
কিঞ্চিৎ পরচর্চা পর্ব-৪
রূপশ্রী ঘোষ
আমি সাধারণত সিনেমা নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা লিখি না। কোন সিনেমা ভালো লাগল বা খারাপ, সেটা সবার দেখা উচিত কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। বই পড়া এবং সিনেমা দেখা পুরোটাই সাবজেক্টিভ ব্যাপার। আমার যা ভালো লেগেছে অন্যের তা ভালো নাই লাগতে পারে। তবে খুব ভালো জিনিস সবারই ভাল লাগার চান্স বেশি। তাই সবাই দেখতে বা পড়তে সাজেস্ট করেই থাকেন। যাহোক কাল নেটফ্লিক্সে ‘মাহারাজা’ দেখলাম। তামিল সিনেমা। গল্পের বিষয়, চিন্তা ভাবনা সবই আমার অভূতপূর্ব মনে হয়েছে। বাস্তব দেখে সিনেমা হয়, নাকি সিনেমা দেখে বাস্তব শেখে এ এক বড়ো প্রশ্ন। তবে মানুষের অন্ধ অহংকার মানুষকে কোথায়, এবং কত নিচে নামাতে পারে তা এ সিনেমা না দেখলে বোঝা যাবে না। এবং তার ফল বা শাস্তি যাই বলি না কেন সেটাও দেখার মতো। সিনেমাটা ভীষণ টানটান, এবং শেষ পর্যন্ত না দেখলে বোঝা সম্ভবই নয় মানুষ আসলে কতটা নিচ বা জঘন্য কাজ করতে পারে। সব থেকে বড়ো ব্যাপার হল যে, খুব শৈল্পিক পদ্ধতিতে সত্যিটা উদ্ঘাটন করা হয়েছে। সে সময় পর্দা থেকে চোখ সরালে মিস করে যেতে পারেন।
সিনেমায় দুষ্টুলোকদের শাস্তি দেখতে সবারই খুব আনন্দ হয়। আফসোস একটাই যখন সিনেমাটা শেষ হয় তখন দুষ্টুলোকেরা শাস্তিটা পায়। কিন্তু বাস্তবের নোংরা, জঘন্য, নিচ, দুষ্টু যাই বলি না কেন তাদের শাস্তি দেখতে ভালো লাগবে না? লাগবে তো, লাগেও। এই যে, যারা দুর্নীতি করে জেলে আছে, তাদের জন্য তো অনেকেই খুশি হয়েছেন। আপনারাই তো বলেন, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। সত্যি ছাড়বে না যদি আপনি না ছেড়ে দেন। আপনাকে উদ্যোগী হয়ে শাস্তিটা দিতে হবে। দরকার হলে আইনের সাহায্যে। অবশ্যই আইনের সাহায্য নেবেন। আইন কেউ হাতে তুলে নেয় নাকি? নেয় না। দেরিতে হলেও সে শাস্তি চোখে দেখতে পাবেন। এমন অনেকেই পেয়েছেন। চেনা জানা কেউ থাকলে মিলিয়ে নেবেন। আবার হ্যাঁ, অন্যদিকে কেউ কেউ বলবে, ধুর খারাপ লোকরা শাস্তি পায় নাকি? তারা দিব্যি বুক ফুলিয়ে সবার সামনে দিয়েই দাপিয়ে বেড়ায়। নিশ্চয়ই তাই। কিন্তু সেটা তখনই সম্ভব যখন আপনি ‘উপরওলা’ সব দেখবে বলে নিজে চুপ করে বসে থাকবেন তখনই। সব উপরওলার উপর চাপিয়ে দিলে হবে? এত কোটি মানুষের দেশে বেচারি একা সবাইকে দেখতে দেখতে তো হিমসিম খেয়ে যাচ্ছেন। আর তিনি সত্যিই যদি ঠিকঠাক দেখতে পেতেন, তাহলে এই পাপ, দুর্নীতি বা খারাপ কাজগুলো করার আগেই তো থামিয়ে দিতেন। বা যারা করছে বা করবে ভাবছে তাদের মন পড়েই শাস্তি দিয়ে দিতেন। তা কি হচ্ছে? না, হচ্ছে না। তাই আপনাকেই এগিয়ে আসতে হবে। আপনার যদি মনে হয় কোনো মানুষ ভুল করছে, অত্যাচার করছে তা শারিরীক হোক বা মানসিক, বা মিথ্যে কথা ছড়াচ্ছে, প্রচন্ড আধিপত্য আর অহংকার ফলাচ্ছে আপনার উপর, ছোটো, বড়ো, মাঝারি যে-কোনো ধরনের অত্যাচারই হোক না কেন আপনিই এগিয়ে আসুন। কুমিরের কান্না কেঁদে আর গুটিয়ে বসে থাকবেন না। কারণ আপনিই জানেন সবটা, আপনার সঙ্গে কী চলেছে বা চলছে। সে অত্যাচার যেই করে থাকুক না কেন, সমাজ হলে সমাজ, পারিবার হলে পরিবার। আপনি এগিয়ে এসে সেই নিচ মানসিকতার সংকীর্ণ মনের মানুষদের বা প্রতারকদের মুখোশটা খুলে দিন। নারী পুরুষ নির্বিশেষে নিজের খোলস থেকে বেরিয়ে আসুন। আইনের সাহায্য নিন। দেখবেন সিনেমার মতো ফল পাবেন, তা সিনেমার শেষে হলেও। আপনি যদি সেই শাস্তি দেখার আগে মরে যান তখন আপনার ছেলেমেয়ে দেখতে পাবে। বা আপনার ছেলেমেয়েকেও বোঝান খারাপ লোক আর ভালো লোক কীভাবে চিনতে হয়। সেইমতো তাদেরকেও শিক্ষা দিন। তবে হ্যাঁ, সেই সুযোগে ভুল জিনিস শিখিয়ে কাঁচা মাথা চিবিয়ে খাবেন না যে, তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। দেখবেন সবাই এভাবে সাহস দেখিয়ে এগিয়ে এলে অনেক মানুষের মুখোশ খুলে যাবে। তারা যে আসলে কী আপনি যদি দেখিয়ে দেন তাহলে গোটা সমাজ অবাক হয়ে যাবে। মুখোশ পরে যে সম্মান তিনি বা তাঁরা কুড়োচ্ছেন তা তাঁর বা তাঁদের প্রাপ্য নয়। আপনি তাদের সেগুলো পেতে সাহায্য করছেন। যে সমাজের ভয়ে, লোকলজ্জার ভয়ে আপনি এগোচ্ছেন না, কী জানি বাবা লোকে কী ভাববে, একটা ছি ছি ব্যাপার হবে ভেবে চুপ আছেন আর সেটা করবেন না। দেখুন না, আপনি এগিয়ে এলে সমাজও এগিয়ে আসবে। দেখবেন তখন এই সমাজেরই কত তথাকথিত শিক্ষিত, সামাজের অ্যাসেট হিসেবে পরিচিত অনেক মানুষেরই তখন মুখোশ খুলে যাবে। তাদের প্যাঁচেই তাদেরকে ফেলুন। কারণ জানবেন, জীবিত মানুষ নিজেই নিজের কবর খোঁড়ে। সে বা তারাও ওই লজ্জায় অনুরাগ কাশ্যপের মতো আত্মহত্যা করবে।
আপনি শুধু লোকলজ্জার ভয় না পেয়ে একবার মুখোশটা খুলে দিন। আপনার এগিয়ে আসার দিকেই অনেকে তাকিয়ে। হ্যাঁ অনেকেই এগিয়ে এসেছেন, জন সংখ্যার মতো এগিয়ে আসার সংখ্যাও বাড়ুক। এটাই সবাই চায়। সবাই আত্মহত্যা নাও করতে পারেন, কিন্তু আপনাকে খবরের কাগজ, টিভি চ্যানেল ইত্যাদির মধ্য দিয়ে মানুষকে একটু নাড়িয়ে দিতে হবে। সেটা দরকার। সত্যি বলছি নাহলে মুখোশ পরা আর মিথ্যা বলা লোক দেখতে দেখতে আমরা সবাই কেমন ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি। একটু নড়েচড়ে বসুন, উঠুন জাগুন, সমাজও জেগে উঠুক, অ্যাকটিভ হোক। পরিচালক আপনি এমন সিনেমা দর্শকদের উপহার দিন। কারুর না কারুর ঘুম তো ভাঙবে, এই অপেক্ষায়। একটা নোংরা ফেলার বালতিকে কেন্দ্র করে সমাজের নোংরা দিকটা কীভাবে উঠে এল একবার দেখে নিন। তাহলে আপনিও পারবেন অনেক নোংরা বিষয়কে সমাজের সামনে হাজির করে দিতে।