
রুমেলা দাশগুপ্ত-র কবিতাগুচ্ছ
অনুমেয় তুমি
তুমি সান্দ্র এই বুকের পাঁজরে,
আঙুলের অযাচিত নড়ে ওঠায়,
ঘুড়ি রং বিকেলের স্নেহে।
তোমাকে রোজ রোজ ছেড়ে আসি
কড়ি বরগায়,দেওয়ালের ফাটলে,
গনগনে রোদে অথবা শুকনো গাছের শরীরে।
তুমি যে রঙ ভালোবাসো,দেখি
সূর্যাস্ত বেয়ে নামে।
তুমি যে কথা বলোনি,দীর্ঘ দিন পেরিয়ে সংক্ষিপ্ত আলাপে,
সেসব কথাদের পাড়ি শেষে,
যন্ত্রণা তীব্রতর হয়,
তবু সয়ে যায় প্রেম,অনুযোগহীন,
রয়ে যায় আলোক্রম,
আনমনে এসে পড়ে যদি!!
ঘর
আমার একটা ঘর আছে,
একটা খোলা ছাদ,ছাদে রোদের মায়া।
আছে মেঘলা মনের সুখ,
কাজফাঁকিদের গল্প,সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া।
আছে তারা খোঁজা রাত,
জ্যোৎস্না রঙা শাড়ি,মনকেমনের গান।
আছে শ্যাওলা পড়া দেওয়াল,
শাঁখ বাজানো সন্ধে আর ধূসর পিছুটান।
অপেক্ষা
সূর্যাস্তের অপেক্ষায় জেনো আমি আছি আজকাল,
আকাশের একপ্রান্ত ঘেরে কিশোরীর খোলা চুল,
বিশাল আঁচল জুড়ে বিগত স্বপ্নের কিছু ছাঁচ,
কপালের লাল টিপ,গায়ে লালপেড়ে গাদোয়াল।
তোমার হাতের স্পর্শে বারুদের ছাপ দেখি স্পষ্ট,
দেখাতে চেয়েছ ক্ষত -বাম হাতে জমানো শিরায়,
খুলে গেছে লেখাখাতা, বেআব্রু শব্দের ছুটোছুটি,
পাঁজরের পাশে ফুল সারাদিন বিনয়ে আড়ষ্ট।
আমি শুধু দেখি আলো বিষন্ন গজল ছুঁয়ে রাতে,
তোমার বাড়ির পাশে ওঠে নামে কালো ধোঁয়ারাশি,
অপেক্ষাতে ক্ষয়ে যায় অগুনতি অভিসার,তবু
দু’হাতে ধরেছি ও দুটি’হাত উদগ্র বাসনাতে।।
ক্ষত
ক্ষতটুকু শুধু সারিয়ে তোলার ভার নিয়েছিলে,
বলেছিলে তুমি -সিন্ধুর তীরে খুঁজে দেবে প্রাণ,
স্নানাগার জল, নাগরিক আয়ু।
উজাড় সিঁথির এধারে ওধারে মিশে যাবে রঙ,
আঘাতের সুখে ঘুমিয়ে পড়বে আধখানা রাত,চাঁদের শরীরে বাসনার গায়ে
মুছে দিয়ে যাবে বিষাদের দাগ।
তুমি তো জানতে,সন্ধ্যামালতী নামখানি ছিল বড় প্রিয় ডাক,
সে নামে ডেকেছো অন্য সে জনে,সে অপরাধের শাস্তি মেনেছো যে আলিঙ্গনে;
তুমি বলো আজ,কোন্ সে উপায়ে দেখাবো তোমায়
রক্তক্ষরণ, এ রক্তিম সাজ!
অন্য প্রিয়জন
তোমাদের যাতায়াত আমার ভিতরে,
রোজ কিছু ছেড়ে আসা চটির আদলে
সরাসরি খুঁজে ফিরি ভালোবাসা ছাপ,
উত্তাপ জারিত হয় অতল কাজলে।
জামা ছেড়ে রাখা থাকে গোপন দেরাজে,
বোতাম ছিঁড়েছে তার উত্তাল আদরে,
গলার ভাঁজের কাছে কালশিটে দাগ,
মুছে গেছে লেখা নাম ফ্যাকাসে পাথরে।
কথা ছিল নদী হবো বিষাদ পাহাড়ে,
আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে নেবো বিরাগ সাধন,
ভালোবাসা নদীতীর আমার একার ,
দেহ ঘেঁষে বাঁচে তবু অন্য প্রিয়জন।।
পাহাড়ের অন্ধকার
পাহাড়ী সকালের আড়মোড়া ভেঙে বয়ে চলা একরোখা নদীর মত,
অনর্গল কিছু কথা বলে যাব আমি।
সাদা অন্ধকারের শিকড় বেয়ে নাম খোয়াবো আরো একবার।
রাস্তা শেষে নিখুঁত বাঁকে
আঁকড়ে ধরার শেষ আশ্বাস
খুঁজে নেবে ঠিক নীলচে খামের চিঠি।
পাহাড় ঘেঁষে রোজ বিকেলে খয়েরী পাতার বসবে হাট,
সন্ধে আলোয় মান ভাঙাবো একটি মেয়ের,
বুনোফুল এর কুড়ি হাতে
অন্তবিহীন মনকেমনের অংশীদার।।