
আমার রবিঠাকুর
শতদল আচার্য
রবীন্দ্র নাথ ও আমার কবে কোথায়,কোন বয়স থেকে রবীন্দ্রনাথের সাথে পরিচয় মনে করতে পারছি না। বয়সের সাথে সাথে অনুভব করলাম,রবীন্দ্র আমার জীবনে কত আলো হয়ে কত না মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। এই বয়সে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথকে আপন বন্ধু ভেবে পাশেই পাই। ছোটবেলায় বাড়ীতে রবিঠাকুরের ছবি বসিয়ে ফুল আর ধূপকাঠী দিয়ে সাজিয়ে রাখা হতো ,এ ছিল পঁচিশের সকাল। বিকাল হলে মা গান ধরতেন ,আমরা কেউ কেউ এক দুইটা পাঠ্য বইয়ের কবিতা পড়তাম।এ ছিল ছোটবেলার পঁচিশে বৈশাখ। একটু বড় হওয়ার পরে পাড়ার পঁচিশে বৈশাখের সাথে মিশে গেলাম।এভাবে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আমার প্রবেশ , রবীন্দ্র নাথ আমাকে সবার সাথে চলার রাস্তা তৈরী করে দিলেন।সেই সময় প্রথম নাটকের সাথে পরিচয় ,পাড়ার সবাই মিলে ডাকঘর নাটক মঞ্চস্থ হলো, এটাই আমার প্রথম নাটক দেখা । আর সেদিনই দইওয়ালার সাথে পরিচয় হলো।এভাবে ক্রমে ক্রমে রবিঠাকুরকে চিনতে শুরু করলাম। এরপর কত কিছু ভাবনায় রবিঠাকুর চলে আসতেন । পঁচিশে বৈশাখে আর কলেজ জীবনে অমিত আর লাবণ্যের সাথে পরিচয় ঘটে। সে কি কান্ড ?কলেজ জীবনে আমাদের ক্লাসে লাবণ্য বলে একটা মেয়ে ছিল তাকে দেখে কোন অনুষ্ঠানে কিংবা জটলায় শেষের কবিতা পড়তাম। মেয়েটা তখনোও লাবণ্যকে চিনে নি। যখন লাবণ্যকে জানলো সে কি ,ধীরে ধীরে মাস্টার মশাইকে অভিযোগ জানালো। অভিযোগ ছিল শেষের কবিতা পাঠ। কলেজে রবীন্দ্র জয়ন্তী মানেই ছেলেদের সাদা পাঞ্জাবি আর মেয়েদের লাল ডোরা কাপড়ের সাদা শাড়ী। সবাইকে এক সাথে দেখে আনন্দ লাগতো।এ যেন এক অদ্ভুত আনন্দ।
এভাবে ধীরে ধীরে বয়স ও বাড়ছে আর ততই রবীন্দ্রনাথকে আরোও কাছের মানুষ ভেবে অনুভব হয় । জীবন যন্ত্রনায় যতই জর্জরিত হয়েছি ততই এক কঠিন সত্যের মুখে দাঁড়িয়ে পৃথিবীকে দেখেছি ,তখনই রবীন্দ্রনাথ আমার আশ্রয় হয়ে দাঁড়িয়েছেন।এটা হয়তো শুধু আমার কথা নয়। অনেকের কাছে প্রত্যেকের স্তর ভেদে রবীন্দ্রনাথ ধরা দেন। এ এক অভিব্যক্তি। প্রত্যেকের মানসিক চাহিদা ও জীবনবোধ আলাদা আলাদা। রবীন্দ্র নাথের ভাবনা এভাবে সাজানো আছে । যে কেউ নিজের মত ওয়েব মিলিয়ে নিতে পারে । এটা রবীন্দ্রনাথ শুধু সাহিত্যের জন্য নয় , রবীন্দ্রনাথ ভাবনা ও চিন্তা চেতনা আসলে এক দর্শন। রবীন্দ্র নাথের এক ভারতীয় ভাবনার সংমিশ্রন ঘটিয়ে নব্য আধুনিক ও গতিশীল চেতনা স্তরকে ধরিয়ে দিয়েছেন বিশেষ করে সংগীতে। রবীন্দ্র নাথের সংগীতের সাথে সবাই মিলে যেতে পারে।
রবীন্দ্র সংগীতের সাথে পরিচয় হতে হতে আবার নতুন করে নিজেকে আবিস্কার করলাম। সুরের কাছে মন আটকে যেত একটা সময়ে, এখন প্রতিটি লাইনেই একটা জীবন দর্শনকে খুঁজে পাই । জীবনের স্তরে স্তরে ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথের গানের কাছে এক দন্ড শান্তি পাই । বাঙালির তার পুরানো সব ভুলে গেলেও রবীন্দ্রনাথের গানকে নিয়ে বেঁচে থাকবে হাজার বছর বলে আমার বিশ্বাস।বয়সের সাথে সাথে নতুন নতুন উপলদ্ধি হচ্ছে । প্রতিটী গান যেন পুনঃ পাঠে আবার নতুন উপলব্ধির আবিষ্কার করে চলছি । এখানে যেন থেমে থাকছে না। হয়তো আবার নতুন করে আবিস্কার করে দেখবো । যত শুনি ততই হারিয়ে যাই । এ যেন মহাসমুদ্র।