
কিঞ্চিৎ পরচর্চা – ২২
আধিপত্যবাদের সংস্কৃতি
রূপশ্রী ঘোষ
বড়ো মাছ ছোটো মাছকে গিলে খাচ্ছে। ছোটো মাছ তার চেয়ে ছোটো মাছকে গিলে খাচ্ছে। না খেলেও অন্তত খাওয়ার হুমকি দিচ্ছে। যেখানে যে সংখ্যাগুরু, তারা নির্যাতন চালাচ্ছে সংখ্যালঘুদের উপর। সংখ্যালঘুরা ক্রমশ আরও সংখ্যালঘু হচ্ছে। এদিকে সারা পৃথিবীতেই এখন আধিপত্যবাদের সংস্কৃতি। একদিকে রাশিয়া ইউক্রেনে উপর, অন্যদিকে ইজরায়েল প্যালেস্তাইনে এবং সর্বোপরি বহুজাতিক কর্পোরেট সংস্থাগুলি সারা পৃথিবীর মানুষের উপর আধিপত্যবাদ ফলাচ্ছে। রাজনীতি থেকে অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে পুঁজির আধিপত্যবাদ। আমাদের ঘরের কাছে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচার মাত্রাছাড়া। এ দেশেও সংখ্যালঘুরা অত্যাচারিত হন। রোহিঙ্গাদের উপর মায়ানমারে অত্যাচার ভুলে যাইনি আমরা। কিন্তু এই আধিপত্যবাদ কি শুধুই বাইরে? আধিপত্যবাদ কি ঘরের ভিতরেও নেই? পাড়ায় নেই? অফিসে নেই? স্কুল কলেজে নেই? কোনও না কোনও ভাবে সংখ্যাগুরু সংখ্যালঘুর একটা বাইনারি তৈরি হয়েই যায় সর্বত্র। আমাদের এই বাইনারি থেকে মুক্তি কোথায়? কেন মানুষ আরও আদিম বর্বর হয়ে যাচ্ছে? লিখলেন রূপশ্রী ঘোষ
আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকের পাতায় সেমন্তী ঘোষের লেখা নিবন্ধ ‘যে যেখানে মার খায়’ পড়ে খুব ভালো লাগল। এই লেখাটা আমার মনকে আরও বেশি করে উস্কে দিয়েছে সমাজের তথা গোটা পৃথিবীর বলা ভালো এক বৃহত্তর ক্ষেত্রের চিত্র সম্পর্কে। আমরা যদি তার বিস্তারিত বর্ণনা দিতে সমাজের প্রতিটা বিষয় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি তাহলে দেখা যাবে এটা কেবলমাত্র সংখ্যাগুরু বনাম সংখ্যালঘুর লড়াই ছাড়া কিছুই নয়। একেবারে ছোটো ছোটো পরিসর থেকে শুরু করা যাক, দেখা যাবে হেজিমনি বা আধিপত্যবাদই কেবল চোখে পড়ছে। কেবলমাত্র রাজনীতি বা ধর্মীয় ক্ষেত্রেই নয়, একটি পরিবার থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ের ক্ষেত্রেও, এমনকি স্কুল, কলেজ, পাড়া, শিল্প, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, সমাজনীতি, ধর্মনীতি, রাজনীতি কিছুই এই আধিপত্যবাদের নজর থেকে বাদ যাবে না। রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের লড়াইকেও কি আমরা অস্বীকার করতে পারি? সতীদাহ প্রথা তুলতে বা বিধবা বিবাহ চালু করতে কজনের সই জোগাড় করতে পেরেছিলেন তাঁরা? একটা গোটা সমাজের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বিদ্যাসাগরের মতো লোকের শিরদাঁড়া যেটা পেরেছিল, তা আর কজন পারবে? এখন যদি গ্যালিলিওর ইতিহাসের দিকে তাকাই সেখানেও কী দেখা যায় না একজন বিজ্ঞানী আধিপত্যবাদের চোখরাঙানির সামনে বলতে বাধ্য হচ্ছেন, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে না? দেখা যায় একটা ধ্রুব সত্যকে মেনে নেবে না বলে সংখ্যাগুরুর গোঁয়ার্তুমি। শাস্তি তো দিলেন ঠিকই, তাতে কি সত্য চাপা পড়ে গেল? সংখ্যার গরিষ্ঠতা দিয়ে সত্যকে অবদমন করা যায়, অসত্য প্রমাণ তো আর করা যায় না। তাই আজও পৃথিবীই ঘুরছে। তার সঙ্গে সংখ্যাগুরুরাও ঘুরছে।
আজ প্রতিবেশী দেশে যা চলছে সেই চিত্র কি আমাদের আরও আরও অনেক পুরোনো ছবি মনে করাচ্ছে না? কয়েকদিন আগে ‘দ্য বুক থিফ’ সিনেমাটা দেখে হুবহু আজকের চিত্রের সঙ্গে মিল পাওয়া গেল। খবরে দেখলাম, একটি ছেলে, বেলঘরিয়ায় বাড়ি, সে কিছুদিন আগে বাংলাদেশ গিয়েছিল। হিন্দু এবং ভারতীয় বলায় তার উপর অত্যাচার হয়েছে, মাথায় ব্যান্ডেজ, যাঁরা খবরটা দেখেছেন, তাঁরা জানেন। আশ্চর্যের বিষয় হল ছেলেটি তার বাংলাদেশি যে বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল, সেই বাড়ির সদস্যদের ‘থ্রেট’ করা হয়েছে। ঠিক একই ঘটনা ছিল ওই চলচ্চিত্রে। একজন ইহুদি যুবক এক জার্মান পরিবারে আশ্রয় নেওয়ায় সেই পরিবারকেও কীভাবে ভয়ে ভয়ে সবকিছু গোপন করে কাটাতে হয়েছে এবং নাৎসিরা এসে কী কী করেছে, সবই দেখানো হয়েছে। যাঁরা দেখেননি, একবার দেখে নেবেন। গতকাল যে ইহুদিরা অত্যাচারিত ছিল, আজ সেই ইহুদিরাই কী করে চলেছে প্যালেস্তাইনে? এও তো সবার জানা। আধিপত্যবাদ নাকি অন্যকিছু?
এবার কিছু ছোটো ছোটো দৃষ্টান্ত লক্ষ করা যাক। একটি স্কুলে আমার এক বন্ধুর কথা। তিনি অবিবাহিতা । বাকি বিবাহিতা মহিলারা তাকে কোণঠাসা করে প্রায় প্রতিদিনই কটূ কথা শোনায়। এটা একজন বান্ধবীর ক্ষেত্রে ঘটেছে তাই না, আমারই আরও কয়েকজন বান্ধবীকেও নিয়মিত অপদস্থ হতে হয়। এখানেও সংখ্যালঘুর উপরে দমনপীড়নের প্রশ্ন উঠে আসে। এবার আসা যাক এই স্কুল কলেজের চাকরির বিভিন্ন বিভাগের ক্ষেত্রে। কোনো কোনো স্কুল কলেজে আংশিক সময়ের শিক্ষকদের আধিপত্য বেশি, কোনো কোনোটায় আবার পূর্ণ সময়ের শিক্ষকদের। ওই একই আধিপত্যবাদের গল্প। যারা সংখ্যায় বেশি, তাদের জোর তত বেশি। এবার একটা পরিবারের দিকে তাকানো যাক। বিয়ে না হলে যেমন সহকর্মীদের থেকে শুরু করে বন্ধু বান্ধবদের কাছে কোণঠাসা হতে হচ্ছে, তেমনি বিয়ে হলে কী ঘটে, দেখা যাক। একজন মেয়ে বিয়ের পর যেই শ্বশুরবাড়ি চলে এল, সে হয়ে পড়ল সংখ্যালঘু। এরপর বাকি ঘটনা বলার দরকার আছে কাকে অপদস্থ হতে হয়? সেই পরিবারের একজন সদস্যও তাদের ছেলের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলে? বা বাঁদরামি, লাম্পট্য এসব দেখেও ঠাটিয়ে চারটে চড় মারে? নাকি আরও বেশি করে নানান বিষয়ে তোল্লা দিয়ে মাথায় তুলে রেখে দেয়? উলটে খবরের কাগজে ছাপার অক্ষরে পড়া যায় বা কানাঘুষোয় শোনা যায় যে, কোন বাড়ির গৃহবধূকে কীভাবে মারা হয়েছে বা তার উপর অত্যাচার চালানো হয়েছে।
একটু সংস্কৃতির দিকটায় তাকানো যাক। রবীন্দ্রনাথের বিরোধিতা হয়নি? জীবনানন্দ যখন একা লিখে চলেছেন তখন কতটা স্বীকৃতি পেয়েছিলেন সংখ্যাগুরুদের দ্বারা? আজ হয়তো সবাই জীবনানন্দ আওড়ায়, তখনকার পরিস্থিতিটা ভাবুন। এভাবে এক এক করে আরও বিষয় খোঁজা যাক…। একটা প্রবন্ধের শব্দ সংখ্যা বেঁধে দিলে সত্যিই কি তাতে এত বছরের আধিপত্যবাদের ইতিহাস আঁটবে? ধর্মীয় আধিপত্যবাদ তো একাই একশো। দুদিন আগের ঘটনা, একজন ড্রাইভার কলকাতার রাস্তায় নানা হোর্ডিং দেখে মন্তব্য করল, ‘আর কোনো ছবি পেল না? ওই মুখপুড়ির ছবিই টাঙাতে হল’? একটু থতমত খেয়ে জানতে চাইলাম কোথায় আবার কার ছবি দেখে এসব বলছ? তাতে সে সবটা খোলসা করে বলে, চিত্রটা পরিষ্কার করে দিল সে কোন ধর্মকে সমর্থন করে। এবং আমাদের রাজ্যে কাদের উপর তার রাগ। এও স্পষ্ট করল, চুপচাপ সুবিধাগুলো নিতে হবে ‘ভোঁট’টা আসল জায়গায় দিতে হবে। অর্থাৎ ভিতরে ভিতরে বেশিরভাগ মানুষই আধিপত্য ফলাতে চায়। পারে না বলে অবদমন করে রাখে। সুযোগ সুবিধামতো আস্ফালন কাকে বলে, তাও দেখিয়ে দেয়।
সমাজের প্রতিটা ক্ষেত্র এভাবে সত্যিই যদি আমরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকি, তাহলে ‘হাতে হেজিমনি’ ছাড়া আর কিছুই থাকে না। সঙ্গে ক্ষমতা এবং অর্থ দোসর হলে তো কথাই নেই। ক্ষমতার কথা উঠল, ‘বাংলাদেশ হইছে এক, ভারত তুই আইসা দ্যাখ’ স্লোগানটা শুনে। তার সঙ্গে চূড়ান্ত হুমকি তারা আর কতটা যুদ্ধ উপযোগী হয়ে উঠেছে তার দাবি এবং চারদিনে কলকাতা দখল, গোটা ভারত তো দূরের কথা আমেরিকাও তাদের কাছে টিকবে না, এই সব শুনে। কতটা ট্রেনিং তারা নিয়েছে, আঠারো কোটি লোক আজ এক হয়ে যে কী না কী করতে পারে, সেইসব বাণী বা আস্ফালন টিভি খুললেই দেখা যাচ্ছে, শোনা যাচ্ছে। এটা শোনার পর ঠিক ওই লাইনগুলোর মতো লাগছিল, ‘শৈবাল দিঘিরে বলে উচ্চ করি শির…।’ হাসিও পাচ্ছে, ভয়ও লাগছে, করুণাও হচ্ছে, আর কষ্ট হচ্ছে তাদের জন্য যারা, সত্যি সত্যি ওই স্থানে অত্যাচারটা সহ্য করছে। অপ্রত্যাশিত লড়াইটা যারা লড়ছে, এখন সেই সমস্ত অসহায় মানুষদের জন্য, এই মুহূর্তে প্রকৃত মারটা তারাই খাচ্ছে। কিন্তু দূর থেকে ঘরে বসে আহা উহু ছাড়া কিছুই তো করার নেই কারোর। ফলে সেদিক থেকেও এই সমব্যথী মানুষগুলোও অসহায়। গোঁয়ার্তুমি করে যুদ্ধের আহ্বান করছে ঠিকই, কিন্তু আদতে প্রাণটা কাদের যাবে? উলু খাগড়ার কথা কে না জানে? এত যে সৈনিকের দম্ভ? সৈনিকদের মায়েদের কাছে গিয়ে গিয়ে একবার জানতে চাও তো কোনও সৈনিক বা সৈনিকের মা সেধে সেধে যুদ্ধ চায় কি? দেশের জন্য দাসখত দিয়ে সৈন্য হতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা কোনো শক্তিশালী আধিপত্যবাদ হঠাৎ আক্রমণ করলে এক কথা, তাই বলে হুমকি দিয়ে যুদ্ধের আহ্বান? সত্যিই জানা নেই কী কী পরিস্থিতি সবার জন্যই অপেক্ষায়! আতঙ্ক, ভয় এসব নিয়েই বাঁচাটা অভ্যেস করে ফেলতে হবে মনে হয়। মোদ্দা কথা হল আধিপত্যবাদ দেখাতে মানুষ যা খুশি তাই করতে পারে। এই আধিপত্যবাদ জাহির করতে গিয়ে মানুষ নিজেদেরকে নিজেদেরই শত্রু বানিয়ে ফেলছে। সেটা ব্যক্তি মানুষ থেকে শুরু করে পরিবার, পাড়া, গ্রাম, শহর ছাড়িয়ে একেবারে একটা রাষ্ট্র পর্যন্ত বিস্তৃত। নিজেদের সাময়িক স্বার্থসিদ্ধির কথা ভেবে অকারণ কারণ তৈরি করে নিজেদের শত্রু বানিয়ে ফেলা কতটা যুক্তিযুক্ত কে জানে! যাকে বা যাদেরকে শত্রু ভাবা হয় না, তারা বা সেই দেশ নিজেরা যদি দাবি করে ‘আমি বা আমরা কিন্তু শত্রু’ এবং সেই শত্রুভাব থেকে উস্কানিমূলক কাজকর্ম বা কথাবার্তা বলে, তাদের শক্তি প্রয়োগ করে, উল্টোদিক থেকেও তখন শক্তি প্রয়োগের ব্যাপারটা চলে আসে। এখন তো আর শুধু ফোঁস করলে চলে না, তাই ছোবলটাই মারবে শত্রুর মোকাবিলা করতে। দুষ্টের দমন কে না চায়? কতদিন আর সহ্য করবে, সহ্য করতে করতে স্নায়বিক উত্তেজনা একটা সময় তো বাড়বেই। স্নায়বিক উত্তেজনা চরম সীমায় গেলে শুভ বুদ্ধির মৃত্যু ঘটবে। আর তখনই তার হাতেও যে সর্বোচ্চ ক্ষমতাটা আছে, তা প্রয়োগ করবে। পরিণতি যুদ্ধ। কারোরই কিচ্ছু করার থাকবে না। কিছু ধ্বংস তোমার হবে, কিছু আমার। চলো, দেখা যাক কার কত বেশি ধ্বংস হয়। এভাবেই ব্যক্তি থেকে সমষ্টি সর্বক্ষেত্রে ধ্বংসলীলায় মানুষ মেতে উঠেছে। এবং সব বিষয়েই মানুষ প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে নাম লিখিয়ে ফেলে। চলতেই থাকে প্রতিযোগিতা। রেজাল্ট মরুভূমি হলে থামতে হয়। আর যারা রাঘব বোয়াল, ক্ষমতার আধিপত্য থেকে চুনোপুঁটিদের কোনো সর্তকীকরণ ছাড়াই আক্রমণ করে, তারা তো তাদের নিশ্চিহ্ন করেই ছাড়ে। এ আর নতুন কথা কী।
ক্ষমতা দখল, সেই ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখা বা ক্ষমতার প্রতি আনুগত্য রক্ষার্থে একটা সিস্টেমে তৈরি করে ফেলতে গেলে আধিপত্যবাদের হুঙ্কারই দরকার। কোনো নিরীহ, ন্যাতপেতে আচরণ দিয়ে তা সম্ভব নয়। তবেই তো আবার রক্তকরবী, তাসের দেশ লেখা যাবে। তাহলে এটাই কি ভবিতব্য? আধিপত্যবাদের ইতিহাস লেখা হয়ে গেছে, বর্তমানে রাশিয়া, ইজরায়েল, চিনের আধিপত্যবাদ চলছে, তার সঙ্গে সঙ্গে আরও কত দেশ জাঁকিয়ে বসবে বোঝা যাচ্ছে না। যদি ব্যক্তি পরিবর্তন বা চেতনার পরিবর্তন কিংবা ভাবধারার পরিবর্তন না হয়, তাহলে কি সমষ্টির পরিবর্তন সম্ভব? মনে হয় না। আর এসব পরিবর্তন না এলে সমাজের ছোটো ছোটো পরিসর থেকে বৃহৎক্ষেত্র পর্যন্ত এই আধিপত্যবাদের চোখ রাঙানিতেই জীবন অতিবাহিত করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই আমাদের। আমরা দর্শক মাত্র। আর দু চারটে ক্ষোভের আগুন উগড়ে দেওয়া ছাড়া কিছুই করতে পারি না। ব্যক্তিতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র, পুরুষতন্ত্র, স্বৈরাচার, ক্ষমতা দখলের লড়াই, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার লড়াই সত্যিই কি এসব কোনোদিন পৃথিবী থেকে ধুয়ে মুছে সাফ হবে? কে জানে। একমাত্র প্রকৃতিই বোধহয় পারে নটরাজ হয়ে সমস্ত সাফ করতে। এছাড়া বিকল্প কোনো উপায় আছে বলে তো মনে হয় না। নিজেরা যতক্ষণ না আর্থিক বা ক্ষমতা বা শারীরিক কোনো কারণে অসহায় হয়, ততক্ষণ সে আধিপত্যবাদই চালিয়ে যেতে থাকে। জীবনের প্রতিটা স্তরে প্রতিটা ক্ষেত্রে, তাই একবার হলেও প্রকৃত অর্থে ভিখিরি হওয়া দরকার। অসহায় হওয়া দরকার। সংকট দরকার। নাহলে সে কোনোকিছুর মূল্য বুঝবে না। সেটা ব্যক্তি থেকে সমষ্টি সর্বস্তরে। এভাবে আধিপত্যবাদ কমলেও কমতে পারে। আর নাহলে প্রকৃতি তো আছেই। অপেক্ষা ছাড়া উপায় কী। দম্ভ, অহংকার এগুলো ধ্বংসই ডেকে আনে, পতনই ভবিতব্য। শেষ পর্যন্ত সব যুদ্ধেরই পতন, ফলাফল, কারণ মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় উত্তর লেখা ছাড়া আমাদের হাতে আর কিছুই থাকে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মও তাই লিখবে, যদি ভবিষ্যতে তারা সত্যিই কিছু লেখার মতো অবস্থায় থাকে।
মেজোরিটি – মাইনোরিটি, গুরু-লঘু থাক না একাকার হয়ে। হেজিমনি দূর করতে এত কেন হেজিটেশন!