স্বাগতা চৌধুরীর কবিতা

স্বাগতা চৌধুরীর কবিতা

সমর্পণ

সমস্ত সমর্পণ করো তাঁকে,
তাঁর শ্রীচরণে করো সমর্পণ,
সমর্পণই একমাত্র পথ
বলতে বলতে ঠাকুর মশাই নাটমন্দির ছেড়ে উঠে গেলেন
এদিনের মতো পাঠ শেষ
সমস্ত দিতে হবে তাঁকে, রাগ, দ্বেষ,
অভিমান,ক্ষোভ, প্রেম
ভালোবাসা ছটাকখানেক হৃদয়ে থেকে গেলে
তাও নিঃশেষে উপুড় করতে হবে।
কি পাব আমি তবে?
দিতে দিতে ফুরিয়ে এলে কি পাব আমি?
কিছু যদি না থাকে দেবার মতো,
আমার আমিটুকুও যদি ফুরায়ে যায় তবে আমি সে মহান মোক্ষ নিয়ে কি করব ঠাকুর?
তুমি ঘরে এলে কি দেব তোমায়?
ভাবতে ভাবতে ফেরার পথে দেখি অন্ধকারে
কালচে সবুজ মাঠের উপর এক আশ্চর্য তরল ভারবাহী মেঘ করুণা হয়ে ঝরে পড়ে,
প্রেম হয়ে ঝরে পড়ে
একাকী দাঁড়ানো গুলঞ্চ ঝোপের উপর
অসময় ধারাস্নানে সেকি মধুর হাসি,
সেকি দশদিক আলো করা আনন্দ
গুলঞ্চ, আকন্দ, রঙ্গনের বাগানে
এই তবে সমর্পণ বলো?
এই তবে লুটিয়ে পড়া?
শ্রীচরণকমলেষু লিখে কলমটি তুলে নিয়ে দেখি
সাদা পাতা জুড়ে সারি সারি লেখা
সমর্পণ, সমর্পণ আর সমর্পণ
লক্ষ লক্ষ কোটি কোটিবার
লিখবার জায়গাই খুঁজে পাই না আর।।


নামহীন

শব মিছিলের থেকে বলিষ্ঠ আওয়াজ ওঠে,
শহীদ বেদীতে মালা,
যব তক সূরয চান্দ রহেগা
তব তক তেরা নাম রহেগা
মানুষ দেখি না আমি, ঘ্রাণ ও পাইনা ধূপের
শুধু মনে পড়ে যায়,
নাম নেই তার কোনো নাম নেই
মনে রেখে দেবার মতো কোনো নাম নেই
যে লেখা মুছে গেছে, যে তার ছিঁড়ে গেছে
তার কোনো নাম নেই, ছিলনা কখনো
কাছাকাছি মানুষ এলে, দুকাঁধে স্পর্শ পেলে,
চমকে উঠি, ভ্রম হয়, শ্বাস ঘন হয়ে ওঠে
ভালোবাসা যদিও কখনো বা ছিল
তার কোনো নাম দেওয়া হয়নি
গঙ্গার এপাড়ে বসে দেখি
ওপাড়ে বালির আকাশে বিন্দু বিন্দু তারা
ঐখানে কখনোবা নাম লেখা ছিল
আকাশে মিলিয়ে গেছে
ইচ্ছের, বেদনার সমস্ত পারিজাত ফুল
অন্যের বাগানটি আলো করে আছে
এখন সন্ধ্যা বেলা শুধু সাধের হারমোনিয়ামে
মুখোমুখি বসতে ইচ্ছে করে
যে নামে ডাকিনি কখনো আগে
সেই নামে একবার ডাকতে ইচ্ছে করে।

ফেরত

অনেক দিন তো গেছে, গেছেই চলে
চলতে ফিরতে গেছে, এমনি অবহেলে
তবুও আমি রানীর মত বাঁচি,
উনিশটি হাত, কুড়িটি পায় নাচি
কি হবে আর দুঃখ বোধটি গেলে?
ভালোই হবে,আলোই হবে বোধহয়
এইভাবেই তো ঋণসমূহ শোধ হয়
ঠকতে ঠকতে দেয়াল খুঁজে নেব
ঘুরে দাঁড়িয়ে পিঠেই ছুরি খাব
চোখ থাকতে অন্ধ যদি হই
এজন্মে আর মরার সাহস নাই
আমাকে তুমি পিঁপড়ে সমান ভাবো
তোমাকে আমি শোষণকারী ভাবি
আসলে তো কারোর কিছু নয়
কেউই আমরা তেমন হনু নই।
যা দিয়েছি ফেরত চাইনা আর
দুঃখ আমার আরশি চমৎকার
যা পেয়েছি তাও তোমার হোক
লজ্জা, ঘৃণা, ক্ষোভ এবং শোক
এসব আমার জন্ম অলংকার
কানের বালি, কেয়ূর এবং হার
এই সাজেই তো আমায় নিয়েছিলে
যাবার সময় ছুঁড়লে অবহেলে
যাবার আগে তোমায় দিতে চাই
একটি মুঠো বালি এবং ছাই
রেখো, মনের মধ্যে রেখো
কপালে তিলক করে রেখো
অথবা ফেলেই দিও নাহয়
সোহাগ কুসুম ফুটবে অপার মায়ায়।


দিন

মন ও মগজ সংসারে ডুবেই আছে
এখন বিরহবেলা কীভাবে কাটাই?
খাতার সাদা পাতায় ছড়ানো জুঁইফুল
তোমার বালক বেলা মনে করায়
গোপন সোহাগ ইচ্ছে গুলি মনে করায়
চোখ কড়িকাঠে আটকে থাকে
মনের কোণায় কোণায় এলোমেলো ঝুল
সমুদ্রের ঢেউ ঘরে এসেছে অবেলায়
এভাবে অযত্নে দিন কেমনে কাটাই?


অকারণ

অকারণ পূজা করো
বেমানান দেবী কক্ষে বসিয়ে রাখো
দূর থেকে চিঠিতে লেখো কুহকশব্দ।
লুকিয়ে দেখতে থাকো, আঁচল, সিঁথি
কঙ্কণ, কপালের গোল টিপ
সরাসরি চোখ রাখলে ধৃষ্টতা হবে ভেবে পলক নামাও, থেমে যাও অকারণ।
অবুঝ বালক, কেন যে ভয় পাও
দূরত্ব তৈরী করো অকারণ
বোঝোনা মানুষ কাছাকাছি এলে
হৃদয়ে একই রকম শব্দ হয়,
শিরা উপশিরা জুড়ে একই স্রোত বয়
বৃষ্টির পূর্বাভাস পেলে যেমন আকাশ তোলপাড়।।


বিপ্লবের পক্ষে

শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে কবিতা লেখার কথা ভাবি
বাইরে রোদের রেণুর সঙ্গে খেলে বেড়ায় বাদামী চড়াই
ভাবি, লিখে বিশ্ব জয় করব
দামী মলাটে বিদেশী লাইব্রেরীতে রাখা থাকবে টকটকে লাল বিপ্লবের বই
যার পাতায় পাতায় ভর্তি বারুদ, বোমা
বই খুললেই অতর্কিত বিস্ফোরণ
সমাজবদলের চিন্তাধারা সুদীর্ঘ গাঙ্গেয় পথ পার হয়ে এসে মোহনায় জমাট বেঁধে বানিয়েছে পলির প্রাচীর
লোনা মাটিতে শক্ত মাথা তুলে সারি সারি ম্যানগ্রোভ সৈনিক
বিপ্লবের ঠিক আর কতটা দেরী কে জানে!
বাইরের রোদের দিকে তাকিয়ে একটি চমৎকার লাইন লেখার কথা ভাবি,
ভাবি সামনের শীতে প্রেমিককে একটি লাল মাফলার বুনে দেব
আর জানলার কাঁচে ঠুকরে বেড়ায় বাদামি চড়াই।।


বিবাহ

যতবার ভালোবাসা এসেছে ভিজে নরম চোখে
আমি স্তব্ধতার পাঠ নিয়েছি
বসন্তপঞ্চমীর দিনে হলুদ ছোঁয়ানো কপালে
হাত রেখে শিউরে উঠেছি
মনে মনে ভেবেছি
এই হল বিয়ে, এই তবে সাতপাক
বাথরুমের জানলা দিয়ে ভেসে এসেছে
অনুপম বেহাগসানাই।

প্রত্যাখ্যান

ভালোবাসা অমৃতসুধা বোঝেনি সে
আস্বাদ করে উগরে ফেলেছে রাস্তায়
ওষ্ঠে স্পর্শ করে শুষে নিয়েছিলাম
রাগ, উষ্মা, প্রত্যাখ্যান, প্রণয়ের বিষ
তখন ভোরের বেলা, মেঘময় মখমলি দিন।
এখন আমার শরীর তীব্র নীল,
ধমনী অবশ, আঙুলে ব্যাথার বরফ
পাহাড় ভাঙতে গেলে হাঁফিয়ে উঠি অল্পেই
ভালোবাসা কদাকার দৈত্যের মত
দরজায় আছড়ে পড়ে,
একটানা ক্যানেস্তারা বাজিয়ে চলে দুপুর বেলায়
দেখেও দেখেনা তো সে, বর্ষা চলে গেছে
ভেঙে চুরে কোনো মতে পড়ে আছি
ভাদ্রের শুকনো ঘাসের গালিচায়।

ভিক্ষা

থকথকে কাদাজলে হাঁটু ডোবানো
মাথার থেকে পা ঋণভারে জর্জর
দুহাত শূন্যে তুলে চাই ভিক্ষাং দেহি
না বোলো না এবার
প্রেম নয়, প্রেম নয়,
মৃত্যু ভিক্ষা দাও
নগ্ন জানুতে মুখ রেখে ডুবতে দাও আমায়
কে হবে অনাথের নাথ
দেবে তুমি শ্রীচূড়া?
তোমাকে কি দেব বলো
মুঠোভর চাল দিলে
বিনিময়ে দেব অভিশাপ
মোহ নয়, মায়া নয়
আজীবন ভোগ করো শোকতাপ।।

লালন

একটি অতুল্য মুখ আমি আজন্ম লালন করি প্রেমের ভিতর
একটি সুর, একটি অমল কন্ঠ চোখে জল আনে, হৃদয়ে কাঁপন
জানি, এ জীবন জলের ফোঁটার মত মিলিয়ে যাবে
সমস্ত শরীর, মন, বীতশোক, বীতরাগ হবে
আমাকে হতে হবে নির্বিকার, নির্বিরোধ
আমাকে হতে হবে ছুটন্ত তারার মত
হঠাৎ মিলিয়ে যাব, ঝরে যাব সময়ের শেষে
তবুও, সন্ধ্যার মৌনলগ্নে অলৌকিক গান ঝরোঝরো বাজে
আমার আপন প্রেম সুরের লহর ভেঙে জেগে ওঠে
প্রতিটি নতুন শোক, প্রতিটি বিয়োগ ব্যাথা আমাকে পুনরায় টেনে নেয় প্রথম প্রেমের কাছে।।

পর

কিছুই নিজের হয় না
এ এক পরের জীবন বাঁচতে বাঁচতে এলাম
পরের জন্য বাঁধা, পরভোলানী মন
শত চাবুকেও সহজ হয় না।
জানলার কাঁচের দেয়াল
সন্ধ্যার মাতাল হাওয়া,
স্টীলের নাম লেখা টিফিন বাক্স
আর লালরঙ উড়নি
সবই হাত থেকে হাত ঘুরে ঘুরে চলে
বসন্ত পেরিয়ে গেছে অনেক দিন
এখন গ্রীষ্মের প্রারম্ভে হাঁটতে থাকি
পীচ ঢালা দীঘল রাস্তায়
রাধাচূড়া গাছের নীচে পড়ে থাকে বসন্তের হারানো চপ্পল।।

লেখাটি যদি ভালো লাগে, আবহমানে নিজের ইচ্ছেমতো ফোন পের মাধ্যমে
অবদান রাখতে পারেন, এই কিউ আর কোড স্ক্যান করে। ফোন পে করুন 9051781537
অথবা স্ক্যান করুন পেমেন্টের লিংক

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes