‘আমি কি একটা মেনি বেড়াল নাকি?’ সঙ্গীতা নিজের রসিকতায় নিজেই গড়িয়ে পড়ে। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে শরৎ যে অবাক হয়ে ওর কাণ্ড দেখছে সেটা খেয়ালই করল না সঙ্গীতা।
সাঁইত্রিশ বছরের সঙ্গীতা এক শনিবার দুপুরে লাঞ্চের পর প্রায় ষাটের এক পুরুষের কাছে তার কৌমার্য হারাল।
ডাক্তার বেশ সকাল সকালই ওদের দেখা করার নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে গেছিল। পঁয়তাল্লিশ কিলোমিটার দূরের পাখিরালয়ে দেরি করে পৌঁছোলে ভাল ছবি পাওয়ার সুযোগ মাটি, জানা কথা। যে কয়েকটি পাখি ওদের লেন্সের আওতায় এল সেগুলো একেবারেই দুর্লভ কিছু নয়। লেন্সে পাখিদের ধরতে ধরতে ডাক্তার ফিসিফিসিয়ে তাদের সম্বন্ধে ধারাভাষ্য দিচ্ছিল। সঙ্গীতার যদিও মনে হচ্ছিল অনির্বাণের মন পাখিতে নেই। ও অবাক হয়ে ডাক্তারের ক্যামেরাটা দেখছিল, লেন্সটা যেন বড় হতে হতে গাছপালায় হারিয়ে গেছে। নিজের ছোট্ট ক্যামেরাটা বের করার উৎসাহ দেখাল না সঙ্গীতা।
অনির্বাণের চলাফেরা খুব মন দিয়ে দেখছিল সঙ্গীতা। ও কি হুলোবেড়ালের মতো হাঁটে? হুলোবেড়ালের মতো হাবভাব? হুলোবেড়ালদের আচরণ কেমন হয়? সঙ্গীতা ভেবে দেখল তার কোনো ধারণা নেই। ও খুব স্পষ্ট বুঝতে পারছিল ছবি তোলার পর্ব শেষ হলেই কিছু একটা ঘটবে। এই নিয়ে ওদের মধ্যে কোনো কথা হয়নি কিন্তু ভেতরে ভেতরে অনুভব করছিল সঙ্গীতা। তাদের যে একটা সুরক্ষিত জায়গার দরকার হবে সেটা বুঝতে সঙ্গীতার অসুবিধে হয়নি। বয়সে অনেকটাই বড় মানুষটার কাছে এই সমস্যার একটা সমাধান আছে এমন একটা ভরসা স্বাভাবিকভাবেই ছিল। জায়গাটা শহর থেকে দূরে হবে আর সেখানে খাওয়ার একটা সুব্যবস্থা থাকবে ভেবে ফেলেছিল সঙ্গীতা। ওর অনুমানে কোনো ভুল ছিল না।
‘একটু তাড়াতাড়ি লাঞ্চ করতে কি অসুবিধে হবে তোমার?’ ডাক্তার জিজ্ঞেস করে সঙ্গীতাকে।
‘কিন্তু কোথায়?’
‘হাইওয়ে থেকে একটু ভিতরে একটা থ্রি-স্টার হোটেল আছে। ওদের রেস্টোরান্ট বেশ ভাল’। একটু থেমে যোগ করে, ‘তাছাড়া ওখানে একটা রুমও নিতে পারি আমরা’।
‘ওরা কি অবিবাহিত কাপ্‌লকে ঘর দেয়? আমি তো শুনেছি অনেক জায়গায় দেয় না’।
অনির্বাণ হাসে, একটা প্রশ্রয়ের হাসি। ‘আমার সঙ্গে যখন আছ তখন এসব ব্যাপারে তোমার মাথা না ঘামালেও চলবে। তোমার আইডি-ও ওরা দেখতে চাইবে না, আমার আইডি-ই যথেষ্ট। হোটেলটা সস্তাও নয়, সন্দেহজনকও নয়। নিজেই দেখতে পাবে’।
আগের দিন সন্ধ্যাবেলায় ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল সঙ্গীতা। নজর করে দেখে একটা সাদা চুল সামনের দিকে চলে এসেছে। একবার ভাবল ইনস্ট্যান্ট কালার দিয়ে রং করে নেয়। তারপর সেই চিন্তা দূর করে দেয়। অনির্বাণ অতো খুঁটিয়ে দেখবে না সে বিষয়ে ও নিশ্চিত ছিল। আসলে নজর তো থাকবে অন্য কোথাও, নিজেকে বুঝিয়েছিল সঙ্গীতা। নিজের কুর্তিটা খুলে ফেলে বগলের তলাটা দেখে সঙ্গীতা। না, যথেষ্ট মসৃণ আছে। নিজের বুক জোড়ায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দেখে। পছন্দ হয় না নিজেরই – বড় নয়, নিটোল নয়, বৃন্ত দুটিও ছোটই, বিভাজিকায় একটা কাল তিল আরও অপছন্দের কারণ হয়। পাজামাটাও খুলে ফেলে সঙ্গীতা। ডান দিকের হাঁটুর পিছনে একটা ছোট্ট ঢিপি মতো হয়ে আছে। তেমন কিছু অবশ্য নয়, সঙ্গীতা সেটাকে উপেক্ষা করে। ঠিক ভুঁড়ি নয় তবু একদম নির্মেদও বলা যাবে না। কিচ্ছু করার নেই এখন। অনির্বাণেরও নিশ্চয় একটা লুকোনো ভুঁড়ি আছে, নিজেকে প্রবোধ দেয় সঙ্গীতা। নিজের সাঁইত্রিশ বছরের ত্বক যে সিল্কের মতো মসৃণ আর নেই জানে সঙ্গীতা। নিজের উন্মুক্ত উরুতে হাত বোলায় সে। ভিতরে কোথাও একটা দপদপে ভাব জাগবে এমনটাই আশা করছিল, কিন্তু তেমন কিছুই হল না। ওর অজান্তে পিংকি ঘরের অন্য দিকের জানলার কানাচে বসে একমনে সঙ্গীতাকে লক্ষ্য করে যাচ্ছিল। বারান্দার দিকের ভেজানো জানলায় একটা সামান্য ফাঁক যে রয়ে গেছে সে খেয়াল ছিল না সঙ্গীতার। সবার অলক্ষ্যে শরৎ এসে দাঁড়িয়েছিল সেখানে। সঙ্গীতা আর পিংকিকে দেখে তার মুখ বিস্ময়ে হাঁ হয়ে ছিল।
‘এবার বল কী হল, আমার দারুণ এক্সাইটমেন্ট হচ্ছে’। কাপাচ্চিনোতে একটা চুমুক দিয়ে কলকলিয়ে উঠল দীপশিখা। সঙ্গীতার মুখের দিকে কৌতূহলের দৃষ্টি মেলে জমিয়ে বসল। সঙ্গীতা নির্বিকারভাবে একটা তরমুজের স্মুদিতে হাতে ধরা স্ট্র ঘুরিয়ে যাচ্ছিল।
‘তোর তো বিয়ে হয়ে গেছে, একটা বাচ্চাও আছে, জানিস তো কী হয়’।
‘ন্যাকামি করিস না। তোর ডাক্তার বিছানায় কেমন সেটা তো বল’।
‘কী বলব? আমি কি অতো কিছু জানি নাকি? আমার তো এটাই প্রথমবার’।
‘তোর দুরন্ত লাগল? প্যাশনে তেতে উঠে ঘাম হচ্ছিল?’
‘ঘরটা এয়ার-কন্ডিশন্ড ছিল’।
‘ডাক্তারেরটা বড়?’
‘দেখিনি। ঘর অন্ধকার ছিল’।
‘মুখে নিলি?’
‘না’।
‘ও মুখ দিল?’
‘বলল ও কখনো দেয় না। তবে ওকে কেউ দিলে ভাল লাগে। আমার পোষায়নি, আমি দিইনি’।
‘তোর অরগ্যাসম হল?’
‘অরগ্যাসমের ব্যাপারটা পড়েছি। কিন্তু কোনো কিছুতে ভেসে যাওয়ার মতো ফীলিং হয়নি’।
‘সুতরাং পুরোটাই ঠ্যালার আর গুঁতোর খেলা?’
এই প্রথম সঙ্গীতার মুখে একটা হাসির রেখা খেলে গেল।
‘স্বল্পকালীন দমক বলতে পারিস’। ‘তবে অনি বলেছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নতি হবে’, যোগ করে সঙ্গীতা।
‘তোর এই মেইডেন ওভারের খেলা দেখে আমি খুবই হতাশ। তোর এর চেয়ে ভাল করা উচিত ছিল’।
সঙ্গীতা স্ট্রতে চুমুক লাগায়, স্মুদি নেমে যায় কয়েক সেন্টিমিটার।
‘এরপর কবে আবার দেখা হচ্ছে তোদের?’
‘জানি না’।
‘কেন? তোর অনি আরেকবার কিছু করতে চাইছে না?’
‘জানি না’।
‘আরে বিশ বছরের ছোট কারোর সঙ্গে সেক্সের সুযোগ তো পাবে না’।
‘জানলি কী করে?’
‘অনুমান করছি’।
‘তোর অনুমান ভুলও হতে পারে। ওর ফোটোগ্রাফির অনেক ফ্যান আছে, তাদের মধ্যে অনেকেই সুন্দরী আর আমার চেয়ে অনেক কচি’।
‘তারা ওর সঙ্গে শুতে রাজি বলে মনে হয়?’
‘জানি না। তবে অনি তো রাজি থাকতেই পারে। আমার কেমন মনে হল ওই হোটেলে ও প্রায়ই যায়’।
‘সব মিটে যাবার পর কিছু বলেনি সেদিন?’
‘ফেরার পথে বলছিল কোন কোন পাখির ছবি তোলা হল না। ব্যাস, আর কিছু নয়’।
‘আর কোনো দিন ঠিক করেনি?’
‘না। হয় ফোন তুলছে না নাহলে সব সময় ব্যস্ত থাকছে ফোন’।
যে কষ্টটা সবচেয়ে প্রাণে বেজেছে সেটার কথা দীপশিখাকে বলতে পারল না সঙ্গীতা। সেদিন সন্ধ্যায় ফিরে আসার পর অনেকবার অনির্বাণকে ফোন করার চেষ্টা করেছিল সঙ্গীতা কিন্তু ফোনটা সে তোলেনি। সেটা অবশ্য স্বাভাবিক কারণ অনির্বাণের স্ত্রী আছে, ছেলেরা আছে আর পারিবারিক সময়ের চাপ আছে। সঙ্গীতা এর কোনোটাই অস্বীকার করে না। আসলে নিজের অনুভূতির কথা বলতে, অনির্বাণের অনুভবের কথা জানতে খুবই চাইছিল সেই সন্ধ্যায়। কিন্তু হল না। সে রাতে এক গভীর শূন্যতা নিয়ে শুতে গেছিল সঙ্গীতা। পিংকি এসেছিল যথারীতি কিন্তু তার দিকে নজর দেওয়ার মতো মনের অবস্থা সঙ্গীতার ছিল না। খানিক ডাকাডাকি করে, গায়ে গা ঘেঁষেও কোনো প্রতিক্রিয়া আদায় করতে না পেরে চলে গেছিল পিংকি। হয়তো কিছুটা অভিমান, হয়তো কিছুটা আহত বোধ করেছিল সঙ্গীতা সেদিন। তবুও সেটা মেনে নিয়েছিল সঙ্গীতা। যেটা হজম করতে পারেনি সেটা হল তিন দিন পরে যখন ফোন করল। অনির্বাণ যোগাযোগ করার কোনো চেষ্টাই করেনি তাই সঙ্গীতাকেই ফোন করতে হল। সঙ্গীতা জানত যে ওর নাম অনির্বাণ ফোনবুকে সেভ করে রাখেনি, বদলে একটা ছদ্মনাম ব্যবহার করে। ফোনটা তৃতীয়বার রিং করতে এক মহিলা ধরলেন। নিশ্চিত না হলেও সঙ্গীতা অনুমান করল অনির্বাণের স্ত্রী ফোন ধরেছেন কারণ পিছনে পারিবারিক কথোপকথনের টুকরোটাকরা, সাধারণ সাংসারিকতার পরিচিত আওয়াজ ভেসে আসছিল।
‘হেল্লো, কে বলছেন?’
সঙ্গীতা ঢোঁক গেলে। শুনতে পায় পিছনে অস্পষ্ট পুরুষ কণ্ঠের জিজ্ঞাসার জবাবে নারী কণ্ঠ বলছে, ‘আননোন নম্বর থেকে ফোন করছে। মেয়ের গলা। নাম বলেনি’।
‘এটা কি ডাক্তার অনির্বাণ ব্যানার্জির রেসিডেন্স?’ সঙ্গীতা বাধ্য হয় প্রশ্ন করতে।
‘হ্যাঁ’।
‘আমার দাদার জন্য একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাইছিলাম। দাদা ডঃ ব্যানার্জির পুরোনো পেশেন্ট’।
‘কোনো এমারজেন্সি হয়েছে কী?’
‘না, তা নয়। আসলে . . .’
‘তাহলে কাল সকালে চেম্বারে ফোন করে ওনার সেক্রেটারির থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নেবেন। আর কিছু?’
‘না, আর কিছু নয়। ধন্যবাদ’।
সঙ্গীতার কান গরম হয়ে উঠল লজ্জায় আর অপমানে। তাকে ব্যবহার করা হয়েছে। পুরুষটি ছেড়ে গেছে, যেমন পুরুষেরা যায়। নিজের নামটা পর্যন্ত অনির্বাণের ফোনবুকে আর নেই, বোঝে সঙ্গীতা।
দীপশিখা যথেষ্ট ঝানু। সঙ্গীতা কিছু না বললেও মোদ্দা কথাটা বুঝে নিতে ওর অসুবিধে হয়নি। দীপশিখা আর কিছু বলে না। বন্ধুর সান্নিধ্যে কিছুটা হলেও ক্ষতে প্রলেপ পড়ে সঙ্গীতার যদিও প্রকাশ করে না দীপশিখার কাছে।
পিংকিকে কোলে নিয়ে বসে সঙ্গীতা। গুগল করে ‘টমক্যাট’, হুলোবেড়াল। নির্বীজ না করা পূর্ণবয়স্ক বেড়াল। নিজের এলাকা চিহ্নিত করতে প্রস্রাব ছিটিয়ে দেয়। সঙ্গীতা খিকখিকিয়ে হাসে। ঘুরে বেড়ানোর শখ আছে, বিশেষত মাদি বেড়ালের খোঁজে। নিজেকে বেশ ফিটফাট রাখতে পছন্দ করে – সঙ্গীতা মৃদু হাসে। কাছাকাছি কোনো মাদি বেড়ালের গরমি লেগে থাকলে অভিজ্ঞ হুলো সরাসরি তার সঙ্গে লগ্ন হতে যায়। এক থেকে নয় মিনিটের মধ্যে মিলন পর্ব শেষ হয়ে যায়। একবার মিলন হয়ে গেলে হুলো আর মেনি বেড়ালের দিকে ফিরে চায় না, নিজের পথ ধরে। সঙ্গীতা স্তম্ভিত হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত নিজের জুড়িদার পেয়েছে সে!
শরতের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়ে যায় সঙ্গীতা। পরের শুক্রবার বিকেলে। রুটিন অ্যাপয়েন্টমেন্ট। অনির্বাণ ফোন না-ই ধরুক, নিজের চোখে আরেকবার নিজের হুলোবেড়ালকে খুঁটিয়ে দেখার প্রতীক্ষায় থাকে সঙ্গীতা।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes