
পলিয়ার ওয়াহিদ এর সাতটি কবিতা
মাটিয়ালি গান
গমবনে মানুষ হলাম—আমি ভেতোশাক
আকাশ উত্তীর্ণ হয়ে বুঝি
ভুলে গেছি—মাটিবর্তী মানুষের গান।
বেলেশাকের কথায় ধরো—
নিজেকে বিছিয়েছে সে—মাটির বিছানা
ভালোবাসি থানকুনিপাতা
তবুও বন্ধুরা হলো—শিয়ালের কাঁটা!
হাঁটি—জাজিমের মতো রক্তিম আকাশ
আবার মুখস্ত করি গাভীন যে গমক্ষেত।
কিলাসমেট
বাড়ির পাশে কাবরাপাড়া
সূর্য আমার কিলাসমেট
আমার নেইম চান
একসাথে খেলি—মাছ ধরি,
ঘুমাই—ঘুড়ি উড়াই—সাইকেল চড়ি
কেউ ওরে মুচি কলি—সেরাম খারাপ লাগে!
বড়দিঘি—একজন বান্ধবীকে নিয়ে—
দুজনে সাঁতার কাটি!
খুব ভালো লাগে—মাঝে মাঝে
ঝগড়া তুমুল
আবারও একসাথে
আমরা ছাগল পুষি
ওরাও শুয়োর পোষে
সূর্য আমাদের বাড়ি আলি পানি খায়
আমিও ওদের বাড়ি গিলি জল খাই
এখন আমরা ইশকুল থেকে মাধ্যমিকে
বড় ক্লাসরুম, বড় বড় ছাত্রী, বড় ব্ল্যাকবোর্ড
বড় হতে হতে—আমাদের মধ্যে যেন
শুয়োর আর ছাগল ঢুকে পড়ে!
তখন কোথাও মানুষ খুঁজে পাই না!
দোআঁশ মাটির কোকিল
খেঁজুর রসের মতো আমাদের বাংলাভাষা সুমিষ্ট মিহিন
আখের গুড়ের মতো লাল এ জনপদের বিপ্লব সংগ্রাম
গমের রুটিতে তবু ফুলে ওঠে স্বপ্ন আশা আহত গ্রামীণ
তবুও যুদ্ধেই কাবু কেন আজো এই বাংলা কৃষকের গ্রাম!
সরিষা ফুলের দেশে সকালের শিশিরের ভেজা মাকড়সা
পাতা ঝরা গাছে গাছে কান পেতে শোনা যায় বসস্তের গান
প্রকৃতির অপরূপ সুষমা দুচোখে মেখে বুক টান টান
আমের মুকুলে ওড়ে— পুরুষ মৌমাছি এ কি আশার ভরশা?
ডাকে পাখি ভাষা যেন আমাদের কাছাকাছি যুদ্ধের পুরাণ
পাশাপাশি দাঁড়ায়েছে মসজিদ ও মন্দির মানুষ নূরান
কাঁঠালীচাপায় ঘেরা এই দেশ-মানচিত্র মাটির ভূগোল
মায়ের পুত্রের মতো প্রেমিক ও প্রেমিকায় আমরা যুগল
দোআঁশ মাটির ছেলে আমি বীজ পুতে করি প্রভূর অর্চনা
মাংসের কুড়ালে কাটি হাওয়াদের আলো-মাটি প্রেমের বন্দনা।
নাগরিক
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দরজা দুটো
পাশাপাশি বসে দু’জোড়া জুতো।
প্রতিদিন প্রতিরাতে
প্রতিক্ষণ প্রতিপ্রাতে
জুতোরাই গল্প করে—বেশ ভালো আছি!
দুঃখ আছে বুকে তবু মুখে হাসি।
জুতোরা প্রভুরা—করমোশালায়
পা-দের পরিচয় হয়নি;
একই ময়দানে যৌথচোখ—
কখনো হয়না সামনা-সামনি।
কাঠবাদাম
কাঠবাদামের পাতা
তোমার চ্যাপ্টা বুক—
আমাকে প্রশ্রয় দেয়।
অথচ নদী ভরাটের মতো
তুমি চিরকাল বেদখল—
দুর্বৃত্তের হাতে।
কতবার মরে যাওয়া উচিৎ
যদি ঘুম না আসে—একটা বিশ্রামহীন রাতের বিবরণ দাঁড় করাও। তোমার জ্বলজ্বলে চোখ আমার চেতনাকে ঘুমের অতল থেকে জাগিয়ে তোলে। প্রতিদিন সূর্য ফুরিয়ে গেলেও অপলক ভোরবেলা তাকিয়ে থাকে—পুরনো পথের ধুলোবালি ঝেড়ে। একে অপরকে যখন পেয়ে গেছি তখন মরে যাওয়াই উচিৎ। আর কোনো অপেক্ষা শুভ নয়। পুরো জীবনটাই চলে গেল একটা গনগনে দুপুরের মতো। জীবনে বয়ে যাওয়া বছর যেন বড় ইশকুলের এক-একটা ক্লাসের ঘণ্টা। জীবন দান করে দীর্ঘ বিকেল যেন জীবনের সমান। রিক্সার হুট খোলার মতো দিনকে স্মৃতিতে মেলে ধরি। ভেতরে ভেতরে শব্দহীন হেঁটে যায় কেউ। এভাবে গড়ে ওঠে ভালোবাসার অন্তহীন সকাল।
দেশপ্রেম
ঋতু বদলের সাথে সাথে
চলে প্রেমিকা পরিবর্তন;
বদলাতে বদলাতে—
এখন আমার প্রেমিকা ‘বাংলাদেশ’।
খোদার কছম—এর পরে আর কেউ নেই!