
পায়েল দেব-এর কবিতাগুচ্ছ
লাফ
এক অদ্ভুত রাত্রির সাথে সহবাস হয়, ভীষণ রকম উত্তেজনা,
অন্য জগতের গাছে গাছে ডালিম ফলের রক্তিমা,
লম্বা এতটা যে তাকে প্রত্যন্ত কর তোলে
এক লাফে আকাশ
তারপরের লাফে আকাশ
তিন নম্বর লাফেও আকাশ
কিভাবে যে মানুষের আরাধ্য লিঙ্গের নাম শূন্যতা হয়ে গেল…
কথা বলবার সময় এখন নয়
লেখায় কবিতা আসে না। আমাদের কবুতর দানা খায়।
বকবকুম করে। দিদিরা বৌদির নামে মিছে কথা কয়।
এসবে কবিতা হয় না। সংসার হয়। সংসার হলে আর
কবিতা হয় না। কবিতায় বিবাহ হয়। বিবাহ হলে কবিতা
হয় না।যেটুকু হয় বা হয় না, সেটুকুই আলো। ভালো।
ঘরের পেছনে একটা তালতলা দিঘি। বটের দড়ি নেমেছে
মাটির কাছে। রোদ পোহাতে আসে রাখাল। হাতে বেত।
নেতের অগ্রভাগ কাঁধ পেঁচিয়ে কোমর অবদি যায়। জল।
তখন যেন লালির সময়। খোলা পিঠা। দিদার গন্ধে লেখা।
বাড়তি সংসার। কবিতার জায়গা নেই। সবটাই আলো।
এ জীবন শুধু ঝিঙেফুল। হলুদ অসময়। রোদের ঘুমে
মশারি ফেলেছে দেশের কৃষক। মন শুধু কৃষিকাজ জানে।
বাঁশের কাঁচা বুকে যেমন আঁখি থাকে। মাঝে মাঝে জমে
পোয়াতি জল। নেশা লাগানো মাচা। তাতে কি আর কবিতা জমে।
সংসার জমে। লেখা নেই পড়া নেই। কান্না আর রান্না।
সংসারে পীরিত হয়। কাঁঠালের আঠার মতো জেগে থাকে
তুলসীতলা। সন্ধ্যা প্রদীপ। পুরাতন, প্রায় শেষ সলতে। শীত।
মাটিতে লুটিয়ে পড়ে নরক, জোছনা। একসাথে। মহা রব।
ভাসে হরিনাম। ধুলো। বাতাসের বদনাম লাগে যুগল বয়সে।
কবিতা নেই। পাতানো সংসার। আলো। অসুখের নিরাময়।
মধুবন্তী গ্রাম থেকে নামে বেদেনির ঢল। দুর্বা পাতার হিম।
বিষাদ গাইছে চাঁদ। বিষাদী আমি। এত এত সুখের পরেও।
স্বর্গ যা নরক তা। আমি নৃত্যরত। নর্তকী। পায়ে সুন্দর।
অন্তরে আঁধার। নাভিতে সাগর। আঁখিতে কবিতা। আঙুলে
সংসার। এই নিয়ম। এটুকুই পারাপার। আলো আর ভালো।
শ্রীজাত
———–
তখন গ্রীষ্ম
সমুদ্রতীরে এক উদ্বাস্তু আবাস
রতিক্রিয়া হেতু
নামে পর্বত শৃঙ্গার
আলোকবর্ষ দূরে দুটি দেহভার
লাজ, উত্থিত হয় দণ্ডপিতা
মাটি বর্ণের নিকানো উঠোনের শক্ত ঢেলা
বিনম্র গিরিখাত জুড়ে তখন ব্রহ্মকমল
উন্মোচিত হতে চলেছে দীক্ষাদান
পূর্ণ প্রস্ফুটিত মুহূর্তে এক নিমগ্ন বেলা সঙ্গীত বাজে
বিমোহিত ধ্বনির পর্যায় থেকে
তাদের লগ্ন, বিবাহকাল, আরতি প্রক্রিয়া ঈশ্বর আলাদা করতে পারলেন না
তারা দুইজন যে আলাদা মানুষ, এ কথা ভুল।
প্রেমিক
নিবেদন দেখি
দেখি তাঁর মিহিদানা ভাব
এমন আগর কাঠের দেহ
ছিদ্র করে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় গর্জন
পড়লে বোঝা যায়
আঁখির গোল আসলে দ্বীপ
চারদিকে জল
সাদা কালো ঘিরে বসে আছে কেউ
ভাষা নেই শোনা নেই
এক ইশারা মানব
মিথ্যা নয়
শিকার করবার মতো রাত্রি রোজ আসে না।
মাঝে মাঝে আসে অন্ধকার, মাঝে মাঝে প্রিয় ঋতু
উৎসব স্পষ্ট হয়, শাপগ্রস্ত মহিমা যেমন।
আর আমার জন্যে খুলে দেয় বেদনা কাষ্ঠ নির্মিত দরজা।
খোলা জানালা থেকে ওঠে আসে কিছু নিষ্পাপ পর্দার ঢেউ।
গ্রীষ্মের দুপুর এখানে মৌমাছি। রৌদ্র আঠালো আর দুরন্ত ঘন।
দুই স্তন, উরু বেয়ে একটি তরল সাপ নেমে পড়ছে
আর লিপির পর লিপি বদ্ধ করে বলছে,
” কত পুরুষের প্রেমে পড়া যায়, ভালোবাসতে হলে মনের মত মানুষ হতে হয়।”
গ্রামীণ
———
তুমি মহাকাশ যাত্রা নিয়ে ভাবছ
আমি ভাবি লালঝুরি ছড়াটির কথা।
হরিদ্বারের গঙ্গায় কত শিবলিঙ্গ বিসর্জন দিয়ে গেছে লোকে
তাঁরা স্বপ্নে আসেন
শুকনো, গায়ে গায়ে শীতফাটা দাগ
ভয়ে লালঝুড়িতে ফেলে দিই
শুয়ে থাকেন
সেখানে একদিন একদল কুমির জন্মায়
তারা আগে ঘাস খায় পরে জীবন
তারা আমাকে দেখে, অনেকক্ষণ দেখে, তবু খায় না
খুশি হয়ে আমি আমার জীবন তাদের উপহার দিই
এখন তারা ঘাসের ঝোপের ভেতর বসে জীবন খায়
লালঝুড়ির জলে শ্রাবণ মাসে বৃষ্টি পড়ে না
প্রেসক্রিপশন
——————-
আমার আরোগ্য বিধি আপনাকে বলেছি
সরিষা ফুঁ, রূপার ঠুলে পড়া নিমপাতা তাবিজ
আপনি রেখে দিন
কথা বলুন
কথা কম পড়ে গেলে জীবন ঘুমিয়ে পড়ে
ঘুম আর মৃত্যু সমার্থক প্রায়
ঘুম মৃত্যুর ট্রায়াল এণ্ড এরোর মেথড
চুমু দিন, সংসার বাঁধুন
এইসব আলফাল নস্যাৎ করে
চলুন বৃদ্ধকাল আঁকি
সাদা সারস মেখে উড়িয়ে দিই বৃষ্টির চাল
তারচেয়ে বরং কৃষ্ণচূড়ার নিচে বাঁধি ঘর
ভেঙে দিয়ে উঠে আসি
আমাদের বিরতি চিহ্ন খুলে এঁকে দিই
সাঁতার, সজারু, আর পোনামাছের উপদ্রব