কবির বধিরতা ও নিরীক্ষণঃ সাম্য রাইয়ানের হলুদ পাহাড়  <br /> দী প শে খ র  চ ক্র ব র্তী

কবির বধিরতা ও নিরীক্ষণঃ সাম্য রাইয়ানের হলুদ পাহাড়
দী প শে খ র চ ক্র ব র্তী

হ লু দ পা হা ড় সাম্য রাইয়ান এবং অধ্যায়। মূল্য- ৮০ টাকা মাত্র।

সেই কবিতার প্রতি আমার বিশেষ পক্ষপাতিত্ব আছে যার ভাষা নিজস্ব একটি পথ তৈরি করতে পেরেছে। ভাল কবিতার তিনটি স্তম্ভ বলতে বুঝি- নিজস্ব কাব্যভাষা, ব্যক্তিগত বিপন্নতার ‘না-উল্লম্ফন’ প্রকাশ এবং অতি অবশ্যই দেখার ক্ষমতা। বিশ্বাস করি, কবি যতটা দেখতে পান, তা ‘না-কবির’ দেখার থেকে অনেক বেশি। এই দেখা ভূগোলের নয়। সামান্যের মধ্যে অসামান্য দেখার ক্ষমতা। এই অসামান্য বলে যা লিখলাম তা আসলে, জীবনবোধ এবং দর্শন। অনেক অলংকার পরা অথচ মনের দিক থেকে রিক্ত কবিতা ক্লান্ত করে। সাম্য রাইয়ানের ‘হলুদ পাহাড়’ বইটির মলাটের পেছনে লেখা আছে, ‘নিরীক্ষাপ্রবণ কবি’। নিরীক্ষা (বিশেষ্য) শব্দের মানে পর্যালোচনা অথবা পরীক্ষা। অর্থাৎ শুধুমাত্র দেখা নয়। দেখার পর, তার বিশ্লেষণ। এই বিশ্লেষণ কবির মনের (আত্মার?) ভেতর। কে বিশ্লেষণ করেন? কবির মন, যুক্তিবোধ, অভিজ্ঞতা। দৃশ্য এমনভাবে নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে গিয়ে কবিতার প্রাথমিক আকারের কাছাকাছি যেতে পারে। বলা যায়, কবির মনে এই ‘নিরীক্ষা’ বারবার চলে। অনেকবার পর্যালোচনার ভেতর দিয়ে কবি পৌঁছন তার কবিতার কাছে। মূল রূপটি ছাপার অথবা প্রকাশিত হওয়ার পরেও চলতে থাকে নিরীক্ষণ। আমৃত্যু( কবিতার অথবা কবির)। সাম্য রাইয়ানের ‘হলুদ পাহাড়’-এর প্রচ্ছদে নীল ফুলদানি এবং তাতে শাদা ফুল। ফুলের ভেতরে হলুদের ছোঁয়া। সেজানের ছবির কথা মনে পড়ে। বইটির ভূমিকা ধীমান ব্রহ্মচারীর। প্রথম লাইনে তিনি লিখেছেন- ‘আমাদের চেতনায় যে ছবি সবসময় রঙিন হয়ে উঠতে পারে না, যে ছবি দেখার পরেই মিলিয়ে যায়, সেই ছবিই সাম্য রঙ তুলি দিয়ে এঁকেছেন।’ চেতনায় ছবি। দেখা। সাম্য লিখছেন নিরীক্ষণ। এই দেখা এবং নিরীক্ষণের ভেতরে সাম্য কিছু পংক্তি লিখছেন। পক্ষীরাজের ডানা কবিতায় সাম্য লিখছেন- ‘মাথার ওপরে পৃথিবীময় পাখাটি ঘুরতে ঘুরতে বেলা বাড়ছে, আমার ভয় করছে।’ এইটে পাখার ভেতর দিয়ে দেখা, নিরীক্ষণ। নিজস্ব বিপন্নতাকে মিলিয়ে নেওয়া পৃথিবীর বিপন্নতার সঙ্গে। এই কবিতার শেষ শব্দ, ‘ম্যাডহর্স’। পক্ষীরাজ কেন ‘ম্যাডহর্স’ হয়েছে? পক্ষীরাজের নিয়ন্ত্রণ যখন তার স্রষ্টার হাত থেকে বেরিয়ে যায়, যখন মুক্ত হয় ঘোড়াটি, তখন তা সভ্যতার কাছে ‘ম্যাডহর্স’-ই বটে। কবিতাও কি তাই নয়? এ তো গেল কবিতার কথা। আর কবি? ঠিক পরের ‘জোকার’ কবিতায় সাম্য লেখেন- ‘আমি সেই জন্মবধির, পুরোনো ভঙ্গিতে পোষা দুঃখগুলো খাঁচা থেকে বের করে ময়দানে খেলা দেখাই।’ বধির কেন? সাম্যের কবিতা কি দাঁড়িয়ে আছে কেবলই দৃশ্যের ওপরে? অনেক ক্ষেত্রেই আমার মনে হয় রবীন্দ্রনাথের কবিতায় যেমন গান, জীবনানন্দের কবিতায় তেমনই দৃশ্য। যে কবিতা দৃশ্যপ্রবণ তার গানের কাছে যাওয়ার সুযোগ কম। যেতেই পারে না, এমন বলছি না। তবে গেলে অনেকসময় নিজস্ব মাধুর্য হারায়। সাম্য ছবি লেখেন। তাই কি তিনি বধির? তার বধিরতা কি শক্তি নাকি বিপন্নতা? পুরোনো ভঙ্গিতে তিনি যে খেলা দেখান না, এটা স্পষ্ট। তার প্রকাশ ‘পুরোনো’ নয়। তবে দুঃখগুলো পুরোনো তথা চিরন্তন। কবি কি খেলা দেখান? সে প্রশ্ন অবান্তর। প্রশ্ন এই, কবি কি খেলা দেখাতে চান? ‘ফুলেল ধারণা’ কবিতায় সাম্য লেখেন, ফুলেরা পূর্ণ হবার আগেই চুপচাপ ঝরে যায়। আমি পড়ি, খেলাটি দর্শকের কাছে পৌঁছনোর আগেই চুপচাপ ঝরে যায়। কবির সত্যি এই। সাম্য লেখেন- ‘কোথাও ভরাট হচ্ছে না আর’। অপূর্ণ খেলাটি একটি শূন্যস্থান রেখে যাচ্ছে, যা ভরাট হওয়ার নয়। এই শূন্যস্থানের মানে কী? এই শূন্যস্থানটিই কি ‘হলুদ পাহাড়’? যেখানে হৈ-হুল্লোড় করা নিষেধ? যাকে দূর থেকে গাদাফুল ভেবে ভুল হয় মানুষের? শূন্যস্থানই কি সৌন্দর্যের ধারণা বয়ে আনে? এইসব প্রশ্ন আসে পাঠকের মনের ভেতরে। কতগুলো দৃশ্য তৈরি করেন সাম্য। যেমন-
ক। ‘তামাম রাত এক জীবন্ত কিংবদন্তি, অজগর সাপ।’ (ওপার অজগর)
খ। ‘সম্রাটের ক্ষত-বিক্ষত গণিকার প্রশস্ত গর্জন ক্রমে পুষ্ট হয়ে ওঠে।’ (অপার অজগর)
গ। ‘দুর্গন্ধময় হৃদয়গুচ্ছ বহন করতে করতেই আমরা পৌঁছব নবনীতা জলে;’ (ব্যর্থ হত্যাচেষ্টার পর)
ঘ। ‘প্রভূত বৃষ্টিসম্ভাবনা মেনে দীর্ঘ-শ্বাসের দৃশ্য ছাড়াই আমি গুচ্ছ গুচ্ছ পাখিকে আকার দিচ্ছিলাম।’ (আশ্রয়দাতা)।
ঙ। ‘অনাবৃত পরীদের ঘুমন্ত আস্তাবলে ছড়িয়ে যায় রক্তের নীর সুষমা।’( বিষণ্ণ ছুটিবার)
এরকম দৃশ্যগুলোকে আঁকড়িয়ে এক একটি কবিতা যখন গড়ে উঠছে তখন বুঝি সাম্য যে কবিতা লিখছেন তা একান্তই নিজস্ব। কাব্যভাষা থেকে নিরীক্ষণ, ব্যক্তিগত বিপন্নতা ও উন্মাদনা থেকে উঠে আসছে। পথ, সাম্যই তৈরি করেছেন। কারুর থেকে ধার নেননি। যেমন কিছু ইংরেজি শব্দ মিশিয়েছেন সাম্য। শব্দের ভারসাম্য নিয়ে পরীক্ষা করেছেন। এটি করতে গিয়ে কখনও দ্বিধাগ্রস্ত হননি। শুচিবায়ুগ্রস্ত না হয়ে, যেমন মনে হয়েছে লিখেছেন। এতে করে তার কবিতাগুলো বিশেষ স্বর (সুর বলতে পারছি না) লাভ করেছে। যেমন একটি শব্দ, ‘বানানবিভ্রাট’। অথবা ‘মহাবরিষণে’। সাম্য লেখেন, লিখতে পারেন, ‘স্রোতের ভাগাড়ে নাম লিখে রাখলাম’(জবাগাছ)। ‘অন্ধ কুস্তিগীর’ কবিতায় লেখেন, ‘মধ্যরাতের ভ্রম থেকে সযত্নে স্নিগ্ধ আবেগ তুলে রাখি শূন্যালোকে।’ লেখেন, ‘গোলাপ তুমি কনফিউজড হোয়ো না;’ কেন লেখেন কনফিউজড? বিভ্রান্ত লেখা যেত? দ্বিধাগ্রস্ত? না এখানেই চলে আসে কথাটি, সাম্য যে সময়ে কবিতা লিখতে এসেছেন তখন কেউ দ্বিধাগ্রস্ত অথবা বিভ্রান্ত হয় না। হয় কনফিউজড। সাম্য হননি। তিনি যেমন চেয়েছেন, লিখেছেন। এই দ্বিধাহীনতা তার কবিতার পক্ষে মঙ্গল নাকি অমঙ্গলের সেটি আগামীতে কবিই স্থির করবেন। এই বইতে পাওয়া আমার পরম প্রিয় কবিতা, ‘আপি’।
‘কখনও এমন হয়, বুঝি তার কন্ঠ শুনতে পাই! মায়েরা কথা
বলছেন, আড্ডা দিচ্ছেন উঠোনে, শুনতে পাচ্ছি, তাঁরই তো কন্ঠ…’
সাম্যর এই কবিতাটি গান। বাকিগুলো ছবি হতে পারে। বাকি কবিতার ক্ষেত্রে তিনি হতে পারেন বধির। এখানে তিনি অন্ধ। ছুঁয়ে ছুঁয়ে লেখেন কবিতা। লিখতে পারেন।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes