
হেমন্ত দিভতে-এর কবিতা
অনুবাদ : সায়ন রায়
কবি পরিচিতি : মারাঠি কবি হেমন্ত দিভতে একইসঙ্গে সম্পাদক, প্রকাশক এবং অনুবাদক। দীর্ঘ পনের বছর ধরে সম্পাদনা করেছেন ‘অভিধানান্তর’ নামে কবিতার কাগজ যা নব্বই পরবর্তী কবিদের একটি জোরালো প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছিল। তাঁর ছয়টি কবিতার বই আছে। তাঁর কবিতা অনূদিত হয়েছে ফরাসি,ইতালীয়,স্লোভাক,জাপানি,ফার্সি,মালতিজ,
সার্বিয়ান,স্লোভেনিয়ান,গ্রিক এবং হিন্দিসহ বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায়। স্প্যানিশ, আইরিশ,আরবি,জার্মান এবং এস্তোনিয়ান ভাষায় তাঁর একটি করে কবিতার বই আছে। ইংরেজিতে অনূদিত কবিতার বইয়ের সংখ্যা চার। সারা পৃথিবী জুড়ে বহু আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসবে তিনি যোগ দিয়েছেন। তাঁর ‘পোয়েট্রিওয়ালা’ সংস্থা থেকে একশোরও বেশি কবিতার বই প্রকাশ করেছেন। বর্তমানে তিনি মুম্বইতে বসবাস করেন।
প্রজাপতি
আমার আবাসনের বাগানে এলোমেলো ঘুরতে ঘুরতে,
এক বন্ধুকে আমি এমনিই বলেছিলাম :
আজকাল সেই ছোট্ট পরিচিত হলুদ
প্রজাপতিগুলোকে দেখতে পাই না আর।
উত্তরে সে নির্বিকারভাবে জানিয়েছিল :
ওই ব্র্যান্ডটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ।
নাভিহীন একটি মানুষ
অস্বীকার একধরনের উত্থান ও পতনময় উপশম
যা নিজের ঢাক বাজিয়ে চলেছে
এবং
স্মৃতির ভ্রূণ অনন্তকাল ধরে বেড়ে উঠছে
তোমার জন্য আমি কত অপেক্ষা করব ?
আমার হাতের ফুলগুলি নিমজ্জিত হয়েছে আমার চোখে
এখন আমি যখন ব্যথাদীর্ণ অনুপস্থিতির জানালা খুলি
ভেতরে দেখার জন্য, আমি কী দেখব
নিষ্ফল, শীর্ণ শব্দগুলোর
চলৎশক্তিহীন দেহ ছাড়া
কোন হাসপাতালে আমি যাব ?
হারামজাদা এই গোটা পৃথিবীটাই হারিয়ে ফেলেছে তার নাভি
এখন আমি অনুভব করি না
কাউকে আমি আর ভালোবাসি
আমি তাদের ঘৃণাও করতে পারি না
আর সেইজন্যই আমি ঝেড়ে ফেলি
তার স্পর্শগ্রাহ্য লিপি
স্তন থেকে নাভি পর্যন্ত বাধাহীন উচ্ছ্বাসে মর্মরিত কবিতা
এখন আমাকে আরেকটু দূরে হেঁটে যেতে হবে
সেই শহরে পৌঁছোতে হবে যা তার নয়
সেখানে আমি আমার মনের এইডস সারাব
আমার চিন্তার মধ্যে গর্ত করা হবে
আর সেইসব গর্তগুলোতে লাগিয়ে দেওয়া হবে স্ক্রু
কিন্তু এখন আমি প্রতিজ্ঞা করছি
আর কাউকে একেবারেই মনে না রাখার
এখন চাঁদকে কাপড়ে মুড়িয়ে একটা নিমগাছের নীচে পুঁতে ফেলা দরকার
যেমনভাবে আমরা সদ্যোজাত শিশুর নাড়ি মাটিতে পুঁতে দিই
অভিবাদন
সিগারেটের ছাইয়ের
মতো আমরা
বি-চ্ছি-ন্ন হয়ে যাই
নিজেদের থেকে
আমাদের চেতনা
শ্বাসরুদ্ধ হয়
ছাইদানিতে
তখন অনিশ্চিতভাবে
আমরা উপলব্ধি করি
বাস করছি এক শূ-ন্য-তা-য়
স্বপ্ন ও বাস্তবের মধ্যে
সেই কারণেই
আমার মনের মধ্যে রয়েছে
একটি অভিবাদন
কিন্তু আমি পারছি না
তোমাকে তা পাঠাতে
পিঁপড়ে : লাল ও কালো
পিঁপড়েরা ফিসফিস করে একে অন্যের কানে
তাদের কাজ নিয়ে নিরন্তর।
সম্ভবত তারা একে অন্যকে সাবধান করে সামনে থাকা একফুট চওড়া মহাসমুদ্র সম্বন্ধে,
অথবা দেড় ইঞ্চি উঁচু পাহাড় সম্বন্ধে যা তাদের পেরোতে হবে,
অথবা কোনো আহাম্মক কৌশল সম্বন্ধে যা এক নিষ্ঠুর মানুষ তাদের ওপর প্রয়োগ করে
তাদের পথে নুন ছিটিয়ে দিয়ে।
পিঁপড়েদের ক্ষোভ রয়েছে এইসব দৈত্য,জঘন্য মানুষদের বিরুদ্ধে
কারণ তারা বিধান দিয়েছে কেবল লাল পিঁপড়েদেরই মারা হবে
যখন কালো পিঁপড়েদের প্রতি তাদের অনুগ্রহ ঝরে পড়ে।
মনে হয় তাদের বর্ণবিদ্বেষী মনোভাব পিঁপড়েদের প্রতিও রয়েছে।
আমরা লাল পিঁপড়েরা দয়ামায়ারহিত নই,
কখনো কি আমরা ঘুমন্ত শিশুকে কামড়াই ?
কেবল যখনই কেউ অপ্রত্যাশিতভাবে আমাদের পিঁপড়ের ঢিবিতে চলে আসে
আমরা মাথা ঠিক রাখতে পারি না
মানুষেরা জানে না কতটা ধূর্ত ওই কালো পিঁপড়েগুলো হতে পারে–
যদি কেউ তাদের রাস্তায় চলে আসে, তারা তার কানে ঢুকে যায়
আর সীমাহীনভাবে সুড়সুড়ি দিতে থাকে,পুরোপুরি অসহায় করে ছেড়ে দেয় তাদের
যারা ভয় দেখায়।
কেবল মানুষেরাই মুখ লুকোয় কিছু বলতে না পেরে
যখন মুখোমুখি হয় প্রতিকূলতার।
মোদি লিপি
এবং এখন আমরা আঘাতপ্রাপ্ত
এমন এক সময়ের দ্বারা
যার ছোট্ট, তীব্র লাথি
খুব শীঘ্রই উপলব্ধি করবে সকল ভাষার কবিরা।
সম্ভবত
একমাত্র সন্তুষ্টি হবে এটা দেখে
পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া এই নৃশংস অগ্নিকাণ্ডে
কারা আঁকড়ে থাকতে পারে তাদের নিজস্ব ভাষা
এক কাব্যিক জালের ভিতর।
অনুবাদক পরিচিতি : সায়ন রায়ের জন্ম ১৯৭৭-এ। পেশা শিক্ষকতা।বিষয় ইংরেজি। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মহামানবের পোশাক’ প্রকাশিত হয় ২০০০ সালে ‘কবিতাপাক্ষিক’ থেকে।এখনও পর্যন্ত কবিতার বইয়ের সংখ্যা সাত। পেয়েছেন ‘শব্দসিঁড়ি’ পত্রিকা প্রদত্ত ‘সুভাষ মুখোপাধ্যায় স্মারক সম্মান’। মৌলিক লেখার পাশাপাশি অনুবাদ করেন নিয়মিত। সম্পাদনা করেন ‘গুহালিপি’ নামের একটি কবিতা বিষয়ক পত্রিকা।একমাত্র গদ্যের বই An Endless Journey : Revisiting Goutam Ghose Cinema । অনুবাদ করেছেন নাসিম শাফায় সহ অন্যান্য কাশ্মীরি কবিদের কবিতা। আমির খসরুর কবিতা, ইবনে আল আরাবির কবিতা, তুরস্কের কবি বেজান মাতুর, সিরিয়ার কবি রাশা ওমরান-এর কবিতা।