দুর্গা <br /> পৌষালী চক্রবর্তী

দুর্গা
পৌষালী চক্রবর্তী

আজকাল ছো পালায় যেদিন ‘ঝর্ণাডিহি শিবশক্তি মহিলা ছো দল’ এর নাচ থাকে সেদিন যেন পালার মাঠ ভিড়ে ভেঙে পড়ে।এ গোটা মহকুমায় এটাই তো প্রথম মেয়েদের ছো নাচের দল।দুর্গা বাবা যখন প্রথম নাচের দলটা খোলে তখন সবাই কী গঞ্জনা দিয়েছিল। কুলিহ কুলিহ তে অকথা কুকথায় আর কান পাতা যাচ্ছিল না ।সবাই বলছিল মেয়াছিলা আবার কোনদিন ছো পালায় নামছে। কে শুনছে এ কথা। সেই সবকিছুর সাথে একা লড়েছে দুর্গা বাবা- স্বল্পখ্যাত ছৌ নাচ শিল্পী দুর্গা সিং মুড়া।

তিনটে মেয়ে ঘরে রেখে দুর্গার বউ যখন সাপে কাটা হয়ে মরল বড় মেয়ে ললিতা সবে আট। ছোট টা দুই। কুলহির সবাই বলেছিল ফের একটা বিয়ে কর। সংসারটা না হলে ভেসে যাবে। সে কারও কথা শোনেনি। নাচ আর মেয়েদের আঁকড়ে সেই দুঃসময়ের প্রথম দিকটা পার করার চেষ্টা করেছে। ললিতা তখন কিছুটা বুঝতে শিখেছে। মা হারা সে যেন হঠাৎ করে বড় হয়ে উঠল। ছোট দুটো বোনকে মায়ের মত আগলাত। সে দুটো তখনও কিছুই বোঝে না। প্রথম প্রথম আশপাশের ঘর থেকে কেউ খাবার দিত, রান্না করে দিত। কিন্তু কারও পক্ষেই তো আর রোজ রোজ পড়শির সংসার আগলানো সম্ভব হয় না। তাই ঘুরে ফিরে সংসারের ঠেকা এসে পড়ল দুর্গার ঘাড়েই। সে আবার বাগালি করত কাঠকল মহাজনের ঘরে । সারাদিনের ব্যাপার । গরুর পাল মাঠে চড়াতে নিয়ে যাওয়া। সন্ধেকালে ঘরে ফিরে ছো নাচ। তাও রোজ রোজ নাচ হত না। মায়া যখন বেঁচে ছিল কিচ্ছু ভাবতে হত না। এখন না বেরোলে হাঁড়ি চড়ে না; বেরোলে ঘরকন্নার কাজ, রান্না, বাচ্চাদের দেখভাল কে করে?

পেটের দায় সবচেয়ে বড় দায়। দুর্গা ঠেলায় পড়ে রান্না শেখাতে বসে ললিতাকে। মায়ার সঙ্গে যে তার কী ভালোবাসাবাসি ছিল। সে সব মনে করে আর মন চায় সংসার ছেড়ে চলে যেতে। কিন্তু জীবনের দায়ভার বড্ড বেশি। সে সব অবস্থাতেই চলতে শেখায়। বেশিরভাগ লোকই যেমন তেমন করে হোক হাঁচোরপাঁচোর করতে করতে শিখে যায় হাঁটতে। গুটিকয় লোক ছিটকে যায় কক্ষপথ থেকে। আমাদের দুর্গারও আর বিবাগী হওয়া হোল না।

দুর্গার একমাত্র চিন্তা তার প্রাণের ছো নাচ কাকে শেখাবে। তার দলের ছেলেরা আছে ঠিকই, কিন্তু রক্তের ধারা তো রক্তকেই দিতে মন চায়। সেই ছেলের চেষ্টাতেই মেয়ের কোলে পরপর মেয়ে। মেয়েরা তো আর ছো নাচবে না!

ললিতার এক অন্য জীবন , অন্য লড়াই শুরু হয়। বিহানে উঠে রান্না সারতে হয়, বাবা বাগালি তে যাবে খাবার বেঁধে। আজকাল আবার বাবা চুপিচুপি সুযোগ পেলেই মাটি কাটার ১০০ দিনের কাজ করে। ছোট বোনটাতো আগে মার দুধ খেত। এখন ওর জন্য কৌটোর দুধ লাগে। নাহলে খিদেয় কাঁদে। বাবা এত টাকা কোথায় পাবে। ছো নাচে তেমন কিছুই পয়সা নেই। ললিতা একটু একটু বুঝতে পারে এখন । বাবা বলেছে মহাজন গিন্নীর দয়ার শরীর। ওনার ফাইফরমাশ খেটে দেয় বলে বাবাকে মাসে একটা করে দুধের কৌটো দেয়। সেটায় কি আর সারা মাস চলে? ললিতা জানে। তাই পুঁচকে বোনটাকে বেশি করে জল দিয়ে দুধ গুলে দেয় । এভাবে যতটা বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে চালাতে পারে। ছোট বোন দুটো সকালে অঙ্গনওয়াড়ি স্কুলে যায়। সেখানে সকালের খাবারটা হয়ে যায়। এটা তাদের ঘরের একদম কাছে। প্রাইমারি স্কুলটাও পাশে। তাই ললিতার পড়া বন্ধ হয়নি এখনও। ললিতার পড়তে খুব আগ্রহ। অনেক বড় হবে সে। প্রাইমারি স্কুলের দিদিমনির মত। দিদিমনি তাকে খুব ভালোবাসে। বাবা তো তাকে বলেইছিল স্কুল আর যেতে হবেনা। ঘরে থেকে ছোট বোন দুটাকে দেখতে। দিদিমনি বন্ধুদের মুখে ললিতার মা মরার খবর পেয়ে খোঁজখবর করে একদিন খুব ভোরে তাদের বাড়ি আসে। যাতে বাবার সাথে দেখা হয়। বাবাকে বুঝিয়ে বলে দিদিমনি । কিছুতেই শুনতে চাইছে না দেখে দিদিমনি অন্য ভাবে কথা পাড়ে।
-ললিতা দুই বোনকে নিয়েই স্কুলে আসুক। ওরা দুজন ক্লাসঘরের সামনে বারান্দায় বসে থাকবে । মিড ডে মিলের সময় আমি ওদের তিনজনের খাবারই দেব। ছোট্টটা যদি পারে খাবে।

টোপটায় কাজ দেয়। তারপর থেকে দুই বোনকে বারান্দায় বসিয়ে শুরু হয় তার আশ্চর্য ক্লাস। শুধু তার চোখ ফেটে জল আসে ছোট বোনটা স্কুলের বারান্দায় হেগে মুতে দিলে। কাগজ নিয়ে ক্লাসের মধ্যে থেকে উঠে সব পরিষ্কার করে স্কুলের শৌচাগারে ফেলে জল দিতে হয়। বন্ধুরা হাসে তাকে দেখে। দিদিমনি তখন তার দাঁতে দাঁত চেপে আটকানো কান্নার মাথায় নরম হাত বুলিয়ে দেয়। ললিতা নিজেদের জন্য আর ঘরে রান্না করে না। তাই স্কুল আর অঙ্গনওয়ারি ছুটি থাকলে ওদের দিনের খাবারে খুব কষ্ট।

পালার মরশুমের ঠিক আগে সন্ধেবেলা তাদের বাড়ির সামনের উঠোনে যখন সবাই মিলে নাচ প্র্যাক্টিস করে ললিতা হাঁ করে দেখে সব। খুব ইচ্ছে করে সেও মুখোশ পরে ছুটে এসে নাচের আসরে ঢোকে। সে খেয়াল করে দেখেছে কেমন ভাবে দুর্গা সেজে যুদ্ধের সময় সনাতন কাকা সারা শরীর স্থির রেখে শুধু মাথা নাড়ায়। বাবা গল্প বলেছে এভাবে নাকি রাগ, বীরভাব দেখানো হয়। তেমনি আবার কখনও কখনও মাথা পা স্থির রেখে কাঁধ কাঁপায়। এটা নাকি খুব কঠিন। অনেক দিন লাগে ঠিকঠাক ভাবে শিখতে। সনাতন কাকার ছেলে পূরণ যাকে তারা ঘোঁচু দাদা বলে ডাকে, পালায় সিংহ সাজে। মহিষাসুর যখন নাচতে নাচতে হঠাৎই শূন্যে লাফিয়ে উঠে পা দুটো জোড়া করে পড়ে, সিংহ তেড়ে যায় তার দিকে। কখনও লাফিয়ে লাফিয়েই সে সামনে এগোয় বা পিছোয়। বাবা বুঝিয়ে দেয় গল্প করে করে আগলিয়া, পেছলিয়া উলফা, ঘুর চপকা মেরে পড়া, বাহু মলকা এসব রীতি। দেব চাল , মানব চাল , পশু চাল। বিভোর হয়ে গল্প শোনালেও শিখতে চাইলে বাবা তাকে কিছুতেই নাচ শেখায় না। বলে মুখোশ পরে নাচতে তার দম আটকে আসবে। মেয়েরা পারে না ওসব।

সে নিজে লুকিয়ে লুকিয়ে চাল অভ্যাস করে। বাবা যখন বাড়ি থাকে না ছোট বোনটা কান্নাকাটি করলে ললিতা তাকে ছো এর নানা ভঙ্গী দেখিয়ে ভোলাতে চেষ্টা করে। বাবার দল হিরণ্যকশিপু বধ, কৃষ্ণ কার্তিক যুদ্ধ এসব পালা করলেও মহিষমর্দিনী তার সবচেয়ে প্রিয় পালা। সে দুর্গানাচ প্র্যাক্টিস করে যায়। কল্পনার মহিষাসুরকে মারে, কল্পনাতেই সিংহের ওপর উঠে দাঁড়ায়।

এভাবেই দিন যেতে যেতে বছর গড়ায়। শুখা মরশুমে কাঁসাই শুকিয়ে যায় , আবার বর্ষার নদী ফুলে ফেঁপে ওঠে। দেখতে দেখতে ললিতার হাইস্কুলে যাওয়ার সময় এসে যায়। মেজো , ছোট দু বোনই এখন প্রাইমারি স্কুলে ঢুকেছে। ললিতার নতুন হাইস্কুলটা বাড়ি থেকে বেশ অনেকটা দূর। বড় রাস্তা পেরিয়ে যেতে হয়। ইচ্ছে না থাকলেও বাবা এবার তাকে ছেড়েছে। শুনেছে কিছু ক্লাস পরে সরকার থেকে টাকা, সাইকেল দেবে। বই তো দেয়ই। বাকি যা টাকা দরকার হবে, প্রাইমারি দিদিমনি দেবে বলেছে। সে তো ফোরে ফার্স্ট হয়েছে। দিদিমনি তাকে আগলে রাখতে চায়। আর সবসময় বলে চেষ্টা করে যেতে যদি বাবা তাকে নাচ শেখায় নাচতে দেয়। মেয়েরা তো ছো নাচ করেনা চট করে, সে যদি করতে পারে একটা বিরাট কিছু হবে।

দিদিমনিকে অনেক কিছু বলে ললিতা কিন্তু কিছুতেই ঘোঁচুদাদার কথা বলতে পারে না।

ঘোঁচুদাদাকে সে একদিন দেখে ফেলেছিল। মেয়েদের বাঁধপাড় যাওয়ার রাস্তার ধারে গাছের আড়ালে লুকিয়ে ছিল। সে যে বুঝতে পেরেছে এটা ঘোঁচুদাদা বুঝতেই একটু সুযোগ পেলেই কথা বলতে চলে আসে। খুব নোংরা নোংরা কথা বলে সে। আর খালি গায়ে হাত দিতে চায়। একদিন তাকে বলেছিল
-দেখবি এবার তোর শইলে অক্ত যাবে। আমার তখন খুব মস্তি।

তখনও অবধি ঋতুমতী না হওয়া, টোলার খুড়ি, বৌদি , দিদিদের আলোচনায় শোনা এক আবছায়া দরজার আভাস পেয়ে ললিতা ভয়ে ভয়ে ঘোঁচুকে জিজ্ঞেস করেছিল তার আনন্দের কারণ। কিন্তু কুৎসিত একটা হাসি দেওয়া ছাড়া ঘোঁচু কিছুই বলেনি।

দিন কাটে। ললিতারা তিন বোন আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। এর মধ্যে হঠাৎই সনাতন কাকা মারা যায় আর দলের মধ্যে দুজন ছেলে পুব খাটতে চলে যায় কুলিহ ছেড়ে। দল প্রায় ভেঙে যাচ্ছে। বায়না এলেও ধরা যাচ্ছে না। শরীর মনে প্রায় শেষ হতে বসেছে দুর্গা সিং। চোখের সামনে দেখেও কিছু করতে পারছে না ললিতা। শেষমেষ বাবা যেদিন মহাজন বাড়ী কাজে গেল না, এ কবছরে ললিতার দেখা এই প্রথমবার, আর থাকতে না পেরে প্রচন্ড ভয়ে ভয়েই, মার খাবার আশঙ্কা নিয়েও ললিতা বাবাকে কথাটা বলেই ফেলল
-হামি দুর্গা নাচ পারবেক। দল করো কেনে।
-তুই? তুইতো নাচতে লারবি। জানস নাকি।
– দ্যাখে দ্যাখে তুলছি।
– লক্ষ্মী, সরস্বতীও তো নাই।
-মাইজকা লক্ষী হবেক। তুলাইয়্যা লিব ক্যানে। আর তিলকা সরস্বতী। উয়ার বাপে পলাইছে, মায়ে পাগলি। উয়ারে কেউ কইতে লারবে।
– লুকে গাল দিবে ।
– দিক ক্যানে।
– তু পাইরবি?
-হঁ।

দুর্গার তবু মন খচখচ করে। মেয়ে হয়ে ছো নাচ কেউ শুনেছে? তবু যদি দলটা বাঁচে। এ দল তার প্রাণের অর্ধেক। খাওয়া জোটে নি এমন দিনও গেছে। তবু তো নাচ ছাড়েনি।

দুর্গাকে প্রণাম করে তিলকা এসে দাঁড়ায়। বলে ওঠে ‘দুগ্গা বাবা, মু নাচবে ‘। চোখে জল এসে যায় তার। মনের বিরুদ্ধে কত লড়েছে সে এ কদিন ধরে। খবর পেয়েছে পাড়ার লোকেরা তার বিরুদ্ধে পঞ্চায়েতে নালিশ করবে। ললিতা সম্পর্কে যা তা কথা বলছে সবাই কুলিহ তে। তবু ললিতার অটল জেদ দেখে একটু বল আসে দুর্গার বুকে। একটাই বাঁচোয়া, ঘোঁচু একটু উল্টো গাইলেও তার দলের গায়েনরা আর বাকি দুজন পুরুষ নাচিয়েরা মেয়েদের দলে আসা নিয়ে কিছু বলছে না।

পাশের ঘরের খুড়ি ললিতাকে ডেকে বলে
– তুই যে দুগ্গা হয়ে নাচবি , তখন অক্ত গেলে? ও শইলে ঠাকুর নাই ধরে, পুজা নাই করে। আর তুই এক্কেরে ঠাকুর হয়ে নাচবি?

এত ভাবেনি ললিতা। সত্যি তো। কী হবে এরকম হলে? ঠাকুর তো পাপ দেবে তাকে। অসহায় হয়ে সে ঠাকুর কে ডাকতে থাকে। পালার সময় তার যেন মাসিক না হয়।

পঞ্চায়েত গেছিল কয়েকজন। কিন্তু সেখানে কেউ শোনেনি বিক্ষুব্ধদের কোনও কথা। তাদের অত সময় কোথায়! যে দিন প্রথম ওরা নাচতে নামবে , দুর্গা বাবা মনে মনে তার দলের নামের সঙ্গে মহিলা কথাটা যোগ করে দেয়। মেয়েরা দাঁড়িয়ে গেলেই নাম বদলাবে দলের। ভেবে ভেবে অবাক লাগে দুর্গার। আর সবার মত সেও তো ভাবত মেয়েরা আবার কী ছো নাচ করবে! আর আজ, দল উঠে যাচ্ছে দেখে সে নিজের মেয়েদের নাচতে নামাচ্ছে! যাক। তার নিজের রক্তের কাছেই তার নাচ থাকছে!

পালার সেদিন মাঠে সবাই যেন তামাশা দেখতে এসেছে। পঞ্চায়েত মেম্বারও হাজির। দর্শকের ভিড়ের একপাশ দিয়ে দুরুদুরু বুকে ছুটে আসরের মাঝে এল দুর্গা রূপী ললিতা। তার অনেকদিনের প্র্যাক্টিস করা নাচের চাল আর মুখোশে ঢাকা মুখ ঢেকে দর্শকেরা ঠাহর করতে পারল না , মেয়ে না ছেলে। জানা সত্বেও গুলিয়ে গেল তাদের । ললিতা শিল্পী হয়ে উঠছে।

পালার শেষ দিকে অসুর বধের সময় যেই সিংহর পিঠে পা দিল দুর্গা, মাঠ কাঁপিয়ে সিংহ গর্জন শোনা গেল। আর এক ঝটকায় থাবা মেরে দুর্গাকে পিঠ থেকে সরিয়ে দিল সিংহরূপী ঘোঁচু। হৈহৈ করে ওঠে ঘিরে থাকা দর্শক শ্রোতারা। ললিতা বুঝতে পারে এত ঘাম ঝরলেও ঠিক অন্য গন্ধ পেয়ে গেছে ঘোঁচু। নাহলে ওই জোড়ালো বাজনা ছাপিয়ে এই পশু ডাক শোনা যায়!

মা দুর্গা ললিতার প্রার্থনা শোনে নি। কিন্তু কাউকে আর কিচ্ছু বলেনি ললিতা। বাবাকে দুঃখ পেতে দেবে না, নাচের এমন সুযোগ হাতছাড়াও করতে চায় না সে….

শুধু দিদিমনিকে চুপিচুপি…

ঘোঁচুর কথা তার মনে ছিল না। ছোটবেলা থেকেই তো সে শুনে আসছে কারও হাত পা কেটে গেলে ঘোঁচু ছুটে গিয়ে মুখ লাগিয়ে চুষে নিত। রক্ত বন্ধ করতে অনেকেই প্রাথমিক ভাবে একরকম করে। তা বলে রক্ত দেখলেই ছুটে যাওয়া দেখে সবাই বলাবলি করত ওকে ডাইন ধরেছে। কম তুকতাক হয়নি। কোথায় কী! ললিতা তো দেখেছে টুকরিতে চাপা দিয়ে রাখা তার মাসিকের রক্ত লাগা কাপড় নিয়ে কীভাবে গন্ধ শুঁকছে ঘোঁচু। তার মুখ চোখ উল্লাসে অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে।

চুপি চুপি ললিতাকে একদিন বলেছিল ঘোঁচু সে রক্তের স্বাদগন্ধ খুব ভালোবাসে…

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes