
শর্বরী চৌধুরীর কবিতা
আলোগাছ
বার্ধক্যের ঘুম বড় প্রতারক।
আলোগাছ কখন যে ধূলিসাৎ
বোঝা দায়। নির্জনতার কথা,
আস্তিক্যের কথা, ফুরোয় নিমেষে।
পাথর ডোবে জলে, দিনের শেষ খেয়াপারে
ঘাটে এসে দাঁড়ান ঈশ্বর।
সুখ
গোলাপী বিকেলে আসে সুখ।
ক্লান্ত খরগোশের মতো পায়ে পায়ে
চলে আসে সে। ব্যর্থ প্রেমিকের মুখে
আলো জ্বলে উঠলে উধাও শৈত্যপ্রবাহ।
পৃথিবীর সব অসুখ মুছে গিয়ে আগামীর
মনিবন্ধে ফুটে ওঠে জুঁইফুল।
গোলাপী বিকেলে আসে সুখ।
শূন্যতা
থার্মোমিটার শূণ্যতা মাপে।
গাছের তপ্ত নিঃশ্বাস উড়ে যায়
নীহারিকায়। আভোগীর টানে মত্ত
যারা শয্যাঘরে, তাদের আশ্লেষে ভরে
ওঠে রূপশালি ধানের শীষ। কুহক বসবাস
বিষাদ ঢেলে দেয় ভোরের শিশিরে।
কান্না
মাঘের আকাশ জুড়ে উচ্ছ্বলতা।
উৎসব ছড়িয়ে গেছে শিরায় শিরায়,
তার থেকে পরিত্রাণ নেই কারও।
নিরুও বেরিয়ে আসে ঘর ছেড়ে ;
অকালমৃত শিশুটির কথা ভুলে নেচে
ওঠে মাদলের ছন্দে। তার দীঘল শরীরে
মহুয়ার মাদকতা। হঠাৎই দূর থেকে ভেসে
আসে শিশুর কান্না। মাদল বাজছে,কিন্তু
ধীরে ধীরে থেমে যাচ্ছে নিরুর পা দুটো।
উড়ান
বুকের কার্নিশে বসে থাকে বিমূর্ত চিন্তারা।
যখন বিকেল নামে মখমলের মতো, মালিনী
দাঁড়ায় এসে আমার উঠোনে। চিন্তার ভাঁজে ভাঁজে কাশফুল ছড়িয়ে দেয় সে। তার হাসি
বনান্তের দাবানল। সেই হাসি দেখে উড়ে যাই
সমস্ত চিন্তার ওপারে।
স্তব্ধতা
শব্দহীন জ্যোৎস্নায় ঢাকা পড়ে আততায়ী
সুখ। শ্রমণের মাধুকরী বিষাদ বিমূঢ় ; তাকে
ঘিরে শবেদের কূটপ্রশ্ন ঝলসে ওঠে অযূত
নির্মমতায়। সওদাগরের নৌকো থামে যে
বিভাজিকায়, সমস্ত স্বপ্নের সমাধি সেখানে।
শৈশব, যৌবন পার হয়ে অনন্তের পথে দাঁড়ানো
মানুষ দুহাত ভরে নেয় আগামীর সংকেত,
যাপিত মৌনতা মাপে প্রহরীর স্তব্ধ শাসন।
কঙ্কাল
ঘরভর্তি মানুষের কঙ্কাল।
তারা গান শুনছে, হাততালি
দিচ্ছে, নেচে উঠছে কেউ বা।
খলখলিয়ে হাসছে কেউ।
গান শেষ হয়, গায়ক উঠে
অভিবাদন জানান সবাইকে।
কঙ্কালের হাততালিতে ভরে
ওঠে সভাঘর।
অস্তাচল
সব কথা ফুরিয়েছে।
এবার আমি অস্তাচলে যাবো।
কিছু মালা থাকবেই জানি,
তার সাথে দিও কিছু অপমানও।
শেষের দিনটিতে থাক অপ্রমেয় আঁধার।
এবার অস্তাচলে যাবো আমি।