দীর্ঘ কবিতা: রাধাবল্লভ চক্রবর্ত্তী

দীর্ঘ কবিতা: রাধাবল্লভ চক্রবর্ত্তী

নিষিদ্ধতা

১.

নিষিদ্ধতার ভেতর একটি গাছ বেড়ে ওঠে। তুমি
তাকে প্রেম বলো, আমি বলি: বেঁচে থাকা।
সঠিক সংজ্ঞা নেই, অথবা নেই বর্ণনা করার
ভাষা; যে আরও দীর্ঘকাল থেকে যেতে পারেনি,
কিন্তু, থেকে যেত, তুমি তার প্রশ্ন শুনেছ,
কিন্তু বোঝোনি অভাব — কেবল স্পর্শ, সুখ
নয়, বরং তাদেরও কিছু একান্ত নিরাপত্তা আছে।
বলয় ছেড়ে যত চলে যেতে থাকো দূরে,
ভাবো: এত হীন হ’য়ে ওঠা আগে কি বুঝিনি?

তোমার যাওয়ার এক মাধুর্য থাকে। বড় বেশি
একা হ’য়ে বুঝে নিতে হয়। তোমার অতৃপ্তি,
তারও এক মাধুর্য আছে। যদি বলো ফিরিয়ে
আনাই তাকে সম্বল দেবে, তবে তো প্রশ্ন
ওঠে; তোমার উত্তরের অপেক্ষায়, দাবিতে নিবিড়
বাঁচা ভরে যায়। এত যে কুঠার হাতে এগিয়ে
আসে ওরা, কেবলই কি ছায়ার ভেতর আশ্রয়
খুঁজে নিতে? নাকি আছে অন্য মানে এই চেয়ে
থাকার? নিষিদ্ধ হয়নি যদি এখনও, তবে, একটি
গাছ বেড়ে উঠুক তার ভেতরে — আমি তাকে
প্রেম বলব, তুমি বলবে: বেঁচে থাকা।

২.

তোমার শরীর আচ্ছন্ন হ’য়ে আছে হাজার ছায়ার
শরীরে। অনূঢ়া শস্যক্ষেতের কথা ভাবো যদি,
প্রতিটি অবসাদ যেন খসে পড়ে। দীর্ঘ হ’য়ে
ওঠা কেবল চেতনা ছিল না; বরং ছিল তাতে
অনেক গেরিলা-পদ্ধতি। যখন গভীর রাত টলমল
পায়ে বাড়ি ফেরে, তুমি তাকে শোনাতে পেরেছ
মাত্র কতবার সারাটি দিনের আবিলতা ও বয়ান?

বস্তুত, নীরবই থেকে গেছ। তোমার স্বভাব, ধর্ম,
কুল নিয়ে। আশ্চর্য যা কিছু উঁকি দেয়,
সবই তুমি অন্ধ করেছ ক্রুরতায়! ভাবো ঠিকই,
‘আর কত দেবে প্রভু? আর কত নেবে?’ —
যখন গভীর রাত টলমল পায়ে তোমার নিকটে
পৌঁছায়, যখন সে কেবল তোমার, যখন সে
তুমি ছাড়া অন্ধ, আর কারও নয়,
তখন তুমি কি ভাবনি এই কথা?
‘নিষিদ্ধতায় আছে এত সুখ যদি,
নিষিদ্ধতাই হোক আমার পরিচয়…’

৩.

এই অন্ধের মতো চেয়ে থাকা আমার জন্য
যেন প্রস্তাবিত ছিল না। তবু যে কেন
আমি এতটা সফল হয়েছি, বোধগম্য হয় না
খুব বেশি। সমস্ত অন্ধকারে আলোর পেখম
মেলে কারা বাইজির মতো নেচে গেল, তার
কিছুই জানি না। সমস্ত আলো থেকে কারা
শুষে নিল অন্ধকারের কণাগুলি, জানো কি
কিছু? তুমি তো দীর্ঘ হও, তুমি তো
একলা হ’য়ে ওঠো দিন প্রতিদিন, মানুষের
সহযোগে? নাকি একা একা? অতুলনীয় যেন —
যেহেতু সহজ বোধের বাইরে তোমার অবাধ বিচরণ।

এখানে গতি আছে; হ’তে পারো এখানে চারিত।
ট্রিগারে তল্লাশি ক’রে, পাওয়া গেছে জড়তার ছাপ;
কান্নায় বর্তমান মিশে আছে; মিশে আছে অতীতও;
প্রত্যেকে বলে ওঠে যেন একই কথা। শুনি :
‘দেখা হওয়াটা অলৌকিক ছিল; না-দেখা হওয়াটা ছিল পাপ!’

৪.

আশ্চর্য নেশায় ডুবে আছ নিশিদিন। যেন কোনও
পাপ নেই, যেন কোনও সাড়া নেই, সহায়তা
নেই। কালিমা মেখেছ কার তত্বাবধানে, জানা
নেই তা-ও। কেবল হতাশ করেছে দৃষ্টি ও দূরত্ব
আমাকে। কোনও প্রেরণা নয়, কোনও প্রতিযোগিতাও
যেন নয়, তবু আমাদের ছোট থেকে বড় হ’য়ে
ওঠা — হতাশ করেনি ঘটনাটি বড়। ছোট হ’য়ে,
আরও নিচু হ’য়ে মিলে যাও ভিড়ে ও গ্রাফে।
৫.

তোমার কোনও দুঃখ নেই। তোমার নেই কোনও
প্রতিবন্ধকতা। কেবল স্বপ্নের ভেতর যুগান্ত
পেরিয়ে তোমার আসা, এবং আমাকে দু’টুকরো
ক’রে চলে যাওয়া! এক মুখ হাজার চরিত্রে
উন্নীত হয়েছে — উপযুক্ত কতখানি, প্রশ্ন থাকে।
সমবয়স না কি প্রশ্ন থাকে। ঘন পাতার চাদর
ভেদ ক’রে, যেন মাথার ’পর চাপে রাহুর
ছায়া। এ কেবল একরৈখিক নিষিদ্ধতা নয়,
বরং ভিন্নতা। তোমাকে তোমার মতো ভাবতে পারিনি
যে, তা নিয়ে তোমার কোনও অভিযোগ নেই
যেন। হঠাৎ এমন ক’রে যুগান্ত পেরিয়ে এসে
আমাকে সচকিত করো, জাগিয়ে তোলো, তা
নিয়ে তোমার কোনও দুঃখবোধ, ক্ষমা নেই যেন!

৬.

এসব ঘূর্ণি বুঝে নিতে হয়েছ দারুণ সচেষ্ট,
ঠিকই, কিন্তু, কোথাও তুমি অর্জন করতে পারোনি
সক্ষমতা। তোমাকে স্থির করাই লক্ষ্য ছিল। অথচ
এমন হ’ল দ্যাখো – ব্যাদান আসে, রাজ্য, রাজনীতি
সমকাল ছুটে আসে। কোথায় তোমার প্রাণ?
কোথায় তোমার বিস্তৃতি? এমনতর জটিলতায়?

আমরা কেবলই ভালবেসে গেছি — ভালবেসে ফেলেছি
কোনও কারণ ছাড়াই, বিপরীত দৃশ্যগুলিকে। বুকফাটা
তৃষ্ণায় বৃহদঞ্চল ডুবে যাওয়া; অথবা, ডুবে যেতে
যেতে তৃষ্ণায় কাতর হওয়া — আমাদের, সব আমাদের।
কেবল আমাদেরই যেন! তোমাকে যত্ন ক’রে সমগ্রে
জুড়েছি যতবারই, বিচ্ছিন্ন হ’য়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছি একা।

৭.

রাত্রি আপতিত হয়। মিনার অথবা স্কন্ধহীন
মূর্তির ওপরে। এই যে জাগরণ, এর কোনও
ব্যাস নেই, ব্যাসার্ধ নেই, কেবল রয়েছে ব্যর্থতা —
দু’হাত বাড়িয়ে আছো। দুলে ওঠো গভীর
হাওয়ার তালে তালে। আজ চোখ মেলে
অথবা চেয়ে দেখো, নিষিদ্ধতা আর তেমন
নীলাভও নয়, বরং আরও বেশি মানবিক।
ভালবাসাটি আজ ভালো ভাষার মতো তোমার
গোপন কথাটি জেনে নিয়ে, বলে দেয় দেবতাকে।
দেবতা উদাসীন, কিংবা হয়তো বধির। সূর্যাস্ত
বা সূর্য উদয়ের আগে। প্রশ্ন তুমিও পারো —
‘এত কথা কেন বলো তুমি? এত লেখা
কেন লেখো তুমি?’ — না, উত্তরে কিছুই জানাতে
পারিনি। কেবল যা গোপন ছিল, তা আরও
মুক্ত হয়েছে। যা একান্ত স্তুতি হ’য়ে ছিল
এতদিন, তা রূপান্তরিত হয়েছে চরিত্রবিহীন সংলাপে।

৮.

তুমি জানো যে তুমি মৃত। তুমি জানো
এ-ও, কিয়দকাল পরে বেঁচে উঠবে এবং
ভেসে বেড়াবে এই অস্থিরতায়। তোমার স্থায়ী
কোনও জন্ম নেই, তোমার স্থায়ী কোনও মৃত্যু
নেই; অন্যের হাতে মার খেতে খেতে কী দারুণ
দৃশ্যটিকে অতি ভালবেসে ফেলো। দূরত্ব নয়
কোনও প্রতিবন্ধকতা, প্রতিবন্ধকতা নয় ব্যক্তির
পরিক্রমা; ধীরে ধীরে ডুবে যাও এমনভাবে,
ভেবে নিতে পারে প্রতিভূরা ছলে ভরা গতজন্মের
শরীর নিয়ে। সহজ উপায় জানো। তাই যেন
কত সহজেই কথা হয়। অথচ তারও কত মাত্রা
থেকে যাবে, বা প্রত্যাখ্যান পাবে, তা জানতে
দেওয়া হয়নি কৌশলে। এক দ্বীপ থেকে যাও
অন্য দ্বীপে — তুমি ভাবো স্বাধীন ভাসা কি?
শাসন তোমারও আছে; হয়তো বোঝোনি বা
বোঝাতে পারোনি, তাই দূর থেকে মনে হয়েছে মহান!

৯.

অনুকার থেকে যাবে। তোমার আমার প্রেম এবং
প্রেমহীনতাও। যে নিঃস্ব ছিল না তত, তাকে
কোনও ম্যাজিকের বলে নিঃস্বতার শেষ সীমায়
এনেছ। সকল প্রাপ্তি কেবল তোমারই ঘটে কেন?
(হিংসে হয়!) আমার জন্য পড়ে থাকে হাহাকার —

যে মুখ কখনও ভেসে উঠেছিল আমার মন্ত্র
বলার সময়ে, তাকে গিলে নেয় কোনও বিতর্কসভা!
বহুস্তরীয় তুমি; তা-ই ভাবি। বহু রং, বহু দল।
এখনও আলাদা করা যায়। এখনও কি আর
মুখোমুখি বসা যায় কোনও কারণ ছাড়াই? এই

কেওসের পরে, এই ক্রাউডের ঠিক পাশে —
হাওয়া বদল হ’বে, হকিকত্ জেনে নেওয়া
যাবে। কিছু মুখের বদলও হয়তো হ’বে। (হ’বে?)
চূড়ান্ত গোপনীয়তায় তুমি পুড়িয়ে পুড়িয়ে ফেলেছ আমাদের
যৌথ স্মৃতিগুলি একা একা। কিন্তু থেকেই গেল,
এতকিছুর পরেও, আমাদের অনুকার, প্রেম ও প্রেমহীনতা।
১০.

তোমার অবাধ চলাচল। কোনও বাধা নেই।
চাইলেই ছুঁয়ে দিতে পারো, অথবা ছুঁড়ে দিতে
পারো। পারো না কেবল নিজে মুমূর্ষু হ’তে।
তোমাকেই বারেবারে ঘোরের ভেতর টেনে আনা,
যেহেতু তুমিই আছো; বাকিরা হয়েছে বাতিল —

সহজে বলা যায় তোমাকে এসবও। সবাই তো
তুমি নয়, যে, হত্যা করার আগে বলে
দেবে, কোন ছুরিতে কম ধার! এসবও খুব
সহজে আসেনি; অনেক ভ্রমণ ছিল, অনেক
অবাক হওয়া। চিরাচরিত যদি হ’তে, তবে তো

ঈশ্বর হ’তে না। একলা অন্ধকার ঘরে, যদি
মুখ লুকিয়ে কান্নার ভাষা না-পড়ে নিতে পারতে,
তবে তো তুমি কোনও রূপসী গ্রামের বধূটি
হ’তে না! তাই তো তোমায় বলা — অনেক অপেক্ষা

থাকে, অনেক ভ্রমণ করা। পথে পথে চলাচল
হয়েছে অবাধ। যে যার নিজের মতো আছে;
কেবল তুমি অবলীন হ’য়ে গেছ। এসব কথা
তো আর অন্য কাউকে জানাতে পারিনি, তাই
তোমাকেই বলা। স্থির চোখে অনেক কথা, যা

কখনও বলোনি, আগে, আজ বলেছ, বন্ধুর মতো।

১১.

সমুদ্রে গিয়েছিলে আগে। আজ আবার গিয়েছ।
সমুদ্র তোমাকে কি কাছে টানে? এই বৃষ্টি,
বিরহের দিনে? সে কি তোমার কেউ হয়?
তোমার প্রেমিক? ‘হ্যাঁ’ বলো যদি, বলো,
বৈধ নাকি অবৈধ সে — প্রেম বোঝো তুমি;
কেবল সেটুকুই নয়; বুঝেছ অগাধ ঢেউ,
লবণ, গভীরতা। মুখের ভাষাটি কি বোঝো?
সব কাজ ফেলে রেখে বেড়াতে এলে যেন —
অবেলায় আমার নিকটে বসেছিলে কোনও ছল
ছাড়া। মুগ্ধতা তোমার গড়নে, বরণে।
মুখোমুখি জানাতে পারিনি ঠিকই, তবে জেনে রেখো:
তোমাকে দেখলে মনে হয় বেঁচে থাকা ভীষণ সহজ।

১২.

রাজহাঁসের মতন নিষ্ঠুর তুমি। সারটুকু তুলে নিয়ে,
ফেলে রেখে যাও সম্পূর্ণ অসার। যেমন আমার
লোলচর্ম পড়ে আছে; নষ্ট হয়েছে অপ্রতিভ
কঙ্কাল। এরপরও কি বুঝিয়ে দিতে হবে, হে
বিজ্ঞ, তোমাদের? বিজ্ঞপ্তি যা যা দিয়েছিলাম
আমি, তা পর্যবসিত হয়েছে মিথ্যেয় — সহজতা
উপহারে নয়, বরং গভীর বোধ ক্যানোপি হয়েছে।

দু’বেলা নিঃস্ব হাত দেখে, চমকিত হও। ওই
হাত অন্ন যেন নয়, আগামীর দিনলিপি প্রস্তুত
করে। কী এক নষ্ট নেশা বুঁদ ক’রে রেখেছে
যে তাকে দেখে মনে হয় শান্ত, পাগল —

সুফল পাবে কি? সফল হ’বে কি? প্রশ্ন
এই বারেবারে ফিরে আসে। দীর্ঘ এমনতর হও,
যেন এর আগে কখনও কেউ হয়নি এমন।
এমন ক’রে কথা বলো, যেন অর্থহীন বলা
সেসকল, যেন বিষয়ের বিক্ষেপ ছাড়া কিছু নয়…

১৩.

নৈসর্গিক এই আলো রুদ্ধ ক’রে দেবে তোমার
কুটির, ঘর। তুমি কথা বলো মানুষের সাথে,
বুঝে নিতে, কতটা আসল মুখ তার, আর
তার কতটা মুখোশ। যখন ভেবেছ: সবে তো
সৎকার শেষে ফিরলাম; এখন দীর্ঘদিন
প্রাণ দেখব না। তখনই, ঠিক তখনই, তোমার
দু’চোখ নবজাতকের স্বপ্নে ভরে যায়। পরীক্ষা
প্রতিটি স্থায়ী ও অস্থায়ী চঞ্চলতায়। তুমি
পেরিয়ে এসো। তোমার নখের দাগ গড়াতে
পারেনি শরীরের নিষিদ্ধ স্থানগুলিতে, রথের
চাকার মতন; যুদ্ধক্ষেত্রে যেমন — স্থির থেকে গেছে।

১৪.

বুকের ওপর নামে মুখ আর গভীর ছায়া।
মুখ ঢেকে আছে বস্তুত অন্য মুখের ছায়ায়।
এমনই দিন সেসকল; এমনই রাত সেসকল।
অস্থিরতা, ক্রমাগত বেড়ে চলে অস্থিরতা।
যেন আজ এমন হয়েছে চারিদিক, চাইলেই
থামানো যায়, অথবা সঙ্গে ক’রে নিয়ে যাওয়া
যায় বহুদূর। কে ছিল তোমার বাস্তবিকতায়?
স্বপ্ন-সুখ-সংসার-সঞ্চয়-সৃষ্টি-ভাঙচুর!
এসবের মানে কী? প্রশ্ন কোরো না। মেনে নাও –
যা বলতে চেয়েছি আমি, তোমাদের মিলিত বোধে
তা ধরা দেয়নি। যা বলতে চেয়েছি আমি,
তা তোমাদের মিলিত বুদ্ধিতে অবহিত হয়নি!

১৫.

বাক্‌চাতুর্য তোমার প্রতিটি কথায় ধরা পড়ে।
অপরিহার্য; তাই তাকে ছাড়া সফল হয় না
দিন এবং যাপন । যত তাকে ছেড়ে যাবে
ভাবো, সে আরও কাছে আসে। ভেবেছিলাম,
সরিয়ে দেব; কিন্তু, সরাতে পারিনি। তোমাকে
খুব কাছে আনি যদি, কী পরিচয় দেব?
কলঙ্ক পাবে তুমি। কটুকথা তোমাকে বধির
ক’রে দেবে। আমার দায় থাকে। শাশ্বত নয়
আমার এ জীবিকা। মৃত্যুও দায় তার সরাতে
পারেনি। সে এসে দাঁড়িয়েছে জীবনের পাশে।
অনেক ব্যর্থ দিন অপেক্ষা করেছে রাত্রির; অনেক
ব্যর্থ রাত স্তব্ধ পায়ে এসে, দাঁড়িয়েছে ভোরের সমীপে।

১৬.

সমান্তরাল রেখেছে কে যেন অজ্ঞাতে দু’টি হেঁটে
যাওয়া। গভীর দৃষ্টি নিয়ে দেখো, এ ওকে
এগিয়ে যাচ্ছে কিনা, সে ওকে এগিয়ে যাচ্ছে কিনা।
তুমি আছো, কিন্তু সমস্বর নেই। তোমার স্বর,
প্রতিবাদ, আকুতি অন্য কোথাও কারোর জন্য
রাখা আছে। শরীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সামাজিক।
অন্তরে কী কথা তোমার? অন্য কথা কোনও
আছে? বলে ফেলো — দ্বিধা? লজ্জা নাকি ভয়?
সামাজিক হ’তে চেয়েছিলে যদি এভাবে, তবে কেন
ভয় পাও আজ? মিথ্যে লাগে নিজেকে খুব সামাজিকতায়?

১৭.

ধারণক্ষমতা তার তখনও অনেক ছিল বা আছে।
স্তবক সমান। নীরবতা কারোর কম বা বেশি।
থিতিয়ে পড়োনি, শুরু থেকে তেমনভাবে এখনও
গতিময়। ক্রোধ হয়, তবু কী করার? নিয়ম
রয়েছে আর রয়েছে দায়বদ্ধতা। তুমি বেড়ে ওঠো;
আমি বুড়ো হই। অন্ধকার আরও আলো
দিয়ে গেছে। সহায় হয়েছে। দিয়েছে জাস্টিস।

১৮.

যাতনায় ভরে গেছে জীবন আমার। ক্রমশ
জাজ্বল্যমানতায় ভরে যায়। রচনা থেকে খুলে
পড়ে কপাট, নতুন দিক। যে কিশোরীর ঠোঁট,
মুখ, হাত, হাসি, হৃদয় ও অপরিণত বুক
উত্তাল সময়ের মাঝে ভালবেসেছি, তা শুধু
ব্যর্থ হওয়ার জন্যই! সে তো স্পর্শ পাবে না,
জানবে না। নিজেকে যেন তাই আরও বেশি
ক’রে মনে হয় সর্বংসহা, প্রতারক!

১৯.

তোমার নির্দিষ্ট ঋতু আছে। তোমার নির্দিষ্ট আমন্ত্রণ
আছে। সে লিপি দেখাতে পারোনি। তবু আমি
পড়ে নিতে আসি, গোপনে, নীরবে। এভাবে কাহিনী
জন্মায়; এভাবে কবিতা। নিষিদ্ধতায় কিছু ভালোলাগা
আছে, প্রশান্তি আছে, কল্লোল আছে। মিশে দেখো —

২০.

এখন তোমাদের তুমুল হওয়ার সময়।
এখন আমার দুঃস্বপ্ন দেখা শেষ ক’রে,
পথের ওপর দিয়ে একা হেঁটে যেতে যেতে,
রৌদ্রের ঝলমল গানের প্রশংসা করতে করতে,
আরেক দুঃস্বপ্নের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাবার সময়।

চলে গেলে ব্যথা লাগে খুব? সহজ প্রশ্ন
মনে জাগে: চলে গেলে কেন? থাকা কি
অসম্ভব হ’য়ে উঠেছিল এতখানি? মুখ ফুটে
বলা কি গেছিল না কী ছিল অপরাধ?
এবং ইত্যাদি… ইত্যাদি। পসরাটি ভাসিয়ে

দিয়েছ তুমি — এবার যাবে সে চলে অনেক
নদী পেরিয়ে দূরে, অন্যকোথাও। যেখানে সে
ঘর খুঁজে পাবে, সেখানে সে খুঁজে পাবে
সঠিক পথ। যে পথ দিয়ে চলে গেলে
বস্তুও জীবন্ত হয়, সে পথ দিয়ে চলে

গিয়ে, তোমরা নিজেরা নিজেদের মতো বন্দী
হয়েছ, বন্দী করেছ, তুমুল হয়েছ একা একা।

২১.

সময়টি বড় গতিময়: পায়ে তার দুরন্তপনা।
দ্রুত করো! দাঁড় করিয়ে রেখো না। দিকনির্দেশ
করো, অথবা সঙ্গে তুমি যাও। স্নানের দৃশ্য
পাবে, লিপ্সা পাবে। তোমার ধারালো নখে
অবিক্ষত থাকবে না তুমি। এমন শব্দ তুমি
খুঁজে আনো আজ, যার উভয়দিকে চলন
রয়েছে। অসাধ্য বলেই এত আয়াস। তাকে
নিজের তালুতে নিতে চাওয়া। টুকটাক আমাদের
সুখ ও লালসার শরীর, গন্ধ ভাসে এই শুকনো
হাওয়ায় যথারীতি। কথামতো নয়, কিন্তু সকল
কথা জমা ক’রে রেখেছি এক অত্যাশ্চর্য নীরবতার
কোটরে। যে দৃশ্য সবাই দেখে, দেখে নিতে চায়,
তা-ই কেন দেখবে তুমি? বরং ভিন্ন কিছু দেখো —

সবাই সবাইয়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে এক
নতুন দেখার লোভে। মৃত দেখেও যেমন সবাই
রয়েছে প্রবল আগ্রহে, যদি বেঁচে ওঠে, যদি
জেগে ওঠে, ‘মৃত্যু নয়’ বলে, তথাকথিত ঘুম
থেকে। হয়তো জোরালো নয় তেমন; হয়তো
চমকিত করবার মতো কিছু নয়। যা আসে
প্রলাপ, বলে চলো — যা আসে চেতনা, লিখে
চলো। তোমার মন কি খারাপ? একান্তে এসেছি
মাঝরাতে। জানাতে পারো — অন্ধকার নয়,
এক গাঢ় কালিমা মাখানো রয়েছে যেন, তোমার
অস্তিত্ব, তোমার উপস্থিতি, এবং তোমার সারা গা-য়;
আগামীর ভোরে তুমি স্নানে যাবে, অনিবার্যভাবে,
ব্যঞ্জনা ছাড়া — এবং তোমার স্নানের দৃশ্যটি সেই
প্রতীক হিসেবে মর্যাদা পাবে, কোনও নিষিদ্ধ দেশের জাতীয় পতাকায়।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes