
চিরশ্রী দেবনাথ-এর গল্প
জিনিয়ার শাড়ি
তিনটে আলমারি ভর্তি শুধু শাড়িই। আর দেয়াল জুরে তৈরি বিশাল কাবার্ডটিতে রয়েছে হাল ফ্যাশনের জামা কাপড় থেকে শুরু করে লম্বা ঝুলের স্কার্ট , টপ, কুর্তি ইত্যাদি ।তাছাড়া হাজার রকমের জুয়েলারি। জানলার কাছের আলমারিতে সব সিল্কের শাড়ি। এটা খুলতেই জিনিয়ার সামনে ধুপ ধুপ করে পড়ল দুটো পৈঠানি সিল্ক , ডিজাইনার ব্লাউজ সঙ্গে ম্যাচিং গয়নাও রয়েছে। পরা হয়নি। কোনমতে ঠেলেঠুলে শাড়িগুলোকে ঢুকিয়ে রাখল জিনিয়া। আজকাল পোশাকআশাকের একদম যত্ন নিতে ইচ্ছে করেনা ওর ।মনে হয় শুধু দিয়ে দেয় সবকিছু। এখানে রাখা বেশিরভাগ শাড়িই কোনদিন আর পরা হবেনা জিনিয়ার। কারণ যাওয়ার জায়গাই নেই । কখনো যাবে বলে কিনে রাখা। অথচ আজকাল নেমতন্ন নেই। জিনিয়ার জীবনে এখন কোনো গল্পই নেই।
কেন এতো পোশাক জমাল অকারণ। কেনই বা এই সব উপহারের সম্ভার তার হাতে তুলে দিয়েছিল লোকজন ।
সেদিন নেটে একটি আর্টিকেল পড়তে পড়তে জিনিয়ার মাথাটা আরো ঘুরে গেছে। পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে মানুষের অতিরিক্ত পোশাক কেনা। এক একটি ড্রেস তৈরি হতে কত লিটার লিটার জল খরচ হয়। তারপর মানুষ অপ্রয়োজনে পোশাক কেনে। কিনতে কিনতে একসময় ক্লান্ত হয়ে যায়। তার মতো অনেকের কাছেই জমছে শুধু অপ্রয়োজনীয় শাড়ি কাপড়।
জিনিয়ার জীবনে একটি চরম হতাশাজনক সময় চলছে। মানে কিছুই ভালো লাগছে না।
কি করলে মনে ভালো লাগাটা ফিরিয়ে আনতে পারে এই কথাটাও ভাবতে ভালো লাগছে না।
মোবাইলটা বেজে উঠল।
বৈশাখী বুটিক । অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোনটা ধরল জিনিয়া।
—-ম্যাডাম প্রচুর এক্সক্লুসিভ শাড়ি এসেছে। পিওর কটনের, একদম গরম লাগবে না। আপনার জন্য কয়েকটা শাড়ি আমি আলাদা করে রেখেছি। কখন আসবেন ম্যাডাম ? একটানে কথাগুলো বলে গেল শর্মিলা। বৈশাখী বুটিকের কর্ণধার শর্মিলার অন্যতম কাস্টমার জিনিয়া। প্রত্যেক মাসেই নিয়মিত শাড়ি কেনে সে।
তাই খুব উৎসাহ নিয়েই অপরপ্রান্ত থেকে কথা বলছিল শর্মিলা।
—শর্মিলাদি তোমরা শাড়ি ফেরত নেবে গো? .
—মানে ?
—-তোমার ওখান থেকে কেনা তিনটে কাঁথা স্টিচ, দুটো আসাম সিল্ক, কয়েকটা হ্যান্ড পেইন্টেড লিনেন , বিষ্ণুপুরী সিল্ক সব আমার একদম নতুন রয়ে গেছে গো ।কোথাও যাওয়া হয়নি শাড়িগুলো পরে। আমাকে টাকা দিতে হবে না। তুমি জাস্ট শাড়িগুলো ফেরত নিয়ে নাও।
—কি বলছেন গো ম্যাডাম । আচ্ছা এখন রাখি।
খানিকটা থতমত হয়েই ফোন রেখে দিল শর্মিলা।
আগে নিত্যনতুন শাড়ি পরে ফেসবুকে পোস্ট দিত জিনিয়া।
শহরের বিখ্যাত সব বুটিক থেকে কেনা এক্সক্লুসিভ শাড়ি।
দুবছরের মতো ছিল এই শখ। এখন নিজেকে সঙ মনে হয়। ছেড়ে দিয়েছে।
হাজবেন্ডের সঙ্গে পার্টিতে গেলে কিছু শাড়ি লাগে বটে ।
গভীর অবসাদে আজকাল জিনিয়া এইসব উদযাপন থেকে সরে গেছে।
তার মধ্যে যে এই রোগটা বাসা বেঁধেছে এজন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। কাউকে নিয়ে যেতে হবেনা। সে নিজেই যেতে পারে। শহরের সবই তো চেনা । কিন্তু যেতে হলে যে মিনিমাম মানসিক উৎসাহটা দরকার সেটাই তো জিনিয়া খুঁজে পাচ্ছে না।
পুরো বাড়িতে একা একা কিছুক্ষণ ঘুরল জিনিয়া। একবার বাবানকে ফোন করতে ইচ্ছে হল। তারপর মনে হলো হাজার মাইল দূরে থাকা ছেলে হয়ত পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত । গা ছাড়া কয়েকটি কথা বলবে । তারপর ফোন রেখে দেবে। কী দরকার!
আবার নিজের ঘরে ফিরে এলো জিনিয়া।
তিনটে আলমারিই খুলে ফেলল।
তারপর ঘরময় জিনিস ছড়াতে লাগল ।ঠিক ছড়ানো নয়। এক অন্যরকম গোছানো।
ভাগে ভাগে শাড়ি , জুয়েলারি , হ্যান্ডব্যাগ , জুতো সাজালো। বেশ দোকান দোকান লাগছে ।
জিনিয়ার এক শিক্ষকমশাই বার্ধক্যে পৌঁছে নিজের অসংখ্য বই নিয়ে খুব সমস্যায় পড়েছিলেন তখন তিনি রীতিমতো ঘোষণা দিয়েছিলেন বইগুলোর ব্যাপারে ।তারপর প্রতিদিন ওনার বাড়িতে লোক আসত বই নিতে। আস্তে আস্তে বহু যত্নে তৈরি করা নিজের বইয়ের সম্ভার এক সপ্তাহের মধ্যে ফাঁকা করে দিয়েছিলেন । সবচেয়ে প্রিয় জিনিসও একসময় ভার হয়ে ওঠে এটাই হতাশার।
কিন্তু জিনিয়া তো এগুলো রাখতেই পারে। অথচ তার বোঝা মনে হচ্ছে। সে নিজেকে অন্য কোনকিছুর মধ্যে খুঁজতেও যাচ্ছে না।
কঠিন পরিশ্রম করে যেসমস্ত মহিলারা সংসার চালায় তাদের তো উটকো মনখারাপ নেই। ম্যাচিং ড্রেসের কথাও কি সবসময় ভাবে ?
ভালো জীবনটা অসহ্য লাগছে জিনিয়ার।
আর সব রাগ গিয়ে নিজের অজস্র পোশাকের ওপর পড়ছে।
নাহ্ বিনে পয়সায় শাড়িগুলো ছাড়া ঠিক হবেনা। লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়বে জিনিয়ার হাজবেন্ডের ফ্ল্যাটে। অনিকেত প্রচণ্ড বিরক্ত হবে।
তার চাইতে ফেসবুকে নিজের একটি মোবাইল নং দিয়ে ছোট্ট এড দেওয়া যায়। রীতিমতো অ্যাডভেঞ্চার মনে হচ্ছে জিনিয়ার।
ওর নিজের তিনটি মোবাইল নাম্বার আছে। এর মধ্যে একটি নাম্বার আছে , তেমন কারো কাছে দেওয়া নেই, সেই নাম্বারটাই নাহয় দেবে।
শুধু নাম্বার নয়। পাঁচ মিনিটের মধ্যে সেই নাম্বারে নিজের একটি ফেইক আইডিও ফেসবুকে খুলে ফেলল জিনিয়া ।
অনিকেত কি অসন্তুষ্ট হবে। ওর আভিজাত্যে ধুলো লাগবে নাতো?
লাগলে লাগুক । অনিকেত অভিজাত। জিনিয়া তো অভিজাত নয়। অনিকেতের শরীরের সঙ্গে লেগে থাকতে থাকতে সামান্য সোনালি রঙ ধরেছে মাত্র । জিনিয়া তো সাধারণ ছিল, নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের সুন্দরী মেয়ে ।
দুপুর তিনটে থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কেনা বেচার সিডিউল ধার্য করেছিল জিনিয়া। পরদিন ঠিক দুপুর তিনটেতেই কলিং বেল বেজে উঠল। জিনিয়া অবশ্য শোবার ঘরে আর আয়োজনটা রাখেনি। নিচের তলায় একটি খালি রুম আছে,
কাজের লোকের সাহায্যে সব জিনিস ওখানে নামিয়ে এনেছে।
দরজা খুলে যে মহিলাকে দেখল তাকে চিনতে দেড় মিনিট সময় লাগল । জিনিয়ার স্কুলের বান্ধবী নয়না। নয়না এ শহরেই থাকে জানা ছিল নাতো !
তুই বুটিক দিয়েছিস জিনিয়া?
না রে। কি বলব যে তোকে। চল্ গল্প করব। বলছি যে আসলে আমি আমার নিজস্ব কিছু পরা এবং না পরা শাড়ি দিয়ে দিতে চাইছে। সম্পূর্ণ বিনেপয়সায় দিলে ভিড় সামলাতে পারব না। তাই অল্প দাম নিচ্ছি। কিন্তু তুই?
নয়না হেসে বলল আমি তোর মতো তত বড়লোক বাড়ির বউ নই রে জিনিয়া। তাই তোর বিজ্ঞাপন দেখে ভেবেছিলাম অল্প দামে কিছু শাড়ি কিনে নেই। দুটো মেয়েও আছে আমার। ওদেরও ভালো শাড়ির খুব শখ।
সরবত মিষ্টি খাইয়ে পাঁচটি শাড়ি , কিছু ম্যাচিং ইমিটেশন জুয়েলারি নয়নার হাতে বিনামূল্যে তুলে দিল জিনিয়া।
কিন্তু নয়নার চোখে যেন তখনও লোভ চকচক করছে। এই জিনিসটা ভালো লাগল না জিনিয়ার।
সব একজনকেই দেবে নাকি। আরো লোক তো আসবে।
কিন্তু অনেকক্ষণ হলো আর তো কেউ এলো না শাড়ি নিতে।
পাঁচটা বাজার একটু আগে একজন অবশ্য এলো। বছর পঞ্চাশ হবে বয়স ।
জিনিয়া প্রথমেই ক্লিয়ার করে দিল আন্টি শাড়ি, জুয়েলারি ব্যাগ প্রায় সবই একবার একবার ইউজ করা কিন্তু।
তাতে কি হয়েছে। একবার ইউজ করলেই শাড়ি পুরনো হয় না , তুমি আমাকে কিছু শাড়ি দাও l
ভদ্রমহিলা জিনিয়ার কাছ থেকে দুটো কাঞ্জীভরম সিল্ক , দুটো জামদানি পাঁচশ টাকা করে কিনে নিয়ে নিলেন।
তারপরই জিনিয়া বিক্রিবাঁটা বন্ধ করে দিল। পাঁচটা বেজে গেছে । আরো কয়েকবার বেল বাজল কিন্তু জিনিয়া ড্রাইভারকে দিয়ে বলে পাঠাল আজ আর বিক্রি হবেনা।
ঘুমোবার তোড়জোর শুরু করল জিনিয়া , বেশ ঘুম পাচ্ছে তো।
মোবাইলটা বেজে উঠল । অনিকেত , ওপাশে ঝাঁঝালো গলা , জিনিয়া কি শুরু করেছো?
শহরে আমার একটা প্রেস্টিজ আছে। স্ত্রীকে দিয়ে দোকানদারি করার কথা তো আমি কখনো ভাবিনি , তোমার সময় কাটানোর উপায়ের অভাব হচ্ছে আমাকে বলতে পারতে। হাতখরচের জন্য তো দেদার টাকা দিচ্ছিই , না সমাজসেবা করার লোভ হচ্ছে? তাহলে ক্লাবে জয়েন করো কতদিন আগেই তো বলেছি , এখুনি বন্ধ করো এসব, আমি বাড়িতে নেই আর তুমি কি শুরু করেছ? হাজার হাজার টাকা দামের দামী শাড়িগুলো তোমার স্বামীর টাকাতেই কেনা কিন্তু। যখন বেরোবে আমার সঙ্গে তখন যাতে ভালো লাগে দেখতে তাই কিনেছিলে, এখন হঠাৎ করে কি হলো?
জিনিয়া ঠান্ডা গলায় বলল অনিকেত রাখছি , কিছু না , সবকিছু বোঝা মনে হচ্ছে শুধু …
জিনিয়া অবশ্য জিনিস বিক্রি বন্ধ করল না ,
অনিকেতও বাড়ি আসতে দেরি করল কয়েকদিন এবং চার পাঁচদিনের মাথায় জিনিয়ার প্রায় সমস্ত শাড়ি, ইমিটেশন জুয়েলারি , ব্যাগ মানুষ নিয়ে গেল।
জিনিয়া জেনে গেল এই শহরের অনেক মেয়ের গল্প, কত শখ মেয়েদের । তার শখগুলো এভাবে মরে গেলো কেন ?
আজ ফাঁকা ঘরে ঘুরছে জিনিয়া। কাবার্ডে কয়েকটা ঘরে পরার কাপড় আর বাইরে যাবার জন্য দুটি হ্যান্ডলুমের শাড়ি। এতোটা নির্লোভ সে হলো কি করে! গভীর আশ্চর্যের ব্যাপার ।
একটি একটি শাড়ির সঙ্গে আলাদা আলাদা স্মৃতি। স্মৃতি জমাতে চায় না জিনিয়া। স্মৃতি মানুষকে পিছিয়ে দেয়। নস্টালজিক ব্যাপারে মাথা ঘামায় শিল্পীরা, লেখকরা ।
জিনিয়া আসলে কি?
একটা লিস্ট বানালে জিনিয়া সবগুলো পরিচয় লিখে পাশে ক্রস চিহ্ন এঁকে দিত। যেমন
পারফেক্ট গৃহবধূ, স্বনির্ভর আত্মবিশ্বাসী মেয়ে ,
কর্মঠ বউ , আদর্শ মা , লাভলি ওয়াইফ ইত্যাদি । সে আসলে একটা বিগ জিরো।
শাড়ি জুয়েলারি বিক্রি করে ট্যোটাল চল্লিশ হাজার টাকা পেয়েছে জিনিয়া। সম্পূর্ণ বিনামূল্যেও কিছু জিনিস দিয়ে দিয়েছে।
কম টাকা নয়ত !
এই টাকা অনিকেতকে দিলে সে ভীষণ রকম চেঁচামেচি করবে। জিনিয়া এই চেঁচামেচিটাও উপভোগ করতে চায়। বহুদিন হয়ে গেছে অনিকেত ওর ওপর রাগ করেনা, জোর করেনা।
সকালে ঘুম থেকে উঠে জিনিয়া মনে মনে ভাবতে লাগল কোথাও বেড়াতে যাওয়া যাক। কোন শাড়িটা পরা যায়। হঠাৎ মাথায় এলো ওর তো শাড়িই নেই। দুখানা হ্যান্ডলুমের শাড়ি রয়েছে শুধু। ভীষণ মনখারাপ হলো কিন্তু মুহূর্তের জন্য।
মনখারাপ মানেই নিজের কাছে হেরে যাওয়া।
জিনিয়া এখন থেকে আর হারবে না নিজের কাছে।
কিন্তু ভাঙনটা যেন থামছেই না মনের ভেতর । নাহ্ শাড়ির জন্য মনখারাপ নয় , সে এক অন্য মনখারাপের ক্রমাগত ঢেউ , কেন আসে কোথা থেকে আসে কেউ জানে না।
জিনিয়া ঘুরতে বেরুলো ।
আকাশি রঙের নরম সুতির শাড়ি তাকে আরাম দিচ্ছিল খুব। পার্সে সামান্য টাকা। এটাই তো জিনিয়া।
আরে ওর শাড়িটা না ! লতাপাতা আঁকা হালকা সবুজ রঙের অ্যরগাঞ্জা শাড়ি পরে মেয়েটাকে কী মিষ্টি দেখাচ্ছে। দুবছর আগে প্রবল এক কালবৈশাখীর পর বিকেলবেলা বেরিয়ে একটি বুটিক থেকে এই শাড়িটি কিনেছিল জিনিয়া। কী কারণে সেই বিশেষ কালবৈশাখী হয়েছিল হঠাৎ মনে হওয়ায় খুব লঘু কারণ মনে হলো সেটাকে। না শাড়িটার সঙ্গে এই মেয়েটা ওর গল্পটাও নিয়ে গেছে। তাই তো যেন এক অণু হালকা লাগছে নিজেকে।
রাস্তায় একা একা হাঁটতে বেশ লাগে তো। লক্ষ্য করল কেটে নেওয়া রেইন ট্রি গুলোর পরিবর্তে আবার কিছু কিছু গাছ লাগানো হয়েছে। তারের জালি দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে সেই বৃক্ষ চারাগুলোকে । একটি ছাগলশিশু লোভনীয় চোখে তারের জালির বাইরে থেকে কচি কচি পাতার গাছটিকে দেখছে। কী উৎসুক সেই চেয়ে থাকা!
জিনিয়া অবাক হয়ে দেখল সামনে যে দুজন মহিলা আসছে তারাও জিনিয়ার শাড়ি পরেছে।
দুটোই জিনিয়ার জন্মদিনে উপহার পাওয়া শাড়ি, .এই পৃথিবীতে জন্ম নিয়ে জিনিয়া আসলে কি করল? অফুরান পোশাক পাওয়ার লোভ আর কিনে ফেলা এর বেশি কিছু নয়। কিন্তু
আজ কি সবাই শুধু জিনিয়ার শাড়িগুলোই পরবে বলে ঠিক করেছে। শাড়ির সঙ্গে যে ওরা জিনিয়ার গল্পগুলোও নিয়ে গেছে আর জিনিয়াকে বানিয়ে দিয়েছে পালকের মতো হালকা!