কিঞ্চিৎ পরচর্চা -২০ <br /> অসঙ্গতির কিস্যা <br />রূপশ্রী ঘোষ

কিঞ্চিৎ পরচর্চা -২০
অসঙ্গতির কিস্যা
রূপশ্রী ঘোষ

অসঙ্গতিতেই ভরে আছে চারদিক। কিন্তু সেই অসঙ্গতিগুলিকেই আমরা জীবনের অংশ করে নিয়েছি। সমস্যা হল, এই অসঙ্গতি এবং বৈষম্যগুলিকে চিহ্নিত করা গেলেও পরিবর্তন করে ফেলা যায় না। কারণ পরিবর্তন করে ফেললে, তা আমাদের জীবনের চিরাচরিত অভ্যেসগুলিকে বদলে দেবে। ব্যবস্থাকেই পরিবর্তন করে দেবে। তখন আমাদের যে এতদিনের বাঁচার অভ্যেস, শ্রেণিবিভক্ত সমাজে শ্রেণি নিয়ে যে চিন্তা, তা পাল্টাতে হবে আমাদের। কিন্তু আমরা কি সেই পালটে দেওয়ার পথে অগ্রসর হতে আদৌ পারব? কারণ পরিবর্তন করার অর্থ হল, নিজেদের চেতনায় আগে এই সব বৈষম্য এবং অসঙ্গতিগুলিকে দূর করা। চেতনায় আসে আগে পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তন এলে, তবেই সামাজিক কাঠামোগুলি বদলে দেওয়ার জন্য ভাবনাও আসে তখন। কিন্তু, আমরা তার জন্য কতটা প্রস্তুত অথবা আমরা এই যেমন চলছে, তেমন চলতে চলতে কতটা সত্যিই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ছি? আদৌ কিছু এসে যাচ্ছে কি? বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যেমন লিখেছিলেন, আমাদের তাতে কতটুকু ক্ষতি, কতটুকু ক্ষতি মিতে/ হাঁ করা জুতোটা অবাধ্য বড়ো, ভালো করে বাঁধো ফিতে।"

রাস্তাঘাটে চলতে গিয়ে কত দৃশ্য চোখে পড়ে। আজকেই যেমন দেখা গেল কিছু ধোপ দুরস্ত সাজ পোশাক পরা মহিলা, পুরুষ, কিছু শ্রমিক শ্রেণির মানুষ আর এক বৈষ্ণব দম্পতি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে। ফুচকা খুব কম দামি খাবার, মুখরোচক এবং প্রায় বেশিরভাগ মানুষেরই প্রিয়, সস্তা একটা খাবার। শারীরিক কারণে খাওয়া নিষিদ্ধ না হলে আমরা কম বেশি অনেকেই সুযোগ পেলে ফুচকা খেয়ে তৃপ্তি উপভোগ করি। আর কম পয়সায় গরিব মানুষের পেট ভরার ব্যাপারটা তো আছেই। পুজো বা বিয়েবাড়িতেও আজকাল সব জায়গায় একজন ফুচকাওলা রাখা হয়। গ্রাম শহর নির্বিশেষে। কিন্তু বক্তব্য হল ফুচকা বা ফুচকার জল নিয়ে নানান খিল্লি থাকলেও আমরা এই সস্তা এবং মুখরোচক খাবারটা খেতে গিয়ে কার পাশে দাঁড়িয়ে খাচ্ছি বা যিনি ফুচকা দিচ্ছেন তিনি কেমন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কিনা, কেউ ভেবে দেখি না। একপ্রকার মিলেমিশেই খাওয়া বলা যায়। অস্বাস্থ্যকর বা রাস্তার মুখরোচক খাবার খেতে গেলে এতকিছু ভাবতে হয় না। কিন্তু যখন একটা দামি রেঁস্তোরায় যাওয়া হয় তখন চারপাশ আমরা খুঁটিয়ে দেখি। টেবিলটা পরিষ্কার কিনা, খাবারের প্লেট, জলের গ্লাস এসবে কোনো নোংরা বা দাগ লেগে আছে কিনা, বা যেখানে খাবারটা বানানো হচ্ছে সেই কিচেনটা কতটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, যাঁরা খাবার সার্ভ করেন তাঁরা কতটা পরিষ্কার জামাকাপড় পরেন বা একই তোয়ালে, গামছা দিয়ে সব প্লেটগুলো মুছছেন কিনা ইত্যাদি প্রভৃতি পুরোপুরি শকুন দৃষ্টিতে আমরা মাপি। রাস্তার যেকোনো খাবারের ক্ষেত্রে এটা কেউ করে না। এ এক অদ্ভুত মনস্তত্ত্ব। রাস্তার ভাতের হোটেলগুলোর বাসন তো কোনো মাসি বা বাচ্চা ছেলে বা কোনো গরিব বয়স্ক মানুষ ধুয়ে থাকেন। রাস্তারই কলের জল দিয়ে কখনো বা গামলায় তোলা জল দিয়েও ধুতে হয়। একই গামলায় একই জল … থাক এত নিঁখুত বর্ণনা না দেওয়াই ভালো। কারও হাতে হাজা, চোখে পিঁচুটি সবই থাকে। কিন্তু খিদের সময় এসব দেখে কেউ সেই হোটেলে খাবে কিনা বিচার করে না। অথচ কোনো অনুষ্ঠান বাড়ি গেলেও কিন্তু একই দৃশ্য চোখে পড়ে। চুলচেরা বিচার। সেখানেও টেবিল, শালপাতা, কাগজের প্লেট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কিনা, বা পাশের ব্যক্তিটি সমগোত্রীয় নাকি লেবার শ্রেণি তা কিন্তু মাপা হয়। ওখানে কিন্তু এক টেবিলে লেবার শ্রেণির পাশে বসে খাওয়া যায় না। এটা বাস্তবে সত্য বলেই সিনেমাতেও দেখা যায়। নায়ককে ছোটোখাটো চরিত্রে অভিনয় করা গরিব মানুষের পাশে খেতে বসতেও দিতে চাননি পরিচালকের ম্যানেজার। যেমন অঞ্জন দত্তের ‘চালচিত্র এখন’ সিনেমায় দেখা যায় নায়ক রঞ্জন যখন জ্যোতিষীর চরিত্রে অভিনয় করা ব্যক্তিটির খাবার খাওয়ার সময় বসে গল্প করছে, এমন সময় ম্যানেজার বিপুলবাবু এসে খুব ধমক দিচ্ছেন ওখানে বসে গল্প করার অপরাধে, আরও বেশি অপরাধ নায়ক হয়ে ওখানে বসেই খাওয়ার কথা বলায়। কারণ তার জন্য ওপরে স্পেশালভাবে খাবার আয়োজন করা হয়েছিল। তারপর রঞ্জনের জেদে ওখানে খাবার এনে দিতে বলা হয়। রঞ্জন বসে বসে দেখছিল ওই গরিব মানুষগুলো কী তৃপ্তি করে খাবার খাচ্ছে। নায়ক যেখানে পরে মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভাবছিল সেখানেও ঘরের দেওয়ালে একটা গরিব বাচ্চা মেয়ের ছবি, আরও ছোটো একটি বাচ্চা কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে। কী অদ্ভূত। এই শ্রেণি বৈষম্য সিনেমাতে দেখানো মানেই সেই সময়টাকে তুলে ধরা। কিন্তু এখন সিনেমায় এসব দেখানো হয় কিনা জানা নেই, বাংলা বাণিজ্যিক ছবি দেখাই হয় না। আর অফবিট যা দেখা হয়েছে তাতে এই দৃশ্য দেখা যায়নি। কোনো দৃশ্য গল্পের উপরই নির্ভর করে। আসলে এই ধরনের কোনো গল্পের সিনেমাই অনেকদিন দেখা হয়নি। তবে বাস্তব যা বলে, তাতে খেটে খাওয়া গরিব, ভিখিরি শ্রেণির মানুষকে এখনো আলাদা করেই দেখা হয়। তাদের মধ্যে যারা লেখাপড়া শিখে বড়ো বড়ো জায়গায় পৌঁছেছে বা স্কুল কলেজে পড়ছে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের বিভেদ এখন আর দেখা যায় না। আগে সেটাও দেখা যেত। ক্লাসে পাশে বসা, পাড়ার না খেতে পাওয়া ছেলেটাকে জাত এবং অর্থনৈতিক অবস্থার নিরিখে বাঁকা চোখে বা নিচু চোখেই দেখা হত। আসলে তো নিচু শ্রেণি সেই মানুষগুলোই যারা এভাবে খেটে খাওয়া গরিব মানুষের বিচার করে তারা। পরচর্চা কোনো মোটিভেশনাল স্পিচ নয়, অনেকটা আত্মসমালোচনাও বলা যায়। আমরা প্রত্যেকেই এখনও কম বেশি একটা অচ্ছুত মনোভাবই বহন করে বেড়াই। পরিচারিকার সঙ্গে আমাদের দূরত্ব বজায় রেখে চলাটা তার একটা বড়ো উদাহরণ। তাদের আলাদা বাসন, আলাদা চায়ের কাপ, আলাদা বিস্কুট আরও নানান আলদা বিষয়গুলোই মধ্যবিত্তের মানসিকতাকে স্পষ্ট করে দেয়। কিন্তু মুখের গোড়ায় খাবার জুগিয়ে দেওয়া তাদেরই দায়িত্ব।

ছোটোবেলাতেও কোনো কোনো বাড়িতে দেখতাম কিছু মুনিষ চা, জল বা মুড়ি খেয়ে থালাটা পুকুর ঘাট থেকে ধুয়ে এনে দিত। জানতে চেয়েছিলাম কারণটা, উত্তর এসেছিল তারা নিচু জাত, তাদের খাওয়া বাসনে ওই বাড়ির লোকরা হাত দিত না। তারা একবার ধুয়ে এনে উঠোনে রেখে দিলে সেগুলো আবার বাড়ির লোকরা ধুয়ে এনে তবে বাসনের জায়গায় স্থান দিত। তবে আমরা বড়ো হতে হতে ওসব অচ্ছুত ব্যাপার কেটে গেছিল। আর একটা বিষয় দেখতাম অনুষ্ঠানের পরের দিন সকালে কাঙালি ভোজন। তারা কিন্তু প্রত্যেকেই চেনা মানুষ। বিনা নিমন্ত্রণে পরের দিন এসে বাসি খাবার পেট ভরে খেয়ে যেত। দুটো কারণ। এক পাশের গ্রাম থেকে বা আরও দূর দূরান্ত থেকে রাতে আসাটা অসুবিধা, আর এক নিমন্ত্রিত যারা তারা তো সেই বাড়িরই আত্মীয়স্বজন বা সমগোত্রের বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশি। ফলে তাদের সঙ্গে ওই নিচু জাত কাঙালি এক সারিতে বসে তো খেতে পারবে না। তাই পরের দিনই আসত। দুপুরের অনুষ্ঠান হলে সবার খাওয়া শেষ হলে বিকেলে খেত তারা। এগুলো যেন খুব স্বাভাবিক নিয়ম ছিল। ফলে গৃহস্থ বা কাঙালি কারোরই এতে খারাপ লাগা বলে কিছু ছিল না। একদিন পেট পুরে খেতে পাওয়ায় তাদের যেমন আনন্দ, সমপরিমাণ আনন্দ কিন্তু গৃহস্বামীরও থাকত। খাইয়ে সুখ এবং খাবার নষ্ট না হওয়া দুটো মিলিয়ে আনন্দ বাড়িয়ে দিত। কত কাঙালি ভোজন করানো গেছে তাতেও একটা চাপা প্রতিযোগিতা থাকত পাশের বাড়ি বা পরিচিত সমগোত্রীয় যেকনো ব্যক্তির অনুষ্ঠানের সঙ্গেই। জিতলে আনন্দ দ্বিগুণ, এ আর বলার কী আছে। তবে এখন এসব সেকেলে ব্যাপার স্যাপার আর একেবারেই নেই। বাসন ধোওয়া তো দূরের কথা এখন সবাই সবার বাড়িতে খেতেও যায়। আর জাত পাতের ছুঁই ছুঁই ব্যাপার সত্যিই নেই এখন। এ বাড়ির ছেলের সঙ্গে ও বাড়ির মেয়ের কিংবা উলটোটার সঙ্গে বিয়েও হয়। একই রকমভাবে অব্রাহ্মণ হয়ে ব্রাহ্মণ বাড়িতে গিয়ে নিজেদের অচ্ছুত মনে করার ব্যাপারটাও ছিল। এসবই সময়ের সঙ্গে কেটেছে। তবে আরও একটা অদ্ভুত ব্যাপার ছিল যেভাবে নিচু জাত বলে দাগিয়ে দিয়ে তাদের খাওয়া বাসনে হাত দেওয়া হত না, মুসলিমদের ক্ষেত্রে কিন্তু এই দুই-দুই ব্যাপারটা ছিল না। তাদের ইদের স্পেশাল খাবার অনেকের বাড়িতে আসত বা বাড়িতে নিমন্ত্রণ করার একটা চল প্রথম থেকেই দেখা যেত। ইদের সময় জামুচাচা, মেজোভাই, হাজরা পিসি সবার বাড়ি থেকেই কিন্তু সিমাই আসত। এছাড়াও অনেক বন্ধু বাড়িতে নিমন্ত্রণ তো হতই কারো না কারো। হিন্দু মুসলিম বিয়ে তো বহুদিন আগেই চালু হয়েছে। যেখানে হিন্দু নিচু জাত অতটা মান্যতা পায় না। সাম্প্রদায়িক বৈষম্য যে দেখতে হয়নি সেটা একটা বিশাল পাওনা। গ্রামে এখনো এই ব্যাপারটা কম আছে। যতটা রাজনীতিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লক্ষ করা যায়, তা গ্রামের থেকে শহরেই বেশি। বা কোনো কোনো জেলার গ্রামে বেশি হলেও সব জেলার গ্রামে সমান নয়। বহু গ্রাম আছে যেখানে হিন্দু-মুসলিম মিলেমিশে বাস করে সবাই। আমার ছোটোবেলায় বা এখনো হয়তো কিছুটা হলেও দেখা যায় রাজনৈতিক দাঙ্গায় মারামারি বা ভাঙচুরের দরকার হলে ওই নিচু জাত বলে যাদের ভাবা হয়, তাদেরকেই মদের পয়সা বা আরও কিছু পারিশ্রমিক দিয়ে দাঙ্গায় পাঠানো হত বা হয়। মুসলিমদের কিন্তু পাঠানো হয় না বা হত না। তারা যেন আলাদা একটা উচ্চ সম্প্রদায়েরই মানুষ। তাদের গরিব বড়োলোক নিয়ে হিন্দুদের মাথা ব্যথা দেখা যেত না অত। যারা লেখাপড়া করত, তারা সবাই সবার বন্ধু। সবাই সবার বাড়ি যেত, খেত, এসব নিয়ে কেউ পাত্তাও দিত না। এখন তো আরোই এসব নেই। সময়ের সঙ্গে বৈষম্য মোছাই দরকার। গরিব, ভিখারি, অনাহারক্লিষ্ট, জীর্ণ শীর্ণ মানুষ না দেখতে হলেই ভালো। এই মানুষগুলোর অর্থনৈতিক উন্নতি কিছুটা হলেও যদি ঘটে তথাকথিত মধ্যবিত্ত বা বড়োলোকদেরও মানসিক উন্নতি একটু হলেও ঘটতে পারে। এখন আর জাতপাত নিয়ে ছুঁচিবাইগ্রস্ত ব্যাপারটা নেই। এখন উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, আর নিম্নবিত্ত তিনটি শ্রেণি আলাদা হয়ে গেছে। কিন্তু আমার একটাই চিন্তা সবাই যদি বড়োলোক বা আর্থিকভাবে স্বচ্ছন্দ, সচ্ছল পরিবার হয়ে যায়, তার পাশাপাশি শিক্ষিত, সেক্ষেত্রে পরিচারিকা বা লেবারের কাজ কারা করবে? শিক্ষিত হলে বা অর্থ থাকলে তারা ব্যবসা বা চাকরি করবে। দিন মজুর বা পরিচারিকার কাজ করবে বলে মনে হয় না। তারা কিন্তু আমাদের মতো অল্পে তুষ্ট নয় এমনটা নয়। একশো দিনের কাজ চালু হতেই গ্রামে চাষের মজুর পেতেও বেগ পেতে হয়। ওরা সারাদিন ওই কাজটাই করতে চায়, টাকার জন্য মাঠের হাড়ভাঙা খাটুনি নিয়ে আর ভাবে না। আর আমরা যে যেমন মাইনে পাই তার বাইরে আরও পেতে ওভার টাইম কাজ করি সুযোগ থাকলেই। আপনারা ভেবে দেখেছেন কি? এটা আমাকে খুবই ভাবায়। গ্রামের মানুষ নিয়ে চিন্তা নেই। দু একটা বাড়ি ছাড়া বেশিরভাগ বাড়িতেই নিজেরা নিজেদের কাজ করে নেয়। চিন্তা শহরের মানুষদের নিয়েই। তথাকথিত শিক্ষিত গৃহস্বামী বা মালকিন নামে পরিচিত মানুষগুলোকে কিন্তু আবার লক ডাউনের মতো ঝাঁটা, বালতি, ঘরমোছা তোয়ালে, হেঁশেল সবই সামলাতে হবে। নারী পুরুষের সমান অধিকারের দাবির মতো সমস্ত শ্রেণির মানুষের আর্থিক সমতা দরকার? নাকি বৈষম্য কোনটা? সমতা এসে গেলে চাপ। কেউ আর ট্রেনে করে এসে শহরের বাড়িতে বাড়িতে বাসন মাজবে না বা রান্না করে দেবে না। আর আর্থিক বৈষম্য থাকলে আসবেই। আর লেখাপড়া শেখার নামেও বহু সুবিধা। সেখান থেকেও অনেকটা আয় হয়। এবার সবাই ভেবে দেখুন আর্থিক সাম্য নাকি বৈষম্য? রাস্তায় দাঁড়িয়ে একসঙ্গে তেঁতুল জল? নাকি দামি রেঁস্তোরায় বসে একসঙ্গে অন্য কোনো জল? সবার ভাবনা ও মতামত কী আসে, দেখা যাক।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes