
ঋজু রেজওয়ান-এর দশটি কবিতা
সূর্য দিঘল বাড়ি
রাত কালা হয়া গ্যালে ব্লাক রোজ হাতে
সোনালু লতায় ঝুলে থাকে…
থোকা থোকা ভুল
টিনের পুরোনো চাল, সবটুকু অন্ধকারে
রসুইঘরের পাশ দিয়ে…
হেঁটে হেঁটে নেমে যায়, চৈত্রের মেহগনি
তবু বসে আছি একা
পাটখড়ির বেড়ায় লতানো শীমেরবীজে
একান্তে ঘুমিয়ে আছে…
‘সূর্য দিঘল বাড়ি’
ওথেলো সিন্ড্রোম
আমি নাই— কেন নাই, ফিরে যাই—
নাই-এর অস্তিত্বে! অস্বস্তিতেই… পড়ছি
বিনীত যন্ত্রণা যত—
যুগযন্ত্রে… হে, যুগাবতার— তুমিও কি
লিখো— ঈর্ষার সম্ভাবনার ত্রিপিটকে…
ত্রিব্যঞ্জনার আঙ্গিক—
প্রতি পার্টিকেলে বিবিধ ভ্রমণ, ভ্রমেও…
যদি জাগতিকে… থাকো, থাকুক— না
সেখানেই হৃৎকম্প— কম্পমান ‘আমি’
কর্পোরেটের মুখোশে…
বিজ্ঞাপন হয়ে উঠি— ঈর্ষারও অনলে…
দেখি যা সীমা___জানি না, অসীম
জানি না অসীম— দেখছি দূরহাকাশ!
কাশফুলচ্ছবি
দেখিনি যদিও আনন্দচ্ছবির এই রূপ।
সীমারেখা তার, তবু বিস্তীর্ণ খেয়াল।
আলের দেরাজপূর্ণ— জলজ পূর্ণিমা!
পর্বতশৃঙ্গের পাদে
অপরিসীম স্তব্ধতা— অর্ধ নগ্ন রাত্রি।
গভীরে জ্বলছে নিত্য অসংখ্য নাবিক।
কুয়াশায় যাচ্ছ— তুমিও অশীতিপর!
নক্ষত্রের কালবেলা
ভাসছে… তবুও মহাপৃথিবীর নৌকো।
স্পষ্টতরও খুঁজছি আমার-ই পূর্বাপর।
বোতাম
পাঞ্জাবির বোতাম হ’য়ে… বিন্ধিয়া রইবো হাছন
যদি না আগলা টানে ছিঁড়ে… নাও ছুতোর বাঁধন
দুপুরের… চৈতি হাওয়ায় হিজলের যেমন মাতম
গনগনে মেঘের তোড়া— বৃষ্টি কি পড়ে ঝমঝম
আয়ত রাতের শাখায়— কত কি! মিলন উড়ান
বিরহের হিসাব পাল্টায়; সনাতন প্রেমের পুরাণ
তাজিয়ার খুরের শব্দে… ভুলে যাই সুইয়ের কথা
প্রতিদিন সেলাই করছি— নিরবের অসীম ব্যথা
আগুনের পরশমণি— কাপলিক যক্ষী পাখি—
বোতামের ছিদ্রগুলো সুতোতেই… বেঁধে রাখি।
জলের প্রপাত
নির্ঘুম চাঁদের যোনি— অনিবার জ্বরে
ছিন্ন! কাপালিক দল নিশ্চুপ, অন্দরে
মাতাল আয়ুশ! কেরু দুই পেগ গিলে
একান্তে বিলাপ। ওলানের বাঁট ছিলে
স্তিমিত রাত্রির স্তন; বৃষ্টি-ফোঁটা চুমে…
সাজায় বাসর, ক্লেশে। কতকাল ঘুমে
কাটালে? ভাঙায় ধ্যান! পুনর্জন্ম রাই…
চাতকের কণ্ঠ খোঁজে… শিশিরের চাঁই
নির্গূঢ় যন্ত্রণা; হায়— ভেদ করে ধীরে
শ্বাপদহৃদয়! জ্যোৎস্না স্তব্ধ রাত্রি চিরে
তুমুল বৃষ্টির ঝড়ে মৌন যাত্রা; ভিজে…
আকণ্ঠ।একাকী পথ নিরন্ত ছোটে! যে,
আলোর গতিতে চুপ। ভুখা নাঙ্গা-রাত
একান্ত নিঃসীমে চলে… জলের প্রপাত
টাইম ট্রাভেল
অসময় বলেছিল—
সময়েই এসো, সময়ে গিয়েছি… বলেছে___‘অপেক্ষা’
অকস্মাৎ প্রস্থানে… ১৩.৮ পেরিয়ে এখনও অপেক্ষায়
কালের পরিক্রমায়—
দেখছি, রহস্যাবৃত কিছু প্রতিচ্ছবি— ভাবায় না, এখন!
ধূর্ত গিরগিটি— উদ্ঘাটন করেছে রং পালটানো রহস্য
প্রায়শ ব্যালকনির—
রাতকানা ট্রাভেলের দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতির ‘আমি’
আর, ‘তুমি’ সুবিশাল মহা+কাশের ওয়াল ডেকোরেশন
অন্য টাইম মেশিন—
সিঙ্গুলারিটি জ্যোৎস্নায় মিশে যেতে চায়—দুরত্বঅভেদ!
নৈঃশব্দ্যের রেকাব
রাত ভাঙার অভ্যেস! পানকৌড়ি ঠোঁট জুড়ে…
ঘাসের ছায়ার স্তরে… আতার বাগান।
আনতশিশিরে রাত— নৈঃশব্দ্যে চালতার ফুল
শীতের কাঁথার রোদে… ব্যথার জোলাপ।
দূর… সাঁওতালের গা, অব্যক্ত ব্যথায়… চিঁ চিঁ
মায়োসিস প্রতিক্ষাতে… প্যাঁচারা নিশ্চুপ।
রেশমি আলোর মিড়ে… কাঁপা কাঁপা ভীত স্বর
গভীর ক্রন্দন ঝরে… মুক্তোর তিলকে।
মায়াবী রাতের ’পরে কোন বিরহীর অপেক্ষায়
মিহিমিহি শিশিরের… নৈঃশব্দ্যে বিছায়—
অনিত্য কায়ার ন্যূডাকাশে শুভ্র কুয়াশা-চাদর।
ডালিমের কোয়া ভাঙে নৈঃশব্দ্যের শিশির
ঠিক কী বেঠিক? কোনটা— কোথায় দেবো টিপ!
যেখানে রাতের নেকাব খুলছে…
হিজাব আড়ালে… সে কি রোয়া ধান মৃত্তিকায়।
কৃষকের প্রতি টিপে টিপ টিপ?
না বা— কি-না— প্রশ্নোত্তরপর্ব ছিল না জটিল!
যখনই বে+গুণির জন্য ভাব, তার অভ্র নিরালায়
সবেগে… না নির্বেগে প্ল্যানচ্যাট
আমাকে… বেগুন ভাজা করে উদোম নৌকায়।
তা ধী— ম-ন— নেকাবের নৈঃশব্দ্যের নীহার!
নগ্ন রাতের কলস—
অনাবৃত অসম্পূর্ণ দিঘি। সম্পূর্ণ হতে না হতে…
রসের হাঁড়িতে পড়ে…
প্রথম রাতের মতো ফোঁটা ফোঁটা অধৈর্য শিশির!
শ্রাবণ
উৎসর্গ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মন ভালো নেই, রবি। বাইশে শ্রাবণ মেঘে—
আজ শুধু কান্না ঝরুক, বেগে নির্বেগে…
সেই মহাপ্রস্থানে জল গেছে সব ঝরে
নেই, বাকি আর কিছু। জল আসে টুপ… করে।
মন কাঁদে জল পড়ে! চোখ ফোড়ে নুন রোদে!
খুব মনে পায়— জীবনের প্রতি সংবেদে…
আজ ভালো নেই, কবি! বাইশে শ্রাবণ দোরে,
মৃত্যু, সে কাল আজও ভুলছি না, মন পোড়ে।
কাল, কালান্তর— রহো আজ হৃদয়ের পালে।
বাইপোলার ডিসঅর্ডার
সুজানা সফর শেষে… দাঁড়িয়েছিলে!
পঞ্চাশ বৎসরেও…
তুমি— অল্পবয়সী কিশোরী।
দেখি— ট্রেনের পিছনে চলা
শাড়িপরা— আঁচলহীন সংসারী!
যখন সূর্য নিজে…নিজেকে গিলছিল!
চিবুকে ছুঁয়েছি…আমিও এক নাদান!
তুমিও— জমিয়েছ…
মহাকাল! সেখানেই আল্
খুঁজি— ৩০ বছর আগে’র…
ফ্রকপরা— জোঁভাতির সকাল!
নলতার ঝিনুক; বিরহের পাঞ্চজন্যে!