
ইয়ানিস রিতসোস (Yannis Ritsos) – এর কবিতা
ভাষান্তর – অরিত্র চ্যাটার্জি
বিংশ শতাব্দীর অন্যতম গ্রীক কবি ইয়ানিস রিতসোস। জন্ম, মোনেম্ভাসিয়া, ১৯০৯। নিজেকে রাজনৈতিক লেখক হিসেবে অভিহিত না করতে চাইলেও, তিনি ছিলেন একজন সক্রিয় বামপন্থী, নানা কারণে তাঁর কবিতা গ্রীসে নিষিদ্ধ ও হয়েছে একাধিকবার। প্রায় চল্লিশটি কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা এই লেখক, দুবার মনোনীত হয়েছিলেন নোবেল পুরস্কারের জন্য, পেয়েছেন লেনিন শান্তি পুরস্কার ও একাধিক সম্মাননা। একই সাথে রাজনৈতিক ও একান্ত ব্যক্তিগত, তাঁর কবিতায় রয়েছে গ্রীক উপকথা, জাদুবাস্তবতা ও নিঃসঙ্গতার এক আশ্চর্য মিশেল। মৃত্যু আথেন্সে, ১৯৯০।
Approximately (From Testimonies B (1966))
প্রায়
খাপ খায়না এমন কিছু জিনিস সে হাতে করে তোলে – একটুকরো পাথর,
একটা ভাঙা টালি, দুটো পোড়া দেশলাই,
সামনের দেওয়াল থেকে একটা মরচে ধরা পেরেক,
জানলা দিয়ে উড়ে আসা একটা পাতা, ফুলের টব
থেকে গড়িয়ে পড়া জলের ফোঁটা, কিংবা ওই খড়কুটো
যা বাতাস উড়িয়ে এনেছিল গতকাল তোমার চুলে- এইসব সে জোগাড় করে
আর তা দিয়ে বাড়ির উঠোনে বানিয়ে ফেলে প্রায় একটা গাছ।
কবিতা লুকিয়ে এই ‘প্রায়’ শব্দটার মধ্যে। তুমি কি দেখতে পাচ্ছো?
Indisposition (From Gestures (1969-70))
অস্বস্তি
পরদিন সকালে তার প্রায় শরীর খারাপ হল।
সারাটা রাত কথায় কথায় সে যেন ফুলে গেছিল খুব।
এত কথা সে আর না পারে বইতে; না পারে ফেলে দিতে।
রাস্তার ওপারে ওই বাড়িটা ধবধবে সাদা রঙ করছে ওরা,
অসহ্য রকমের একটা সাদা। ডেকোরেটরদের আওয়াজ
আরো চড়া শোনাচ্ছে এই শীতের আলোয়। ছাতের ওপর
চিমনীটাকে এমন করে জড়িয়ে ধরেছে একজন
যেন এইবার চুদবে ওটাকে। পচা পাতার সাথে চুনকামের
ঘন, সাদা ফোঁটা টপটপ করে ঝরে পড়ছে কালচে মাটিতে।
Cast (From Testimonies A (1963))
ছাঁচ
চোখ বন্ধ করে সে দেখল সেই গ্রীষ্মের যা কিছু স্মৃতি
প্রায় কিছুই আর তার মনে নেই
খালি সোনালি একটা কুয়াশা আর আংটির উষ্ণ একটা স্পর্শ
আর হ্যাঁ, কোনো জোয়ান চাষার রোদে পোড়া, চওড়া
একটা খোলা পিঠ– বেত ঝাড়ের আড়ালে মুহূর্তের জন্য
যা সে দেখেছিল- তখন বেলা দু’টো
আর সমুদ্র থেকে ফিরছিল বলেই হয়ত
চারপাশ ভরে গিয়েছিল পোড়া আগাছার একটা গন্ধে।
এই একই সময়ে নৌকার ভোঁ বেজেছিল আর শোনা গিয়েছিল ঝিঁঝিঁর ডাক।
মূর্তিগুলো, অবশ্য, বানানো হয়েছিল আরও পরে ।
Unloading (From Testimonies B (1966))
ভারমুক্তি
এখন খুব বেশী রঙ নেই। অবশ্য তাতে কিছু যায় আসে না- সে বলল।
ময়দানের এই যৎসামান্য সবুজেই আমার কাজ চলে যাবে।
তাছাড়া, সবকিছুই তো ফুরিয়ে যায় সময়ের সাথে।
হয়তো, এর কারণ ওরা ক্রমশ মিশে যায় আর জমাট বাঁধে। একটা পাতা,
যদি শুধুই সেটা নড়ে ওঠে, তাতেও আমার সামনে একটা দরজা খুলে যায়
দালান বরাবর আমি ঢুকে পড়ি, আর শেষ পর্যন্ত হেঁটে যাই
দু’সারি জানলা আর মূর্তিগুলোর মাঝখান দিয়ে –
জানলাগুলো আদতে সাদা আর মূর্তিগুলো শুধুই লাল।
ওই প্যাঁচা, সাপ, কিংবা হরিণ, আমি ওদের ঠাহর করি স্পষ্টতই।
Of the Sea (From Tanagra Women (1967))
সমুদ্র- বিষয়ক
দক্ষ, উদ্ধত আর সুদর্শন, একটা শক্ত ছুরি হাতে
বড় মাছটাকে সে ঘাটের ওপর কেটে টুকরো করে–
ল্যাজা আর মুড়োটাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয় সমুদ্রে।
রক্ত গড়িয়ে পড়ে পাটাতনে, চকচক করে
তার হাত, পা দুইই লাল হয়ে যায়।
একটা মেয়ে পাশের জনকে বলে, ‘কেমন মানিয়েছে দ্যাখ
হাতের লাল ছুরি আর ওর কাজল কালো চোখ –
লাল, কালো, আর লাল –’ খানিক ওপরে সরু গলিতে
জেলেদের ছেলেমেয়েরা
ভুষো কালি মাখা একটা সেকেলে দাঁড়িপাল্লায়
কয়লা আর মাছ ওজন করে ।