আমাদের রবীন্দ্রনাথ –   মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া

আমাদের রবীন্দ্রনাথ – মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া

এইবারে ফাটবে!

কাজে কম্মে বড্ডই দেরি হয়ে গেল। ডিউটি থেকে ফিরতে ফিরতেই সন্ধে ছটা। অবু গেছে টিউশানি পড়তে। রান্না ঘরে ছুটছাট কটা কাজ সারলাম এসেই।
মনটা বড্ডই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মননের ছবির এক্সিবিশন শুরু চারটেয় অথচ এখনো অবধি যেয়ে উঠতেই পারলাম না ।
অবু আসতেই তাই দুধের গ্লাস ধরিয়ে বললাম, খেয়ে নিয়ে চটপট চল, আজ না পঁচিশে বৈশাখ? মননের ছবির এক্সিবিশন? পঁচিশ বৈশাখে কেন মা?বুধো মামুরা কি আজ রবি ঠাকুরের ছবি আঁকবে?অবুও দেখি এক্সিবিশন নিয়ে উত্তেজিত।তা কেন? ওদের আঁকাআঁকির মনন গ্ৰুপটা শুরু করেছিল পঁচিশে বৈশাখ তাই এই তারিখেই ওরা ছবির প্রদর্শনী করছে।
বলছিল তো রবি ঠাকুরের গল্প, কবিতা ,
গানের এসবের ওপরেই ওরা কাজ করেছে । গেলেই তো দেখতে পাবি।দেরি হয়ে গেছে; বকবক না করে খেয়ে নে চট করে। তাড়াহুড়োতে সে ঝঞ্ঝাট না করেই আজ দুধের গ্লাস শেষ করল ;বাঁচা গেল বাবা।
অবুকে বগলদাবা করে আমিও হনহন করে হাঁটা দিলাম।
ঘাসে ঘাসে পা ফেলেছি…পাড়ায় কচিপাতা ক্লাবেও রবীন্দ্রজয়ন্তী জমজমাট! আকাশে দেখি বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। ঠান্ডা হাওয়া ছেড়েছে রে;ঝড় উঠবে নাকি?কালো আকাশের তলায় মিনিট পাঁচেক হেঁটেই অবশ্য পৌঁছে গেলাম মন্মথ মঞ্চে।
আ্য আ্য আ্য তক্ষণে তোর সময় হলো ? এমনিতে ঠিকই বলে। তবে খুব উত্তেজিত হয়ে পড়লে বুধো খানিকটা তোতলায়।গেটের মুখে দাঁড়িয়ে গম্ভীর হয়ে সে ক্যাটালগ দিচ্ছে সবাইকে। আমাকে দেখেই কান অবধি হেসে ফিসফিস করল এএএএ আর কী।ঘঘঘ … ঘঘ করছিস কেন ? মমমম্ ধুত্তেরি বলছি ঘঘঘন…ঘন কী মেঘ? বাইরে মেঘও করেছে বটে তবে বিষ্টি এখুনি আসবে বলে মনে হয় না।
আরে ন্না। ঘঘন্টাখানেক আগে এলে বুঝতিস ভিড় ক্কাকে বলে। পুরোটা বলতে পেরে হাঁপ ছেড়ে হাসে। কিন্তু হসপিটালের এই নোনোনো ;নো এন্ট্রি? আরে না এই জজজ্ ঘন্য নোংরা জিনস ন্না পরলেই কি চলছিল না তোর? সবাই কির’ম সেজেগুজে শাশাশা আড়ি টাড়ি পরে ঘুরছে দেখছিস না? তুই ন্না দিদি।
চুক্কর তো। ফিরতেই এত দেরি হলো। শাড়ির চক্কোরে গেলে আরো দেরি হয়ে যেত। চুলে ফুল গোঁজা কড়ির দুল ঝোলানো দুজন শাড়িকে দেখেই বুধো মুলোর দোকান বন্ধ করে গেরামভারি চাল দিয়ে বলল যযয্ যা ভেতরে যা, আমি এদিকটা সসসআআমলে নি।
হলের বাইরে বান্টিরা মিউজিক সিস্টেমে কিসব টেপাটিপি করছে। দ্যাখো না সাউন্ড আসছে না একটু লো ভলিউমে রবীন্দ্রসঙ্গীত চালাবো তা সাউন্ডেই ফ্যাকড়া। প্রথমেই বলেছিলাম জগার সিস্টেম নিস না এখন সস্তার তিন অবস্থা সামলাও।জয় গজগজ করছিল পাশে দাঁড়িয়ে।যাও ভেতরে যাও তুমি।
তা বেশ জমজমাটই লাগছে হলটা।ঢুকতেই একটা ছোট বেদীর ওপর বেশ বড়সড় একটা মাটির প্রদীপ জ্বলছে। একটা বড় টেরাকোটার ভাসে জল দিয়ে গোলাপের পাপড়ি আর পদ্ম ভাসিয়েছে ওরা।হলের চার কোণায় চারটে মাটির কলসে রজনীগন্ধার গোছায় বেশ একটা সুন্দর লেগে আছে জায়গাটাতে।
সত্যি বলতে এত লোকজন আমি আশাই করিনি। মননের এই বুধো,শুভারা বয়সে ছোট হলেও বন্ধু আমার। নদীর ধারে এক পাড়ায় থাকি বলে আত্রাইয়ের পাড়া নামে একটা পত্রিকা করি সবাই মিলে। একটা ছোট টেবিলে আমাদের পত্রিকাও রাখা আছে।
অবুকে নিয়ে একধার থেকে ছবি দেখা শুরু করলাম।বেশ কিছু ছবির সামনেই দুতিন জন মানুষের জটলা। আমার মতো ঘুরে ঘুরেও দেখছে কয়েকজন। ‘সোনার হরিণ চাই’ ছবিতে শুভ্র ওয়াশের কাজ করলেও কাটা গাছের গুড়ির ফাঁকে ছুটন্ত হরিণ খুব ব্রাইট।
সোনার দাম তো বাড়ল আবার। ছবির নাম পড়েই বোধহয় ভার ভারিক্কে এক মহিলা চুলের গোলাপ ঠিক করতে করতে পাশের জনকে বললেন। আমি তো ভাই গয়নার দোকানেই মাসিক কিস্তির স্কিম খুলে নিয়েছি। ধনতেরাসে নিয়ে নিই কিছু একটা নাইলে পারবো কী করে বলো? অন্যজন বলল। সোনার দরদাম থেকে থেকে আমি তাড়াতাড়ি একটু এগিয়ে পড়লাম।
এক কোনায় ভিড় একটু বেশী আর বেশ চেঁচামেচিও শোনা যাচ্ছে দেখে সেদিকেই এগোলাম। ঝাঁকড়া চুল, লম্বা দাড়ি, হাঁটুর তলা অবধি লম্বা ঝুলো জোব্বা পরা এক ভদ্রলোক খুব উত্তেজিত হয়ে কী সব বলছেন। রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী পীযূষ কান্তি তো মারা গেছেন। এখানে এরকম রাবীন্দ্রিক স্টাইলের সাজপোশাকে এ কে রে? বলছেনই বা কী?
ভিড়ের মধ্যে আর একটু সেঁধোতেই শুনতে পেলাম এটাকে ছবি বলে?যা খুশি আঁকলেই হলো?
খান কয়েক চিড়েতন হরতন এঁকে দিয়েই তার নাম হয়ে গেল তাসের দেশ? আবার পিকাসো নিয়ে কথা কইচো।কিউবিজমের জানো তো ঘোড়াড্ডিম।
ওদিকে একটা হলুদ ছাগল এঁকে নাম দিয়েছো ‘সোনার হরিণ চাই’? গলদা চিংড়ির মতো হাত পা ছুঁড়ে চেঁচাচ্ছিলেন ভদ্রলোক,আর ওই যে ‘ক্ষ্যাপা খুঁজে ফেরে পরশপাথর’ ছবিতে বালিয়াড়ির মধ্যে কানে হিয়ারিং এডের মতন কী এক যন্তর গুঁজে কথা কইছে? আজ্ঞে না ওটা ফোন। টেলিফোন? আজ্ঞে না রবি বাবু,হাতে হাতে ঘোরে তো তাই একে মোবাইল ফোন বলে।শুভ্র বোঝানোর চেষ্টা করতে করতে বলল।
ওব্বাবা!এনার নামও রবি? তাছাড়া মোবাইল ফোন চেনে না এমন কেউ আছে নাকি এখনো?আর অত ক্ষেপেই বা আছেন কেন? ছবির থিম বা স্টাইল পছন্দ না হতেই পারে কিন্তু এত উত্তেজনা কিসের?
আসলে ইয়ে মানে হয়েছে কী আপনার সাহসী ব্রাশ স্ট্রোক,যন্ত্রনার ওই অভিব্যক্তি মানে যাকে বলে কিনা এক্সপ্রেশনিজমে আজো আমাদের ইয়ে কী বলে উদ্বুদ্ধ করে আর কী।খবোদ্দার! সব ঘুলিয়ে খিচুড়ি পাকানো আমার এক্কেবারে সয় না।তুলির আড় ভাঙেনি এখোনও এঁচোড়ে পক্ক সব অবিমৃষ্যকারী ছোকরার দল। মাথাটা বেশ গরম হয়ে উঠল আমার।কারো ছবি পছন্দ হয়নি তো বেশ তাতে এত গালমন্দের কী আছে?শুভ্রটাই বা আহাম্মকের মতো অত মিনমিন কচ্ছে কেন?
কী হয়েছে রে? বেশ চড়া গলায় বললাম আমি।এসে গেছিস? ক্ষ্যাপাটে লোকটার ধমক খেয়ে নিতান্তই ন্যাজে গোবরে শুভ্র বুজবুজ করে আরো কী বলতে যাচ্ছিল চোখ তুলে আমায় দেখেই
খড়কুটো আঁকড়ে ভুস করে মাথা ভাসিয়ে দেওয়ার মতো চিকরে উঠল আর জোব্বা পরা লোকটা গোড়ালি ভর দিয়ে তিনশো ষাট ডিগ্রি ঘুরে দাঁড়ালে আমার মাথাও এমন বোঁ করে ঘুরে গেল চোখের সুমুখে খোদ রবীন্দ্রনাথকে দেখে মনে হলো বেহুঁশ হয়ে যাব।
মুচ্ছো আমি যেতামও কিন্তু নিজের দলবলের আশু সংকটে অজ্ঞান হওয়ার টাইম পেলাম না। যতই গুল মারুক আর মিচকেমি করুক আপাতত শুভ্রটা বেজায় নাকাল হয়ে পড়েছে।
কাজেই মুচ্ছো যাওয়া মুলতুবি রেখে আরে আসুন আসুন গুরুদেব , দাঁড়িয়ে আছিস কী,এই অবু শাঁখ বাজা মালা কী করলি শুভা বলে এগোতেই ইটি কে?ঘোর সন্দেহের সাথে আপাদমস্তক আমায় নিরীক্ষণ করে শুভ্রকেই প্রশ্ন করলেন উনি। গোলমাল টের পেয়েই হয়তো গেট ছেড়ে বুধো কখন পাশে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করিনি। বলে উঠলো এ হলো আআআমাদের দিদি মানে মমম্…
শুনেই কেমন সন্ত্রস্ত হয়ে পিছিয়ে গেলেন দেখে শুভ্র ধরতাই দিল আরে না না এ হলো আমাদের মণিদি। আমাদের কাগজে লেখে টেখে। আমি রবীন্দ্র পুরস্কার পাওয়ার মতো হাবভাব নিয়ে হাতজোড় করে মাথা নিচু করলাম।
এতক্ষণ আমার সঙ্গে ছায়ার মতো ঘুরছিল অবু।সে ফিসফিস করে বলল মা,ওমা সত্যি রবিঠাকুর? বড়দিনে ইস্কুলে যে দাড়িগোঁফ লাগিয়ে তপন কাকু এরকম সান্তা ক্লজ সাজে।টেনে দেখব মা আসল দাড়ি কিনা? খবোদ্দার না। আমি অবুকে থামাই।
মালা কোথায় রাখলি আ্যই শুভা?
শুভা এতক্ষণ দেওয়ালে টাঙানো একটা ছবির পাশে নিজেই ছবি হয়ে সিঁটিয়ে ছিল। উনি আসবেন বলে মালা চন্দন যেন রেডি রাখার কথাই ছিল এমন হাঁক ডাক শুনে পানসে মুখ নিয়ে গুটিগুটি এগিয়ে এলো।
ততক্ষণে কোণের কলস থেকে রজনীগন্ধার গোছা উপড়ে এনে ওনার হাতে দিয়ে প্রণাম করার জন্য নিচু হতেই এইবারে ফাটবে বলে উনি স্যাঁৎ করে চারপাঁচ হাত পিছিয়ে গেলেন।
ততত অক্ষনি বললাম শাড়ি পরে আসবি। বুধো ফিসফিস করে। উনি ভেবেছেন পেপেপে … পেঁপে? তিতির সাহায্য করতে চায় ওকে। ধুর পেপেটে বোঁওওও । বোঁ করে উড়ে যাবে?কে উড়বে মামু?তিতিরের নিরীহ প্রশ্নে ক্ষেপে ওঠে বুধো‌। ধুত্তেরি! ভেবেছেন পেপেপেটে তোর মা বোমমম্ -আ বেঁধেছে হয়তো।পোপোপোরনাম ককক্করতে নিচু হলেই ফেফেফেটে যাবে এক্ষুনি।চুক্কর তোরা। ওদের ঝগড়ায় কান দেওয়ার সময় নেই আমার।
কী সমস্যা আমায় বলুন গুরুদেব। বলছি একটা ভাঙা জানলা আঁকলেই ঘরে বাইরে ফিনিশ? ইয়ার্কি হচ্ছে আমার নবেল নিয়ে ? উনি আবার ছবি নিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন দেখে কথা ঘোরালাম আপনার এই উপন্যাস নিয়ে সিনেমাও মানে ইয়ে বায়োস্কোপ হয়েছে জানেন।থামো হে। বায়োস্কোপ বলছ কেন? চলচ্চিত্র শিখিও না আমায়।ও জিনিস আমিও তোয়ের করেছি। আজ্ঞে হ্যাঁ গুরুদেব, আপনার নটীর পূজা দেখেছি। আমার ইউটিউবের জ্ঞান খোলসা করি আমি।
অ।তা বেশ। শুনে গলার পর্দা একটু নামল ওনার।তা ঘরে বাইরে করলে কে? আজ্ঞে স্যার মানিকদা! মানে সত্যজিৎ বাবু আর কি।উপেনের নাতকুড়? হ্যাঁ স্যার তিনিই।
মওকা পেয়েই চাল মারছে শুভা গুজগুজ করল। ভাব নিচ্ছে যেন সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে জগার দোকানে রোজ চা খেতো। আমি পেছনে কটমট করে তাকাতেই ফিসফাস থেমে গেল।
নতুন নৌকোডুবি সিনেমাটা নিয়ে বলতে গিয়েও থেমে গেলাম।ও সিনেমা নিয়ে আমার নিজেরই বোম্বাচাক লেগে আছে তাছাড়া মেজাজটাও আজ ঠিক জুতের নেই ওনার।
ওহে কী যেন একটা দিদি, তুমি তো খোঁজ খবর রাখো দেখছি, একালের ছেলেপুলে আমার গান টান গায়? মুখটা গোমড়া থাকলেও গলাটা আর এট্টু নরম মনে হলো।আলবাত! আপনার গান গাইবে না মানে?স্প্যানিশ গিটার, ওয়েস্টার্ন হারমনি মিশিয়ে কী চমৎকার যে সব ককটেল বানায়। তাতে আপনার গান এমন খোলতাই হয় কানের ভেতর যেন উলু দিয়ে ওঠে।
কিন্তু বটগাছের সৌন্দর্য যেমন শাখাপ্রশাখার বিস্তারে তেমনি তালগাছের সৌন্দর্য শাখাপ্রশাখার বিরলতায় এ কথা কি হতভাগারা জানে না?গলা ফের চড়ে উঠল।প্রণিধান করুন স্যার, গান তো আপনারই গাইছে।
ভুরু কুঁচকে মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন,
উপদ্রব যদি করতেই হয় তাহলে হিটলার প্রভৃতির ন্যায় নিজের নামের জোরেই তো করা ভালো এ কথা তো আমি বরাবর বলেছি। আমার গান নিয়ে টানাহেঁচড়ার মতো উৎপাতের দরকারটা কী?
আপনার গান কবিতা ছবি নিয়ে কৌতুহল কিন্তু কমেনি আজো স্যার।এই চ্যাংড়ারা না হয় আঁকা নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে কিন্তু সে তো আপনার রং তুলির প্রেরণায় বিভোর হয়েই; উনি হতাশ হয়ে পড়ছেন দেখে আমি আবার ছবির দিকে যাই।
তাছাড়া কয়েক বছর আগেই তো আপনার ছবির প্রদর্শনী হয়েছিল সেই যে যেবার আপনার সার্ধশত বর্ষ পালনে খুব ধুমধাম হলো কোথাও কোথাও অবশ্য শ্রাদ্ধ শতবর্ষ লিখছিল তা সেসব সিলি মিসটেক না ধরলেই হোলো।
তাজ্জব! বলে খানিকটা ভোম্বল মেরে গেলেন।
লম্বা একখানা শ্বাস ফেলে নড়েচড়ে বললেন আচ্ছা বলতে পারো আমার বইটই কি কালেজে পড়ানো হয়?অবশ্যই। তবে মূল কাহিনি অবধি যেতে হয় না,ছাত্ররা স্যারেদের নোট দিয়েই ম্যানেজ করে নেয়।
নোট কী বস্তু? টাকা? আজ্ঞে ওই রকমই খানিকটা। কোচিং ক্লাসে স্যাররা সিলেবাসের গল্প কবিতা, থেকে কিছু প্রশ্ন আর তার উত্তর লিখিয়ে দেন ।
মূল সাহিত্য না পড়েও স্যারের দেওয়া ওই নোট মুখস্থ করেই পরীক্ষা পাশ হয়ে পড়ে,মূল কাহিনি আর পড়তে হয় না। সেই সাথে আপনার সম্পর্কে কিছু তথ্য,কবে কোথায় জন্মগ্রহণ, কিসের জন্য আপনার নোবেল পুরস্কার এইসব। তবে নোবেলটা অবিশ্যি চুরি গেছে আর সেটা নিয়ে তদন্ত এতদূর অবধি পৌঁছেছে যে আর এগোনোই যাচ্ছে না।
এতক্ষণে হাসলেন উনি।বুঝলে হে একটু খারাপই লাগছিল চুরি গেছে জেনে, এখন মনে হচ্ছে চুরি গেছে ভালোই হয়েছে ;ও আপদ বিদেয় হওয়াই ভালো।
আর শান্তি নিকেতন? নিকেতন তো
শান্তির পারাবার হয়ে গেছে স্যার।কাকে উচ্ছেদ করবে, কাকে বরখাস্ত দেবে এসব মহান কার্যক্রমের মধ্যেও যন্ত্রের জন্যেও তাদের প্রাণ কেঁদে কেঁদে ওঠে যে।
তাইই বারান্দায় আপনার মূর্তির সামনে একখানা ট্রেনের অনুকৃতি স্থাপিত হয়েছে, মানে শান্তিনিকেতন থেকে আপনাকে ট্রেনে শেষবারের মতো কলকাতায় আনা হয়েছিল যে তারই অযান্ত্রিক প্রতীক! আর প্রাণের আরাম খুঁজতে সবাই জুটেছে সেখেনে মানে শান্তি নিকেতন একখানা করে ফ্ল্যাট কিনছে। রিয়েল এস্টেটও ঠেলে উঠেছে।
ঘাড় কাৎ করে শুনতে শুনতে উনিই না ফ্লাট হয়ে পড়েন ভেবে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে স্যার। আপনার আশ্রম আন্তর্জাতিকভাবে আরও বেশি পরিচিত এখন! আপনার উদ্যোগে শেখা হাতের কাজ কত জনার রুটি রুজি আজো তাতাড়ি করে সামলে নিই আমি।
বান্টি,জয়রা এতক্ষণে মিউজিক সিস্টেমে সফল হলো। ঝমঝম করে রেজোয়ানা চৌধুরী বেজে উঠল এ পরবাসে রবে কে…ওই তো, ওই তো আমার গান সুরেই বাজছে।
মিটমিট হেসে মাথা দুলিয়ে বললেন, ওহে কী যেন দিদি, আমি তো কিছুতেই নিরাশ হতে পারছি না।সবই তো আছে। সময়ের একটু আবডাল পড়েছে হয়ত।
থাকবে না কেন কবি? আমাদের মধ্যে যেমন অ-সুর আছে, তেমনি আপনার সুরের পদ্ম কুঁড়িটিও বুক থেকে বুকে ফুটিয়ে চলেছেন আজো!কত পথ খুলে রেখেছেন আজো।অন্ধকারে হোঁচট খেতে খেতে বার বার ভুল গান গাইতে গাইতে আমরা তো শুধু খুঁজছি। নতুন করে পাবো বলে যা হারিয়ে ফেলছি বারবার।
এই কর্পোরেট এ আইয়ের যুগেও আপনি তো সেই অবাক মৌচাক।কথাগুলি যার চারপাশে ঘোরে যেন গুন্ গুন্ সুর এক ঝাঁক।
হুমমম।খুব বিচ্ছু তোরা,ধানীলঙ্কার দল! রসবোধও আছে কিঞ্চিৎ তা বেশ বেশ !
দাড়িতে হাত বুলিয়ে উনি তর্জনী উঁচিয়ে বললেন “খেঁদুবাবুর এঁধো ডোবায় মাছ উঠেছে ভেসে!” আমরাও কোরাসে হেঁকে উঠলাম “পদ্মমণি চচ্চড়িতে লঙ্কা দিলো ঠেসে”!
মাথা দুলিয়ে হেসে হেসে বললেন
“সত্য সেথায় দারুণ সত্য, মিথ্যে ভীষণ মিথ্যে
আমরা তক্ষুনি ধুয়ো ধরলাম
“ভালোয় মন্দে সুরাসুরের ধাক্কা লাগায় চিত্তে”!
এবার এগিয়ে প্রণাম করে উঠে দাঁড়াতেই দেখলাম চিকচিক করছে চোখ, সেটা মজা না আর কিছু বোঝার আগেই যাঃ লোডশেডিং ! আবছা আলো আঁধারে চোখ সয়ে এলেও ওনাকে আর খুঁজে পেলাম না। দূরে বেদীর ওপর মাটির প্রদীপটা নিবু নিবু হয়েও জ্বলছে খুব মৃদু।অবুর হাত ধরে ওদেরকে বললাম,যাই রে, অনেক রাত হলো।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes