এন্টিনেটালিজম : একটি উদ্দেশ্য ও আশংকা  <br /> সব্যসাচী মজুমদার

এন্টিনেটালিজম : একটি উদ্দেশ্য ও আশংকা
সব্যসাচী মজুমদার

এই মুহূর্তে আমরা গোটা পৃথিবীতে যারা বেঁচে বর্তে রয়েছি, সকলেই একটা নতুন পৃথিবীর মুখোমুখি। যার কোন‌ও পূর্ব সূত্র নেই। যে মুখোমুখিকে আমরা সামলাতে পারব ইতিহাসের বর্মে — এমন উপায়‌ও আমাদের কাছে মজুত নেই। কি সেই নতুন পৃথিবী ? কেন, তার সঙ্গে আমাদের পূর্ব সূত্রের সম্পর্ক নেই ? — এই দুটো প্রশ্নের সামনাসামনি হলে আমরা যে উত্তর পাচ্ছি, তার অনেকটা এরকম, ডেটাইজম, অ্যালগোরিদম প্ররোচিত এ আই নিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক পৃথিবী। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এমন একটা নতুন অর্থনৈতিক অভিজ্ঞতা তৈরি করছে, যার সঙ্গে আমাদের স্বাভাবিকভাবেই কোন‌ও ধারণা স্পষ্ট করে নেই। আমরা বলতে সমাজপ্রান্তিক ‘আমাদের’ কথা বলতে চাইছি। বস্তুত কোন‌ও নতুন পরিস্থিতির সঙ্গেই আমাদের সেই অর্থে সুস্পষ্ট ধারণা থাকে না। যুঝতে যুঝতে তাকে বুঝতে পারি আমরা। ততদিনে হয়তো আরেকটি নতুন পরিস্থিতি এসে উপস্থিত হয় আমাদের সামনে। যাহোক, আমরা এ সব জানি। এবং এও জানি, এই এ আই এক ধরনের এলিয়েন শক্তি। যার সঙ্গে আমাদের কোন‌ও সম্পর্ক ছিল না ইতিপূর্বে। মানুষকে ইতিপূর্বে এমন কোন‌ও অস্তিত্বের সঙ্গে যোগ্যতমের উদবর্তনের চ্যালেঞ্জে নামতে হয়নি, যার চেতনা নেই কিন্তু বুদ্ধি আছে। এমন বুদ্ধি আছে, যার মাধ্যমে সে নিখুঁত হতে পারে, বিনির্মাণে সক্ষম।

এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তো নতুন নয়, মোটামুটি বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে চর্চিত হয়ে চলেছে। আমরা সম্প্রতি তাকে জেনেছি। তাও জেনেছি প্রাথমিক স্তরের কিছু ভার্চুয়াল এপের মাধ্যমে। যেমন চ্যাট জিটিপি, যেমন হোয়াটসঅ্যাপ মেটা। অর্থাৎ কর্তৃপক্ষ এ আই সম্পর্কে আমাদের যতটুকু ধারণা থাকাটা নিরাপদ বলে মনে করেছে ততটাই আমরা জেনেছি। জেনেছি, অনেক ক্ষেত্রেই অপটু এ আই আমরা যতটুকু জানাচ্ছি ততটুকুই জানে। কিন্তু কতটুকু জানাচ্ছি আমরা ? এই হিসেবটা কি আমাদের কাছে আছে !

প্রতি মুহূর্তে আমরা রেকর্ডেড হচ্ছি আমাদের মোবাইল ক্যামেরায়। আমাদের প্রতিটা মুহূর্ত বিভিন্ন এপের ক্যামেরা ধরে রাখছে। সে সমস্ত তথ্য জমা থাকছে নির্দিষ্ট সার্চ ইঞ্জিনের কাছে। তাছাড়া আমাদের নিজেদের উদ্যোগেই ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামে আমরা যে পরিমাণ তথ্য ছড়িয়ে বেড়াচ্ছি তার ইয়ত্তা কে রাখে ! নিজেরাই জানি না কিভাবে, কোথায়, কখন আমাদের অজান্তেই আমাদের তুচ্ছ থেকে মহার্ঘ্য তথ্য সমূহ সরবরাহ করে চলছি। এবং সেই সব তথ্য যেমন আমাদের সকলের কাছে মুক্ত, তেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছেও। তথ্য তার মুক্তি পেয়ে গেছে। আমরাও পরিণত হয়েছি স্বয়ং তথ্য ভাণ্ডারে। আমাদের অস্ত্র ও অসহায়তা — দুইই তথ্য।

এখন যদি প্রসঙ্গে ফিরতে চাই, তবে, এ কথা বলতে হবে যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের সহায়তাতেই প্রতিদিন এতটাই উন্নতি করে চলেছে যে হারারি সাহেবের চেতাবনি সত্যি বলে আশংকা হচ্ছে। কি সেই চেতাবনি ?
মোটামুটিভাবে ২০৩৩ -এর মধ্যে নিরানব্বই শতাংশ টেলি কমিউনিকেশন এবং ইনসিওরেন্স কোম্পানির মানুষ কাজ হারাবেন। ৯৮ শতাংশ রেফারি, ৯৭ শতাংশ ক্যাশিয়ার, ৯৬ শতাংশ রাঁধুনি, ৯৪ শতাংশ ওয়েটার, ৯১ শতাংশ ট্যুর গাইড, ৮৯ শতাংশ বাস ড্রাইভার, ৮৮ শতাংশ নির্মাণ শ্রমিক‌ও। ভারত বর্ষের ক্ষেত্রে এটা ২০৪৩ সালেও হতে পারে। তবে, হতে চলেছে। অমোঘ এই বিবর্তন। এই কারণেই ‘অমোঘ’ হয়ে উঠেছে যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত ব্যবহার যত‌ই এড়াতে চাই না কেন, এমনভাবে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, তাকে কোন‌ওভাবে পাশ কাটানর উপায় নেই আমাদের। সামান্য মোবাইল ফোনকেই একঘণ্টা হাতছাড়া করতে প্রাণ বেরিয়ে যায় আমাদের।

যাহোক লক্ষ করার বিষয়, যে ক’টি পেশার তথ্য দেওয়া গেল, সবকটিই প্রান্তিক মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িত। এর আভাস ইতিমধ্যেই পেয়ে গেছি আমাদের চাকরির বাজারে। টিসিএস -এর প্রায় তের হাজার কর্মী ছাঁটাই বা রেলের প্রায় দুই লক্ষ পদ অবলুপ্তি আমাদের সেই আশংকায় গ্রস্ত করে না কি ! এমনকি সম্প্রতি ইলন মাস্ক একটি সাক্ষাৎকারে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। আগামী দশকের মধ্যে মানুষের কাছে চাকরি অপশনাল হয়ে যাবে। সে ঠিক করবে চাকরি করবে কি করবে না! অর্থাৎ, চাকরির বাজারে মানুষ আর প্রয়োজনীয় থাকবে না। এ আই দখল করবে। তার ইউনিয়ন নেই, মাইনে, ডি এ কিচ্ছু দরকার নেই। এখন, প্রশ্ন হল আর এক দশক পর এই চালচিত্র তৈরি হলে, যে বিপুল পরিমাণ চাকরিহীন মানুষ তৈরি হবে, তাদের দায়িত্ব নেবে কে ? তাদের ছাদ, কাপড়, ভাতের দায়িত্ব ? রাষ্ট্র ? জাতীয়তাবাদ যেমন এখন এক ঐতিহাসিক, অপ্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ, রাষ্ট্র ধারণাও কি সে দিকেই যাচ্ছে না ! বিশেষ করে তথ্য মুক্তির পর থেকে ?

আর এই প্রশ্নের সূত্রেই বক্ষ্যমাণ আলোচনার উদ্দেশ্যটি উন্মোচিত হচ্ছে। একটা বিপুল পরিমাণ মানুষ উদ্বৃত্ত হচ্ছে এবং হতে চলেছে আমাদের সমাজে। এবং ইতিহাস এটুকু বলে যে, উদ্বৃত্ত মানুষকে নিয়ে কখনোই রাষ্ট্র মাথা ঘামায়নি। শরণার্থীদের নিয়ে নয়, কিংবা আত্মহত্যাকারী চাষীদের নিয়েও নয়। তাহলে আমাদের কি হবে ? এই উদ্বৃত্ত মানুষদের !

কয়েকটা সম্ভাবনা অবশ্যই আছে। কিন্তু, তার মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল বলে মনে হচ্ছে দুটো সম্ভাবনাকে। এক. মন্বন্তরে, অনাহারে মানুষ মরবে। দুই . যুঝতে যুঝতে ক্রমশ নিজেকে প্রত্যাহার করে নেবে। — এদের মধ্যে দ্বিতীয় সম্ভাবনাটি আর‌ও উজ্জ্বল এই কারণেই‌ মনে হচ্ছে সেটাই মানবসভ্যতার ইতিহাসের পক্ষে সম্ভ্রমজনক এবং তার দিকে মানুষকে ঠেলেও দেওয়া হচ্ছে। চিন্তার ক্ষেত্রে মানুষকে প্রত্যাহারে প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে।‌ কিরকম ? সঙ্গে সঙ্গে এই প্রশ্নটা যেমন আসে, তেমন‌ই এই উত্তর‌ও আসে, যে, তাত্ত্বিক প্রোপাগান্ডা হিসেবে এন্টিনেটালিজমকে অভ্যাসে পরিণত করতে বাধ্য করা হচ্ছে।

স্বাভাবিকভাবেই এই অনুমানের স্বপক্ষে ব্যখ্যার প্রয়োজন। আমরা জানি, সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি তরুণীর প্রশ্নের প্রেক্ষিতে এন্টিনেটালিজম প্রসঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে উপমহাদেশে উপস্থিত হয়েছে। তরুণীর প্রশ্ন এরকম — সে তো নিজের ইচ্ছায় পৃথিবীতে আসেনি বা তাকে এই ভয়ংকর অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে জন্ম দেওয়াও একধরনের অপরাধ। তার আর‌ও প্রশ্ন আছে, যে, বাবা মা কেন তার জীবন নির্ধারণ করে দেবে ? সে একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি, তার অধিকার নিজের ইচ্ছে মতো জীবন তৈরি। এখন, এই প্রশ্নগুলো খুব অসঙ্গত মনে হবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা বিষয় ও পরিস্থিতিকে খুঁটিয়ে দেখব।

ব্যক্তিস্বাতন্ত্র বোধ একটা ইউটোপিয়া। ওটা হয় না। এটা আমরা জানি। আমরা সকলে একটা বিরাট পারস্পরিকতার মধ্যে জীবন কাটাই। ফলে একা, একক বাঁচার কোন‌ও উপায় নেই। আমাদের এই জীবন কত অজানা মানুষের সহায়তায় বেঁচে আছে, ফলে নিজের জীবন গড়ে তোলার সময় ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের কথা তোলা বস্তুত সেই পুঁজির পক্ষেই কথা বলে। আমি সকলের কাছ থেকে নেব, কিন্তু নিজের দেওয়ার সময় কেবল কার‌ওর উপস্থিতি স্বীকার করব না। প্রসঙ্গে ফেরা যাক। এই প্রশ্নগুলো আজকের পৃথিবীতে প্রায় সমস্ত দেশেই নতুন প্রজন্মের কাছে প্রাসঙ্গিক ও জরুরি হয়ে উঠেছে কেননা, তাকে ভাবতে শেখান হয়েছে। একটা দিক বন্ধ করে দিয়ে একমাত্রিক ভাবতে শেখান হয়েছে। মানুষ ভেবেওছে কেননা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র বোধে একটা গরিমা থাকে।

এখন, ভাবতে বাধ্য করা হচ্ছে এই ব্যক্তিস্বাতন্ত্র জাত এন্টিনেটালিজম। সন্তান উৎপাদন করতে না চেয়ে মুক্তির পথ বেছে নেওয়াটা মানুষের সমাজের ইতিহাসে নতুন নয়। দেশে দেশে, যুগে যুগে মানুষ বিবিধ চিন্তার প্ররোচনায় ভেবেছে আদর্শ জীবনের কথা। এই নিঃসন্তান জীবন অতিবাহন একটি পথ। কিন্তু, যাঁরা এই পথ বেছেছেন — বাধ্যত নন এবং অপর মতের দিকটা‌ও খোলা রেখেছেন। রেখেছেন বলেই এই পৃথিবীতে আসক্তি আর ঔদাসীন্য আরক্ত হয়েছে এক সঙ্গে।

কিন্তু, তাহলে এন্টিনেটালিজমে আপত্তির জায়গা কোথায়? এখানেই, এটা বাধ্যত ভাবানো হচ্ছে। সংকটাপন্ন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি করে ভাবনাটিকে আর‌ও প্রতিষ্ঠা দেওয়া হচ্ছে। — এখানেই এই আলোচনার লক্ষ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সামাজিক সঞ্চারের পর শ্রমজীবী শ্রেণি ধীরে উদ্বৃত্ত হয়ে যাচ্ছে। ভারি শিল্পের যুগাবসানের সঙ্গে সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাচ্ছি আমরা। এখন ইলন মাস্কের প্রসঙ্গেই আবার ফিরে এসে বলতে ইচ্ছে করছে রাষ্ট্র যখন দায়িত্ব নেবে না এই উদ্বৃত্ত মানুষদের, তাদের বেঁচে থাকার অধিকার‌ও থাকে না আর। কিন্তু, একটা বৃহৎ শ্রেণিকে মুছে ফেলা তো সহজ নয় এবং অল্প দিনে হয় না। করোনা কিছুটা প্রলম্বিত করেছে প্রক্রিয়াটি। এখন, এন্টিনেটালিজমের প্রতিষ্ঠা ধীরে আমাদের মুছে ফেলাটিকেই তরান্বিত করবে বলে অনুমান হয়।

সন্তান উৎপাদন করতেই হবে, এটি জীবনের আবশ্যক প্রক্রিয়া — এমন দাবি করছি না। এও বলছি না যে, সন্তান উৎপাদনে অনীহা নতুন চিন্তা। কিন্তু বলতে চাইছি, পরিস্থিতি অনুযায়ী তার প্রয়োগের উদ্দেশ্যটির সম্পর্কে। আমরাও ভাবতে ভুলে গিয়ে এই প্রশ্ন করছি না যে, আমাদের এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে ফেলল কারা ? কেন আমি নিজেকে পরিস্থিতির অসহায় শিকার হিসেবে ভাবব এবং আদর্শ শিকার হিসেবে গড়ে উঠব ? বরং এই প্রশ্নগুলো না তুলে পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে নিজেকে প্রত্যাহার করার ভেতর একরকমের চিন্তাহীন পলায়নী মনোবৃত্তি থাকে না কি !

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠার এই যুগে শ্রমজীবী শ্রেণি উদ্বৃত্ত এবং তাদের বিবিধ উপায়ে মুছে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখন প্রশ্নটা নিজেদেরকেই মনে হয় করতে হবে, আমরা তবে এভাবেই মুছে যাব ? বেঁচে থাকব না যতদিন বেঁচে থাকবে মানুষের সভ্যতা ?

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes