
অনিন্দিতা গুপ্ত রায়-এর কবিতাগুচ্ছ
জ্বরতাড়িত লেখাগুচ্ছ
এক
পারদস্তম্ভের ওঠানামার মধ্যে আটকে একটা পতঙ্গ।
কী ভাবে যেন সেখানে ঢুকে পড়েছিল সে!
তারপর
সূচকের উত্থান পতন অগ্রাহ্য করে নিজেই হয়ে উঠেছে নির্নায়ক!
তাকিয়ে দেখি
সে ডানা ধার দিচ্ছে
ফারেনহাইটকে, নিজে হয়ে উঠছে
স্বচ্ছ ও ভারী
ব্যতিক্রমী তরলের ভাঁজে ভাঁজে
উত্তাপ শুষে নিচ্ছে
দিনাংক থেকে
জ্বোরো বাতাস থেকে
শুকনো ঠোঁটের মত ফেটে ওঠা
মাটি থেকে
পতঙ্গটি মরে গেছে
বেঁচে থাকা পৃথিবীর বেড়ে ওঠা
উষ্ণতার দিকে
সে মেলে দিচ্ছে
অসুখের চিহ্নগুলো
বুঝে নিতে চাইছে
যন্ত্রনা মেপে নেওয়ার
কোনও সূচক
আদৌ কি কখনো হয়?
দুই
উত্তাপের বিপরীতেই জলপটির
নরম— করোটির ভিতর
মৃদু স্পর্শ মেলে রাখে
কতভাবে জলের কাছে
মরে গেছি আর বেঁচে উঠেছি বারবার!
অজস্র নামে লক্ষ জন্ম ধরে
ডেকে গেছি
জলের আড়াল থেকে
ঘুর্ণিসম্ভাবনার কথা
জেনে তবু এড়িয়ে গিয়েছি,
লিখে রেখেছি
নদীসভ্যতার প্রত্ন দলিল
নৌকোয়, দ্বীপান্তরে
বিপদ সংকেত শুনতে চায়নি কান
দু হাতের মুঠোয় অস্থিভস্ম
পিতা মাতা, পূর্বজ রক্তস্রোতের
নদীর জন্ম দেয় রোজ
ঘুমে বা জেগে থাকার
সংগোপনে খোদিত
সে সব অজুহাত
অসংখ্য জলকণা
বিন্দু বিন্দু
একটা ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে
উঠে অথবা নেমে যায়
স্মৃতিভার আঁকা
সরোবর
রাজহাঁস
শ্যাওলাপিছল ঘাট
জ্বরে পোড়া কপালের ভাঁজে
তাহাদের শীতল প্রলাপ
তিন
সমগ্র পৃথিবীর পেটের ভিতর
যেন হা হা খিদের চুল্লি
ধ্যানমগ্ন সাধকের উপবাস
তাকেই সংহত করে ভ্রূ-মধ্যে ধুনি জ্বালিয়েছে। হা অন্ন হে অন্ন
বলতে বলতে পুড়ে যাচ্ছে দিনাতিপাত শহরে বন্দরে গৃহকোনে
কররেখার মধ্যে কী যেন খুঁজছ
তুমি আঁতিপাঁতি, বিশ্বাস করতে চাইছ দিনবদলের চিহ্ন কোথাও
পাবকশিখার কাছে আলো ও উত্তাপ চেয়ে দগ্ধ হচ্ছ বারবার
কোন পথ কোন রাস্তা
পাকদণ্ডী কোন,
কে তোমাকে নিয়ে যাবে
নাকি তুমি যেতে যেতে তাকে খুঁজে নেবে, এসব দ্বিধার ফুল, ত্রস্ত ঘুমের নিচে জেগে থাকা রাত
ধুয়েমুছে যে সকালের দিকে
তার গায়ে আরোগ্যের বৃষ্টি সমস্তদিন ধরে অবিশ্রান্ত
চার
দু একটা খরদিন পেরিয়ে যেতে যেতে দৈর্ঘ্য প্রস্থে বাঁধা জীবন ইশারা পাঠায়। পুরনো শরীর জুড়ে গানবাড়ি তখন।
নাছোড় জ্বরের ভিতর স্পর্শ জুড়ে যে পিয়ানোর টুং টাং, প্রিয় আঙুল–
তাকে আঁকড়ে অমরত্বের লোভ!
ঠিকমত বলাই হল না যা কিছু তাদের কাছে একান্তে বর্ষা ঋতু ঘনঘোর
চকিতে বদলে যাওয়া চেনামুখের ছায়ায় অনেকদিনের হারিয়ে যাওয়া
দীঘি আর খুঁজি না তখন
মাছগুলো খাবি খেতে খেতে
বাতাস খোঁজে জেনে সমুদ্রে ছেড়ে আসি আর দেখি তার পাশাপাশি আমিও তো শুয়ে আছি আজীবন
ঘাসের ডগায় একফোঁটা জল, টলমল হাওয়ায় হাওয়ায়
তাকিয়ে থাকি, তাকিয়েই থাকি…