
তাপসী লাহা-র গুচ্ছ কবিতা
রাতের সাম্পান
চাপ চাপ আলোর ভেতরে গুঁড়ো করে ভাজা অন্ধকারের
দাপট,অশ্রুত থেকে যাচ্ছে প্রতীক্ষা, তৃষ্ণারা চিক আলোয়
মুছে সাজাচ্ছে রক্ত শরীর সন্ধ্যার দিব্যতা করাত কাঁটা,
প্রতীকটি সংলাপে মেরু খুলছে শেষ রাতে
একটিমাত্র লবঙ্গ ঈর্ষায় দীর্ঘতর জ্যোৎস্নার ঘুমে শ্রী
ছড়িয়ে ঘর হারাবে বেমক্কা, জনৈক রেটিনাসুখ
নিভার বিদ্যায় আস্থা রেখে বলয়সমুখে,তথাপি
নেশামৃতে খসে পড়ছে ফল।
সম্ভব করে তাই রুপরেখাহীন থিতু জলের
গায়ে চাদরকে দুঃখঘুম দাও,
আংরাখা ডুকরে উঠলে মন্ত্র মন্ত্র সব সকাল
কতিপয় দুঃখের মত চেখে দ্যাখে গাঢ় তরল তাপ।
এক একটি মগ্নতা বাকবিমুখ করে তোলে ,
নীলকন্ঠ শিবিরের মত ঔষধি ও স্নানের বিপ্রতীপে পান্ডুলিপি ডুবে ভাসে
সাময়িক আর্তনাদ স্বস্তি ক্ষয়ে জড়
জীব অচরিতার্থ হয়ে সূর্য ফিরে আসে শ্বাপদের কূলে।
মায়াশয্যা
এমন কি আঁকছো কবিতার মত তোরঙ্গহীন, সুদীর্ঘ শোক
নাগদেবতার অষ্টোত্তর বামরুপ খ্যাপা,
ভেতরের সিঁড়িটি খুলে আলো ধরে দিলে নাম আঁকবে যে সদ্য যুবতী
জোছনা তার ভেরুয়া রসকলি শুনে ভ্রমরকৃষ্ণ হল সদ্য।
কালা ঈষৎ চেল্লাবে নগরদগ্ধ নাম্নী সংকীর্তনে,এসো
জুতসই লাগাম,শেকল শেকল আলো,উদ্ভিন্ন এ সময়ে পৃথক কোন আঁকি ছবি,
টিপ পরাই গালে,বোষ্টম পদে রচনা করি নাতিদীর্ঘ দুপুর।
শোকে শোকে পৃথুলা দুপুরের ফুলে থাকা গালে টোঁকা
মেরে রচনা করি সময়কে নস্যাৎ করা তান্ত্রিক উপাদেয় মায়াশয্যা।
উহ্য
দিব্যশোক যর্থার্থই,ঘুম বিহীন রাত মরীচিকার মত
ছায়ার শিকার করে ,মশারি তার জাল, ধোঁয়াযন্ত্রটি আগ্নেয়াস্ত্র।
দু এক কথার পর কুকুরের চিৎকার আবহ রঙে,
ভীড় করে মশকবালারা, সুরে সুরে ঘরোয়া ভিজে ওঠে
প্রেমিক দেবদাসমাত্র
ভিন্ন নেশার কবলে ছোঁয়া এড়ায়
হাঁটতে হাঁটতে ছাঁয়ায় মিলিয়ে যায় আনারকলিদের শ্লোক।
শরণম
ভুলে গ্যাছো নির্বীজ স্বপ্নের বরাত,
হৃদয়,মধ্যমা আত্মগ্লানি জল ভুরভুরি কাটিয়ে লাগাতার
নেমে যাওয়ার অথৈ , খাতবিহীন অর্কিড খাতায়।
একটা গোটা পাশ শুধু হস্তাক্ষরের নিরালংকার মুক্তোরা
ছবি এঁকে টাঙিয়ে দেয় রাধামাধব সহায়।
আজ যারা জুড়ে গেছে মানচিত্রের পাশে কোথায়, কবে এক হাতা
পরমান্ন রাঁধা থালায় হাঁক ছেড়েছিল,
হাতপাখা সহযোগে, ‘টুসু আয়’।
ভুলে গেলে সেসব ডাক শতাব্দী থেমে থাকেনি।
হারাধনের হারানো ধন পেয়ে চলে গেছে যারা খঞ্জর বিঁধে গেছে মাংস ফুড়ে।
প্রত্যেক ক্ষুদ্র রুপকথায় আপাদমস্তক বিনির্মাণ সেঁটে থাকে।
নব ঘোরালেই র্যুট পাল্টাবেই সমস্তটাই গিমিকনির্ভর ঔদার্যকথা।
চোরাচিহ্ন মুছে যাবে, বিবৃতি বেড়ে গেলে
তাই হারাও পথ,খোয়াও মত,ভুলের ছাপাখানায় আবার জ্বলে ওঠো নবজাগরণ।
লিচ্ছবী মুদ্রায় সময় রুদ্ধ শরণের শবে।
পলাতকা
মুথা ঘাসের যৌবন মাড়িয়ে চলে যায় সান্ধ্যসাজ,অবাকরবে,
ভুঁইহারা অস্ফূটে মেলে ধরা আকাশ গ্রন্থের সাতটি তাঁরা।
সাতটি তাঁরা, ধৈর্য্য মেখে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে পড়লে ইসিসের বেদিভূমি
জাগ্রত হয়,জাগ্রত হয় বিড়াল সভ্যতার রেখাহীন মিলেমিশে থাকা।
নাইলের অহং ছুঁয়ে গাঙুর মিসেস গঙ্গাবতী তখন,প্রেমিকের দেওয়া সুরঞ্জনা নামটি,
সাথে অন্ধকারের দস্তখত মেশা কালো চুলের আকাশ বট,
কাঁঠাল হিজলের গুমখুনের পর আর থাকেনি।
প্রেতকায় গাঙুরের ছায়াময় সেসব মূক মরুভূমি
ভিনদেশী রোদের মত সিন্ধু সারস
পৃথিবীর পথে হাঁটতে হাঁটতে
হাত বাড়িয়ে কোনদিন খুঁজে গেলেও দিন আর রাতের কোথাও
হারিয়ে যায় ধ্যানমৃত চোখের হিজল দোলায়।