
অনুপ সেনগুপ্ত-র কবিতাগুচ্ছ
শয্যা
আস্ত এক নদী
লুকিয়ে ফেলি নিজের মধ্যে
তারপর দুজনেই বয়ে যাই
এইভাবে আস্ত এক নৈঃশব্দ্য
লুকিয়ে রেখে ওর সঙ্গেই
কথা বলি শুধু
রৌদ্রের এক-চক্ষু সূচের
অদৃশ্য চাহনির লম্বা সুতো
নদী, নৈঃশব্দ্য ও আমাকে
একসঙ্গে সেলাই করে
আর এই জোড়াতালি অসীম
কেউ পেতে দেয়
দুটি একাকিত্বের মধ্যবর্তী শয্যায়
মধু
এক ঝাঁক অস্তিত্বহীন মৌমাছির
একটি অস্তিত্বহীন মৌচাক
ফলত কিছুটা অপার্থিব মধু
পাওয়া যাবে
অথচ অপার্থিব প্রেম
তোমাকে আমাকে অস্তিত্বশীল করে
আদর
প্রবাস থেকে যখন
নিজের কাছে ফিরে আসি
সব অনুপস্থিতিই
উপস্থিতির পোশাক খুলে নগ্ন হয়
আমার চুম্বন
কোনও ঠোঁটের না-ঠোঁটে
কিংবা
না-ঠোঁটের ঠোঁটে
বাড়ি
ইট নয়
মুহূর্ত গেঁথে যে বাড়ি তৈরি হয়েছে
তার ফাটলে অশ্বত্থচারার মতো
বেড়ে ওঠে কেউ
সে আর বাড়ি
উভয়ই এবার ভেঙে পড়তে পারে
অন্য কোনও অনন্তে
অব্যর্থ বিফলতা
যে মুখ মুছে যায়
তার আর পুনরুদ্ধার হয় না
যে আকাশ মুছে গেছে
তাও আর ফিরে পাব না জানি
এখন মাথার ভিতর কিছু পাখি
চক্কর দিচ্ছে
রাত্রির এক-ফোঁটা অশ্রু থেকে
জন্ম নিয়েছে দিনের নদী
কিছু শব্দ মাছের মতো
সাঁতার কাটে স্তব্ধতায়
এক ছায়া থেকে
আরেক ছায়ায় লাফ দিই
কিন্তু ছায়াতেই ডুবে যায় শরীর
মা
তোমার ডানহাতের তর্জনী থেকে
শুরু হয় অনন্ত
সেই আঙুল ধরে
এই চরাচরে কেউ
হাঁটতে শেখে
দু-হাতে রামধনু নিয়ে
তুমি তার মুখে মাখিয়ে দেবে
এই অপেক্ষায় সে আকাশ হয়ে থাকে
এখন ইচ্ছে হলে ছিঁড়ে ফেলে
নক্ষত্র-বোতাম
জল ছাড়াই সাঁতার কাটে জ্যোৎস্নায়
তারপর একটা মেঘে মুড়িয়ে
ঘুমপাড়াও তাকে
আর সে তার নিখিল হৃদয়ভার
নামিয়ে রাখে
মাতৃভাষায়
কিংবা
মাতৃনৈঃশব্দ্যে
অনুপদার নৈশব্দময়সূচ আকুপাংচারের মতো সাড় ফেরালো মনে।