
দেবদাস রজক-এর কবিতাগুচ্ছ
জলের আহ্বান
নগ্ন রূপের কাছে চাঁদমুখ ফেলে
দু’মাইল পদচারণা করছি, সামনে ভ্রমের গাছপালা
কিছু একটা ঘটে যাওয়ার কথা আছে
কিছু একটা উড়ে যাওয়ার কথা
পতঙ্গে পতঙ্গে ভরপুর জীবন, অযথা জলের আহ্বান
কালো রাত। সিন্থেসাইজার কেঁপে ওঠে বিষাদে
অপরাধমাখা দৃশ্য, প্রেম আর আগুনের পসরা নিয়ে
আমাদের সেলসম্যান শুধু ছিঁড়ে ফেলে ভালবাসার সম্ভার
তাকে তো বোঝাতে পারিনি, বোঝাতে পারিনি তাকে-
অভিমান আসলে কোনও মুক্তির নাম নয়
কোন্ ফুল তুমি চাইছ
অসম্ভব ডুবে যাচ্ছি বোধহয়
আমার প্রেমিকা আমাকে চুমু দেয় নি বহুকাল!
আমার ধর্ম গ্যাছে, বোধ গ্যাছে, রং আর দলবাজি
সবকিছু গিলে নিল এক বয়স্ক বাঘ এসে
আমার প্রেমিকার শরীর থেকে কোন্ ফুল তুমি চাইছ?
ও’সব কিছু নেই। নেই। শুধু পা দু’খানি ধক ধক করে মাটিতে
বহুকাল চুমু পড়েনি ঠোঁটে, বক ওড়ে নি পাঁজরে শিরায়
অসম্ভব ডুবে যাওয়া রোজ, কী বলি তোমায়?
আমার ধর্ম গ্যাছে, বোধ গ্যাছে, রং আর দলবাজি
এসব ছুটেছে পুরনো রেলের কামরায়, আমি দেখেছি
আমার প্রেমিকা আমাকে চুমু দেয় নি বহুকাল
আমার প্রেমিকা আমাকে তোয়াক্কা করে নি বহুকাল
শুধু দুহাতে জীবন চলে যাওয়া দেখি সুনিপুণ ধোঁয়ায়
মায়াবী পোষাক
একটু আগে খননকার্য শেষ হল
অনেকগুলি মানুষকে সলিল সমাধি দিয়ে এই ফিরছি
আঁধার নেমেছে ধরনীর প্রান্তে। চাঁদহীন নির্জন রাত। স্থির
এইভাবে খুন করতে করতে লৌহপথ, কলোনি, শতাব্দী, যুগ
পেরিয়ে যাচ্ছি হেঁটে। দম্ভ হচ্ছে। ফুরফুরে মেজাজ
বুকের বোতাম খুলে এগোচ্ছি, এগোচ্ছি, শব্দহীন ধাতবদেশ।
সূর্য ফোটার ঠিক আগে সব মানুষকে আরও একবার
জ্যান্ত কবর দিয়ে খুলে ফেলব আমার মায়াবী পোষাক
আমি ছদ্মবেশী বিচিত্র এক রাক্ষস
গিলে খাচ্ছি পুরোপুরি একটি স্টেশন আর একটি দেশ
রাক্ষস
তরল পর্বত-খাদ
পাথরের উঁচু টিলায় বসে কবিতা লিখছি।
ঘোর লাগছে। বিমোহ। চোখে আমার জঙ্গলরাত
তাম্রসম দু’হাতে দানপত্র ছুঁই
খুলে পড়ছে মৃতনক্ষত্রের লেজ এই হাতে
কাঁপছে। কাঁপছে। ওরা আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিচ্ছে
মুন্ডহীন ঘোড়াদের রক্ত
এমন-ই উত্তাপ, এমন-ই আস্ফালন আঙুলের ডগায়
উলঙ্গ বিকেল-রং সন্ধের মতো প্রেতের তলপেটে
ঢুকিয়ে রেখেছে দ্বিতীয়-দেবতার প্রসব-দাগ।
স্খলন লিখছি, বিগ-ব্যাং, কালাচের বিষ-দাঁত আমাকে ঘিরে হা হা
মাথার উপর হেমন্তের হাওয়া প্রবাহিত হচ্ছে
আমাকে প্রচন্ড গিলে ফেলছে কবিতার ভয়াল রাক্ষস
নির্বাণ লিখে নাও আমার
সব পিছুটান শেষে
এবার তাহলে কবিতায় ফিরি
দায়দায়িত্ব যা আছে, অনতিকাল, আহার ব্যসন
তাক ভর্তি পুতুলের জীবন, খননপ্রণালী, চাষাবাদ
মেঘেদের প্রলাপকথা, ক্লান্তির গদ্যচারণ, এসব পেরিয়ে
এখন দু’দন্ড ফিরি, শুধু দুঃখটুকু নিয়ে বসি ভোরের কাছে
ওগো ভোর! নির্বাণ লিখে নাও আমার…
অন্তিম জলের কাছে কবিতার নৈবেদ্য হবে আজ