
অনির্বাণ কুণ্ডুর কবিতাগুচ্ছ
এখনো ক্ষরণ
ক্ষরণ এখনো জেগে আছে, অব্যাহত, বাঙ্ময়, অস্থির….
নিঃশ্বাসে ও কিসের শব্দ? ও কি অশনি সংকেত?
নাকি ছদ্মবেশে চুপিচুপি দামাল বাতাসে,
অন্ত্যেষ্টি ভিক্ষা করে পরাজিত প্রণয়ের প্রেত!
মনের টুকরোগুলো ধুলো ঝেড়ে গুছিয়ে তুলে নিও,
ভালোবাসা ঘুমোয় যেখানে ধ্বংসের আশ্বাসে
এখন তোমার চোখ অতি উচ্চে, শীর্ষদেশে স্থির, তবু….
এখনো তোমাকে দেখলেই জ্বর আসে !
পরম শূন্য
বহমান চিন্তার স্রোতে ক্ষীণ হতে হতে,
আলো ক্রমে নিভে আসে, অন্ধ হওয়ার আগে
আরো একবার পশ্চিম আকাশে ফিরে দেখ,
নিঃসঙ্গ তূণীরে আর যত তির আছে,
লক্ষ্যচ্যুত হতে হতে শেষ হয়ে গেছে….,
এখন পড়ে আছে শুধু কাতর আত্মসমর্পণ।
এসো….
এখনই অমোঘ নিশ্চল সত্যের ধ্যানে বসি,
যেন কালের যন্ত্রে ঘুরে আসি একসাথে
কুরুক্ষেত্র থেকে কারবালা হয়ে কফি হাউস,
নেপোলিয়ন থেকে নানাসাহেব হয়ে নকশালবাড়ি,
একই নকশী কাঁথায় ফুটে ওঠা হরেক মূর্চ্ছনা,
সমস্ত জাগতিক আলোড়ন স্থির হতে হতে,
একটি কৃষ্ণগহ্বরে সবকিছু বিলীন হয়ে যায়,
পড়ে থাকে নির্গুণ ব্রহ্ম।
মৃত নদী
আমি প্রতিদিন নিজের সাথে কথা বলি,
আমার অন্তরালে দাঁড়িয়ে থাকা সেই
অবুঝ নাছোড় কিশোর ছেলেটির সাথে,
যে এখনো মনে প্রাণে বিশ্বাস করে,
প্রেম লুকিয়ে থাকে দৃষ্টিতে।
সে ঘুরে ফিরে আসে, আর আমায় প্রশ্ন করে,…
বলো,…বলো…. হে জ্যোতির্ময় পুরুষোত্তম,
কেন তুমি এত ঠান্ডা হলে?
আমি নিঃশব্দে হাসি, আমি উত্তর দিই না,
কি করে বোঝাই ওকে,
আমি এক জলশূন্য মৃত নদী,…
তার তীরে দাঁড়িয়ে থাকা তৃষ্ণার্ত মানুষরা
এখন আর নদীখাতে নামতে জানে না।
বিজ্ঞাপন
বিলবোর্ডে সারাদিন ঝুলে থাকা মেয়েটি
রাতে শান্তিতে কি চোখ বুজে ঘুমোয়?
দিনে যে হাসে তেল আর সাবানের হাসি,
রাতে কি সে কেঁদে ফেলে নির্জন ছাদে?
আলো নিভলেই তার শরীর থেকে খসে পড়ে রঙ,
আমরা দেখি না, কিন্তু সে জানে
আমাদের চাওয়া কেমন বিষাক্ত,
রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমরা লোলুপ দেখি,
বিজ্ঞাপনের শরীর ভেঙে যায়
আর সমাজ ভাঙে টুকরো টুকরো শব্দে !
ঘুমন্ত বিজ্ঞাপন যেন আয়নার ফাটল
যেখানে আমরা প্রতিদিন খুঁজি
কামসূত্রের প্রতিচ্ছবি।