
সোলারিস – তারকোভস্কির মনোবিজ্ঞানভাবনার এক অস্বস্তিকর নির্মাণ
সোমা দত্ত
এই মুহূর্তে কলকাতায় বসে চলচ্চিত্রের প্রসঙ্গ এলেই ঋত্বিক ঘটক এসে পড়ছেন। অথচ আমি ঋত্বিক ঘটককে নিয়ে লিখতে চাইছি না। যাকে এতদিন এতভাবে ব্যাখা করার পরেও পুরোটা উন্মোচিত হয় না বা যার সবটুকু বোধগম্য হয় না তাকে নিয়ে লিখে হয়তো নতুন কোনো গন্তব্যে পৌঁছতে পারব না। অন্য পাঁচটি লেখার মর্মার্থ উগড়ে দেব যা কোনোভাবেই কোনো নতুন দৃশ্যের জন্ম দিতে পারবে না। একশো বছর কম নয়। একশো বছরে কত দিক থেকে দেখা যায় একজন শিল্পীকে। তারই তৈরি করা স্ক্রিন প্লে, ভাবনা, দৃশ্য, দৃশ্যায়ন, প্রেক্ষাপট সবরকম টুকরো টুকরো কারিগরি দিয়ে তাকে দেখার চেষ্টা হয়েছে। বোঝার চেষ্টা হয়েছে। তার পরেও তিনি বাকি রয়ে গেছেন যেন। এই মুল্যায়ন, এই প্রচেষ্টার পুরোটা আমাদের স্বার্থে হলেও সে স্বার্থ থেকে বাংলা সিনেমা নতুন কিছু প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে কিনা সন্দেহ আছে। ঋত্বিকের মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সবটুকু নিয়ে আমরা নিজেদের শিক্ষানবিশ করে রেখেছি মূলত নিজেদের শিল্প ভঙ্গিমার বোধকে সুস্পষ্ট করতে। আমাদের এই প্রক্রিয়া শিল্পীর প্রতি দায় থেকে না শিল্পের প্রতি দায় থেকে সে এক অন্য প্রেক্ষাপটে নিয়ে যাবে হয়তো। সে দর্শন আলোচনা হয়তো চলচ্চিত্রের কথা বলতে বসে নেহাত অপ্রাসঙ্গিক উন্মত্ততা মনে হতে পারে।
দেখার শেষ নেই বলেই হয়তো তাই দেখতে চাইছিলাম কোনো বিদেশী পরিচালকের কাজের চর্চা বিষয়ে ভাবতে গেলেও এই একই ভাবনায় পৌঁছতে হয় কিনা। একজন পরিচালক যিনি দৃশ্যের চেতনায় বিপ্লব জাগাতে জানেন তার ভাবনার প্রতিফলন অন্য কারো কাজে খুঁজে পাওয়া কঠিন। আসলে কী খুঁজছি সেটাও তো জানা দরকার। মৌলিক কাজের কথা বলছি কিন্তু মৌলিক কাজের একশো উদাহরণ আছে এবং সব মৌলিক ভাবনাই একদম পৃথক একটি স্তরে নিয়ে যেতে চাইছে। তবে আমি কী খুঁজছি। খুঁজছি সেইরকম একটা দৃশ্য যাকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য পাগল হতে হতে প্রতিবার নতুন কিছু করার অভিপ্রায়ে নিজেকে উপুড় করে ঢেলে একটা কাজ করার পরেও যা কিছু বলার ছিল তার সবটা বলা হয় না। ঋত্বিক ঘটকের যত ছবি দেখেছি সব ছবির মধ্যে এই না বলা একটা সময় ঘুরছে বলে মনে হয়েছে। একটা সময়, একটা অবস্থা, একটা পরিস্থিতি নিজেই নিজেকে ধরে রেখেছে। এবার খুঁজে পেলাম। এই দৃশ্যকে জীবনদান করবার ভঙ্গিমার প্রসঙ্গ ছুঁয়েই পৌঁছলাম তারকোভস্কির একটি ছবির কাছে। না। স্টকার বা মিরর বা নস্টালজিয়া নয় তারকোভস্কির একটি সায়েন্স ফিকশন ছবির কাছে পৌঁছলাম। সোলারিস। এবার বলি সায়েন্স ফিকশন ছবি কেন নিলাম? দৈনন্দিন ঘটনার দৃশ্যকে বক্তা বানানো একরকম আর দৈনন্দিনতার বাইরে গিয়ে, পৃথিবীর পরিধি ছাড়িয়ে অন্য গ্রহের কাছাকাছি থাকা একটি স্পেস স্টেশন যা মূলত কাল্পনিক সেই দৃশ্যকে ভোকাল করা আরেকরকম। কারণ এক্ষেত্রে পরিচালকের দৃশ্যগত অনুবাদ মানুষকে ধরতে হবে। দ্রষ্টার সঙ্গে দৃশ্যের সাযুজ্য তৈরি না হলে কোনো কথোপকথন তৈরি হবে না। পরিচালক যদি রূপকথা বানাতে চান তাহলে অন্য কথা। সেক্ষেত্রে তিনি কল্পনাকে তৈরি করবেন। ঠিক সেইভাবেই তৈরি করবেন যেভাবে মানুষ স্বপ্ন দেখে, কল্পনা করে, খেলাচ্ছলে রচনা করে আকাশকুসুম। কিন্তু যদি সায়েন্স ফিকশন ছবিকে এমন হতে হয় যে দৃশ্য গিয়ে আঘাত করবে তোমার ভাবনার পরিধির দেওয়ালে এবং অধরা অস্পষ্ট অপরিচিতকে টের পেয়েও না বোঝার অস্বস্তির মধ্যে তাকে ঘুরপাক খেতে হবে তাহলে সে বড় সহজ কাজ নয়। যাই হোক গল্পে আসি একটু। সোলারিস ছবিতে সোলারিস হলো সেই গ্রহ যার আবর্তে থাকা একটি স্পেস স্টেশনের অন্যান্য কয়েকজন বিজ্ঞানির সঙ্গে থাকা এক মনোবিজ্ঞানির কথা রয়েছে ছবিতে। কথা না বলে একে অনুসন্ধান বলাই যুক্তিযুক্ত। বিজ্ঞানের সঙ্গে জুড়ে থাকা কল্পনা দিয়ে যে কাহিনি পরিব্যাপ্ত হয় তার মধ্যে সাধারণত এক অন্য প্রাণের গন্ধ থাকে। কিন্তু সেই প্রাণের গন্ধ যেহেতু পৃথিবীর মানুষের লেখা তাই তার প্রকৃতিও পৃথিবীর মানুষের জীবনযাত্রার মূল ছন্দে থাকা জন্ম মৃত্যুর ভঙ্গিমাকে পরিবেষ্টিত করেই হয়। এবং যেহেতু মানুষ উন্নত থেকে উন্নততর হতে চাওয়ার বাসনায় প্রমত্ত তাই তার কল্পনার দ্বিতীয় পৃথিবীও আরও বেশি উন্নত হয়। এখানেই ছন্দ ভেঙেছেন তারকোভস্কি। সোলারিস গ্রহের প্রভাবকে তিনি পৃথিবীর জন্ম মৃত্যুর পরিভাষা থেকে আলাদা করে দিয়েছেন। এই ২০২৫ সালে বসেও চিন্তার এই স্বাতন্ত্র্যকেই বিপ্লব বলে মনে হয়। বিপ্লব বোধহয় সেই মৌলিক দৃশ্যের জন্ম দেয় যাকে সঠিক অনুবাদ করতে না পারার যন্ত্রণা কোনো এক ঘূর্ণাবর্ত তৈরি করে। সেই ঘূর্ণাবর্তে আটকে থাকার অস্বস্তি আগামী দশকগুলোকেও প্রভাবিত করে রাখে। সে যেন এক মশাল নিয়ে উদ্যক্তা হয়ে বলতে চায় এইভাবে জন্ম হয়েছিল বিপ্লবের। এই ধারার উত্তরসূরি তৈরি করো। সোলারিস দেখতে দেখতে মনে হয়েছে পৃথিবীর এই জীবনের চর্চা এবং মায়ামণ্ডিত আনন্দ যাপন যে তার পরিধির বাইরে নিতান্ত অর্থহীন এবং এই মায়া যে এক অমোঘ নিশ্চল রহস্যের পুনরাবৃত্তি হতে পারে সেই ভাবনাকে বেছে নিয়েছেন তিনি।
মূল গল্পটি স্ট্যানিস্লো হারমান লেমের লেখা উপন্যাস অনুসরণে তৈরি করা হয়েছে যা রচনা ও পরিচালনা করেছিলেন আন্দ্রেই তারকোভস্কি। লেম যদিও তারকোভস্কির চিত্রনাট্য তার মূল গল্পকে যেভাবে বদলে দিয়েছে সে বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। গল্পে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হওয়া তিন বিজ্ঞানির মানসিক অবস্থা বিবেচনা করতে এক মনোবিজ্ঞানিকে পৃথিবীর বাইরের গ্রহ সোলারিসের নিকটবর্তী স্পেস স্টেশনে পাঠানো হয়। সোলারিস একটি গ্রহ যা এক রহস্যময় মহাসাগর দিয়ে ঢাকা। এই মহাসাগরটিকে বানানো হয়েছিল অ্যাসিটোন , অ্যালুমিনিয়াম পাউডার এবং রঞ্জক পদার্থ দিয়ে। মনোবিজ্ঞানি ক্রিস কেলভিন স্পেস স্টেশনে যাওয়ার আগে নিজের বাবা মা ও বার্টন নামের একজন পাইলট এর সঙ্গে কাটানোর সময় তার মুখ থেকে সম্যক অভিজ্ঞতার কথা শোনেন। এই অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে গিয়ে বার্টন যে অদ্ভুত দৃশ্যের বর্ণনা করে তার মধ্যে চার মিটার লম্বা একটি শিশুর কথাও সে বলে যাকে দেখতে সোলারিস অভিযানে নিখোঁজ অভিযাত্রীদের এক অনাথ হয়ে যাওয়া ছেলের মতো। এখানে এক অনিয়ত এলোমেলো ভাবনাকে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেন তারকোভস্কি যা মূলত র্যানডম। এই র্যানডম ভাবনাকে ইচ্ছাকৃত তৈরি করা, ভাবনার প্যাটার্নকে খণ্ডন করার জন্য। সাধারণভাবে দৃশ্যের পিছনে থাকা একটি অনাথ শিশুর অবস্থার সঙ্গে ক্লাইম্যাক্সে থাকা ঘটনার সংযোগ তৈরি করে চিন্তাসূত্রে আটকে থাকা যেকোনো ভাবনার মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। একটা অস্থির অবস্থা নির্দেশ করে যে প্রচলিত অস্তিত্বের যৌক্তিকতা দিয়ে আমরা ঘটনাকে যেভাবে ব্যাখা করি তার বাইরেও ঘটনার জন্ম মৃত্যু হয় যার প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমরা অবহিত নই।
ক্রিস কেলভিন তার মৃত স্ত্রীর দেখা পান স্পেস স্টেশনে যে বহু বছর আগে মারা গেছে। প্রথমে সে ঘটনার চমকে বিভ্রান্ত হয়। স্ত্রী হ্যারিকে স্পেস স্টেশনের বাইরে উৎক্ষেপণ করতে চেষ্টা করে। কিন্তু সে ফিরে আসে পুনর্বার একইভাবে। মৃত স্ত্রীর বারবার ফিরে আসা ঘটনার সঙ্গেও যেন ক্রিস অভ্যস্ত হয়ে ওঠে এরপর। অথচ সে জানে হ্যারি বাস্তব নয়। এখানে এক অদ্ভুত সংঘাত রয়েছে সম্পর্কের। সম্পর্ক কার সঙ্গে তৈরি হয়? শারীরিক অস্তিত্বই কি সম্পর্ককে বহন করে? ছবিতে হ্যারি বাস্তবের কোনো প্রতিরূপ যাকে তৈরি করা হয়েছে ক্রিসের স্মৃতি থেকে। তাকে অচেনা গ্রহ থেকে অতিথিরূপে পাঠানো হয়েছে তথ্য সংগ্রহ করতে। কিন্তু সে হ্যারির সম্পর্কে অর্থাৎ নিজের সম্পর্কে কিছু জানে না। হ্যারির বারবার ফিরে আসা এবং নিজের অতীত মনে রাখতে না পারা এবং কিছু স্মৃতির পুনরুদ্ধার করতে পারার মধ্যেও এক অদ্ভুত শূন্যবোধ রয়েছে। হ্যারির চলন হ্যারিকে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা দিয়েছে যেন। সে বাস্তবে বেঁচে থাকা হ্যারিকে জানতে চেষ্টা করে। তার কথা বলার মধ্যে এবং অভিব্যক্তির মধ্যেও যেন এক জীবিত ও মৃতের মিশ্রণ। ক্রিসের সঙ্গে থাকতে থাকতে হ্যারি যে আদপেই জীবিত নয় তার ক্রমশ জীবিত মানুষের মতো ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে ওঠার মাধ্যমে জীবনের যাবতীয় বোধ এবং চলাচলকে যেন এক সময়ের অভ্যাস বলে প্রতিষ্ঠা করা হয়। হ্যারি ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে নিজের কাছে এবং নিজেকে ধ্বংস করতে চায়। শেষপর্যন্ত সে অপর দুই বিজ্ঞানীকে অনুরোধ করে তাকে ধ্বংস করতে এবং সোলারিস থেকে অতিথি পাঠানোর প্রক্রিয়া বন্ধ করতে উদ্যোগি হয়।
এই ধরনের ছবি সাধারণত ঘটনাপ্রবণ হয়। আমাদের বোধগম্য বিজ্ঞান জানা সূত্রে, চেনা পরিমণ্ডলে এবং সকলের নির্ধারণযোগ্য সূত্র এবং সমীকরণে গল্প লেখে যা অনেকখানি রূপকথার গল্পে প্রাণদানের মতো। ভাবনাকে ভাঙার সাহস সকলে দেখান না। কারণ মানুষের কাছে তা সহজবোধ্য নয়। সোলারিসকে ব্যাখা করার চেয়ে অনেক সহজ ইন্টারস্টেলারকে ব্যাখা করা। এমনকি ব্ল্যাকহোলের মতো জটিল ধারণাকেও চলচ্চিত্র সাধারণের মনে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে সহজ দৃশ্যের মাধ্যমে যা অনুভব করা বাস্তবে প্রায় অসম্ভব। তারকোভস্কি সেই সহজ অনুষঙ্গ অনুসরণ করেননি।
তার কোনো কাজই যেমন গতানুগতিক নয় তেমন একটি কল্পবিজ্ঞান প্রসূত গল্পকে চলচ্চিত্রে রুপায়ন করতে গিয়েও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তিনি দৃশ্যকে দীর্ঘ করেন এবং গতিকে ধীর করে দেন। ছবির সঙ্গে একাত্ম হতে দর্শকের সময় লাগে কিন্তু একাত্ম হওয়ার পর সে দৃশ্য দর্শককে ভাবিয়ে তোলে। সহজবোধ্য সমীকরণের ধরনকেও ভেঙেছেন। অচেনাকে চিনতে এবং রহস্যকে জাগিয়ে রাখতে তিনি একের পর এক নির্জন দৃশ্যকে পাশাপাশি রেখে জুড়েছেন। শব্দের ব্যবহার ন্যুনতম করেছেন। হাঁটার সময় পায়ের শব্দ, দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ, বাতাসের শব্দ, জলের শব্দ এবং নিস্তব্ধতার মধ্যে থাকা এক রহস্যঘন নির্জনতার শব্দকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছেন। যা কিছু অজানা তার মধ্যে এক নির্জন বিষাদ তৈরি করেছেন যা স্টিভেন স্পিলবারগের কল্পবিজ্ঞানের ছবির একেবারে বিপরীত। বরং অ্যালেক্স গারল্যান্ডের তৈরি ছবি অ্যানাইহিলেশন অনেকটা সোলারিসের মতো মনস্তাত্ত্বিক নির্মাণকে ব্যাখা করে। বিপরীতধর্মী কাজ করেছেন এমন বিদেশী পরিচালক কি আর নেই? অগুনতি আছেন। বৈপরীত্যের মধ্যে তার নিজস্ব ভঙ্গিমা হলো দৃশ্যের প্রাকৃতিক চলন। জলের থেমে থাকার সঙ্গে শুধু জলের থেমে থাকাটুকুই যেন আছে। জলের ঘনীভূত হওয়ার সঙ্গে যেন শুধু ওই পরিবর্তনটুকুই রয়েছে। তাকে সবিশেষ করে তোলার জন্য অন্য কোনো অনুষঙ্গ যেন নেই। ফলে পর্যাপ্ত নিঃসঙ্গতা রয়েছে ছবিতে। সোলারিস ছবির শেষ দৃশ্যটি অসম্ভব সুন্দর। ছবির শুরুতে ক্রিস কেলভিনকে তার বাবার সঙ্গে দেখা গেছিল। শেষ দৃশ্যেও তাকে বাবার কাছে আসতে দেখা গেল। কিন্তু পরিশেষে দেখা গেল তার সেই ঘর সেই অচেনা সোলারিসে জেগে ওঠা একটি দ্বীপের মধ্যে। দেখা গেল তার বাবার গায়ে সিলিং উপচে জল পড়ছে, তিনি ভিজে চলেছেন নির্বিকারে। এই অস্বাভাবিক অবস্থানের মধ্যে স্বাভাবিককে প্রোথিত করা এক আশার ইঙ্গিত করে। দৃশ্য লং শটে প্রকাশ করে যে সোলারিস মহাসাগরের মধ্যে জেগে উঠেছে এক দ্বীপ। যেই দ্বীপের মধ্যে ক্রিস কেলভিন রয়েছে এবং তার কুকুরটিকেও দেখা যায় তাকে চিনে নিতে এবং তারপর দেখানো হয় তার বাবাকে। সম্পর্কের এই পুনর্নির্মাণ সোলারিস গ্রহের প্রভাবে ক্রিসের স্মৃতিনির্মিত কিনা সে রহস্য পরিচালক অনুচ্চারিত রাখেন।
সোলারিসের নির্মাণ প্রসঙ্গে বিপ্লব শব্দটিকে কেন টেনেছিলাম সেটা একটু না বললে ওই উল্লেখ অবান্তর মনে হয়। তো ঘটনা হল সোলারিসকে দর্শক কিন্তু সঠিকভাবে নিতে পারেনি। কারণ অত্যধিক স্লো এবং লং শট এবং মনোবিজ্ঞানের সূক্ষ্ম নির্মাণ বোঝার জন্য যে পরিমাণ ধৈর্য রাখা প্রয়োজন প্রেক্ষাগৃহের দর্শক সেটা ধরে রাখতে পারেননি। এছাড়া ছবির নির্মাণের পর মুক্তি পাওয়ার আগে ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে, স্টেট কমিটি ফর সিনেমাটোগ্রাফি ছবিটির সম্পাদনা বিবেচনা করে আরও বাস্তবসম্মত করতে এবং ছবির মধ্যে নির্ধারিত ঈশ্বর ও খ্রিস্টধর্মের প্রতি ইঙ্গিতগুলি বাদ দিতে অনুরোধ করেছিল। তারকোভস্কি সেগুলি করেননি এবং ছোটখাটো পরিবর্তন করে নিজের নির্মাণকে অক্ষুণ্ণ রেখেই ছবিটির প্রকাশ করেছিলেন। প্রকাশের অব্যবহিত পরেই সাফল্য না পেলেও পরবর্তীকালে কুরোসাওয়া থেকে শুরু করে অনেক বড় পরিচালকই ছবিটিকে সায়েন্স ফিকশন ছবির শ্রেষ্ঠ একশোটি ছবির মধ্যে একটি অন্যতম ছবির মর্যাদা দিয়েছিলেন।

