সদত হাসান মন্টোর গল্প <br /> অনুবাদ ও ভূমিকা – দেবলীনা চক্রবর্তী

সদত হাসান মন্টোর গল্প
অনুবাদ ও ভূমিকা – দেবলীনা চক্রবর্তী

বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গল্পকারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি নাম সাদত হাসান মন্টো।কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে তাঁর রচনা আমরা সেভাবে কেউ পড়ে উঠতে পারি নি বিভিন্ন কারণে তারমধ্যে অন্যতম কারণ হলো তার লেখাগুলো উর্দু ভাষায়। উপমহাদেশের দাঙ্গা ও দেশভাগের শ্রেষ্ঠ কথাকার বললেও কম বলা হবে তাকে, দেশভাগের যন্ত্রণা, ছিন্নমূল মানুষের হাহাকার, দাঙ্গার আতঙ্ক, সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত বিদ্বেষ এত নিপুণ দরদে প্রকাশ করেছেন তার প্রতিটি গল্পে তা আজও ভয়ানক ভাবে প্রাসঙ্গিক। তাঁর জীবন সম্প্রতি আবার আলোচনায় এসেছে নন্দিতা দাসের মন্টো সিনেমার মাধ্যমে। ভারত ভাগের নির্মম শিকার ক্ষণজন্মা এই কথাসাহিত্যিক সাদত হাসান মন্টো ১১ মে ১৯১২ পাঞ্জাবের লুধিয়ানার এক সুন্নী মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৩ সালে তার বয়স যখন একুশ বছর, তখন তার পরিচয় হয় আবদুল বারি আলিগের সঙ্গে। এই পরিচয়ই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ক্রমান্বয়ে পণ্ডিত আবদুল বারি আলিগ হয়ে ওঠেন তার পরামর্শদাতা। আবদুল বারির পরামর্শেই মন্টো ফরাসি এবং রাশিয়ান লেখকদের লেখা পড়তে শুরু করেন এবং সেগুলোকে তিনি উর্দু ভাষায় অনুবাদ করেন। আবদুল বারির পত্রিকাতেই ছদ্মনামে তার প্রথম গল্প 'তামাশা' প্রকাশিত হয়। ১৯৩৪ সালে মন্টো সাহিত্য এবং লেখালেখি বিষয়ে পড়ার জন্য আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে তিনি ছোটগল্প লেখালেখি শুরু করেন। তার সেসময়কার ছোটগল্পগুলোর মধ্যে 'ইনকিলাব পসন্দ' প্রকাশিত হয়। এখানে পড়াকালীন তিনি বেশ কয়েকজন মানুষের সাথে পরিচিত হন, যারা তার জীবনে পরবর্তীতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। এ সময় ধীরে ধীরে মন্টো ভারতে অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্যিক হয়ে উঠতে থাকেন। এককথায় মন্টো হলেন হিন্দি ও উর্দু সাহিত্যের মোম্পাসা ( প্রখ্যাত ফেঞ্চ সাহিত্যিক)। কারণ তিনিও সত্য উৎঘাটন ও সত্য বয়ান করতে এবং মোম্পাসার মতোই ছিলেন বদনাম এক লেখক। তিনি মনে করতেন সুনাম অর্জন করার পথের প্রথম মাইলস্টোনই হলো বাদনামি হওয়া। মন্টোর প্রিয় বন্ধু প্রখ্যাত কবি সাহির লুধিয়ানবির শব্দ অনুযায়ী তিনি একথাই মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন যে - " বদনাম হই তবু যেন গুমনাম বা অজ্ঞাত না হই।" হয়ত এজন্যই কমলেশ্বর প্রসাদ সাক্সেনা মন্টোর সম্বন্ধে লিখেছিলেন -" মন্টো যেভাবে তার গল্পে শ্রেণী বিভাজন , দাঙ্গা , সাম্প্রদায়িকতার ওপর তীব্র কটাক্ষ করেছেন তাই দেখে মনে হয় তার মত আর কেউ এত সাহসী ও সত্যবাদী এবং এত নির্মম হতে পারেননা । আবার অন্যদিকে একথাও সত্যি যে এই কঠোর বাস্তবতা প্রয়োগের মাধ্যমেই তিনি মানবিক সংবেদনাকে আঘাত করতেন। ' টোবা টেক সিং ' , 'খোল দো ', ' ঠাণ্ডা গোস্থ ' এইসমস্ত গল্প তারই সাক্ষ্য প্রমাণ ।" রাষ্ট্র, ধর্ম ধ্বজাধারী থেকে প্রগতিশীল সবাই একযোগে সাদত হাসান মন্টোকে খারিজ করে দিলেও তিনি গল্পকার হিসেবে নিজের অবস্থান জানতেন। মৃত্যুর এক বছর আগে লেখা নিজের এপিটাফে তিনি বলে গেছেন, ‘এখানে সমাধিতলে শুয়ে আছে মন্টো এবং তাঁর বুকে সমাহিত হয়ে আছে গল্প বলার সব কৌশল আর রহস্য।’ কখনো ফতোয়া এসেছে, অশ্লীলতার জন্য মামলা হয়েছে ছয়বার, বন্ধুরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, কিন্তু মন্টোর চারপাশে বয়ে চলা জীবনের প্রতি আকর্ষণ আর তাঁর কলম কেউ থামাতে পারেনি। বেঁচেছেন মাত্র ৪৩ বছর। কিন্তু লিখে গেছেন কী প্রবল উদ্যমে! ২২টি ছোটগল্পের সংকলন, ১টা উপন্যাস, রেডিও নাটকের ৭টা সংগ্রহ, ৩টা প্রবন্ধ সংকলন আর ২টা চেনা মানুষদের স্মৃতিকথা! নিজের কাজের কৃতিত্বও পাননি তিনি তাঁর জীবদ্দশায়, ছিলেন সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে অবহেলিত এবং এক সময় তাকে অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল তবু তাকে কোন কিছুই তার উদ্যম ও কলম আটকাতে পারে নি। খুব গর্বের সঙ্গে জীবদ্দশায় নিজেকে মির্জা গালিবকে নিয়ে একটি ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন এবং ছবিটি পরবর্তীতে পুরস্কারও পেয়েছিল। তবে জীবদ্দশায় মন্টো তা দেখে যেতে পারেননি। মন্টো গালিবের একটি কবিতার লাইন উদ্ধৃত করে একটি প্রবন্ধের শিরোনাম দিয়েছিলেন, 'কুছ নহী হ্যায় তো অদাওত হী সহী' (কিছু না থাকলে শত্রুতাই থাক)। আলোচক মোহাম্মদ হাসন আসগরি মন্টোর সম্বন্ধে বলেন - মন্টোর দৃষ্টিতে কোন মানুষ মূল্যহীন ছিল না, উনি সকলের সাথে মিশতেন যেন তার অস্তিত্বের মধ্যে কোন না কোন অর্থ নিশ্চই লুকিয়ে আছে যা এক না একদিন ঠিক প্রকট হবেই - ভালো মন্দ , বুদ্ধিমান মূর্খ , সভ্য অসভ্য সে যেমনি হোক তাকে সেভাবেই গ্রহণ করতেন। তাই হয়ত মন্টোর গল্পের চরিত্র এত জীবন্ত ও সহজ। আবার তুচ্ছ , নিকৃষ্ট , অসহজতার নিচে মানবীয় সংবেদনশীলতার নিদর্শন পাওয়া যায়। তাঁর জবানিতে নিজের লেখন সম্বন্ধে যা প্রতিক্রিয়া তাতে তাঁর সাফ মনেরই পরিচয় করায় - " আমি গল্প লিখি না , গল্প আমাকে লেখে... কখনো কখনো অবাক হই এই ভেবে যে এ কোন জন, যে এত ভালো গল্প লিখলেন ? আমি এভাবেই লিখি যেভাবে খাবার খাই, স্নান করি, গল্প লেখা আমার কাছে শরাবের নেশার মতো, আর ঈশ্বরের নাম নিয়ে লিখতে শুরু করে দি, আমার তিন সন্তান এর মধ্যেই হৈচৈ করে আমি ওদের সাথে কথা বলি, ওদের মধ্যে ঝগড়া ঝামেলার মিটমাট করি , এরমধ্যেই কেউ অথিতি এলে তাদের আপ্যায়ান করি ... এবং গল্প লিখেই যাই।"

লোকসানের সওদা

দুই বন্ধু মিলে দশ – বিশজন মেয়েদের মধ্যে থেকে একজনকে বেছে তাকে বিয়াল্লিশ টাকা দিয়ে কিনে নিলো।

সারারাত কাটিয়ে একজন বন্ধু মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলো, তোমার নাম কি ?

মেয়েটি নিজের নাম বলতে ছেলেটি চমকে উঠলো এবং বলে উঠলো , “আমাদের তো বলেছিল যে তুমি ভিন্ন জাতের”
উত্তরে মেয়েটি বললো ” ও তো মিথ্যে বলেছিল ”

এই কথা শুনে ছেলেটি দৌড়ে তার বন্ধুর কাছে এসে বললো … “ও আমাদেরকে ধোঁকা দিয়েছে , আমাদের জাতের মেয়েই আমাদের গছিয়ে দিয়েছে … চলো এক্ষুনি ফেরত দিয়ে আসি ”

নালিশ

” দেখ ভাই , তুমি চোরা বাজারের চড়া দাম নিলে অথচ এমন বেকার পেট্রোল দিলে যাতে একটা দোকানও জ্বললো না ।”

শ্লীলতাহানি

প্রথম অপরাধের ঘটনাটি নাকের হোটেলের কাছে ঘটলো আর সঙ্গে সঙ্গে সেখানে একজন সিপাইকে মোতায়েন করা হলো।

দ্বিতীয় ঘটনাটি দ্বিতীয় দিন শ্যামের দোকানের সামনে ঘটলো আর সিপাইটিকে প্রথম ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দ্বিতীয় ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হলো।

তৃতীয় অপরাধের ঘটনাটি রাত বারোটার সময় লন্ড্রির সামনে ঘটলো আর তখনই পুলিশ ইন্সপেক্টর সিপাইটিকে নতুন ঘটনাস্থলে পাহারা দেওয়ার আদেশ দেওয়ায় সিপাইটি মন দিয়ে তা শোনার পর বলে উঠলো …

“আমাকে সেখানে মোতায়েন করুন যেখানে পরবর্তী অপরাধ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে”।

নজরানা

মেহেফিল শেষ হলো।দেখা শোনার পর্ব শেষ হতে উস্তাদজী বলে উঠলেন ,
” সব কিছু লুটিয়ে পুটিয়ে এখানে এসেছিলে কিন্তু
আল্লাহ মিয়া কিছুদিনের মধ্যেই ঝুলি ভরে দিলেন।”

সাফ সাফাই

গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকাকালীন তিন বন্দুকধারী কামরার কাছে এলো।জানলার ভিতরে উঁকি দিয়ে যাত্রীদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়লো,
“কি জনাব কোন মুরগি আছে নাকি ?”

একজন যাত্রী কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো আর বাকিরা উত্তরে বললো … “না নেই ”

কিছু পরে আবার চারজন সিপাহী এসে জানলার ভিতরে উঁকি দিয়ে যাত্রীদের প্রশ্ন করলো
“কি জনাব কোন মুরগি আছে নাকি ?”

সেই যাত্রী যে প্রথমবার কিছু বলতে গিয়েও থেমে গিয়েছিলো সে এইবার বলে উঠলো ,
“ঠিক জানি না আপনারা ভিতরে এসে শৌচালয় দেখে নিতে পারেন”

সিপাহীরা তৎক্ষণাৎ ভিতরে এসে শৌচালয় ধাক্কাতেই একটি মুরগি বেরিয়ে এলো।
একজন সিপাহী বলে উঠলো…

“হালাল করে দাও”

দ্বিতীয় জন বললো,

” না না এখানে না , কামরা নোংরা হয়ে যাবে…
বাইরে নিয়ে চলো।”

খবরদার

লুটেরা ঘরের মালিককে টেনে হিঁচড়ে ঘরের বাইরে নিয়ে এলো।

জামা থেকে মাটি ঝেড়ে সে সোজা উঠে দাঁড়িয়ে লুটেরাকে বললো –

“তুমি আমাকে মেরে ফেলো কিন্তু খবরদার আমার টাকা পয়সায় হাতও লাগবে না ”

হালাল আর ঝটকা

“আমি তার শিরার ওপর ছুরি রাখলাম আর ধীরে ধীরে ছুরি চালিয়ে হালাল করে দিলাম।”

“এটা তুমি কি করলে ?”

“কেন ?”

“ওকে হালাল কেন করলে ?”

“ভীষণ মজা আসে এভাবে হালাল করতে তাই”

“মজা আসে না ছাই … ওকে ঝটকায় মারা উচিত ছিল … ঠিক এভাবে ”

আর হালাল করা লোকটার গলা এক ঝটকায় পরে গেলো

চমৎকার

লুটের মাল বাজেয়াপ্ত করার জন্য পুলিশ তল্লাশি শুরু করলো।
লোক ধরপাকড়ের ভয়ে লুটের মাল রাতের অন্ধকারে বাড়ির বাইরে লুকোতে শুরু করলো।
আবার কেউ চোরা মাল নিজের থেকে সরিয়ে দিলো আইনের চোখে সাধু সাজার জন্য।

এদিকে একজন লোকের খুবই অসুবিধেজনক অবস্থা হলো, তার কাছে দুটি চিনির বস্তা ছিল যা সে একটি মুদি দোকান থেকে লুট করেছিলো। রাতের অন্ধকারে সে একটা বস্তা পাশের কুয়োতে ফেলে এলো আর দ্বিতীয় বস্তাটি কুয়োয় ফেলতে গিয়ে নিজেই পরে গেলো, চিৎকার শুনে লোক জড়ো হলো , কুয়োয় দড়ি ফেলা হলো এবং তাকে উদ্ধার করা হলো কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সে প্রাণ হারালো।

পরের দিন লোক যখন নিত্য প্রয়োজনের জন্য কুয়োর জল ব্যবহার করতে জল তুললো সেই জল ছিল মিষ্টি স্বাদের।

সেদিন ওই মৃত ব্যাক্তির কবরে দ্বীপের আলো জ্বলে উঠলো।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes