স্রোত পর্ব-১৭  <br /> যশোধরা রায়চৌধুরী

স্রোত পর্ব-১৭
যশোধরা রায়চৌধুরী

১৭

“টিন্টোর মা”

ও ছেলের মা, ছেলে খাওয়াও।
ডাক্তারখানায় বসে ছিল রেগুলার চেকাপের জন্য স্বস্তিকা। দেখল সামনে এক শাশুড়ি তার বউমাকে ঠোনা মেরে নিজের কোল থেকে নাতিকে চালান দিল বউমার কোলে। বউমাটি জড়োসড়ো। ডাক্তারখানাতেই ঘুরে বসে, আঁচলের তলায় ছেলেকে ঢুকিয়ে নিল। রোলেক্সের জরির শাড়ি, এদের গা কুটকুট করেনা? নভেম্বরের অল্প শীতেই বাচ্চাটার মাথায় মাংকিটুপি। গোলাপি কম্বলে সারা গা ঢাকা।

নিজের গরম লাগছিল স্বস্তিকার এসব দেখে। তারপর মুখ ঘুরিয়ে হঠাৎ মনে পড়ল কতকিছু।

স্বস্তিকা একজন মা।
একজন কারুর স্ত্রী, একজন কারুর মেয়ে, একজন কারুর বোন। এবং মা। এইসব পরিচয় তৈরি হয় সমাজে। তারপর সারাজীবন সেই ছাপ্পা গুলো নিয়ে চলতেই হয়। সেটাই দস্তুর।
এই ক্ষেত্রে স্বস্তিকা মা গজানোর পরদিন থেকেই মোটামুটি, মায়ের ডেটা কালেকশন করে চলেছে। মায়ের ডেটাবেস তৈরি হয়েছে অনেকদূর। স্বস্তিকার ছেলে টিন্টো এখন বছর চোদ্দর।

আশা রাখা যায় এর পর টিন্টোর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বস্তিকার মাতৃ ডেটাবেসে পরিবর্তন আসবে।

প্রথম যেদিন সে মাতৃত্বের রণডংকা বাজতে শুনেছিল, সেদিন ছিল তুমুল দুর্যোগের দিন। বিবাহিত জীবনের মোটে আট কি ন মাসের মাথায় সেই দিন।
তার আগে সে তার বরকে, যৌন সঙ্গমের সময়েও , নানা বিধিনিষেধের মধ্যে রেখে, নিজের গর্ভাধান আটকানোর চেষ্টা করেছে। তার বর সোমদত্তও কিছু কম শিক্ষিত পরিশীলিত নয়। সে নিজেও চাইত না বিয়ের পরের রাত্তিরেই বউকে প্রেগনেন্ট করার মত “নীচকর্ম” করতে। যেটা তার অনেক বন্ধু করেছে, এবং আড়ালে খিঁকখিঁক হেসেছে তারা , এরা সব ফার্স্ট নাইট কেস।
শিক্ষিত স্বামী হবার নাতে, স্ত্রীর সঙ্গে বসে ক্যালেন্ডার দেখে সংসর্গ ঠিক করেছে। দু হাজারের দম্পতি তারা।
বহু স্ত্রীর এই সৌভাগ্য হয়না স্বস্তিকা জানে। সে দিক থেকে তার কোন আপশোস অভিযোগ নেই সোমদত্তর প্রতি।
সেটা অন্য গল্প, যে তথাপি অ্যাক্সিডেন্ট ঘটিয়া থাকে, এবং ঘটিলে তাহা “ঈশ্বরের দান” হিসাবে মানিয়া লইতে হয়।
অ্যাক্সিডেন্ট ঘটল এবং পিরিওড মিস হল। স্বস্তিকা দেখল, মুহূর্তে পৃথিবীর রঙ পালটে পাটকিলে, ধোঁয়াটে এবং অসম্ভব ক্লান্তিকর হয়ে গেল তার কাছে। গুরুভার হয়ে উঠল জীবন।
কিন্তু সে তো তার নিজের কাছে। অফিসে একটা নতুন অ্যাসাইনমেন্ট। সেটাতে দক্ষতা দেখাতে পারবে না , ভেবে বসের কাছে কুঁকড়ে যাওয়া। শরীরের নানা আশ্চর্য নতুনত্বের ঝড় , তাকে বহন করার জন্য দক্ষতা অর্জন। সব ছিল কার্যক্রমে। প্রথম তিনমাসের অসম্ভব গা গুলনো এবং আর যা যা হয়ে থাকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘর থেকে আসা এমনকি সাদা পটল আলুর ছেঁচকির সেই সম্বর দেবার গন্ধেও অন্নপ্রাশনের ভাত উঠে আসতে থাকছিল তার।
এইসব পেরিয়ে সে দেখল, পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যার পুরাতন, আদিম, প্রাচীনতম খেলা শুরু। শ্বশুর এবং শাশুড়ি আনন্দে আটখানা। অন্য সবকিছু গোপনীয়তার চাদরে ঢাকা থাকলেও, সন্তানসম্ভাবনা একধরণের প্রোমোশন।
ভয়ানক পরিশীলিত এবং বাঙালি ভদ্রলোকের এপিটোম স্বস্তিকার শ্বশুরমশাই হঠাৎ বসবার ঘরে সবার সামনে আবেগ থরথর কন্ঠে প্রায় আবৃত্তির ঢঙে বলে ফেললেন, প্রথমে মা স্বস্তিকা তুমি ছিলে কন্যা। তারপর স্ত্রী হলে। এখন হবে মা। নারীত্বের সম্পূর্ণতাই তো মাতৃত্বে। তোমার পদোন্নতি হল। জীবনের সর্বোচ্চ ধাপে উঠে গেলে তুমি।
তার শাশুড়ি কেমন ভয়ানক গুরুত্ব দিতে শুরু করলেন তাঁকে। এবং তার জা , সুনীতা, কীরকম যেন ঈর্ষ্যার ঝোঁকে, তাকে বলে ফেলল, আমারও আর একটা ইশ্যু নেওয়ার প্ল্যান আছে। যার ছ সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে সে ভয়ানক নাজেহাল রোজ, সেও, ভাবছে, এই এক প্রেগনেন্সি কর্ম দিয়ে স্বস্তিকা বুঝি এক পাল্লা বেশি ইম্পর্টেন্স পেয়ে গেল সবার কাছে। এ এক লোভনীয় ঈর্ষ্যণীয় পোজিশন, সংসারে।
একমাত্র আনন্দ জন্মেছিল তিনমাসের মাথায় প্রথম সোনোগ্রাফির দিনে, অপরিচিত এক নতুন ধুকপুকুনির শব্দ ডাক্তার যখন শোনালেন, আর সোনোগ্রাফির স্ক্রিন তার দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে বললেন কী ভীষণ দৌড়চ্ছে আপনার বাচ্চা জলের ভেতর। মাছের মত ঘাই মারছিল একটি ছায়া। সেই ছায়াকেই ভালবাসল সে। মুখহীন এক শিশু।
সন্তানটির আসার আগে, সোমদত্তের ফুর্তি আর পুলক তাকে খুবই বিচলিত করলেও, সে মেনে নিল মাসে একবার করে ডাক্তার দেখিয়ে আসা।
তারপর, মেনে নিল সবার তার ওপরে নানা খবরদারি। এটা করবে না ওটা ধরবে না। এভাবে শোবে না, ওখানে বসবে না। কিচ্ছু বাইরের খাবে না।
ফুচকা চুরমুর চিকেন রোল আদি দীর্ঘ কয়েক মাসের জন্য বন্ধ হল।
তারপর সেই মহা মুহূর্ত। সে ঢুকে গেল ভীত চকিত এক স্ফীতোদর শরীর নিয়ে, নার্সিং হোমের গর্তে। সেই রাতেই তার যৌনকেশ ব্লেড দিয়ে শেভ করতে করতে বয়স্কা নার্স বললেন অমোঘ বাণীঃ মেয়েদের এই এক জ্বালা। যতই পড়ো আর যতই বড় চাকরি কর, এর থেকে নিস্তার নেই।
সাতদিনের নার্সিং হোম বসবাসে সে দেখে শুনে বুঝে ফেলল সন্তানজন্ম নিয়ে আয়াদের উল্লাস, নতুন শাড়ি পাওয়ার আশ্বাস। চোখে মুখে অশ্লীল ভঙ্গি করে কত না রসিকতা, সন্তানজন্মের গূঢ় তত্ত্ব নিয়ে।
সোমদত্ত অপারেশনের আগে দেখতে এল, তারপর কেমন বিচ্ছিন্ন হয়ে বাড়ি চলে গেল, একটু মিষ্টি কথাও না বলে। গলা আটকে এল কান্নায় , স্বস্তিকার। বাচ্চাটা আমাদের দুজনের তো, সোম। তাহলে কেন আমাকেই শুধু থাকতে হবে ঠান্ডা সাদা এই নার্সিং হোমটায়। আর তুমি ভিতু আত্মীয়ের মত, অসুস্থা গিন্নিকে দেখে কাষ্ঠ হাসি হেসে চলে যাবে, তারপর পরদিন বলবে, সারা সন্ধে ছেলে বন্ধুরা তোমাকে ঘিরে রেখেছিল মালের আড্ডায় , কেননা, বাচ্চা হলেই স্বস্তিকার প্রেম চলে যাবে, সব অ্যাটেনশন কেন্দ্রীভূত হবে বাচ্চার দিকে, তাই একলা হয়ে যাবে সোম, এই ভয়ে সে পারছিল না একা একা সন্ধেটা কাটাতে।
অপারেশনের দিনের সেই ধক করে নাকে আসা ক্লোরোফর্মের গন্ধ আর তার আগের মুহূর্ত অব্দি ডাক্তারদের হাসাহাসি, অ্যানেস্থেটিস্টের নানা টুকরো কথা, এ বাবা, পেশেন্ট অ্যাতো ফ্যাকাশে কেন, ব্লাড কাউন্ট দেখি তো! আর গোটা ব্যাপারটার প্রবল শীত-করা প্রাইভেসিহীন নিশ্ছিদ্র নৈর্ব্যক্তিক একটা পরিবেশে দম আটকে এসেছিল স্বস্তিকার। উলঙ্গ সে এক সবুজ বিটকেল জামার তলায়। এই বোধ এসেছিল। তলপেট উন্মুক্ত করে তাকে কেটেকুটে বাচ্চাকে বার করবে পুরুষ ডাক্তার, অন্তত আজকের জন্য সোমদত্তের চেয়ে সে বেশি প্রিভিলেজড, ভাবতে গিয়ে অসংখ্য গোল গোল জোরালো আলোর বৃত্ত দেখতে দেখতে সে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।
জ্ঞান ফিরেছিল চাপ চাপ অনির্দেশ্য ব্যথায়। অবশ হয়ে আছে সারাটা তলপেট অঞ্চল। কিছু জানে না। অথচ প্রচন্ড ব্যথা। চোখ খুলতে একটা ন্যাকড়ার পুটলি এনে তাকে দেখানো হয়েছিল। এই তো বাচ্চা, ছেলে হয়েছে, ছেলে।
সোমদত্ত এসে হাত ধরেছিল বিবর্ণ মুখে।
আবার কেবিনে ঢুকে ঘুম, ঘুম, ওষুধের ভেতর।
পরদিন থেকে ক্ষতচিহ্ন, ব্লিডিং, শিশুকে দুধ খাওয়ানোর নতুনত্ব, নার্সের বকুনি, আয়ার ধমক।
সবকিছুর মধ্যে ছোট একটা নতুন মাংসদলার ধুকপুক, ভয় আর আনন্দের জোট বাঁধা অদ্ভুত এক ফিলিং।
এই ডেটাবেসের প্রান্তে ছিল আবার বাড়ি ফিরে আসা। বালতি বা কোণ ভারি জিনিশ না তুলতে পারা ইত্যাদি ইত্যাদি, প্রায় দু মাস।
একটু ইনফেকশন, ব্লিডিং বন্ধ না হওয়ায় অনেকটা ওষুধ পালটানো, ভয় ডর। ক্যাথিটার লাগিয়ে রাখার পর যন্ত্রণা আর চুলকুনি তার যোনিদ্বারে। এই অস্বস্তিগুলি তো কিছুই নয়। তারপর যা আরম্ভ হল তা জীবনের নতুন দিক।
“ও ছেলের মা” নামক শব্দবন্ধে আছে পুরস্কার, পাভলভের কুকুরের রিইনফোর্সমেন্ট। আর ” তোমার মাতৃভাব নাই?” প্রশ্নে আছে চিরন্তন তিরষ্কার ও শাস্তির ভীতি। আকাশ থেকে নেমে আসবে কোন ডিভাইন কন্ঠস্বরের অভিশাপ। তুই খারাপ মা বটিস!!! সারাজীবন খারাপ মা হবার ভয়ে শিঁটিয়ে কেটে যাবে দিন।

বাচ্চা হবার পর পর, তার ত সেই কন্টিনুয়াস সারভেইলেন্সে বন্দিদশায় থাকা শুরু হল। শিশুটির জন্য আয়া আছে। তবু সে বই পড়ে শিখে নিয়ে টিন্টোকে স্নান করাতে চেষ্টা করত, জামা পরাত, হাগু পরিষ্কার করে দিত। হিসির কাঁথা পাল্টাত। কিন্তু যারা কিছুই করত না , সেই সব বাড়ির লোকেরা তার আশেপাশে ঘুরত। মা ছিল না বলে মায়ের বাড়িতে গিয়ে থাকা হয়নি স্বস্তিকার। শ্বশুরবাড়ির লোকের পুলিসগিরি তার সহ্য হত না।
বাচ্চা কাঁদলে অভিযোগের আঙুল উঠত, কাঁদছে কেন? খাওয়াচ্ছ না ঠিক করে?
খাওয়াতে গেলে বলা হত, ধরা ঠিক হয়নি।
শুইয়ে রাখলে শাশুড়ি এসে নাতির মুখচন্দ্রমা নিরীক্ষণ করতে করতেই ইম্যাজিনারি পিঁপড়ে খুঁজে পেত, অথবা ঠিক করে কাঁথা দিয়ে ঢাকা হয়নি ওকে, বলে স্বস্তিকাকে এক প্রস্ত জ্ঞান দিয়ে যেত।
টিন্টো ছ মাস হতে হতে অলটারনেটিভ খাবার দেওয়া শুরু। সেই সময়ে বোতল ঠিক ঠাক পনেরো মিনিট ধরে না ফোটানোর অপকারিতা আর বুকের দুধ অনেকক্ষণ ধরে খাওয়ানোর উপকারিতা নিয়ে লেকচার শোনানো হত তাকে। কে না এসে জ্ঞান দিয়ে যেত। কে না এসে বক্তব্য রাখত। যেখানে পৃথিবীতে যত মহিলা আছে যারা কখনো না কখনো বাচ্চা রেখেছে বা পেটে ধরেছে, তাদের বক্তব্য রাখার অধিকার জন্মে যায় কীভাবে যেন। আর নতুন মায়ের কাজ সবার কাছ থেকে তাদের নিজস্ব টিপস শুনে যাওয়া। জমা করা। ডেটাবেসে। শুধু শ্বশুর শাশুড়ি নয়, বাবা, কাকা, পিশি, পিশে, মাসি শাশুড়ি , কে নয় এই জ্ঞানদাতাদের দলে। এমনকি আয়া, বাড়ির ঘরমোছার লোক। এমনকি রাস্তার অপরিচিত মহিলা। ডাক্তারখানার হেল্পার।
ঠিক করে ধরুন। ধরা ঠিক না আপনার।
বাব্বা, ছেলেটাকে সামনে দিয়ে জামা পরিয়েছে দ্যাখো, হি হি , পেছনটা পুরো বেরিয়ে আছে…
কেন দাঁত উঠল না এখনো? আমার নাতনির তো ক—বে…
কেন টিন্টো কথা বলতে শিখল না আজো? আমার ছেলে তো কত আগে…
কেন টিন্টো হাঁটতে পারে না? আমাদের টা তো এরই মধ্যে…
এরপর স্কুলিং নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হল। তালিকা তৈরি হল। লাইন লাগানোর জন্য অনুপ্রাণিত হল সোমদত্ত।
স্কুলে যেতে গিয়ে টিন্টো কাঁদল না। সেটাও বিস্ময়ের। কেন কাঁদল না? টিন্টো স্কুলে কিছু শিখছিল কিনা, তা নিয়েও সংশয় ছিল। প্রশ্ন ধরা হত ওকে, বাইসাইকেলে কটা আই বলতো? গাজর দেখিয়ে জেঠিমা জিগ্যেস করত, এটা কি কালার টিন্টো? রেড বলেছিল বলে আ আ ছি ছি শুরু হল, স্বস্তিকা ওকে অরেঞ্জ কালারটা চেনাও নি?
সবকিছুর শেষেও, ভাল মা হয়ে উঠতে পারল কি, স্বস্তিকা? খুব সন্দেহ আছে তাতে।
টিন্টোর ক্লাস টু। একদিন অফিস থেকে ফিরে এসে স্বস্তিকা দেখল শাশুড়ির মুখ হাঁড়ি। টিন্টোর ক্লাস টিচার ওর খাতায় লাল কালি দিয়ে লিখে দিয়েছেন, হোম ওয়ার্ক নট ডান।
শাশুড়ি ঝাঁঝিয়ে উঠে স্বস্তিকাকে জবাবদিহি চাইলেনঃ ওর হোমওয়ার্কটা ও করল কিনা এটাও দেখতে পারো না?
ডিসিপ্লিন অ্যান্ড পানিশ, মিশেল ফুকো নাকি লিখেছিল। একজন মা শুধু বায়োলজিকালি মা হয়ে ওঠেনা। পেট থেকে পড়লেই বাচ্চা পয়দা করা যায়না। মা হওয়া শিখে উঠতে হয়।
আজকের দিনের মায়েদের কত না চাপ। তাকে সর্বংসহা ও সর্বকর্মা হতে হবে। কে যেন গোটা একটা বইই লিখে দিয়েছে, আমার মা সব জানে। তাই তাকে সেই বইটা কিনে পড়ে ফেলতে হবে ও টিন্টোর সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
টিভির বিজ্ঞাপনে যেরকম দেখায়, মা কখনো বকবে না অধৈর্য হবে না বিরক্ত হবে না। নিজের সুখের কথা ভাববে না। সারাদিন ছেলের মুখে জলের গেলাস খাবারের থালা এবং কুলকুচি হয়ে গেলে গামছা তুলে দেবে। জামা বার করে রাখবে, পরিয়ে দেবে। জুতো পরিয়ে দেবে। স্কুলে র থেকে এলে গ্লুকন ডি গুলে দেবে। পরীক্ষায় ভাল করলে কিটক্যাট কিনে দেবে।
মা কখনো নিজের কাজ করবে না, বাড়িতে যতক্ষণ থাকবে ছেলের সঙ্গে খেলবে কথা বলবে, ছেলের পড়া দেখবে। অফিসে গেলে তো আরো বেশি অপরাধী হয়ে মাকে ফিরে আসতে হবে, আরো দ্বিগুণ উৎসাহে ছেলের সেবাযত্ন করতে হবে, সে সময়টা সে ছিল না সেই সময়টার অভাব পুষিয়ে দিতে হবে।
মাতৃত্ব কত আনকন্ডিশনাল তা নিয়ে অনেক ভাল ভাল কথা পড়া যাবে, বলা হবে অনেক সুন্দর কবিতা গান আর বাণী, মা হল সবার ওপরে।
এইভাবে , কন্ডিশনড হতে হতে, স্বস্তিকা দেখেছে, সে এক রোবট মা এখন।
সারাদিন অফিস করে বাড়িতে ঢুকেই চুড়িদার কামিজের ওপর থেকে চুন্নিটা নামিয়ে রেখে সে রান্নাঘরে ঢুকে টিন্টোর দাবি অনুসারে কোনদিন চাউমিন কোণদিন পাস্তা কোনদিন ভাত নেড়ে বিরিয়ানি করে দেবে। অনায়াসে তারপর টিন্টোর হোমওয়ারক দেখবে, অনায়াসে তার প্রয়োজন হলে বেরিয়ে কিনে এনে দেবে সেলোফেন পেপার অথবা ফেভিকল, কলম পেন্সিল বা রুলটানা খাতা। যখন যেটা দরকার।
রাত এগারোটায় ঘুমে ঢুলে পড়তে পড়তেও, টিন্টোর দাঁত মাজা জামা পালটানো সুপারভাইজ করবে, বিছানা পাতবে।
সোমদত্ত করে না এসব? না তা নয়। সোমদত্ত অনেক কিছুই করেছে, করে হালকা করেছে গুরুভার সন্তানপালনের দায়। সে জুতো পরিয়ে দিয়ে চুল আঁচড়ে দিয়ে শার্ট পরিয়ে দিয়ে নিয়ে গেছে টিন্টোকে টিউশনে। কিন্তু জুতোটা কিনে এনেছে স্বস্তিকা, চিরুনি হারিয়ে গেলে কথা শুনতে হয়েছে স্বস্তিকাকে, শার্টের বোতাম না থাকলে স্বস্তিকার সামনে ছুঁড়ে ফেলে বলা হয়েছে, দেখে রাখতে পারো না, আদ্ধেক শার্টের বোতাম নেই?
আসলে , একটাই তফাত থেকেছে। সোমদত্ত যা যা করেছে, সেগুলো সোমদত্ত ইচ্ছায় করেছে। ওর করার কথা ছিল না বাধ্যতা ছিল না তাও করেছে।
বাই ডিফল্ট ওগুলো সব স্বস্তিকার করার কথা ছিল। সোমদত্ত করে, তাকে ধন্য করেছে, হেল্প করেছে। সোমদত্তের করাটা সোমদত্তের ক্রেডিট। আর স্বস্তিকার না করাটা, স্বস্তিকার ত্রুটি। তাকে চিরজীবন অপরাধী হয়ে থাকতে হয় এই তথ্যের জন্য, যে, সে যখন অফিসে থাকত তখন তার সন্তানকে শাশুড়ি দেখত, আয়া দেখত, অনেক সময় আগে ফিরে এসে সোমদত্তও দেখত।
অন্যেরা যে যা অবদান রেখেছে টিন্টোর জীবনে, কোনটাই বাই ডিফল্ট ছিল না। সেগুলো অবদান ছিল। আর স্বস্তিকা যা করেছে? একজন মায়ের তো তা করারই কথা। সেজন্যে আলাদা করে কোন থ্যাঙ্কস প্রাপ্য আছে নাকি আবার? ওটাকে কোন কাজ বলতেই নারাজ তো, সমাজ। ওগুলো তো তার কর্তব্য।
পেট থেকে পড়েছে কার, বাচ্চাটা, শুনি?
করবে না মানে?
টিন্টো একদিন বড় হয়ে যাবে, শিগগিরি একদিন সে নিজের জীবন খুঁজে নেবে। তারপর অচিরেই নিজের জীবন সঙ্গিনীও।
তখন , সেই জীবন সঙ্গিনীও , টিন্টো কি চাইবে, করুক সব কাজ বাই ডিফল্ট?

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes