মারী এবং একটি পৃথিবী <br /> শীর্ষা

মারী এবং একটি পৃথিবী
শীর্ষা

এক

পৃথিবী তখন কাঁদছে। সে এক মারীর দিন। চারিদিকে ত্রাহি ত্রাহি। সন্তানের আর্তিতে কেঁপে কেঁপে উঠছে পৃথিবী। এমন নিশ্চুপ ভালোবাসায় মাটি দিচ্ছে গোরখানার প্রহরী। ইসমাইল। সে জানে রক্তের রঙ একরকমই হয়। ছোটবেলায় আব্বা তাকে বলে দিয়েছিল। মৃত্যুর ঠিক পূর্বমুহূর্তে। চুপি চুপি। তারপর তো ওপাড়ার সনাতনী ত্রিশূলের খোঁচায় আব্বা মিশে গেল পৃথিবীর সঙ্গে। জল-স্থল-বায়ু-অন্তরীক্ষে। একমুঠো মাটি ঠেলে দিল ইসমাইল। কবরটা হিন্দুর। নিয়মমাফিক দাহপ্রথা দেখাশোনা করার টিকি পৈতেধারী লোকগুলো আজ আর নেই। কী এক মহামারী তাদের ফুসফুসে ঢুকেছে। কুরে কুরে খেয়েছে তাদের ফুসফুসকে। যেভাবে কুরে কুরে তারা খেয়ে এসেছে এতকাল। ইসমাইলদের। কাজু লেটদের।

দুই

চারপাশ ভাগাড় হয়ে গেছে। আর সেই ভাগাড়ে বাঁকালেজ কুকুরের মতো এটা ওটা শুঁকে বেড়াচ্ছে দুখীর মা। যদি কাজে লাগার মতো কিছু পাওয়া যায়। এক টুকরো বিস্কুট। বা এক প্যাকেট ছোলাভাজা। অনেকদিন পেটে তেমন কিছু পড়েনি তো। তাই এখন জল পর্যন্ত পেটে সয় না। চান না করার জন্য দুখীর মায়ের চামড়া বহুদিনের ময়লা ধুলোবালি মেখে গিরগিটির মতোই রঙ পাল্টে ফেলেছে। চান করবার জল পাবেই বা কোথায়! আশপাশের পুকুর ডোবা সব থেকে লাশের বিটকেল গন্ধ বেরোয়। অথবা প্লাস্টিকের বোঝা উঁকি মারে। কী এক অদ্ভুত রোগ এসেছে। লাশগুলোকে পচতে ফেলে দিচ্ছে এখানে সেখানে। মুখে আগুন দেবার বাতিটিও যে লাশের পাশে শুয়ে দ্বিতীয় লাশ! দুখী রিক্সা চালাত। তারপর হা হা করে শ্বাস নিতে কষ্ট হল এক রাতে। আর অমনি পরদিন ভোর হতে না হতেই দুখী নিঃসাড়। কোথায় পড়ে আছে জানে না দুখীর মা। তাই তো এত খোঁজ। দুখীর পকেটে সেদিনের রিক্সাভাড়ার টাকাটা ছিল। ওরা তাড়াতাড়ি করে দুখীকে প্লাস্টিকে মুড়ে কোথায় রেখে এল কে জানে! দুখীর মা তারপর থেকে প্রকৃতই দুখী হয়ে লাশ ঘেঁটে ঘেঁটে বেড়াচ্ছে। চারপাশ ভাগাড় হয়ে গেছে। আর সেই ভাগাড়ে বাঁকালেজ কুকুরের মতোই এক রমণী খুঁজে চলেছে একটি আধুলি।

তিন

পৃথিবী তখন কাঁদছে। ইসমাইল মাঝে মাঝেই সে কান্নার শব্দ শুনতে পায়। অদ্ভুত গোঙানি। সাঁই সাঁই শব্দ একনাগাড়ে। হেঁপো রুগীর মতো – আদিমাতা পৃথিবী কাঁদছে। ইসমাইল অনেক কিছুই শুনতে পায় ছোটবেলা থেকেই। গাছ থেকে পাতা খসে পড়ার পর গাছের যে কান্না – ইসমাইল শুনেছে। রাস্তায় নামীদামী স্করপিওর পায়ে থেঁতলে যাওয়া বাচ্চাকে দেখে মা কুকুরের পাগলের মতো রাস্তায় ছোটাছুটির সময় পিচরাস্তার যে ফোঁপানি – তাও শুনেছে। এমনকি প্রচণ্ড খরায় জলের অভাবে যখন ওদের চাষের মাঠ ফুটিফাটা, সমস্ত সবুজের মৃতদেহ রসকষহীন শুকনো হয়ে উঠেছে – সেটাও শুনেছে। এসব শোনার কথা কখনো কাউকে বলতে পারেনি ইসমাইল। এসব শোনার কথা কখনো কাউকে বলতে নেই জানে ইসমাইল। আব্বার থেকেই জেনেছে। হিন্দু-মুসলমানের কাজিয়ায় যখন হিন্দুর ছেলেও মরেছে, আব্বা নামাজ পড়েছে। নিজে গরীব দুঃখী হয়েও মসজিদের সামনে বসা ভিখিরিগুলোকে এক পাই করে চাল দিয়েছে। এহেন আব্বা কি জানে না এমনটা হতে পারে কিছু? ইসমাইলের বুক চওড়া হয়ে ওঠে। আব্বার গর্বে। আব্বা নিজেই যেন একটা অক্সিজেন সিলিণ্ডার। ভুরভুর করে অক্সিজেন দিয়ে ফুলিয়ে দেয় ইসমাইলকে। তখন ইসমাইলের শরীরটা অক্সিজেনের আধিক্যে বেলুনের মতো হয়ে ওঠে। আর ইসমাইল বেলুন কবরখানার মাটি ছেড়ে আকাশের আরও ওপরের দিকে উঠতে থাকে। পৃথিবী তখন কাঁদছে। ইসমাইল বেলুনের কাছে সেই নোনতা জল ধীরে ধীরে গা সওয়া হয়ে উঠতে শুরু করে।

চার

চারপাশ ভাগাড় হয়ে গেছে। তবুও দুখীর মায়ের খোঁজের ওপর দিয়ে কোন হতাশার ট্র্যাক্টর অতিরিক্ত শব্দ করে এগিয়ে যায়নি। খোঁজের জমি খুব একটা মসৃণ হয় না কোনোদিনই। রাজ্যের আগাছা, কাঁটাগাছ, নুড়িপাথরে বোঝাই জমিকে দুহাত দিয়ে বেছে বেছে উপড়ে ফেলতে হয়। সামান্য কাচের টুকরোও খোঁজের জমিকে রক্তাক্ত করে তুলতে পারে। আর তাতে প্রাপ্তিফসলেরই সর্বনাশ। জমি তো আর রক্তখেকো নয়! দুখীর মা কথাটা জানে। তাই তাঁর দড়ির মতো পাকানো হাতে উদ্যমহীনতা নেই এক ফোঁটাও। এই অগণিত লাশের স্তূপ থেকে দুখীর লাশ খুঁজে বের করাটা কঠিন হলেও অসম্ভব তো নয়। মাথার ওপরে সূর্যের তাত বাড়ছে। যেন বা একটা গুল দিয়ে ধরানো উনুন। ফুট ফুট করে আঁচ পুড়ছে। আর তাত ছড়িয়ে দিচ্ছে চারপাশে। সেই তাতে পুড়তে পুড়তে দুখীর মা খুঁজে চলেছে ব্যাঙের আধুলি। তাঁর একমাত্র মৃত লাশসন্তানের পকেট থেকে। এই তো, এই তো — দুখীর মুখটা কেমন যেন কালচেপানা হয়ে গেছে। একমাত্র সন্তানের মুখটা দেখেও খুব একটা মায়া হল না বুড়ির। পেটের ভেতর লক্ষ ছুঁচোর দৌড় প্রতিযোগিতা চলছে। খিদের বড়ো তাগদ। সব ইমোশনকে দূর ছাই করে ফেলতে পারে। দুখীর শরীরের অধিকাংশই প্লাস্টিকে মোড়া। জামার পকেটটাও প্লাস্টিকে চিটে গেছে। দুখীর মা তাঁর হাড় জিরজিরে শরীরের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করতে শুরু করল। হেঁপো রুগীর মতো সাঁই সাঁই শব্দ বেরোচ্ছে তাঁর গলা দিয়ে। সমস্ত শক্তি যেন সুদূরে বাজতে থাকা শাঁখের মতো ক্ষীণ হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে। একমাত্র ব্যাঙের আধুলি পাবার শেষ মরিয়া চেষ্টা চালাল সে। আকাশে গনগনে উনুন। ফুট ফুট করে জ্বলন্ত গুল ছড়াচ্ছে এদিক ওদিক। তারই মধ্যে দুখীর মায়ের চোখে পড়ল কেমন বেলুনের মতো দেখতে একটা লোক। পুরো শরীরটা বেলুনের মতোই ফোলা। অথচ মুখটা হাসি হাসি। ওপরের দিকে উঠছে। স্বর্গে যাচ্ছে কি? যাক গে। মরুক গে। পেটের শুকনো চামড়ার নীচে অগণিত ইঁদুরের মনোরঞ্জন আবারও টের পেল দুখীর মা। একমাত্র ব্যাঙের আধুলি বের করার প্রবল চেষ্টা শুরু হল তাঁর। প্লাস্টিক ছিঁড়তে ছিঁড়তে দেখতে পেল তাঁর হাত দুটো কেমন শক্ত হয়ে যাচ্ছে। চামড়া খসখসে। হাতদুটোয় পাঁচটার বদলে চারটে করে আঙুল। আর তাঁর শরীরটা.. তাঁর শরীরটা যেন কী কদাকারভাবে ফুলে উঠছে! গলা দিয়ে মানুষের স্বর আর বেরোচ্ছে না। অসংখ্য গুটিওলা চামড়ার নীচে আর মানুষের চামড়া নেই। গলা দিয়ে শুধু – ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ বলে অদ্ভুত একটা শব্দ বেরোচ্ছে। খুব বিরক্ত হল দুখীর মা – এই প্রচণ্ড খিদের সময় বলা নেই কওয়া নেই শরীরের এ কী পরিবর্তন – নিজেকে দেখে নিজেই চমকে উঠল এবার। আস্ত একটা ব্যাঙের শরীরে পরিবর্তিত হয়ে গেছে সে। চারপাশ থেকে অতি অদ্ভুত সব কান্নার শব্দ। পৃথিবী কাঁদছে। চারপাশ ভাগাড় হয়ে গেছে। আর সেই ভাগাড়ে এক বৃদ্ধা ব্যাঙ তার আপন সন্তানের লাশ মুখে পুরছে। ধীরে ধীরে গোটা শরীরটাই গলাধঃকরণ করে ফেলছে। সফলভাবে। চারপাশ ভাগাড় হয়ে গেছে। আর পৃথিবী বলে অবোধ মেয়েটা, তখনও কাঁদছে। একনাগাড়ে কেঁদেই চলেছে।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes