
আলোকের সাধনা (টমাস আলভা এডিসনের জীবন-কাহিনি) ( দশম ও একাদশ পর্ব) হোমেন বরগোহাঞি মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস
১০
বোস্টন থেকে নিউইয়র্কে
বোস্টন থেকে বিদায় নিয়ে ভাগ্যের অন্বেষণে টমাস একদিন নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন।।১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দের কোনো একটি দিনে তিনি নিউইয়র্কে এসে উপস্থিত হলেন।বোস্টনে চাকরি করার সময় তাঁর বেতনের বেশিরভাগই খরচ হত গবেষণার জিনিসপত্র এবং বইপত্র কেনায়।টাকা জমানোর মতো অবস্থা তাঁর ছিল না।যে সামান্য ধন সঞ্চিত হয়েছিল তা দিয়ে তিনি নিউইয়র্কে যাবার জন্য জাহাজের টিকেট কাটার জন্য খরচ করতে বাধ্য হলেন।ফলে নিউইয়র্কে পা রাখার সময় তাঁর পকেটে একটা ফুটাকড়িও ছিল না।বোস্টন থেকে নিউইয়র্কে যাত্রা করার সময়ই তিনি জানতেন যে এই অপরিচিত অনাত্মীয় শহরে তাঁর জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে কেবল অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। সম্বল হিসেবে তিনি সঙ্গে নিয়েছিলেন কেবল একটি বন্ধুর ঠিকানা ।এখন বন্ধুর ঘর খুঁজে বের করাটাই হল তাঁর প্রথম কাজ। তার কাছ থেকে কিছু টাকা ধার হিসেবে পেলে টমাস নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করে দেখার অন্তত কিছু সময় পাবে।
পকেটে ফুটা কড়িও নেই, তাই তিনি পায়ে হেঁটে নিউইয়র্কের অপরিচিত পথে টহল দিয়ে বেড়াতে লাগলেন। অনেকক্ষণ ধরে পেটে একটুও দানা পড়েনি, ক্ষুধায় আধমরা হয়ে পড়লেন। অবশেষে তিনি বন্ধুর ঘরটি খুঁজে বের করলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে টমাস আবিষ্কার করলেন যে অনেকদিন ধরে বন্ধুটি নিজেই বেকার হয়ে বসে আছে, টমকে সাহায্য করতে পারার মতো অবস্থা তার নেই। কিন্তু বিপদে পড়া বন্ধুকে সম্পূর্ণ নিরাশ না করে টমাসকে দুই ডলার অর্থ দিয়ে সাহায্য করলেন।
দুই ডলার ধন শেষ হতে বেশি সময় লাগল না। কিন্তু টমাসের চাকরি জোগাড় করার সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থতায় পরিণত হল। তার জীবনে এই সময়টাই বোধহয় ছিল সবচেয়ে দুর্যোগের কাল। অপরিচিত শহরে তাকে আশ্রয় দেবার বা অর্থ দিয়ে সাহায্য করার কোনো মানুষ নেই। ফলে তাকে দিনের পর দিন আধ পেটা খেয়ে বা অনাহারে থাকতে হল; মুক্ত আকাশের নিচে ফুটপাতে শুতে হল। কিন্তু তা বলে তিনি হতাশায় ভেঙ্গে পড়লেন না। ক্ষুধায় দুর্বল করা ক্লান্ত শরীরটা ছেঁচড়ে নিয়ে তিনি চাকরি খুঁজে বেড়াতে লাগলেন।এভাবে ঘুরে ঘুরে তিনি একটা টেলিগ্রাফ কোম্পানির অফিস আবিষ্কার করলেন।। কোম্পানিটার নাম হল গোল্ড ইন্ডিকেটর কোম্পানি ( Gold Indicator Company)।কোম্পানির নাম থেকেই বুঝতে পারা যায় যে এই কোম্পানি সোনার বাজারের খবরাখবর রাখে। সোনার দাম প্রায় প্রতিদিনই উঠানামা করে। এমনকি দিনের ভেতরে সোনার দাম কয়েকবার উঠানামা করতে পারে। সোনার দাম কোন সময়ে কত হল সে কথা সঙ্গে সঙ্গে জানতে পারলে সোনার ব্যবসায়ীদের খুব সুবিধা হয়। টেলিগ্রাফ আবিষ্কার হওয়ার পরে মুহূর্তের ভিতর বিভিন্ন শহরে থাকা সোনার ব্যবসায়ীদের দামের উঠানামার খবর জানিয়ে দেওয়াটা সম্ভব হল। ওপরে উল্লেখ করা কোম্পানিতে ব্যবসা ছিল সেটাই। কিন্তু টেলিগ্রাফে খবর পাঠানোর জন্য তাদের বেশি মানুষের দরকার ছিল না। এই কাজের জন্য কোম্পানিতে কয়েকটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র ছিল। এই যন্ত্র গুলি সোনার দামের উঠানামার খবর নিজে থেকে সংগ্রহ করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠাতে পারত।
এর আগের একটি অধ্যায় বলা হয়েছে যে নিজেকে সাহায্য করে তাকে ভাগ্য ও সাহায্য করে। একই কথা আবার বলতে হল। টমাসের এরকমই ভাগ্য যে তিনি যেদিন এই কোম্পানিটির অফিসে উপস্থিত হলেন ঠিক সেদিনই তাদের মূল যন্ত্রটিতে কিছু একটা সমস্যা দেখা দেওয়ায় সেটি অচল হয়ে পড়ল। মূল যন্ত্র গুলি অচল হলে বাকি যন্ত্র গুলিও চলতে পারে না; ফলে কোম্পানি এত বড় লাভজনক ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হল।কোম্পানির কারিগররা অনেক সময় ধরে যন্ত্রটা ভালো করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারেনি। দুশ্চিন্তায় সবার মুখ শুকিয়ে গেল।
টমাস কিছু দূরে দাঁড়িয়ে কারিগরদের কাণ্ডকারখানা দেখছিল। জীবনে বহু বছর ধরে তার সঙ্গে টেলিগ্রাফের কারবার। নিজের হাতের তালুর মতোই টেলিগ্রাফের যন্ত্রপাতি ও তাঁর পরিচিত। কিছুক্ষণ ধরে যন্ত্রটি নিরীক্ষণ করে তিনি বুঝতে পারলেন যে সেটি ভালো করা তার পক্ষে অসম্ভব হবে না। তিনি দুপা এগিয়ে গিয়ে বললেন–’ আমাকে যন্ত্রটি পরীক্ষা করে দেখতে অনুমতি দেবেন কি? আমি বিশ্বাস করি যে আমি যন্ত্রটা ভালো করে দিতে পারব।’
টমাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করার মতো এতক্ষণ কারও সময় হয়নি।দুশ্চিন্তাগ্রস্ত প্রতিটি মানুষই ব্যস্ত হয়েছিল যন্ত্রটা নিয়ে। এখন তার কথা শুনে প্রত্যেকেই তার দিকে ঘুরে তাকাল। কী কথা বলছে মলিন পোশাক পরা এই অপরিচিত যুবকটি? কিন্তু জলে ডুবে মরতে যাওয়া মানুষ আশ্রয় হিসেবে খড়কুটো পেলেও অবজ্ঞা না করার মতোই কোম্পানির পরিচালক টমাসকে একটা সুযোগ দিতে রাজি হলেন। অবশ্য তিনি মোটেই বিশ্বাস করেননি যে কোম্পানির এত বড়ো বড়ো দক্ষ এবং অভিজ্ঞ কারিগররা করতে না পার একটা কাজ এই অজ্ঞাত কুলশীল যুবকটি করে দিতে পারবে।
কিন্তু পরিচালককে বিস্ময়ে হতবাক করে টমাস আধ ঘন্টার ও কম সময়ের মধ্যে যন্ত্রটি ভালো করে ফেলল।
না বললেও হবে যে এরপরে এল টমাসকে পুরস্কার দেবার পালা। কী পুরস্কার পেলেন তিনি? যে চাকরির জন্য টমাস এতদিন ধরে পাগলের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন সেই চাকরি অবশেষে তার হাতের মুঠোয় এল স্বর্গের উপহারের মতো। বিষ্ময়ে অভিভূত এবংকৃতজ্ঞ পরিচালক টমাসকে কোম্পানির প্রতিটি যন্ত্রের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দিয়ে উচ্চ পদে চাকরি দিলেন। বেতন– মাসে তিনশো ডলার। এত বেশি বেতনে পাওয়ার কথা বাইশ বছরের টমাস স্বপ্নেও ভাবতে পারেন নি ।
১১
মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ- সময়
টমাসের নতুন চাকরিটা তাকে যথেষ্ট টাকা দেওয়া ছাড়াও গবেষণার জন্য অফুরন্ত সময় এবং সুযোগ দিল।তাঁর প্রথম কাজ হল কোম্পানিটার টেলিগ্রাফের যন্ত্রপাতিগুলিকে অধিক উন্নত এবং কর্মক্ষম করে তোলা।তা করতে গিয়ে তাকে গবেষণা এবং সম্পরীক্ষার দ্বারা অনেক নতুন কৌশল এবং সরঞ্জাম উদ্ভাবন করতে হল।এইসমস্ত খবর টেলিগ্রাফের সঙ্গে জড়িত কারিগরি মহলে অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল,আর প্রত্যেকেই তাকে সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী বলে স্বীকার করে নিল।টমাস নিজের জন্য জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে নিয়েছিল সেই লক্ষ্যের প্রায় কাছে তিনি অবশেষে উপনীত হলেন।
চাকরি বা ব্যাবসা করে ধন রোজগার করা এবং ভোগ-বিলাসে জীবন কাটানোটাই যদি টমাসের জীবনের লক্ষ্য হত, তাহলে আমরা তাঁর জীবন চরিত লেখার বা পড়ার প্রয়োজন কখনও অনুভব করতাম না। পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ কেবল তাই করে। কিন্তু যে টমাস আলভা এডিসন একদিন বলেছিলেন যে’প্রতিভা হল একশো ভাগের এক ভাগ, বাকি নিরানব্বই ভাগই ঘর্মাক্ত পরিশ্রম’, সেই মানুষটার জীবন-চরিত আমরা পড়ি তার কৃতকার্যতার রহস্য জানার জন্য, তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা লাভ করার জন্য।
টমাসের জীবনের মূল মন্ত্র ছিল সময়ের সদ্ব্যবহার। জীবনের একটি মুহূর্তও তিনি অপচয় করেননি, একটি মুহূর্তও তিনি কাজ না করে থাকতেন না। তাঁর একজন জীবনীকার লিখে গেছেন–গোল্ড ইন্ডিকেটর কোম্পানিতে চাকরি করার সময় তিনি যখন টেলিগ্রাফ-পদ্ধতি উন্নত করার বিষয়ে গবেষণা করছিলেন, তখন তিনি একসঙ্গে পঁয়তাল্লিশটি বিভিন্ন উদ্ভাবনার ক্ষেত্রে কাজ করছিলেন। কিছুক্ষণের জন্যও বিশ্রাম না নিয়ে তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে কাজ করতে পারতেন। তাঁর শ্রম-সহিষ্ণুতা দেখে আশ্চর্য হয়ে বন্ধুরা কখনও তাকে জিজ্ঞেস করত–’তুমি যে বিন্দুমাত্র বিশ্রাম না নিয়ে একনাগাড়ে এত সময় ধরে কাজ করতে থাক,তোমার কখনও ক্লান্ত লাগে না কি? উত্তরে টমাস বলেছিল –’ক্লান্ত নিশ্চয় লাগে। কিন্তু একটা কাজ করে ক্লান্ত লাগলেই আমি অন্য কাজে হাত দিই।’ঠিক এই জন্য তিনি একই সঙ্গে পঁয়তাল্লিশটি ভিন্ন উদ্ভাবনের কাজ করতে পারতেন।
টমাস যখন বলেছিল যে একটা কাজ করে ক্লান্ত লাগলে তিনি অন্য একটি কাজে হাত দেন, তখন তিনি নিশ্চয়ই জানতেন না যে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল ও ঠিক সেই একই কথা বলেছিলেন। সমস্ত বড়ো বা মহৎ মানুষ যে একইভাবে চিন্তা করে এবং একই কথা চিন্তা করে–এটা তারই প্রমাণ। এরিস্টটল বলেছিলেন যে একটা কাজ করে ক্লান্ত মনে হলে শুয়ে বসে বিশ্রাম নেওয়ার পরিবর্তে অন্য একটি কাজে হাত দেওয়াটাই হল বিশ্রাম নেওয়ার সর্বোত্তম উপায়।
টমাস টেলিগ্রাফ উন্নত করার জন্য নানা গবেষণা করে থাকার সময়ই একদিন একটি নতুন চিন্তা তাঁর মনে এল। টেলিগ্রাফে টক টক শব্দ করে যে সমস্ত সাংকেতিক বার্তা আসে সেইসব শুনে এবং তার অর্থ উদ্ধার করে কাগজে লিখে রাখতে হয়। কিন্তু এরকম একটি উপায় উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে কি–যার সাহায্যে টেলিগ্রাফ লাইন থেকে কথাটা আপনা আপনি কাগজে ছাপা হয়ে যাবে?
একবার এই চিন্তাটা মনে আসার পরে শয়নে-স্বপ্নে তিনি সেই একই কথা চিন্তা করতে থাকলেন।এই অবস্থা চলতে থাকার সময় তিনি একদিন কোনো এক জায়গায় যাওয়ার উদ্দেশে রেল স্টেশনে গেলেন।স্টেশনে উপস্থিত হয়ে তিনি জানতে পারলেন যে ট্রেন একঘণ্টা দেরি করে চলছে।অর্থাৎ তাকে একঘণ্টা স্টেশনে অপেক্ষা করতে হবে।
সমগ্র পৃ্থিবীর কোটি কোটি মানুষের এটা একটি সাধারণ অভিজ্ঞতা।ট্রেন দেরি হওয়ার জন্য মানুষকে যখন স্টেশনে অপেক্ষা করতে হয়,তখন মানুষের বিরক্তির সীমা থাকে না।সময় যেন আর যেতে চায় না।স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করে থাকা মানেই সময়ের অপচয়।
কাজের খোঁজে এডিসনকে এক মুহূর্তও নষ্ট করতে হল না,কারণ টেলিগ্রাফ লাইন থেকে সোজাসুজি শব্দ ছাপা করার কৌশল উদ্ভাবনের চিন্তা গত কয়েকদিন ধরে এক মুহূর্তের জন্যও তাঁর মস্তিষ্ক থেকে বেরিয়ে যায় নি।এখন প্লেটফর্মে বেকার দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে এক জায়গায় বসে সেই সমস্যাটার সমাধানের উপায়ের খোঁজে সময়ের সদ্ব্যবহার করবেন বলে ভাবলেন।হাতে কাগজ কলম নিয়ে তিনি এক জায়গায় বসে পড়লেন।
এখানে এডিসনকে কিছুক্ষণের জন্য একা ছেড়ে দিয়ে আমরা প্রায় বাইশ শ বছর আগের একজন গ্রিক বৈজ্ঞানিকের কাছে যাই চলুন।
তাঁর নাম আর্কিমিডিস।
সিরাকিউজের রাজা হিয়েরোও একবার একজন স্বর্ণকারের কাছ থেকে একটি বিশুদ্ধ সোনার মোহর কিনলেন।মোহরটা কেনার পরে তাঁর মনে সন্দেহ হতে লাগল যে সোনা তাঁর ভাবানুসারে বিশুদ্ধ না হতেও পারে।সোনার সঙ্গে কিছু একটা নিকৃ্ষ্ট ধাতু মিশ্রিত করা হয়েছে বলে তিনি সন্দেহ করলেন,কিন্তু সেকথা কীভাবে প্রমাণ করা যেতে পারে?
সিরাকিউজের একজন নাগরিক আর্কিমিডিস ছিলেন সেই সময়ের সবচেয়ে বড়ো বৈজ্ঞানিক এবং গণিতজ্ঞ।রাজা সোনার বিশুদ্ধতা পরীক্ষার দায়িত্ব দিলেন আর্কিমিডিসকে।দায়িত্ব গ্রহণ করার মুহূর্ত থেকে কথাটা এক মুহূর্তের জন্যও আর্কিমিডিস ভুলতে পারলেন না।কথাটা তাঁর মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল।সমস্যাটার কীভাবে সমাধান করা যায় তিনি কেবল তাই চিন্তা করতে লাগলেন।একদিন তিনি সেই চিন্তাটা মাথায় নিয়েই শহরের জনগণের স্নানাগারে স্নান করতে ঢুকলেন।কাপড়-চোপড় খুলে নগ্ন হয়ে জলের চৌবাচ্চায় বসে পড়লেন।স্বভাবিকভাবেই চৌবাচ্চার আশেপাশে কিছু জল উপচে পড়ল।এটা দেখেই আর্কিমিডিস ইউরেকা,ইউরেকা (পেয়েছি,পেয়েছি)বলে চিৎকার করে বাড়ির উদ্দেশে ছুটতে লাগলেন।উত্তেজনার বশে কাপড়-চোপড় পরার কথা সম্পূর্ণ ভুলে গেলেন।শহরের মানুষ বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে দেখল –শহরের সবচেয়ে বিদ্বান এবং শ্রদ্ধেয় মানুষটি সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে দৌড়াতে শুরু করেছে আর মাঝে মাঝে চিৎকার করে বলছে –ইউরেকা ,ইউরেকা।
প্রাচীন জগতের মহান বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস নতুন আবিষ্কারের উত্তেজনায় উলঙ্গ হয়ে রাজপথ দিয়ে দৌড়ে যাবার দৃশ্যটি যুগ যুগ ধরে মানুষের কল্পনাকে এভাবে আলোড়িত করেছে যে গত বাইশ শতিকার ভেতরে এই কাহিনিটি অসংখ্যবার বলা হয়েছে,ভবিষ্যতেও নিশ্চয় বলা হবে।
টমাস আলভা এডিসন আর্কিমিডিসের মতো ইউরেকা ইউরেকা বলে চিৎকার করে বাড়ির উদ্দেশে দৌড়াতে শুরু না করলেও তাঁর ক্ষেত্রেও প্রায় একই ঘটনা ঘটেছিল।কাগজ-কলম নিয়ে চিন্তা করতে বসার কয়েক মুহূর্তের মধ্যে হঠাৎ একটা নতুন চিন্তা তাঁর মগজের মধ্য দিয়ে বিদ্যুতের মতো ঢেউ খেলে গেল।বিজলি বাতির সূইচ টিপে দিলে হঠাৎ যেভাবে অন্ধকার ঘর আলোকিত হয়ে উঠে এবং ঘরটিতে থাকা সমস্ত জিনিস স্পষ্টভাবে দেখা যায়,ঠিক তেমনই এডিসনের মগজে একটা আলো জ্বলে উঠল এবং তাঁর আলোতে তিনি এতদিন চিন্তা করতে থাকা সমস্যাটার সমাধান দেখতে পেলেন।তিনি তৎক্ষণাত হাত দিয়ে ধরে থাকা কাগজের টুকরোয় তাঁর কল্পনার যন্ত্রটার ছবি আঁকতে লাগলেন।ছবি আঁকার সময়ই ট্রেইনটা দীর্ঘ হুইসেল দিয়ে স্টেশনে প্রবেশ করার কথা ঘোষণা করা হল।কিন্তু এডিসনের কানে সেই শব্দ পৌছাল না।তাঁর যে ট্রেনে উঠে কোনো এক জায়গায় যাবার কথা ছিল সে কথাও তিনি সম্পূর্ণ ভুলে গেলেন।তাঁর সমস্ত মন জুড়ে এখন একটাই চিন্তা-যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রিন্টিং মেশিনটার কাজ শুরু করতে হবে।তিনি দ্রুত বাড়ির উদ্দেশে এগোতে লাগলেন।
(ক্রমশ)
লেখক পরিচিতি-১৯৩২ সনে লক্ষ্মীমপুর জেলার ঢকুয়াখনায় হোমেন বরগোহাঞির জন্ম হয়। ১৯৫৪ সনে কটন কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যের স্নাতক। সাময়িকভাবে সরকারি চাকরি করে সাহিত্যচর্চা এবং পরবর্তীকালে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। ‘নীলাচল’, ‘জনক্রান্তি’, ‘নাগরিক’,’অসম বাণী’ইত্যাদি কাগজের সম্পাদনা করেন। ‘পিতাপুত্র’ উপন্যাসের জন্য ১৯৭৭ সনে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। ‘আত্মানুসন্ধান’,‘বিভিন্ন নরক’,‘সুবালা’, ‘মৎস্য গন্ধা’, ‘সাউদর পুতেকে নাও মেলি যায়’ লেখকের অন্যতম গ্রন্থ। লেখকের ছোট গল্প উপন্যাস প্রবন্ধ এবং আত্মজীবনী মূলক রচনা অসমিয়া সাহিত্যকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করে তুলেছে। ১২ মে ২০২১ সনে এই মহান লেখকের মৃত্যু হয়।
অনুবাদক পরিচিতি- ১৯৫৮ সনে অসমের নগাঁও জেলার যমুনামুখে বাসুদেব দাসের জন্ম হয়।১৯৮২ সনে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও ভাষাতত্ত্বে এম এ করেন। আজ পর্যন্ত অসমিয়া অনূদিত গল্পের সংখ্যা পাঁচশত কুড়িটির ও বেশি।সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে নিয়মিত ভাবে অসমিয়া গল্প,কবিতা,প্রবন্ধ এবং উপন্যাস অনুবাদ করে চলেছেন।গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপরিচিত সংস্থা NEINADএর পক্ষ থেকে অসমিয়া ভাষা-সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের জন্য Distinguished Life Membership এর দ্বারা সম্মানিত করা হয়।প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা চুয়াল্লিশটি।হোমেন বরগোহাঞির অসমিয়া উপন্যাস ‘সাউদর পুতেকে নাও মেলি যায়’(সওদাগরের পুত্র নৌকা বেয়ে যায়) বাংলা অনুবাদের জন্য ২০২৪ সনের সাহিত্য আকাদেমি অনুবাদ পুরস্কারে সম্মানিত হন।
অনুবাদক পরিচিতি- ১৯৫৮ সনে অসমের নগাঁও জেলার যমুনামুখে বাসুদেব দাসের জন্ম হয়।১৯৮২ সনে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও ভাষাতত্ত্বে এম এ করেন। আজ পর্যন্ত অসমিয়া অনূদিত গল্পের সংখ্যা পাঁচশত কুড়িটির ও বেশি।সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে নিয়মিত ভাবে অসমিয়া গল্প,কবিতা,প্রবন্ধ এবং উপন্যাস অনুবাদ করে চলেছেন।গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপরিচিত সংস্থা NEINADএর পক্ষ থেকে অসমিয়া ভাষা-সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের জন্য Distinguished Life Membership এর দ্বারা সম্মানিত করা হয়।প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা চুয়াল্লিশটি।হোমেন বরগোহাঞির অসমিয়া উপন্যাস ‘সাউদর পুতেকে নাও মেলি যায়’(সওদাগরের পুত্র নৌকা বেয়ে যায়) বাংলা অনুবাদের জন্য ২০২৪ সনের সাহিত্য আকাদেমি অনুবাদ পুরস্কারে সম্মানিত হন।
CATEGORIES প্রবন্ধ

