হারানো শব্দের অভিধান <br /> রঞ্জিতা চট্টোপাধ্যায় 

হারানো শব্দের অভিধান
রঞ্জিতা চট্টোপাধ্যায় 

“Some words are more than letters on a page, don’t you think? They have shape and texture. They are like bullets, full of energy, and when you give one breath you can feel its sharp edge against your lip.”
ইংলন্ডের অক্সফোর্ড শহরের একটি বাড়ী। তার পিছনদিকের  বাগানে ছোট্ট এক কুটির। বাইরে থেকে দেখতে তেমন আহামরি কিছু নয়। সাধারণত এই ধরণের কুটিরে বাগান করার জন্যে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিই থাকে -গাঁইতি , শাবল , নিড়ানি ইত্যাদি। কিন্তু এই কুটির ব্যতিক্রম। এখানে সংগৃহীত হতে থাকে শব্দ।  পোস্টকার্ডের মাপের এক একটা কাগজ। তাতে  লেখা ইংরাজী শব্দ  আর সেই শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে এমন একটি বাক্য। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে  এইরকম কাগজের টুকরো নিয়ত আসতে থাকছে  এখানে। কারণ এই কুটির আসলে শব্দঘর (scriptorium ).  Dr  James Murray আর তাঁর সহকর্মীরা মিলে এক মহা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন এই   শব্দঘরে। প্রকাশিত হতে চলেছে Oxford English Dictionary র প্রথম খণ্ড। ১৭৫৫ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়েছে স্যামুয়েল জনসনের অভিধান। ইংরাজী ভাষার বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেই অভিধানের  উত্তরাধিকারীর প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।  তারই কাজ চলছে পুরোদমে।  প্রথম খণ্ডে জায়গা পেয়েছে ইংরাজী বর্ণমালার প্রথম দুটি অক্ষর দিয়ে শুরু হওয়া শব্দগুলি।  আর তাতেই  লেগেছে   চল্লিশটি বছর।
মাতৃহীন ছোট্ট মেয়ে Esme বাবার হাত ধরে রোজ আসে এই শব্দঘরে । কাজের সময় চুপটি করে বসে থাকে টেবিলের নিচে। তার বাবা, হ্যারি ,  Dr Murray র সহকারী একজন অভিধানবিদ।  শব্দ আর তার অর্থ নিয়ে ছোট্ট মেয়েটির  মনে অফুরন্ত কৌতূহল।  শব্দ ঘিরেই তার জগৎ। আসাযাওয়ার পথে সে বাবাকে প্রশ্ন করে ,”  আচ্ছা বাবা ,তুমি আর Dr Murray দুজনে মিলে যে শব্দের যে মানে ঠিক করে দেবে চিরকাল ধরে সেটাই থেকে যাবে ?”
“দূর বোকা মেয়ে ! তা কেন ? আমাদের কাজ হল সকলের মতামত জানা।  বইপত্র ঘেঁটে দেখা কোন একটা নির্দিষ্ট শব্দ কোন বইতে কি অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। তারপর সেই শব্দটার একটা গ্রহণযোগ্য অর্থ  আমরা  স্থির  করি।  অভিধানে সেই অর্থটাই তখন লেখা হয় । “
“কি করে স্থির কর বাবা কোন শব্দের কোন মানেটা সঠিক ? সবাইকে  জনে জনে  জিজ্ঞাসা করে ?”
“না। আমরা সব বই ঘেঁটে দেখি যে! “
“বই কারা লেখে বাবা ?”
“অনেকেই লেখেন।  তবে আর প্রশ্ন নয় Esme .এবারে চুপ করে দেখো গাছে কি সুন্দর ফুল ফুটেছে। “
তখনকার মতো Esme চুপ করে যায়।  কিন্তু তার শব্দ আর শব্দের অর্থসন্ধান থেমে থাকে না।
আর  Esme র এই খোঁজের  সূত্র ধরেই লেখা  হয় একটি অনবদ্য উপন্যাস ,- The Dictionary Of Lost Words . হারিয়ে যাওয়া শব্দের আবার অভিধান হয় নাকি ? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে পাঠককে হাতে তুলে নিতে হবে Pip Williams এর এই বইটি।  শব্দের অর্থ কি নারী পুরুষ ভেদে ভিন্ন হয়ে যায় ? তাই যদি হয় তাহলে শব্দের অভিধানগত অর্থ খুঁজতে গিয়ে কি হারিয়ে যাচ্ছে তাদের অন্তর্নিহিত সুর ? লেখকের নিজের কথায়   এমন দুটি সাধারণ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই  লেখা হয়েছে এই কাহিনী। অভিধানে জায়গা পাচ্ছে না যেসব শব্দ তাদের তালিকা তৈরী করতে গিয়ে লেখা হয়ে গেছে ঐতিহাসিক সত্যের আড়ালে হারিয়ে যাওয়া এক কাহিনী।  গল্পের  প্রধান চরিত্র Esme র হাতে একদিন উড়ে এসে পড়ে  একটি কাগজের টুকরো। তাতে একটিমাত্র শব্দ লেখা।  বিশেষ ভাবনা চিন্তা না করেই সে সেই কাগজের টুকরোটি তুলে রাখে বাড়ীর পরিচারিকা Lizzie র ঘরে।  একটি তালাবন্ধ ট্রাঙ্কের ভিতর।
বেগুনী চোখের যুবক compositor কথায় কথায় একদিন তাকে বলে , ‘a real word is one that is said out loud and means something to someone. Not all of them find their way to a page .’ এ কথায়  Esme কে ভাবায়।  তার সংশয় হয় গভীরতর।  সব শব্দ যে অভিধানে জায়গা পায় এমনটা মোটেই নয়।  বিশেষ কিছু শব্দ  কি করে যেন বাদ পড়ে যায় । ধীরে ধীরে ব্যাপারটা স্পষ্ট হয় Esme র কাছে।  প্রয়াত মায়ের বন্ধু Edith এর চিঠিতেও সমর্থন থাকে Esme র ভাবনার।  তার আশঙ্কা নেহাৎ অমূলক নয়। “Your concern that some types of words, or words used by some types of people will be lost to the future is really quite perceptive ….all words are not equal.” পাছে চিরকালের মতো হারিয়ে যায় তাই Lizzie র মুখে শোনা ‘knacaered ‘ কথাটি লিখে রাখে Esme . Lizzie কে অনুরোধ জানায় একটি বাক্যে কথাটি ব্যবহার করতে। তারপর সেই শব্দ আর বাক্য একটা কাগজে লিখে সে যোগ করে তার নিজস্ব সংগ্রহ তালিকায়।  এ শব্দের প্রকৃত মানে বুঝতে পারবে Lizzie আর  তার মতো অন্যান্যরা।  সাধারণ ভাবে পরিশ্রান্ত বা ক্লান্ত বলতে যা বোঝায় তার থেকে এ কথার মানে আলাদা।
“I get up before dawn to make sure everyone in the big house will be warm and fed when they wake, and I don’t go to sleep till they is snoring. I feel knackered half the time, like a owrn out horse. No good for nothing.”  Lizzie Lester , 1902
অভিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে না এমন আরও সব সংগ্রহের আশায় সে লুকিয়ে  যেতে শুরু করে স্থানীয় বাজারে। কাগজ , পেন্সিল সঙ্গে নিয়ে।  সেখানে তার আলাপ হয় জরাজীর্ণ বৃদ্ধা Mabel এর সঙ্গে।  তার কাশির দমকে উঠে আসে দলা দলা শ্লেষ্মা।  আর Esme র শব্দভাণ্ডারে জমা হতে থাকে  latchkeyed, cunt, fuck আর  dollymop এর মতো শব্দ। নারীশরীর ও মেয়েদের শব্দ। যেসব শব্দ Dr Murray ও তাঁর সহযোগীদের সম্পাদিত Dictionary তে পাওয়া যাবে না।
 লোকচক্ষুর অন্তরালে সমৃদ্ধ হতে থাকে তার শব্দভাণ্ডার।   Oxford English Dictionary প্রকাশের কাজে  অক্লান্তভাবে সাহায্য করার পাশাপাশি সে সমান উদ্যমে করে চলে অন্য একটি কাজ।  লোকমুখে, বিশেষত সমাজের তথাকথিত নিম্নশ্রেণীর মহিলাদের মুখেমুখে ফেরা কথা আর সেসব কথার মানে লিখে রাখতে থাকে সে।  প্যামফ্লেট বা নির্দেশ পুস্তিকায় লেখা শব্দও  জায়গা করে নিচ্ছে অভিধানে।  যোগ হচ্ছে  ওষুধের শিশির গায়ে লেখা শব্দও।  কিন্তু  হারিয়ে যেতে বসেছে বেশ কিছু শব্দ।  হেমন্তের ঝরা পাতার মতো।  ভাষার ইতিহাস এবং সেই ভাষাভাষী মানুষের ইতিহাসও অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি  সেসব শব্দ বিলীন হয়ে যায় বিস্মৃতির অতলে।  অভিধানে জায়গা করে নিতে গেলে শব্দ ব্যবহারের লিখিত প্রমাণ চাই।  Esme তাই  গোপনে তার শব্দ সংগ্রহের কাজ চালাতে থাকে।  Esme র এই শব্দ সংগ্রহের প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে  Pip Williams  শব্দের লিঙ্গবৈষম্যের ও শ্রেণীবৈষম্যের প্রতি  পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ  করেছেন সুকৌশলে। আশ্চর্য্য হয়ে পাঠক লক্ষ করে যে সামাজিক  বৈষম্যের প্রতিফলন অভিধানের শব্দ চয়নেও।
সেইসঙ্গে তিনি  তুলে ধরেছেন অভিধানের অন্যান্য  সীমাবদ্ধতা।  শব্দের বর্ণ গন্ধ ফুটে ওঠে না অভিধানে লিপিবদ্ধ অর্থে।  তাই অভিধান কখনোই পর্যাপ্ত নয়। “Words are like stories….They change as they are passed from mouth to mouth ; their meanings stretch or truncate to fit what needs to be said. The dictionary can’t capture every variation….” উপন্যাসের কাহিনীর ঘটনাবলীর প্রেক্ষাপটে আছে মহিলাদের ভোটাধিকার আন্দোলন। তাদের সংস্পর্শে এসে Esme বুঝতে পারে ‘sister ‘ শব্দটি comrade অর্থে ব্যবহৃত হয়। বহু ব্যবহৃত ‘mother ‘ শব্দটিও দ্বন্দ্ব জাগায় তার মনে। যাঁরা মৃত সন্তানের জন্ম দিয়েছেন বা জন্মানোর পরেই সন্তানকে তুলে দিয়েছেন দত্তক পিতামাতার হাতে তাঁরাও মা। কিন্তু মা কথাটির  অভিধানগত  সংজ্ঞা বিভ্রান্তি তৈরী করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিকায় সে আরও আবিষ্কার করে যে ‘Loss ‘ শব্দটির অন্তর্নিহিত বেদনা প্রকাশ করার জন্যে কোন অভিধানই পর্যাপ্ত নয়। “Sorry for your loss, they say. And I want to know what they mean , because its not just my boys I’ve lost. I’ve lost my motherhood , my chance to be a grandmother. I’ve lost the easy conversation of neighbors and the comfort of family in my old age. Every day I wake to some new loss that I hadn’t thought of before, and I know that soon it will be my mind.” যুদ্ধে  সন্তানহারান  মা Vivienne এর অভিজ্ঞতায় ‘loss ‘ এর যন্ত্রণাক্লিষ্ট  যে ছবি ফুটে উঠেছে কোন অভিধান তা ধরে রাখতে পারে না।
The Dictionary Of Lost Words -উপন্যাসের নামকরণেই পাঠকের কৌতূহলের উদ্রেক হয়। তারপর সে কৌতূহল ধরে রাখেন লেখক শেষ পর্যন্ত।  Esme র বেড়ে ওঠা , তার জীবনের নানা ঘটনা ও ঘাত  প্রতিঘাত  , তার আনন্দ আর বিষাদের মূহূর্তগুলির সঙ্গে একত্মতা বোধ করেন পাঠক।  কখন যেন Esme , Lizzie , Tilda রা হয়ে ওঠে কাছের মানুষ। ৩৮৩ পাতার বইতে ধরা হয়ে যায় একশো বছরেরও বেশী সময়কাল  ১৮৮২-১৯৮৯। England তথা পৃথবীর রাজনৈতিক ও সামাজিক  ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় সেটা। মেয়েদের ভোটাধিকার আন্দোলন চলছে জোরদার। প্রথাগতভাবে না হলেও সে আন্দোলনের অংশীদার হয় Esme .  প্রথম বিশ্বযুদ্ধের করাল ছায়া পশ্চাৎপটে। এরই মধ্যে চলেছে Oxford English Dictionary র কাজ। একটা ভাষার ইতিহাসের  গতিপথের  সমান্তরালে আঁকা হয়ে যায় সে সময়ের সমাজচিত্র। Oxford English Dictionary র কাজে মেয়েদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা জানতে পারি আমরা।  ঐতিহাসিক সত্যকে অবলম্বন করে লেখা এই উপন্যাস শুধু  ইতিহাসে সীমাবদ্ধ থাকে না।  ইংরাজী ভাষার রঙ্গীন  ইতিহাস তো বটেই , উপন্যাসের বিষয়বস্তুর মধ্যে বোনা হয়ে যায় নারীবাদ ও  একক অভিভাবকত্বের মতো আধুনিক  বিষয়গুলিও।  Pip Willliams এর বইয়ের নারীবাদ কিন্তু পুরুষবিদ্বেষী নারীবাদ নয়।  Esme র বাবা Harry , Dr Murray , Gareth প্রভৃতি পুরুষ  চরিত্রগুলি  যথেষ্ট সহমর্মিতার সঙ্গে এঁকেছেন লেখক।  ইতিহাস , ভাষার বিবর্তন , যুদ্ধের বিধ্বংসী রূপ , সমাজের নানা বৈষম্য -এইসব ভারী বিষয় উপজীব্য হলেও লেখার প্রসাদগুণ অক্ষুন্ন থাকে আগাগোড়া। আর এখানেই বিশেষত্ব The Dictionary Of Lost Words বইটির।
বইয়ের সুদৃশ্য প্রচ্ছদের ওপর লেখা আছে এই সময়ের একজন উল্লেখযোগ্য কাহিনীকার Geraldine Brooks এর মন্তব্য -“A marvelous novel ….timely and timeless .” বইটি শেষ পর্যন্ত পড়ে দ্বিমত হতে পারলাম না। একইসঙ্গে এই সময়ের আবার চিরকালীন হয়ে ওঠার কঠিন কাজটি সুচারুভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন ঔপন্যাসিক। এখনো যদি না পড়া হয়ে থাকে আগামী বছরে পড়ার তালিকায় এ বই যোগ করার অনুরোধ রইল বইপ্রেমীদের কাছে।
CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (3)
  • comment-avatar
    অনিমেষ 3 years

    রঞ্জিতা একটি অসাধারন রিভিউ লিখেছেন।ভালো লাগা বইকে কিকরে পাঠকের দরজায় আনতে হয়,সেই কৌশল তাঁর আছে। ভালো লেখা ভালো খাবারের মত। খিদে কে ভাটয়েদেউ। আরো হোজ

  • comment-avatar
    ইন্দ্রাণী দত্ত 3 years

    ব‌ইটি পড়ে, অজ্ঞানী পাঠকের সামনে অনন্য বিষয়টি সুচারুরূপে পরিবেশনের জন্য রঞ্জিতাকে কুর্ণিশ। এই
    প্রাঞ্জল অথচ গভীর আলোচনায় ব‌ইটি সংগ্ৰহ করার‌ আন্তরিক বাসনা জাগে।

  • comment-avatar
    Rumki 3 years

    Nicely written and explicitly described. It seems to me that the writer herself likes words, like each word is an entity of it’s own; a living breathing entity and can be perceived by all five human senses (okay add the 6th one too!) Will borrow the book from local library soon.
    Thanks Ranjita

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes