
অভিজিৎ চক্রবর্তীর কবিতাগুচ্ছ
পথ গৃহাগমনের
১|
একেক সময় মনে হয় এই যে
ঘরে ফিরি রোজ, পাখিরাও ফেরে
জীবনানন্দ কি জানে!
এখন সময় কবিতা লেখার
মড়ক লেগেছে, পোকা ওড়ে সবখানে
জ্বলে ওঠে আলো
কলেজ ফেরত প্রজাপতি
হেসে ওঠে আহা
শান্তি তাদের বুকের খাঁজে লেখা
ফেরা কি হবে কে জানে
শ্রাবস্তী ভাঙা দিকে দিকে
হাজার বছর কাটে সন্ধানে
২|
তোমার ঘরের দিকে ফিরে যেতে মনে চায়
ফেরা মানে সমুদ্র উত্তাল করে ফেরা
এরপর
নিদ্রাচ্ছন্ন পথ পার করে প্রতিদিন মুখোমুখি বসি
নগ্ন হতে ভালোবাসি
সন্দেহ সবার
তুমি কিন্তু জানো উত্তেজনাহীন,
চারদিকে বাজার–
ভাঁটফুল ফোটে গোপনে
৩|
বুকচাপা ক্ষোভ
ঠোঁটচাপা আগুন
তাকে নিয়ে সংসার
ঝমঝম বাজে গান
আনাচে কানাচে ধান
ইঁদুর মারার কৌশল শুধু
যদিও ভস্মপরিণতি, ক্ষত
তাকেই সাজিয়ে অবিরত
গৃহাগমনের পথ সুন্দর হল
তুষে তুষে ঢাকা
ধোঁয়াচ্ছন্ন পথরেখা
ঠোঁটচাপা বুকচাপা!
৪|
কী চাই জানি না
আকাশের থেকে ঝরে ছাই
ছাই চাই বোধহয়
বড়ো দূর থেকে এসেছে ফেরি
থোকা থোকা ফুল
এই অনিশ্চয়তা
গোছানো ঘরের মহিমা
হামাগুড়ি দিয়ে আসা গোধূলি
নরকের
নাই
অনন্ত চলে যাওয়া ছাড়া
আর কোনো বিস্ময় নাই
৫|
তোমার চোখের চাইতে গভীর সকালে
একদিন ফিরে যাব
যে ইশারা ঘরছাড়া করে
যে ইশারা ঘরে ধরে রাখে
কতটুকু ব্যবধান
মধ্যরাতে ট্রেন এসে থামলে
শোনো কোকিলের গান
স্টেশনে নীরব জ্বলছে বাতি
সারি সারি ঘুমন্ত সওয়ারি
তখন প্রচুর রঙ সমস্ত আকাশে
তখন পৃথিবী মহান প্রেমিক
একশ বছর বৃষ্টি হয় সেগুনের বনে
একশ বছর ফিরে গেলে আড়ালে, গোপনে
আখ্যান
ক.
মাঝেমাঝে ইচ্ছা হয় তার
যে দিকে দু চোখ যায় চলে যাবে
এই বলে সে ঘুরল যেদিকে
সেখানে পাঁচতলা ফ্ল্যাটে এসি বসাচ্ছে কিশোর,
পাশে থাকা জানালায় অবাক প্রতিমা দেখে সব
যেন শান্তি, পাহাড়ী নদীর
বিস্মিত এবার তার মনে হল এই উচ্ছ্বলতা
এই রাগ, আর রাগের পরের উপশম
নুড়ির মতন ছড়ানো শহরে–
একটি গল্প থেকে আরেকটি আখ্যানে যেভাবে
চরিত্ররা ঢুকে পড়ে
খ.
এখানে পথের পাশে কোথাও রয়েছ তুমি
উদ্ধত পাহাড় শীর্ষে রাত নয়টায়, নাম ধরে ডাকি
দুই পাশে স্তব্ধ বাড়িঘর
চায়ের কেটলি মরে ভূত কোন সময়
আর কোনো সাড়া নেই শূকর-হৃদয়
জংলী চাঁদ নেশা-ঢুলুঢুলু
আমি কেবল বিস্ময় বুঝি, রাজনীতি নয়
কেবল জরিপ করি আমার হৃদয় থেকে
তোমার ঘুমন্ত লোকালয় কতদূর
করুণ ঘাসের ব্যথা, বিষণ্ন শিশিরে তুলে রাখি
ওখানে পথের পাশে যিশুদের বাড়ি
তোমার নিবিড় শ্বাসে দুলে ওঠে
রাত নয়টায় চোরা প্রেমিকের মত দরজায় দরজায়
রমণীয় করঘাত করি