কুবলয় বসু-র কবিতাগুচ্ছ
জাতকমালা
কুবলয় বসু
১।
বারের পুজো-পাঁচালি, ফলমিষ্টিসিন্নি আয়োজন। ঘরের দালানে এসে দাঁড়িয়েছে ছাঁচে ঢালা নতুন বৌ। প্রতি রাত্রে যাবতীয় উপাসনা মুখ চেপে ধরে তার। একমাত্র পুরুষদেবতা তুষ্ট হয় রক্তপাতে। তারপর নীলবর্ণ ব্যথা মুছে যোগ দিতে হয় তাকে পুজো আয়োজনে। রোজকার মারণযজ্ঞের শেষে জন্ম নেয় এক নগ্ন দেবীমূর্তি।
২।
আয়নার ওপারে যে মানুষ পোশাক ছাড়ছে, কিংবা বন্ধ দরজার মধ্যে বুঝে নিচ্ছে নতুন বিবাহ, তার প্রতিবিম্ব তাকে ঈর্ষা করে রোজ। ঝাঁপিয়ে পড়তে চায় সেও রবিবারের ম্যাটিনি শো-তে। রণক্লান্ত পুরুষের চোখ পড়ে যায় মাঝেমধ্যে প্রতিপক্ষের অদ্ভুত ঘোরলাগা চাহনিতে। গাঢ় ঘুম শেষ করে সিগারেট জ্বালে, তারপর হেসে উঠে ধোঁয়ায় উড়িয়ে দেয় নিজস্ব দ্বিতীয় সত্তা।
৩।
মাঝে মাঝে মদের সহজে প্রিয় পোষা প্রাণীটিকে খুন করি। দাহ্য তরল ছিটিয়ে দিই, সমস্ত প্রত্যঙ্গ গুণে রাখি। সিগারেট ধরাবার পর নিভে আসা দেশলাইকাঠি আচমকা ছুঁড়ে দিই। পোড়া মাংসের গন্ধে ছুটে আসে নতুন সম্পর্ক। তাকে দেখি, ফের খিদে পায়। মদের ইশারা কমে এলে, পুরুষের খিদে জেগে ওঠে।
৪।
গোপন দুপুরগুলো পাড়াময় জমে থাকে। নেশা ধরানো ভাত-সবজিমাখা গন্ধ পাক খেতে খেতে উঠে আসে ভেজানো দরজা ঠেলে। আলোআঁধারি সে স্বপ্ন বিছানাময় দুলতে থাকে। হাত কাঁপে, দ্বিধা হয়, তবু পাখা বন্ধ হয়ে শেষমেশ একা এক দড়ি নেমে আসে।

