ধারাবাহিক উপন্যাস আশ্চর্য নির্বাসন ৭-১১ পর্ব  <br /> বিতস্তা ঘোষাল

ধারাবাহিক উপন্যাস আশ্চর্য নির্বাসন ৭-১১ পর্ব
বিতস্তা ঘোষাল

পূর্বের পর্বগুলি— ১ থেকে ৩– আশ্চর্য নির্বাসন ১-৩
৪থেকে ৭ —আশ্চর্য নির্বাসন ৪-৭

কলিংবেলটা পরপর তিনবার বাজল। সৌমিক নিজের ঘরে বসে টিভি অন করে সারা বিশ্বের খবর শুনছিল।হাসপাতালের সামনে টেস্টের বিশাল লাইন। কারোর সঙ্গে কারোর নুন্যতম দূরত্বটুকুও নেই। এমনকি মাস্কও ঠিক করে পরা নেই অনেকেরই। এর মধ্যেই আবার মিডিয়ায় বাইট দেবার জন্য একদল মানুষ হামলে পড়ছে। চ্যানেলগুলো কখনো রাজনৈতিক নেতাদের কখনো ডাক্তারদের প্যানেল ডিসকাসনে বসাচ্ছে।বোগাস! নিজের মনেই বলল সৌমিক।ঠিক যেন কলতলার ঝগড়া চলছে।কোথাও আবার পুলিশ গান গাইছেন মাইক হাতে। সেই দেখতে গিয়েও লোকেরা রাস্তায়। মোবাইলে সেই দৃশ্য ভিডিও করছে কেউ। আর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। তার সঙ্গে বাড়ছে নিজের রাজ্যে ফেরার জন্য মানুষের মিছিল।

যদিও সরকার চেষ্টা করছে মানুষের পাশে দাঁড়াতে। কিন্তু কতদিন পারবে এই নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ তার। মালশ্রী ভালোয় ভালোয় বাড়ি ফিরলে শান্তি। কেমন আছে কে জানে! মোবাইল, ফোন কোনো কিছুই নেই যে একটু কথা বলা যাবে।

কলিংবেলের শব্দে তার ভাবনাটা দরজার দিকে গেল। এখন আবার কে আসতে পারে! এই দুপুরবেলা! সে ঘর থেকেই চেঁচিয়ে বলল, বেটা একটু দেখতো কে এল?

বান্ধুলি চেঁচিয়ে উত্তর দিল, বাবা আমি রান্নাঘরে, বাসন মাজছি।তুমি দেখো। পরমুহূর্তেই কি একটা ভেবে বলল, এক মিনিট বাবা।

সৌমিক নিজের ঘর ছেড়ে তখন দরজার দিকে পা বাড়িয়েছে। বান্ধুলি দৌড়ে এসে বলল, বাবা যে এসেছে যদি মায়ের কথা জিজ্ঞেস করে, আপাতত কোথায় আছে কিছু বোলো না। খালি বোলো ক’দিন ধরে যোগাযোগ করতে পারছি না। আর এমন কোনো দেশের নাম বলে দিও যেখানে এখনো কোভিড-১৯ হয়নি।

সৌমিক মেয়ের এমন কথায় যথেষ্ট অবাক হল। সে মেয়ের কথা ভাবতে ভাবতে দরজা খুললো। ফোর্থ ফ্লোরের শুভঙ্কর এসেছে।

আসব দাদা? অসময়ে বিরক্ত করছি। বলে শুভঙ্কর দরজার মুখেই দাঁড়িয়ে রইল। তার মুখে মাস্ক।

সৌমিক বলল, আরে না, ঠিক আছে।এসো,ভিতরে এসো।

শুভঙ্কর খানিক দ্বিধা নিয়েই ভিতরে এল।

বোসো। বলে সোফার দিকে আঙুল দেখালো সৌমিক। সে বুঝতে পারছে না এই সময়ে শুভঙ্করের আগমনের কারন কি হতে পারে!

শুভঙ্কর সেখানে দাঁড়িয়েই বলল, আসলে ফ্ল্যাটের সবাই জানতে চাইছিলেন বৌদি ফিরেছেন কিনা! কবে ফিরবেন এই সব আর কি! বৌদির খবর সব ঠিক আছে তো!

সৌমিক কিছু উত্তর দেবার আগেই বান্ধুলি হাত মুছতে মুছতে বাইরের ঘরে এল। আরে অ্যাঙ্কেল তুমি? কোনো এমারজেন্সি? আমাকে বলো। বাবা এখানকার কিছুই তেমন জানে না। জানোই তো বেশিরভাগ সময় বাবা বাইরে।

সৌমিক অবাক হয়ে মেয়ের মুখের দিকে চেয়েছিল।সে বোঝার চেষ্টা করছিল আলোচনা কোন দিকে যেতে চলেছে।

শুভঙ্কর বলল, তেমন কিছু না। এই বৌদির কথা জানতে চাইছিলাম। ফিরেছেন কিনা,কেমন আছেন,কোথায় আছেন…

বান্ধুলি বলল, মা’তো এখনো ফেরেনি। মালুইতে আছেন।দক্ষিণ আফ্রিকাতে। আর বোলো না, যা চিন্তা হচ্ছিল! মা তো লন্ডনে গেছিল।তারপর সেখান থেকে মালুই চলে গেছে দুমাস হয়ে গেল। ফেরার কথা ছিল। কিন্তু এখন সব বন্ধ।

কবে ফিরবেন কিছু জানা গেছে?

ইন্ডিয়া গভর্নমেন্টের এ্যামব্রাসি জানিয়েছে আপাতত কিছু বলতে পারছে না। তবে একটাই স্বান্তনা, মালুইতে এই ভাইরাসের কোনো খবর এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।তুমি বিবিসি নিউজ শুনলেই জেনে যাবে।নেটেও দেখে নিতে পারো।

যাক বাবা। আসি।তোমরা সাবধানে থেকো।

থ্যাঙ্ক ইউ অ্যাঙ্কেল। তোমরাও ছাদে কম যেও। এতজন এক সঙ্গে যাওয়াটা ঠিক না। কে বলতে পারে কার মাধ্যমে সংক্রামণ আসে!

তা ঠিক। বলে শুভঙ্কর, আসি দাদা, বলে চলে গেল।

বাই অ্যাঙ্কেল, বলে বান্ধুলি দরজাটা বন্ধ করে দিল।

সৌমিক মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, বেটা এত মিথ্যে বললে কেন?

বাবা এদের চেনো না তো! সব পাক্কা শয়তান। কেন এসেছিল বুঝতে পারলে না? যেই জানতো মা দেশে ফিরেছে,সঙ্গে সঙ্গে বলত, ফ্ল্যাটের সবাই বলছে বৌদির এখন এখানে না ফেরাই ভালো। কিছুতেই এরা মাকে এখানে আনতে দেবে না।

কিন্তু মা তো আর ক’দিনের মধ্যেই বাড়ি ফিরবে, তখন কি করবে?

ভাবতে হবে কিছু বাবা।তুমি চিরকাল বাইরে বাইরে কাটিয়ে গেলে,কিছুই বুঝলে না বলেই আমার জ্বালা। মানুষের মতো নৃশংস জাত তুমি কোথাও পাবে না বাবা। এরা দরকারে একজনের পায়ে পড়তে পারে,আবার একটু এদিক ওদিক হলেই তাকে মেরে ফেলেতেও দ্বিধা করে না।

বেটা তুমি একটু বেশি ভাবছ।সৌমিক আশ্চর্য হচ্ছে মেয়ের কথা শুনে। একই সঙ্গে চিন্তিত হচ্ছে মালশ্রী ওখান থেকে বেরিয়ে তবে কোথায় যাবে যদি এখানে আনা না যায়!

বাবা যেখানে দেখছ ডাক্তার, নার্স রোগী দেখছে বলে তাদের ঘর ছাড়া করছে তার বাড়িওয়ালা, পাড়ার লোক মিলে সেখানে মা কোয়ারেন্টাইনে আছে জানলে এরা এখানে মাকে নিয়ে আসতে দেবে ভুলেও ভেবো না। তুমি অলটারনেটিভ কিছু ভাবো।

একনাগাড়ে কথাগুলো বলে বান্ধুলি আবার নিজের কাজে ফিরে গেল।

সৌমিক সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল স্তব্ধ হয়ে। বান্ধুলি কবে এত বড় হয়ে গেল যে এভাবে কথা বলতে শিখে গেল!কিন্তু এই ভাবনা ছাপিয়ে এখন তার মাথায় অন্য চিন্তা ভর করল। মালশ্রী কী তবে এখানে ফিরতে পারবে না? কোথায় নিয়ে যাবে তাকে সে! এমন পরিস্থিতিতে যে তাকে কখনো পড়তে হবে এ সে কখনো কল্পনাও করেনি।

তার চোখটা হঠাৎ ভারি হয়ে উঠল।গলাটা ব্যথা করছে তার।কান্না পাচ্ছে।কিন্তু কার কাছে কাঁদবে সে! মেয়েটা নিজেও ভেঙে পড়বে তাকে কাঁদতে দেখলে।আর মা তো নিজেই অস্থির হয়ে আছে মালশ্রী কবে ফিরবে তার জন্য। দিনে অন্তত দশবার প্রশ্ন করে, আর কতদিন রে?

এভাবেই কেটে গেল কিছুক্ষণ। তারপর নিজের ঘরে ফিরে এলো। টিভি অন করার ইচ্ছেটা আর নেই তার। বিছানায় শুয়ে পড়ল সে।

মনে মনে নিজেকেই স্বান্তনা দিল সে। ফিসফিস করে বলল, চিন্তা কোরো না মালশ্রী,সব ঠিক হয়ে যাবে।

সেদিন রাতে বাবার পাশে শুতে এল বান্ধুলি।বাবার গায়ের উপর একটা পা তুলে দিয়ে খুব আস্তে আস্তে বলল, বাবা মাকে কিভাবে বাড়ি আনব?

কেন রে মা, তোর তো খুব সাহস! ভয় পাচ্ছিস কেন?

ভয় পাচ্ছি না।চিন্তা হচ্ছে।নিয়ে এলে ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা ঢুকতে না দিলে মাকে নিয়ে কোথায় যাব?

হুম।কিন্তু তুই মিথ্যে বলে ঠিক করিসনি। এখন তো বলাও যাবে না যে মালশ্রী ফিরে এসেছে।কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে।বলে দিলে আনাটা সোজা হত।তবে ভাবিস না। একটা উপায় ঠিক বের হয়ে যাবে।

বান্ধুলি বাবাকে চেপ্পে জড়িয়ে ধরল। তার চোখ জলে ভিজে যাচ্ছে টের পেল সৌমিক। সে মেয়েকে বুকের কাছে টেনে নিয়ে বলল, খুব মন খারাপ করছে তাই না রে?

বান্ধুলি কাঁদতে কাঁদতে বলল, খুউব।

মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সৌমিক বলল, সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।আমি আছি তো।অনেক রাত হয়ে গেছে, ঘুমিয়ে পড়।

বান্ধুলি বাবার বুকে মাথাটা গুঁজে দিয়ে চোখ বন্ধ করল।

সৌমিক মেয়ের কপালে আলতো করে একটা চুমু খেল।তার চোখে ঘুম নেই। এরপর কি হবে, কিই বা ঘটতে চলেছে এর কোনো উত্তর তার নিজেরও জানা নেই।

এই মুহূর্তে তার নিজেকে খুব অসহায় মনে হল।মনে মনে ঠিক করল চোদ্দ দিন কেটে গেলে সে নিজের কানেকশান কাজে লাগাবে। কিন্তু তাতেও একটা সংশয় মাথার ভিতর তোলপাড় করতে লাগল।

মালশ্রী তার এত বছরের জীবনে এই প্রথম কোনো মহামারী নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করল।প্যানডেমিক।প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে পরিচিত না হলেও বন্যা, আয়েলা, সুনামী এগুলোর পরোক্ষ প্রভাব তার জীবনে অল্পবিস্তর পড়েছে। আয়লার সময় মেট্রো বন্ধ হয়ে গেছিল।বাস ট্যাক্সি সব উধাও নিমেষে। তখন বাড়ি ফেরার জন্য রিকশা নিয়েছিল। কুড়ি টাকা ভাড়ার পথ সেদিন এসেছিল দুশো টাকায়। টিভিতে দেখেছিল সুন্দরবন অঞ্চলে প্রকৃতির ধ্বংসলীলা। কিন্তু তাতে তার দৈনন্দিন জীবনে তেমন প্রভাব পড়েনি। দুদিন পর বৃষ্টির দাপট কমলেই ফিরে গেছিল স্বাভাবিক কাজে। সুনামীর সময়ও তাই। বরং ছোটো বেলায় বন্যার সময় তাদের বাড়িতে জল ঢুকে গেছিল।তখন সে চার পাঁচ বছরের। আবছা মনে পড়ে খাটের উপরেই ক’দিন তাদের কাটাতে হয়েছিল। মা বিছানা গুটিয়ে স্টোভ জ্বালিয়ে রান্না করছে এই দৃশ্য এতটাই ঝাপসা যে এর বেশি কিছুই তাকে প্রভাবিত করেনি।

মহামারীর গল্প শুনেছিল ঠাকুমার কাছে। প্লেগ নামক মারাত্মক রোগের প্রকোপে তখন নাকি দেশ উজার হয়ে গেছিল।

ঠাকুমা বলত, আমিও যে ভালো করে দেখেছি এ কথা বলতে পারি না। আমি শুনেছি মায়েদের মুখে। গাঁ শহর ধনী গরীব কাউকে রেহাই দেয়নি এই ব্যধি। রাস্তায় নাকি মৃত দেহ পড়ে থাকত। সৎকার করার লোক পাওয়া যেত না। আকাশে তখন খালি চিল শকুনের ভিড়। তারপর তো টীকা আবিষ্কার হয়ে গেল।

ইতিহাসের পাতায় সে ছিয়াত্তরের মন্বত্তরের কথাও পড়েছিল। কিন্তু সেটায় প্রকৃতির পাশাপাশি মানুষও দায়ী ছিল। তাছাড়া তাতে কেবল এই বাংলার মানুষই বেশি প্রভাবিত হয়েছিল। তা পৃথিবী ব্যপী ছড়িয়ে পড়েনি।

প্লেগ মহামারীর কথা অবশ্য শরত রচনাবলীতেও পড়েছে মালশ্রী। তাছাড়া আলবেয়ার কামুর বিখ্যাত উপন্যাস দ্য প্লেগও সে পড়েছে।

ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করেই তার মনে পড়ল, কোয়ারেন্টাইন শব্দটাও সে প্রথম শুনেছিল শ্রীকান্তের মুখেই। সম্ভবত বর্মা পর্বে। সে সময় বর্মাতে প্লেগের প্রাদুর্ভাব রুখতে কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

কিন্তু নিজের জীবনে তাকে যে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে এ সে স্বপ্নেও ভাবেনি।

স্বপ্নেও যা কখনো ভাবা যায় না, তাই কখনো কখনো আমাদের জীবনে ঘটে যায়।তখন সেই পরিস্থিতি থেকে নিজেকে রক্ষা করার একমাত্র পথ হল মাথা ঠান্ডা রেখে সমস্যাকে মুখোমুখি ফেস করা।জানবি সব সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় আছে। এখন পদ্ধতিটা খালি খুঁজে নিতে হবে।

বাসুদেবের কথাগুলো মনে পড়ল মালশ্রীর।

কি সেই পদ্ধতি বাবা? আমার তো কিছুই মাথায় আসছে না।তুমি আলো দেখাও আমাকে। নিজের মনেই বিড়বিড় করল সে।

পায়ের শব্দ পেয়ে মালশ্রী দরজার দিকে তাকালো। সিস্টার সাবিনা ঘরে ঢুকে এলেন।

কি করা হচ্ছে? সিস্টারের প্রশ্নে মালশ্রী বিষন্নভাবে হাসল। কিছুই তো করার নেই। শুধু শুয়ে আর বসে থাকা ছাড়া।

সেটা ঠিক। কিন্তু ভেবে দেখুন কত বছর বাদে এমন নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে চিন্তা মুক্ত হয়ে কোনো দায়িত্ব ছাড়া এভাবে থাকছেন! কখনো ভেবেছিলেন এটা হতে পারে?

তা ভাবিনি।কিন্তু সত্যি কী এভাবে থাকা যায়? নাকি পারা যায়?

সাবিনা হাসলেন। জানেন আমরা অনেক কিছুই মন থেকে মেনে নিতে পারি না।কিন্তু মেনে নিতে বাধ্য হই। এই ধরুন আমাকে, কাল শবে বরাত। আমার প্রিয় দিন। অথচ আমি এখানে থাকতে বাধ্য। কারন এটাই আমার এখন সবচেয়ে জরুরী কাজ।মেনে নেওয়া ছাড়া তো উপায় নেই তাই না!

মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়া এই নিয়েই সারা জীবন কেটে যায় তাই না?

ঠিক।তবে সময় যেমন চালাবে তাকে সেভাবে হাসিমুখে বরণ করে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।সাবিনা বন্দুক কপালে ঠেকিয়ে উষ্ণতা মাপতে মাপতে বলল।

আচ্ছা এই শবে বরাতটা কি কোনো উৎসব?মালশ্রী জানতে চাইল।

হ্যাঁ। শবে বরাত বা মধ্য শা’বান হল হিজরী বা আরবি ক্যালেন্ডারের অষ্টম মাস শা’বান মাসের ১৪ অথবা ১৫ তারিখের মধ্য রাত।ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী এই রাতে আমাদের যে সব প্রিয়জন মারা গেছেন, তাদের কবরের পাশে গিয়ে জিয়ারত মানে প্রার্থনা করি। আল্লা এই প্রার্থনা শুনে তার বান্দাদের বিশেষভাবে ক্ষমা করেন।এই রাত মুক্তির রাত মনে করা হয়।সাবিনা বলল। কিন্তু এবার সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেউ বাড়ির বাইরে যাবেন না। বাড়িতে বসেই সবাই নমাজ- কোরান পাঠ করবেন। আপনিও এখানে বসে আমাদের জন্য, বিশ্বের সকল মানুষ যেন এই ভয়াবহ রোগ থেকে মুক্তি পায়, তার জন্য প্রার্থনা করবেন।

মালশ্রী দেখল সাবিনার মুখ একটা অদ্ভুত প্রশান্তিতে ভরে গেল কথাগুলো বলার সময়।সেই উজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে মালশ্রী বলল, আমার প্রার্থনার কতটা জোর তা জানি না।তবে আমি মানুষ যেন এর থেকে উদ্ধার পায়, তার জন্য সব সময় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে চলেছি। এখানে বসে এ ছাড়া আর তো কিছু করার নেই আমার। তারপর বলল, এই শবে বরাত শব্দটা তো উর্দু শব্দ নয়। ফারসি বোধহয়।

ঠিক। ফারসি শব্দ শব মানে রাত।আর আরবি বরাত হল ভাগ্য। দুইয়ে মিলে শবে বরাত। আপনি উর্দু জানেন?

আরে না না। তবে উর্দু শায়েরি শুনতে ভালো লাগে। ‘বন্দগি মে ভি ও আযাদ-ও-খুদবি হ্যায় কি হাম

উলট ফির আয়ে দরে কাবা আগার ওয়া না হুয়া’। মালশ্রী বলল।

সাবিনা বলল, মির্জা গালিব। বন্দনার মাঝেও সেই স্বাধীন চিত্ত আর আত্মবোধ/পাল্টা ফিরে আসি যদি কাবার দরজা বন্ধ থাকে।

মালশ্রী এর প্রত্তুত্তরে বলল, সিনে কা দাগ হ্যায় ও নালা কি লব তক না গ্যায়া/খাক কা রিযক হ্যায় ও কাতরা কি দরিয়া না হুয়া

সাবিনা ধীর স্বরে বলল,যে আর্তনাদ ঠোঁটে এলো না সে বুকে দাগ কেটে বসে/যে জলবিন্দু নদীতে পৌঁছলো না তাকে মাটি শুষে নেয়। জানেন, আমার আব্বা মির্জা গালিবের খুব ভক্ত।তাঁর মুখে শুনে শুনে এগুলো মুখস্থ হয়ে গেছে।

বাংলাগুলো কি আব্বাই করেছেন?

সাবিনা প্রশ্নটা শুনে কিছু একটা ভাবল। তারপর বলল, সেটা তো জানি না। কখনো জানতেও চাইনি।

মালশ্রী হাসল। গালিবের অনুবাদ খুব শক্ত বলে শুনেছি।কিন্তু দেখুন কত সহজ বাংলায় আপনি বললেন। খুব ভালো লাগল শুনতে।

সাবিনা হাসলেন। এবার যাই।আপনার এখানে এলেই আমার দেরি হয়ে যায়। মনে হয় গল্প করি।

সরি সিস্টার। আমিও আপনার জন্য অপেক্ষা করি। একমাত্র আপনি এলেই তো আমি কিছুক্ষণের জন্য নিজের গলার স্বর শুনতে পাই।

সাবিনা মিষ্টি করে হেসে বলল, কাল আবার দেখা হবে।

মালশ্রী ঘাড় নেড়ে তাকে টা টা বলে তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।

১০

বিছানায় শুয়ে ঘুম আসছে না চন্দ্রাবতীর।তার এত বছরের জীবনে কখনো লক ডাউন দেখেনি।এমনকি শোনেওনি।খুব ছোটবেলায় জাপানি বোমার কথা শুনেছিল,সেই সময় নাকি সাইরেন বাজিয়ে সকলকে বাড়ির ভিতর ঢুকে আলো নিভিয়ে দিতে বলা হত।এরপর চিন যখন ভারত আক্রমণ করল তখন নিজেও সে দৃশ্য দেখেছে।মুক্তিযুদ্ধের সময় হাজার হাজার মানুষ পায়ে হেঁটে, নদী সাঁতরে এদেশে এসেছে।বহু লোক পথেই না খেতে পেয়ে মারা গেছে এ দৃশ্যও দেখা।কিন্তু এভাবে লক ডাউন, স্তব্ধ হয়ে যাওয়া সব- সত্তর বছরের জীবনে এই প্রথম দেখা। সকাল থেকে রাত একটা গাড়িরও আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না।এমনকি অ্যাম্বুলেন্সগুলোও যেন বেপাত্তা। অথচ রোজ একটা না একটা অ্যাম্বুলেন্স-এর শব্দ শোনা যেতই।সব রোগ কি তাহলে ভালো হয়ে গেল এ’কদিনে? সেই একা বিছানায় পড়ে!

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল চন্দ্রাবতী। শুয়ে শুয়ে তার কত কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওদেশ থেকে নিঃস্ব হয়ে আসা মাসিমাদের পরিবারের কথা মনে পড়ল। একটানা হেঁটে এক মাসের মাথায় তারা বর্ডারে পৌঁছেছিল। মাসিমা গল্প করত কতবার তারা খান সেনাদের হাতে পড়েও কিভাবে বরাত জোরে বেঁচে গেছিল। তাদের সামনেই সোমত্ত মেয়েগুলোকে কিভাবে তুলে নিয়ে চলে গেল তারা।

মাসিমা সেসব কথা বলতে বলতে শাড়ির খুঁট দিয়ে চোখ মুছত। খোলা আকাশের নিচে আমরা রাস্তায় বসে।সবার মুখ নিচু করা। হাত পিছনে।আমাদের সামনে খান সেনারা। তাদের হাতে বন্দুক।চোখের সামনেই তারা আমাদের দলের তিন চারজন বছর তেইশ চব্বিশের শক্ত সমর্থ ছেলেকে গুলি করল। তাদের রক্তে মাটি মুহূর্তে লাল হয়ে গেল। দেখতে দেখতে তাদের ছটপট করা শরীর স্থির হয়ে গেল। অথচ আমরা কেউ সামনে যেতে পারলাম না। নীরব দর্শক হয়ে রইলাম। সেনারা হাসতে হাসতে মেয়েদের শরীরে হাত দিচ্ছিল,শাড়ি,ওড়না ধরে টান মারছিল, পুরুষদের বন্দুকের বাঁট দিয়ে মারছিল। যেন দারুণ মজার খেলা খেলছে।

আমাদের কাছে যা কিছু টাকা পয়সা সোনা দানা এমনকি চাল ডাল ছিল তাও তারা কেড়ে নিল।বলতে গেলে আমরা একবারেই নিঃস্ব হয়ে গেলাম। যদিও জানতাম না এরপরেও আমরা আদৌ ছাড় পাব কিনা, নাকি আমাদের জন্যেও মৃত্যু অপেক্ষা করছে!

গত কয়েক মাস ধরে আমরা এ পাড়া থেকে ও পাড়া, এ গ্রাম থেকে সে গ্রাম, কখনো কারোর ফাঁকা বাড়ি, কখনো কোনো পরিত্বক্ত স্কুল বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছিলাম। সেনাবাহিনীর গাড়ির আওয়াজ শুনলেই সেখান থেকে পালিয়ে যেতাম।আবার সব শান্ত হয়ে গেলে ফিরে আসতাম।প্রতিবার ফিরে এসে দেখতাম আশেপাশের,আমাদের বাড়ির জিনিস পত্র চুরি গেছে, দরজা জানলা ভাঙা। বুঝতে পারতাম তারা এসেছিল। তছনছ করে দিয়ে গেছে আমাদের না পেয়ে।

তারপর সব মায়া ত্যাগ করে চলতে আসতে হল আমাদের। এই বয়সে ভিটা মাটি থেকে উচ্ছেদ হয়ে অন্য এক দেশে আশ্রয় নেওয়া, নতুন করে সব শুরু করা…

মাসিমা একনাগাড়ে বলে যেত।সবাই ভাবে আমরা বুঝি বানিয়ে বানিয়ে বলি যে আমাদের অবস্থা ভালো ছিল।বাঙাল বলে আড়ালে হাসে। আসলে উদ্বাস্তুদের কোথাও কোনো সম্মান নেই।

কিন্তু মাসিমা তোমরা তো এখানে সব সুযোগ সুবিধাই পেয়েছ।মেসোমশাইও তো এসে এসেই চাকরি পেয়ে গেল স্কুলে।

হ্যাঁ, ওই উদ্বাস্তুদের জন্য যে কলোনী সরকার গড়ে দিল, তাতেই একটা স্কুল বানানো হল আমাদের বাচ্চাদের পড়াশোনার জন্য। তোমার মেসোমশাই সেখানে হাই স্কুলের শিক্ষক ছিল। সেই উৎসাহ নিয়ে শুরু করল। প্রথমে খোলা আকাশে নিচে ক্লাস হত। তারপর অস্থায়ী ছাউনি দেওয়া একটা বাঁশের বেড়া দেওয়া ঘর।

একটা শ্বাস ফেলে মাসিমা বলল, সেখান থেকে আজকের আজাদ কলোনী হাই স্কুল।

চন্দ্রাবতীর শুয়ে শুয়ে এখন এসব পুরোনো কথাই বেশি মনে পড়ে।এ কদিন ফেসবুকে নানা পোস্ট দেখছে আর ভাবছে সেদিন যুদ্ধের কারনে এতগুলো মানুষ এক দেশ থেকে আরেক দেশে পাড়ি দিয়েছিল। একটা অচেনা অজানা অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ জীবন বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিল।

আর আজ নিজের দেশের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা যেতে শ্রমিকেরা হাজার হাজার কিলোমিটার পথ হাঁটছে নিজের ঘরে ফেরার জন্য।তাও লুকিয়ে চুরিয়ে। মানুষগুলো কী পারবে ফিরতে? নাকি রাস্তাতেই শেষ হয়ে যাবে পথের ক্লান্তিতে, অনাহারে!এর মধ্যেই এফ বিতে দেখল কতগুলো ক্লান্ত মানুষ রেল লাইনে ঘুমিয়ে পড়েছিল। তাদের ওপর দিয়ে ট্রেন চলে গেছে। তাদের জুতো, রুটি চারদিকে ছড়ানো।

এসব দেখে চিন্তায় তার ঘুম আসে না। মালশ্রীর জন্যেও চিন্তা হয়।কেমন আছে সে, কবে ফিরবে এসব নিয়ে ছেলে বা নাতনিকে যত বার প্রশ্ন করছে, তারা বলছে- এই তো ক’দিনের মধ্যেই ফিরে যাবে।ভালো আছে।

চন্দ্রাবতী তাদের মুখ দেখেই বুঝতে পারে তারাও খুব একটা জানে না মালশ্রী কেমন আছে কিংবা কবে ফিরবে। তাদের মনের ভিতরেও যে ক্রমশ দুশ্চিন্তা দানা বাঁধছে এটাও সে উপলব্ধি করে।

আরে বাবা! আমি তোদের মা না তোরা আমার জন্ম দিয়েছিস? মালশ্রীকে নয় পেটে ধারণ করিনি,কিন্তু সেও তো আমার মেয়ের মতই। এত বছর ধরে সে আমাকে মা বলে ডাকছে, আমার চিন্তা হবে না?

শুয়ে শুয়েই সে এক দুই তিন চার… থেকে একশো অবধি আবার একশো থেকে এক পর্যন্ত গোনে। সেই স্কুলের ক্লাসের সামনে হাতের কড়ি গোনা পাগলীটার মত।তখন কখনো মনে হয়নি কেন গুনত সে। কিন্তু আজ তার মত করেই গুনতেই থাকে যতক্ষণ না দু’চোখের পাতা ভারি হয়ে আসে।

১১

কোয়েরেন্টাইন। শব্দটার মধ্যে কেমন একটা রহস্য আছে। লন্ডনে থাকাকালীন শব্দটা নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করেছিল মালশ্রী। রুমমেট রেজওয়ানা নামের মেয়েটি বাংলাদেশের। দুজনেরই ভাষা বাংলা হওয়ায় এবারের থাকাটা অন্যবারের মত কেবল কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। অধিকাংশ দিন রাতে ডিনার সেই বানাতো। এত রকম যে ভর্তা হতে পারে তা মালশ্রীর কল্পনাতেও ছিল না।

রেজওয়ানা পরিচয়ের প্রথম দিনই বলেছিল, আমাকে সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা বন্যা বলে ভুল কোরো না বন্ধু। আমার গলা দিয়ে গান তো দূরের কথা সা রে গা মা ও বেরোয় না।তবে একটা জিনিস তোমাকে এসিওর করতে পারি রাতের ডিনার তোমার কপালে ভালোই জুটবে যদি আমার সঙ্গে থাকো।

মালশ্রী রান্না করতে একেবারেই ভালোবাসে না। তাই এই প্রস্তাবে তার আনন্দের শেষ ছিল না। সত্যি মেয়েটি এত ভালো রাঁধত যে সারাদিনের ক্লান্তু শরীর প্রাণ খুঁজে পেত রাতের খাবারে।

রেজওয়ানা অবশ্য তিন মাসের জন্য সেখানে ছিল। তখনো ভাইরাসের আক্রমণ শুরু হয়নি লন্ডনে। তার আগেই সে ফিরে গেছিল দেশে। যাবার আগে বলেছিল, বন্ধু, চিনে একবার যখন এত হারে ছড়িয়ে পড়েছে,তখন সারা পৃথিবীতেই দেখো দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।

দূর! এই ফার্স্ট ওয়াল্ড কান্ট্রিতে এসব হবে না।তার আগেই এরা প্রিকর্সান নিয়ে নেবে।মালশ্রী ওভার কনফিডেন্ট ছিল প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর পরিকাঠামো ও মেডিক্যাল সায়েন্স নিয়ে।

রেজওয়ানা হেসে উঠেছিল।বন্ধু, তুমি এদের বাইরের চাকচিক্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছ। ভেতরে এরা পুরো ঘূণ ধরা। আমি তো বহুবার এলাম এদেশে। আমার দুনিয়ার রিলেটিভ পুরো ইউরোপ আমেরিকা জুড়ে ছড়ানো।যতটা মনে করা হয় এদের চিকিৎসাবিদ্যার উন্নতি নিয়ে, আদতে তা নয়। আমি তো বলব, তোমার দেশ এর থেকে উন্নত।

মালশ্রী নিজের দেশের চিকিৎসা উন্নত শুনে গর্বের হাসি হাসল বটে, কিন্তু মনে মনে বলল, তুমি তো আর জানো না, আমাদের দেশে চিকিৎসার নামে কি চলে!টেস্টের পর টেস্ট আর ওষুধের বিশাল লিস্ট।

রেজওয়ানা বোধহয় বুঝতে পারল কিছু। সে বলল, যতই আমার দেশকে চিন সাহায্য করুক তবু আমি বলব চিন যেটাই করে তারই দ্রুত বিস্তার হয়। সে চিনা প্রোডাক্ট হোক আর রোগ! সবেতেই সে নিজের সিগনেচার রেখে যাবেই। মিলিয়ে নিও। রেজওয়ানা জোরে হেসে উঠল।

তোমার কি চিনের উপর খুব রাগ? মালশ্রী হেসে প্রশ্ন করল।

রেজওয়ানা প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বলল, তুমি কি জানো পৃথিবীর মধ্যে ধর্মের নিরিখে খ্রীষ্ট, ইসলাম, হিন্দু ধর্মের পরেই সংখ্যা গরিষ্ঠ হল বৌদ্ধরা?

মালশ্রী এ বিষয়ে প্রায় কিছুই জানে না। সে জানে বৌদ্ধ ধর্ম অহিংসার কথা বলে। বুদ্ধদেব ও তাঁর সৃষ্ট এই ধর্ম এক সময় সারা বিশ্বে শান্তির বার্তা এনে দিয়েছিল। কিন্তু রেজওয়ানা হঠাৎ এর কথা বলছে কেন সে বুঝে উঠতে পারল না। সে কিছু না বলে তার পরবর্তী কথা শোনার অপেক্ষায় রইল।

রেজওয়ানা কথা বলতে বলতে কফি করে নিয়ে এল। একটা বড় কাপ মালশ্রীর হাতে দিল।রুম টেম্পারেচর বাড়িয়ে দিয়ে বলল, উফ কি ঠান্ডা! আই হেট উইন্টার।একটু থেমে ধীরে ধীরে কাপে চুমুক দিয়ে বলল, জানো আমি একবার ঠিক করেছিলাম বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করব। শুরুও করেছিলাম।আমার বিষয়টা বেছেছিলাম আজকের দিনে এই ধর্মের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব।

বেশ ইন্টারেস্টিং তো! মালশ্রী বলল।

পড়তে গিয়ে দেখলাম অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করে বিশ্বের সেরা খারাপ লোক হল মুসলিমরা। অর্থাৎ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। কিন্তু আমি তথ্য দিয়ে তোমাকে বুঝিয়ে দিতে পারি পৃথিবীর সবচেয়ে নিষ্ঠুর ধর্মের লোক হল এই বৌদ্ধরা।

দূর! বৌদ্ধ ধর্মে অহিংসার কথা বলা হয়েছে। সেখানে হিংসা, নিষ্ঠুরতার কোনো স্থান নেই। মালশ্রী বলল।

আপাত দৃষ্টিতে সেটাই মনে হয়। কিন্তু তুমি দেশগুলোর দিকে তাকাও। আমি তোমাকে বিশ্লেষণ করে দেখিয়ে দিতে পারি। এশিয়ার মধ্যে চিনে সবচেয়ে বেশি বৌদ্ধ। তারপর থাইল্যান্ড, জাপান, মিয়ানমার,শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান। এবার তুমি চিনের দিকে তাকাও। সে দেশে দুটির বেশি সন্তান জন্মালে সেই বাচ্চাকে সঙ্গে সঙ্গে মেরে ফেলা বাধ্যতামূলক। তাছাড়া তুমি প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্ক লক্ষ করলেই দেখবে কি ভীষণ হিংস্র এরা। তিব্বতের দিকে তাকালেই বুঝতে পারবে। জাপানকে দেখো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অর্ধেক বিশ্ব এদের হিংস্রতার শিকার। শ্রীলঙ্কায় তামিলদের কিভাবে মেরে ফেলা হল নিশ্চয়ই মনে আছে। সবচেয়ে আমাকে অবাক করেছে মিয়ানমার। শান্তির জন্য যে দেশের প্রধাণ নোবেল পেলেন, সেখানে রেহিঙ্গাদের উপর কী ঘটল আর তিনি কেমন নীরব রইলেন সারা বিশ্ব দেখল। এখন তুমি ভাবতেই পারো এর পিছনে নানা কারন জড়িত ছিল।তার সঙ্গে বৌদ্ধ ধর্মের কি সম্পর্ক! কিন্তু ঠান্ডা মাথায় যদি দেখো দেখবে এরা কোনও অংশে হিটলারের থেকে কম নিষ্ঠুর নয়। হয়তো গ্যাস চেম্বারে এরা মানুষ মারছে না, কিন্তু এত নীরবে বিরুদ্ধপক্ষকে এরা শেষ করে দেয় যে তুমি প্রশ্ন করারও সুযোগ পাবে না।

মালশ্রী বুঝতে চেষ্টা করছিল রেজওয়ানার দৃষ্টিভঙ্গী। সে নীরবে অপেক্ষা করছিল।

রেজওয়ানা একটু হেসে বলল, আসলে চন্ডাশোক থেকে ধর্মাশোক- অশোকের পরিবর্তনটা সত্য হলেও ভুলে যেও না তার গায়ে রক্তের গন্ধ সম্পূর্ণ মুছে যেতে পারে না। সে তুলনায় তোমাদের ধর্ম অনেক বেশি সহিষ্ণু। যদি কখনো সুযোগ পাই তোমাকে বিস্তারিত বলব। এখন ঘুম পাচ্ছে। তবে শুতে যাবার আগে একটা কথা তোমাকে বলে যাচ্ছি, এই রোগে যদি চিনে অর্ধেক মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, বাইরের দেশ তা জানতেও পারবে না। এবং তুমি জেনে রেখো সেখানে এই রোগের থেকে বাঁচার জন্য যদি একশো জনের চিকিৎসা করা হয় তবে আর একশো জনকে জাস্ট মেরে ফেলা হবে,যাতে সংখ্যাটা কাউন্ট করা না যায়। আর এইটা করা হবে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সঙ্গে। কারন তাদের আর প্রোডাক্টিভ কিছু করার ক্ষমতা নেই।

মালশ্রী খুব অবাক হচ্ছিল তার কথায়। কিন্তু এত কিছু ভাবতে তার ভালো লাগছিল না।তাছাড়া সে তখনো নিশ্চিত ছিল লন্ডনে কিছু হবে না।

এর দুদিন বাদেই রেজওয়ানা দেশে ফিরে গেছিল। তার ভাইয়ের নিকা উপলক্ষে। যাবার আগে মালশ্রীকে বারবার তাড়াতাড়ি দেশে ফিরতে অনুরোধ করেছিল, পারলে তোমার অথরিটিকে বলে এখনই ফেরার ব্যবস্থা করো, নইলে সমস্যায় পড়তে পার।

মালশ্রীর মনে হল, ইসস যদি তার কথা শুনে আগেই চলে আসা যেত! হয়তো এই কোয়েরেন্টাইনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যেত।

(ক্রমশ)

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes