
শিশির আজমের কবিতা
মুরাকামির বাঁদর
মুরাকামির বাঁদরটাকে যদি কখনো দেখতে পান
আমাকে বলবেন
ওকে আমি খুঁজছি
চেনেন তো মুরাকামির বাঁদরটাকে
দেখতে আর দশটা বাঁদরের মতোই আর কি
তবে ওর চোখদুটোতে যেন এমন কিছু আছে যাতে দ্বিতীয়বার
ওর দিকে তাকাতে কেউ বাধ্য হবে
আর কথা বলে অবিকল মানুষের মতো
ভাবনা
রুচি
দুঃখবোধ
যেসব মানবিক গুণাবলীতে আমরা অভ্যস্ত
সেগুলো অনেকাংশে ও ধারণ করেছে
আর সেগুলো ওকে পৃথক করেছে বানরসমাজ থেকে
অথচ ট্র্যাজেডি হলো মানবসমাজেও ও সমাদরহীন
ও হ্যা
সত্যিই মুরাকামির কোন বাঁদর ছিল কি না আমি ঠিক নিশ্চিত নই
কেউ কি বলতে পারবেন বিয়ের রাতে বিড়াল মারার পর
মরা বিড়ালটার সৎকারের দায়িত্ব কে নেয়
সেদিন ছিল মেয়েটার বিয়ের রাত
আর সেদিনই কি না খুন হলো মেয়েটা
মেয়েটার পুকুর কুকুর আর রাতের সূর্যকে পাহারা দেয় ছেলেটা
আবার হারিয়ে যায় এই গ্রহেরই কোথাও
আত্মজীবনীর অরাজক কুয়াশায়
হয় তো মেয়েটাও বাড়ি বানিয়েছিল আমাজনে
কে জানে
তবে ছেলেমেয়ে দুজনের কেউই
স্টিফেন হকিংয়ের দ্য গ্রান্ড ডিজাইন বইটা পড়েনি
ভিঞ্চির মাস্টারবেশান নিয়ে ওরা কিছু বলতে পারবে না
তো
ছেলেটা ভালোবাসতো ওকে
হ্যা এটাকে সবাই ভালোবাসাই বলে
না কি
যা হোক এতো এতো অতিবেগুনী কুয়াশা আর সিল্ক কনিক্যাল ভোর
আর
ভরা টেবিল ইতালিয়ান পিৎজার জীবাণুনাশকতা
পেরিয়ে
আজও
জানে না মেয়েটা
ওটা খুন না আত্মহত্যা ছিল
কালিপদ
কালিপদ নাপতির খুরে
ধার ঢের।
ছেলে বুড়ো পাড়ার মাস্তান
উঠতি কবি
শাসক দলের ওয়ার্ড সভাপতির ছেলে
সকলেই ঢোকে
কালিপদর দোকানে।
কালিপদ প্রতিবারই খুরের ধার
ঠিকঠাক দেখে নেয়।
এতে খদ্দেররা আরাম বোধ করে।
কালিপদ দেখে নেয় খুরের ধার
একটু ঝিমোয়
পাঁচ বছরের মেয়েটার খোড়া পা
হয়তো ঠিক হবে না।
আলা মাস্টার খবরের কাগজে জোরে জোরে পড়ছে:
কিশোরী তৃষার আত্মহত্যা
মাইকিং করে রামুর বৌদ্ধমন্দির ধ্বংস…
চালের দাম দ্বিগুন বেড়েছে
আরও বাড়বে
তেল-লংকা সাধ্যের বাইরে
এক টুকরো কাপড়ে বাইরে বেরোতে
বউটা লজ্জা পায়।
কালিপদ প্রতিবারই
খুরের ধার
ঠিকঠাক দেখে নেয়।
রেইনস্কেপ
এখন আমি ঘুমাইতে চাই মানে ঘুমাইতে চাই
কিন্তু পারতেছি না
কেন পারতেছি না
কারণ বৃষ্টি শুরু হইছে
আর বৃষ্টিতে তুমি ভিজতেছো আরে তোমার তো জ্বর হইবো
বৃষ্টি আসে নিয়ম কইরা বচ্ছরের নির্দিষ্ট একটা ঋতুতে
ঋতুর নির্দিষ্ট কিছু দিনে
দিনের নির্দিষ্ট কিছু মুহূর্তে
বৃষ্টির মুহূর্ত হারানো আমি উচিৎ মনে করতেছি না
কোন মুহূর্তুই আমি হারাতে চাই না
এই যে বৃষ্টির নিসর্গ মানে তুমি তো ভিইজ্জা গেছো
ভিইজ্জা টলমল করতাছো
বৃষ্টি আর কোথাও যাইতে পারবো না
ওরে তুমি তো আটকাইয়া রাখছো তোমার চুলে
তোমার স্তনে
দেখছো কি কামটা করলো ঐ অরগ্যানিক কম্যুনিস্ট বৃষ্টি
ও তোমার স্তনজোড়াকে বাইর করে আনলো
তোমার পারমিশন ছাড়াই
আর ওরা ভিজতে লাগলো
ওরা ঐ স্তনজোড়া
বৃষ্টিতে হাবুডুবু খাইতে লাগলো
কিন্তু তুমি কি বুঝতেছো যে আমি ঘুমাইতে চাই
এখন
আমি ঘুমায়ে পড়বো তোমার হাবুডুবু বৃষ্টির ভেতর
কাঠমিস্ত্রী
বইয়ে লেখা আছে জগদীশ বাবুর নাম, উনি বলে গিয়েছেন গাছের জীবন আছে – কিন্তু এ কি আমরা যুগ যুগ ধরেই জানিনে
কথাটা আসছে কাঠ নিয়ে দুটো কথা বলবো বলে
গাছ কেটে ফেলার পর তার টুকরো টুকরো অংশকে আমরা কাঠ বলি, এই ভেবে স্বস্তি পাই যে কোন হাঙ্গামা বাঁধানোর ক্ষমতা কাঠের নেই
কাঠের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা সত্বেও মানবজাতির শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে আপনাদের জানিয়ে রাখি, যে কোন অবস্থায় যে কোন প্রকৃতির কাঠ সম্পর্কে সাবধান থাকবেন, ধরুন যে চেয়ারটায় বসে আপনি আরাম উপভোগ করছেন, সরকারি অতিজরুরী ফাইলগুলির স্তূপের উচ্চতা নিরীক্ষণ করছেন, সেটি কিন্তু অনন্তকাল আপনাকে সে-সুযোগ দেবে না
কাঠের জীবন নিয়ে এযাবৎ যতো ছিনিমিনি খেলা হয়েছে, স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, কখনো কখনো আমরা ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছি
একজন মিস্ত্রী হিসেবে অনেক রক্তাক্ত অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে, মনে রাখবেন নিতান্ত অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা এমন কি ঘুণে ধরা এক টুকরো কাঠ, সেটিও আগুন ধরাতে সক্ষম