একদিন মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হবে <br /> তৌফিক জহুর

একদিন মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হবে
তৌফিক জহুর

"এই পুজো, পরমহংস'' চৈতন্য প্রকাশন, বাংলাদেশ প্রচ্ছদ --বিধান সাহা। পাওয়া যাচ্ছে রকমারি এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট বাতিঘরে যাবে...আমাদের এখানে, কলকাতায় পাওয়া যাবে আর কিছুদিন পরে। অনলাইনে কেনার লিংক-- https://www.rokomari.com/book/221537/ay-pujo-poromhongsho?fbclid=IwAR1f9jyoKC-ZPbZPOYVn5ot-psh5xRO37rp_zIjJoY1JFj8D85wjsrS72K4

বর্তমান যুগে চিন্তার জগৎ ও সামাজিক পরিস্থিতির আমূল-পরিবর্তনে পৃথিবীর সর্বত্র মানুষ দিশেহারা। নতুন এক পৃথিবী গড়ে উঠেছে কিন্তু পুরনো পৃথিবীর সেই প্রাণময় বাতাস, প্রকৃতি মানুষকে টানে আজো।কিন্তু যুগসন্ধিক্ষণের অস্পষ্টতার সামনে অকূল শূন্যতা ও অসীম অন্ধকার ছাড়া আর কিছু চোখে পড়েনা। আমরা আমাদের চোখের স্টিয়ারিং প্রকৃতি থেকে ঘুরিয়ে কবিতার রাজপথে নিয়ে এলাম। কিছু দেখার বাসনায়। নতুন কিছু। গত পঞ্চাশ বছরের বাংলা কবিতার প্রতিটি সড়কে হাঁটছি। বাংলাদেশের শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, শহীদ কাদরী কিংবা ভারতের শক্তি চট্টোপাধ্যায়, বিনয় মজুমদার এর নির্মিত পথঘাট চষে বেড়াচ্ছি। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল বা পরের ত্রিশের আধুনিকতার জনক পঞ্চ পান্ডবের কবিতা তো শিয়রে জেগে আছে সারাক্ষণ। এরপর নতুন কিছু কি পেয়েছি আমরা? নতুন একটা আকাশ। নতুন কবিতার বাগান। নতুন পাহাড়। যার চূড়ায় উঠে গেলে বিস্মিত হয়ে আপনাআপনি ভাবতে হয়, এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আগে দেখিনি কেনো!! স্পর্শের স্পর্ধা সব কবিতায় খুঁজে পাওয়া যায় না। অসংখ্য কবি কবিতার পথ নির্মাণ করে চলেছেন। কাল পেরিয়ে মহাকাল কোন সড়কটি ঠিকঠাক সতেজ ও সবুজ রাখবে তা এ মুহূর্তে বলা মুশকিল। তবে কবিতার ঘ্রাণ ও শব্দের আদর যে কবির কবিতার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়, তাঁর জন্য আন্দাজ করা যায়, ভাবা যায় তাঁর কবিতা একদিন মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হবে। আমরা একজন কবির কাব্যগ্রন্থ নিয়ে আলোচনা করার আগে এমন একটি ভূমিকার অবতারণা করলাম। তিনি কবি বেবী সাউ। তাঁর যে কাব্যগ্রন্থ নিয়ে আমরা কথা বলতে চাইছি তার নাম ” এই পুজো,পরমহংস “।

১.১
রাত্রিশেষে বিলাসী আদরের আড়মোড়া ভেঙে সকালের যে সূর্য উদিত হয় সেখানে রক্তিম আভা থাকে। একটুকরো নতুন বিশ্বাস। একটা পূর্ণাঙ্গ হৃদয় যেনো অপেক্ষা করে গোটা দিনের। যার ভালোবাসার আকুলতায় আলোর বৃষ্টিতে ভেজাতে উদগ্রীব সারাটা দিন। বেবী সাউ এর কিছু কিছু কবিতা এর আগে পাঠ করলেও একসঙ্গে আস্ত একটা কাব্যগ্রন্থ পাঠ এই প্রথম। যেটা পাঠে মনে হয়েছে বেবী সকালের সেই রক্তিম সূর্য যাঁর আলোয় সারাদিন ভেসে যাবে পৃথিবী নামের একজন প্রেমিক। সেই প্রেমিকের উদরে বাস করে সাতশত পঞ্চাশ কোটি হৃদয়। একটা অচিন্তনীয় অকল্পনীয় ঘোরের মধ্যে দিয়ে বেবী সাউ কবিতা লেখেন। এমন একটা চিত্র আঁকতে চান যা তাঁর অগ্রজদের পথকে ডিঙাতে চায়। একটা সাহসের ছাতা যেন মেলে গেলো প্রবল বর্ষায়।

” আশ্চর্য নিবিড় অতীত পেরিয়ে সকাল নামছে
পাহাড়ের অস্পষ্ট শীতেরা
নেমে আসছে সমতলে

দূরের চন্ডীপাঠ দেবীর বোধন
কাঁসরের শব্দে জবুথবু হয়ে আছে
অলীক সত্য

কফির ওমে ঘুম ভাঙছে
মৃত আত্নার

ওকে জেগে উঠতে দাও”
( বোধন, পৃষ্ঠা -১৯)

কী বলতে চাইছেন কবি। আমাদের দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন নতুন এক সকালের সামনে যার অতীত নির্মম আঘাতে জর্জরিত। যেখানে একটা আনন্দের মোহ জড়ানো আছে। তাঁকে জাগিয়ে কবি আমাদের নিতে চান আশ্চর্য এক প্রতীকী জগতে।কিন্তু জগতটা আবার বাস্তব। জীবন সম্বন্ধে তাঁর বিশিষ্ট মনোভঙ্গি আকৃষ্ট করে। বিষয়বস্তুর ঐশ্বর্য ও বিরাটত্ব তাঁর কবিতাকে গভীর করেছে। একটি বিষয় কবি এমনভাবে সামনে নিয়ে আসেন উপমার চাদরে জড়িয়ে আমরা বিস্মিত হই। আধুনিক কবিতার শরীরে তিনি নিজস্ব চিন্তাটাকে এমনভাবে গ্রোথিত করেন যা পাঠে কিছুটা সময় থমকে যেতে হয়। মনে হতে থাকে, এমন পংক্তি জীবনে ফাল্গুনী রজনী জ্যোৎস্নার সৌন্দর্য নিয়ে আসে। কবিকে বর্তমান পরিস্থিতির যোগ্য হয়ে উঠতে হয়। পরিবর্তিত পৃথিবীর গান গাইবার ভার নতুন যুগের কবির উপর। বেবী সাউ সে দায়িত্ব সম্বন্ধে সচেতন। আমরা দুটি কবিতা লক্ষ্য করিঃ

০১. কতোবার মুখ এগিয়ে নিয়ে গেছি, বলবো বলবো করেও গলা আটকে রেখেছি সেফটিপিনে।শব্দ এত অপ্রতুল,এত শব্দহীন দুনিয়া।চুলের ক্লিব বেয়ে নামতে থাকে সস্তা তেলের গন্ধ তখন।আলো আর রাত্রি তখন খেলা করে ব্যারিকেডে,ভাঙা কার্নিশে বেয়ে চাঁদের বয়ে চলা।চুম্বনকালীন এই দৃশ্য নিয়ে নিজেকে মা ভেবে বসি।হাজারটা স্পর্শ ছাড়িয়ে আমি তখন বৌ বৌ তোর।
( কুন্তী, পৃষ্ঠা -১৫)
২. বৃষ্টি হলেই নৌকা গড়ো তুমি,কাগুজে।হেলতে দুলতে রংভরা নৌকো সেসব আমার চিলতে রোদ ভিজিয়ে দেয়। সরসর করে মেঘমল্লার বাজে গ্যালাক্সি ফোনে।মাইথোলজি রাক্ষসীর করুণ চোখ সাঁতার শেখে তখন।তখন হ্যান্ডসেটের চৌকাঠে স্বপ্ন আর মায়া; মায়া আর খড়কুটোর সংসার।ধীরে ধীরে বৃষ্টি কমে।ধীরে ভাঙে নৌকার মাঝি। ( মিথ্যা, পৃষ্ঠা – ১৭)

কবিতা কোথায় থাকে? পাহাড়ে, সমুদ্রে, গ্রামে,শহরে, প্রকৃতিতে?অনন্তকাল থেকে প্রকৃতি চলে আসছে।ফুল ফুটছে, ফুল ঝরছে।গাছ হচ্ছে, গাছ মরছে।নদী বইছে, নদী চড়া প’ড়ে মরে যাচ্ছে। অনাদিকাল থেকে মানুষ জন্মাচ্ছে, আবার মানুষ মরে যাচ্ছে। এই নিউক্লিয়ার সেলে কবিতা কোথায়? কবিতা আর কোথাও থাকেনা।কবিতা থাকে ব্যক্তিমনে, যে ব্যক্তিমন সর্বত্রগামী। কবিতা তাই সর্বত্র থাকে। প্রকৃতিকে, মানুষকে জীবনকে আমরা কবিতায় যতটুকু দেখি সেটুকু কোনো ব্যক্তিমনের ভিতর দিয়েই দেখি। সত্যি দেখা আর আয়নায় বা আলোকচিত্রে প্রকৃতি বা জীবনকে দেখা কি এক? নিশ্চয় এক না। কবিতায় আমরা দেখি সেই দ্বিতীয় প্রকৃতি, দ্বিতীয় মানুষ, দ্বিতীয় জীবন। একজন তরুণ কবি এই দ্বিতীয় জীবন আঁকছেন, দ্বিতীয় প্রকৃতি আঁকছেন, যাঁর হৃদয় সর্বত্রগামী। বেবী সাউ এর কবিতায় শব্দের আদর লক্ষ্য করলে শিহরিত হই। অত্যন্ত ঘরোয়া শব্দ। কলতলায় ছেলেবেলায় কল চাপলে যে জলের শব্দ পাওয়া যেত, যে আনন্দের গোসলে লুটোপুটি হুটোপুটি করতাম, তা যেন ফিরে পাই বেবীর কলমে। কবিতা লেখার জন্য একজন কবিকে গভীরবিবরে ঢুকে যেতে হয়।সেখানে সমাজ নেই, রাষ্ট্র নেই, আছে শুধু অপার অনন্ত আমি।সেখানকার সমুদ্রের নাম আমি।আর যে একটুকরো দ্বীপ আছে তার নামও আমি।সেই দ্বীপে যে একখানি কাগজের নৌকা বাঁধা আছে, তার নামও আমি। বেবী সাউ এর কবিতা শরীর, আত্মা সর্বস্ব দখল করে কারণ মানুষের সবচেয়ে বড়ো ক্ষমতা বুদ্ধি নয়, কল্পনা। কবিতা এতো শক্তিশালী হয়ে ওঠে এজন্যই যে কল্পনা তার পিছনে সবচেয়ে প্রবলভাবে, সবচেয়ে উজ্জ্বলভাবে কাজ করে। বেবী সাউ এর কল্পনা শক্তির কাছে পাঠকমন নতজানু হয়ে যায়।

১.২
কবিতা মানে রূপান্তর। কবিতা মানে বদল। কবিতা মানে পরিবর্তন। কবিতা মানে অবৈকল্য নয়,কবিতা মানে তির্যকতা। কবিতায় সমস্ত কিছুই প্রতীক। শব্দ, ছন্দ, চরণ,চিত্রকল্প, মিল-অনুপ্রাস, যতি-ছেদ,উপমা, উৎপ্রেক্ষা সবকিছুই কল্পনার মধ্যে দিয়ে প্রতীক হয়ে ঝলমল করে। শব্দের আদর, ছন্দের ঝনৎকার এবং চিত্রকল্পে কমনীয়তা এসব শেষ পর্যন্ত শরীর ডিঙিয়ে আত্মায় প্রবেশ করে দোলা দেয়। যে কবিতা এভাবে আত্মাকে নাড়িয়ে দেয়, সেই কবিতা আমাদের সামনে রঙধনু হয়ে যায়। যার সৌন্দর্যে আমরা মাতালের মতো সেই কবিতার প্রেমে পড়ি। “অল্প বয়সের কবিতা অনুভূতিচেতন আর বেশি বয়সের কবিতা অভিজ্ঞতা কেন্দ্রিক”…. এই বাক্য বাংলাদেশের ষাট দশকের বিখ্যাত কবি,সমালোচক, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও অধ্যাপক আবদুল মান্নান সৈয়দ এর। এবার আমরা বেবী সাউ এর একটি কবিতা লক্ষ্য করিঃ

” আমার দেহে মৃত সন্তানের গন্ধ
স্তনে শত শত পুরুষের লালা, নখ

অজান্তে হলেও
পা-ছাপ এঁকেছি সমাজের বুকে

তুমিও নির্লিপ্ত কেমন জবার মালা ঝুলিয়ে ভাবছ

এই পুজো,পরমহংস ” ( মহামায়া, পৃষ্ঠা -২২)

জীবন এক জটীল অরণ্য। কবিতা তার চাঁদ। ফাঁকফোকর থেকে এসে পড়েই।অরণ্য যতো দীর্ঘ ঘন জটীল আচ্ছন্ন হোক না কেনো, চাঁদের আলো, সূর্যের আলো কে কবে রোধ করতে পেরেছে। কবিতা সত্তার গভীরতম তল থেকে উত্থিত হয়। যেমন ” মহামায়া ” কবিতাটি। এতে এমন কিছু বিষয় কবি ইংগিত করেছেন যার অনেককিছু দৃশ্যজগতের অন্তর্গত, এমন অনেককিছু যা অদৃশ্যজগতের অংশ। এই কবিতাটি একই সঙ্গে কাজ করেছে মনন, কল্পনা, অনুভূতি, উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতা নিয়ে। বেবী সাউ এখানে দৃশ্য জগৎ ও অদৃশ্য জগৎ মিলেমিশে কবিতায় এক সত্যতর জগৎ জাগ্রত করেছেন নিজস্ব চেতনার মধ্যে দিয়ে। নৌকার মাঝি জানে কোন মেঘে বৃষ্টি হয়,কোন মেঘে ঝড় হয়। প্রকৃত কবিসত্তা তেমনি জানেন, কোন আবেগে কবিতা হয়,কোন রূপে কবিতা হয়, কোন কল্পনার বেলুনে চেপে বসলে কবিতার আকাশ ভ্রমণ করা যায়। বেবী জানেন, তাঁর কবিতা নামক সেই মায়াবী কখন তাঁকে ধরা দেয়। কলাকৌশলে বেবী সম্পূর্ণ আধুনিক। এমন বিষয় নিয়ে তিনি কবিতার বুনন করেন যা পাঠে কিছুটা সময় চোখ স্থির হয়ে যায়।মনে হয় শুভবোধ, অনন্তের ধারণা,পৃথিবী ও মানুষের চির-চলমানতা মুহূর্তের মধ্যে ঝিনুকের ভেতর থেকে মুক্তো খুলে দেখিয়ে দিচ্ছেন। বহুমাত্রিক চিন্তায় তাঁর কবিতার আকাশে রঙধনু রঙ ছড়ায় নানাভাবে। আমরা আর একটি কবিতা লক্ষ্য করিঃ

“রাস্তা ঘুমিয়ে পড়ছে
আর বাসি পেপার নিয়ে খবর হচ্ছে বাড়ি

না নেভানো আলো নিয়ে
ছেড়ে আসা মাঠ নিয়ে
গল্পকথা বুনছে লাল চুলের মেয়ে

কোন দিকে সূর্য উঠতে পারে কাল
কলেজের হাঁটাপথে
অপেক্ষা পুষতে পারে কোন খামখেয়ালি যুবক

ভাবতে ভাবতে নিজেকে ভুলে যাচ্ছে

মাউথ অর্গান লুকোচুরি খেলছে
রাধাচূড়ার সঙ্গে ” (পরকীয়া, পৃষ্ঠা -২১)

এতো বিচিত্র দৃশ্যের গাঁথুনিতে তাঁর কবিতাগুলো যখন একা শিস দেয় টিয়াপাখির মতো তখন প্রকৃতির সবুজ পাতারা নড়ে ওঠে। আদ্রে রঁ্যাবো বলেছেন, ” দ্রষ্টা হতে হবে, নিজেকে তৈরি করতে হবে দ্রষ্টা “। নিজের কবিতার আয়তন গড়ে তুলছেন বেবী সাউ। যা স্ব-স্বভাবী, প্রবণতা ও নিজের কন্ঠস্বর। গতানুগতিক কবিতার বাইরে পা ফেলছেন বেবী সাউ। পরিবর্তিত কবিতা মানে নিজের অনুভূতির পরিশুদ্ধতা, আত্মাকে পরিচালিত করছেন নতুন গতিরেখে। একটা কাব্যিক দাবির স্বপক্ষে যেন নিজেকে মেলে ধরছেন ক্রমশ বিস্ময় সৃজনে। জীবনানন্দ দাশ পরবর্তী বাংলা কবিতা যে আধুনিকতার একটা ধারায় বয়ে যাচ্ছে সেখানে নতুন নতুন কিছু কবিতা বিদ্যুৎ চমকানোর মতো কোনো কোনো কবির কলমে জন্ম নিচ্ছে। তাঁদের কবিতার ভাষা, নির্মাণ প্রকৌশল, শব্দের আদর আমাদের আশান্বিত করছে। নতুন এক জগৎ জাগ্রত হচ্ছে। বলা যায় দীর্ঘদিনের উত্তাল সমুদ্রের মাঝে হঠাৎ দ্বীপ জেগে উঠলে প্রকৃতির এই লীলাময় সৃষ্টিতে আমরা আপ্লুত হই। হৃদয়ে জেগে ওঠে অন্যরকম ভালোলাগা। বাংলা কবিতার আঙিনায় এরকম দ্বীপ যেন জেগে উঠছে কোথাও কোথাও। দীঘল পথ পেরিয়ে কবি চলেছেন যেন এক মুসাফির। কবিতা বারেবারে, ফিরে ফিরে লেখা হয়।একই কবিতা নতুন, নতুনভাবে ন্যস্ত ও নির্ণীত হয় নতুন নতুন কবির হাতে।রবীন্দ্রনাথ যেমনটি বলে গেছেন, ” সব লেখা লুপ্ত হয় বারংবার লিখিবার তরে”। কবিতাকে প্রথমত কবিতা হতে হয়,শেষতও কবিতা হতে হয়। কবিতা কোনো ব্যকরণ স্বীকার করেনা।সে নিজেই তৈরি করে ব্যকরণ। বেবীর কবিতা নিয়ে কথা বলছি আমরা। আবেগের স্বতঃস্ফূর্ততা আছে তাঁর কবিতায় তবে তা লাগামহীন নয়। একটা ম্যাসেজ দিতে চায় পাঠককে তাঁর কবিতা। যেটি বুঝতে পারলে পাঠক নিজেই নিমজ্জিত হয়ে যায় তাঁর কবিতার ভুবনে। স্বশক্তির এমন অপূর্বতার ব্যবহার দেখে আমরা চমকে উঠি। তাঁর কবিতার মধ্যে ঢিলেঢালা, অগোছালো, অন্যমনস্কতার ছিটেফোঁটাও নেই। যে কারণে বেবী সাউ এর কবিতা পাঠ করতে যেয়ে একঘেয়েমি বা ক্লান্তিকর কোনো পীড়াদায়ক মনোভাব তৈরি হয়নি। তাঁর কবিতার বাস্তবরস ও অন্তরের নিগূঢ় রসের সমন্বয় আমাদের বিস্মিত করে। আধুনিক কবিতা সৃষ্টির পেছনে নতুন দৃষ্টিভঙি, নতুন বাচনভঙ্গি সচেতনভাবে কাজ করে গেলে কাব্যের শিখা জ্বলে ওঠে।

” সমস্ত কষ্টের শেষে রাস্তা পাতে

শহরের পথঘাট ভেসে ওঠে
ধর্মগ্রন্থ মিশে যায় নিশ্চিত শ্মশানে

আলো ইতিহাস ভেঙে
শূন্যতার রঙ

বিকালে হারায়” (ভ্রমণ, পৃষ্ঠা -৪৬)

কাব্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর স্বাদ অন্যরকম। কবিতার উৎকর্ষ কতোটা বেড়েছে কতোটা কমেছে এ আলোচনায় যাচ্ছি না, এখানে নতুন কিছু পাচ্ছি। তরুণ কবির নতুন কাব্য গ্রন্থে নূতনত্বই আশা করি আমরা। কাব্য গ্রন্থের কোনো কোনো কবিতায় গল্প বর্ণনা সংক্ষিপ্ত আকারে, কোথাও দার্শনিকতার ছোঁয়া পাওয়া যায়। আর চিত্রকল্প সৃষ্টিতে কবি অতুলনীয়। বাস্তব, পরাবাস্তবের দারুণ এক যোগসূত্র আছে কিছু কবিতায়। সে জন্যই নিজের সীমানা অতিক্রম করে বিদ্যুৎ আভায় জ্বলে ওঠে। বাংলা কবিতায় নতুন সাইরেনের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি বেবী সাউ এর কবিতায়।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (1)
  • comment-avatar
    Shyamashri+Ray+Karmakar 3 years

    ভাল লাগল আলোচনা

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes