
সাম্যবাদী ইস্তাহারের শৈলী প্রসঙ্গে উমবের্তো একো
অনুবাদ – অনুপ সেনগুপ্ত
ইতালির লেখক বললেই যদি ঝামেলা মিটে যেত – কিন্তু উমবের্তো একোর (১৯৩২ – ২০১৬) লেখালিখির দিগ্বিদিক এত বিচিত্রগামী, দু-একটা পরিচয়জ্ঞাপক শব্দে তাঁকে মাপা মুশকিল, বরং বলা স্বস্তিদায়ক একইসঙ্গে তিনি ছিলেন ঔপন্যাসিক, চিহ্নবিজ্ঞানী, সাহিত্য ও শিল্পের সমালোচক, অধুনান্তিক নন্দনতত্ত্বের অন্যতম রূপকার, আবার মধ্যযুগীয় সাহিত্য ও দর্শনের বিশেষজ্ঞ। কমিক্স স্ট্রিপ, জেমস বন্ড, সুপারম্যান, পপ গান, সিনেমা, টেলিভিশন অনুষ্ঠান – এসব নিয়ে লিখতেও এই ‘সেমিওলজিকল গেরিলা’র আগ্রহ কিছু কম ছিল না। কিন্তু যা-ই লিখুন – পাণ্ডিত্য, ইতিহাসবোধ ও কল্পনাপ্রতিভার সঙ্গে অনেকক্ষেত্রেই বহুস্তরী ব্যঞ্জনা ও আন্তর্বয়ান, কখনও-বা চোরা হিউমর মিশে থাকে এই ককটেলে। তাঁর রচনার বিপুল সম্ভারের মধ্যে কয়েকটি উপন্যাস – ‘দ্য নেম অব দ্য রোজ়’, ‘ফুকোস পেন্ডুলাম’, ‘দি আইল্যান্ড অব দ্য ডে বিফোর’, ‘বাউদোলিনো’, ‘দ্য মিসটেরিয়াস ফ্লেম অব কুইন লোয়ানা’, ‘দ্য প্রাগ সিমেট্রি’। অন্যান্য রচনা – ‘দি ওপেন ওয়ার্ক’, ‘ট্রাভেলস ইন হাইপাররিয়ালিটি’, ‘অন বিউটি’, ‘সেমিওটিক্স অ্যান্ড দ্য ফিলোসফি অব ল্যাংগুয়েজ’, ‘রোল অব দ্য রিভার’, ‘ইন্টারপ্রিটেশন অ্যান্ড ওভারইন্টারপ্রিটেশন’, ‘সিক্স ওয়াকস ইন ফিকশনাল উডস’ …
একোর এই প্রবন্ধ প্রথম প্রকাশিত হয় ‘লেসপ্রেসো’ পত্রিকায়, ১৯৯৮-এ, ‘সাম্যবাদী ইস্তাহার’ প্রকাশের সার্ধশতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে। পরে এটি তাঁর ‘সুল্লা লেত্তেরাতুরা’ (‘সাহিত্য প্রসঙ্গে’) গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।
|| সাম্যবাদী ইস্তাহারের শৈলী প্রসঙ্গে ||
কল্পনা করা শক্ত কতিপয় অনুপম পৃষ্ঠার কোনও বই একাই দুনিয়া বদলে দিতে পারে। দান্তের রচনা সমগ্রও ইতালির নগর-রাষ্ট্রদের কাছে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য ফিরিয়ে দিতে পারেনি। কিন্তু যে পাঠকৃতি দু-শতাব্দীর ইতিহাসেই নিশ্চিতভাবে গভীর প্রভাব ফেলেছিল, ১৮৪৮-এর সেই ‘সাম্যবাদী ইস্তাহার’-এর স্মৃতি উদ্যাপনে আমার মনে হয়, প্রত্যেকের এ বই আবার পড়া উচিত সাহিত্যগুণের দৃষ্টিকোণ থেকে, অন্তত এর অসামান্য বাক্যস্ফূর্তিগত নৈপুণ্য ও যুক্তিপ্রণালীর বিন্যাসের জন্যে, যদি কেউ মূল জার্মানে পড়তে না পারেন, তাহলেও।
১৯৭১-এ ভেনিসুয়েলার লেখক লুদোবিকো সিলবার কৃশকায় এক বই প্রকাশিত হয় – ‘এস্তিলো লিতেরারিও দে মার্ক্স’ অর্থাৎ ‘মার্ক্সের সাহিত্যশৈলী’ (১৯৭৩-এ এর ইতালীয় অনুবাদও বের হয়েছিল), এখন বোধহয় বইটা আর পাওয়া যায় না, কিন্তু পুনর্মুদ্রণযোগ্য তো বটেই। সিলবা সেখানে মার্ক্সের সাহিত্যচর্চা বিকাশের পুনর্সমীক্ষা করেছেন, (কমজনই জানেন, মার্ক্স কবিতাও লিখতেন, যদিও যাঁরা পড়েছেন, তাঁদের বিচারে সে-সব কবিতা নাকি ভয়াবহ), এবং মার্ক্সের যাবতীয় রচনা থেকে ধরে ধরে বিশ্লেষণ করে গেছেন। অদ্ভুতভাবে ‘ইস্তাহার’ নিয়ে তাঁর অর্ঘ্য মাত্র কয়েক ছত্র, সম্ভবত এ কেতাব সে-অর্থে মার্ক্সের একার লেখা নয় বলে। আপশোসের কথা, কেননা ‘সাম্যবাদী ইস্তাহার’ এমন এক বিস্ময়কর পাঠকৃতি, যেখানে নিপুণভাবে পর্যায়ক্রমে আসে রহস্য-উন্মোচক আর শ্লেষাত্মক স্বরভঙ্গি, জোরালো শ্লোগান আর স্পষ্ট ব্যাখ্যা (পুঁজিতান্ত্রিক সমাজ যদি সত্যি-সত্যি নিজের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের প্রতিশোধ নিতে নাও চায়, এই কয়েক পৃষ্ঠা তা ঘটিয়েছে)। এমনকি আজও একে বিজ্ঞাপন সংস্থায় ধর্মগ্রন্থ হিসেবে পড়া উচিত।
বিটোফেনের পঞ্চম সিম্ফনির মতো তীব্র ড্রামরোল দিয়ে এর শুরু: ‘য়ুরোপকে এক প্রেত তাড়া করেছে’ – (ভুললে চলবে না আমরা তখনও গথিক উপন্যাসের প্রাক্-রোম্যান্টিক ও রোম্যান্টিক বিকাশের কাছাকাছি, আর প্রেতদের তাই গুরুত্ব দিতেই হচ্ছে)। এর পরপরই আসে প্রাচীন রোম থেকে বুর্জ়োয়া শ্রেণীর জন্ম ও বিকাশপর্ব পর্যন্ত পাখির চোখের মতো দৃষ্টির বিস্তারে শ্রেণীসংগ্রামের ইতিহাস, এবং এই নব্য ‘বিপ্লবী’ শ্রেণীর অর্জিত বিজয়ে নিবেদিত এইসব পৃষ্ঠা এমন এক মহাকাব্য-ভিত গঠন করে, এখনও তা মুক্তবাজার উদ্যোগের সমর্থকদের কাছে গ্রহণযোগ্য। কেউ দেখছে – (অনেকটা চলচ্চিত্রে চিত্রগ্রহণের কর্মপন্থায় বাস্তবিক ‘কেউ দেখছে’ অর্থেই বলছি) এই অপ্রতিরোধ্য শ্রেণী, নিজের পণ্যের নতুন বাজারের চাহিদায় যে উদ্দীপিত, সারা দুনিয়ার জলেস্থলে ছড়িয়ে পড়ে – (আর আমি যতদূর বুঝেছি, মিসাইয়া বা ভবিষ্যৎ ত্রাতার আশায় অনুপ্রাণিত ইহুদি মার্ক্স এখানে নির্ঘাত জেনেসিসের কথা ভেবেছিলেন) – এবং দূরের যতসব দেশ, তাদের বিপর্যস্ত ও পরিবর্তিত করে, কারণ উৎপন্ন পণ্যের কম দামই হচ্ছে এর গোলন্দাজ বাহিনী, যার সাহায্যে যে-কোনও চিনের পাঁচিলই বিধ্বস্ত করতে পারে। এমনকি বিদেশীদের প্রতি তীব্র বিরাগে যারা সবচেয়ে নির্মম, সেই বর্বররাও বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য হয়। ক্ষমতার ভিত্তি ও প্রতীক হিসেবে এই শ্রেণী নগর পত্তন করে, তাদের শ্রীবৃদ্ধি ঘটায়, আর নিজে বহুজাতিক, ভুবনায়িত হয়, এমনকি এহেন সাহিত্য বানিয়ে ফ্যালে, যা আর জাতীয় চরিত্রের নয়, বরং আন্তর্জাতিক।*
এই যশোকীর্তন (যা বেশ প্রত্যয়জনক আর অকপট প্রশংসার কাছাকাছি) শেষ হওয়ার ঠিক আগেই হঠাৎ দেখতে পাই নাটকীয় উল্টোপুরাণ: যাদুকর আবিষ্কার করে, ভেল্কিবাজিতে সে যে-সংগুপ্ত শক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছে, তা আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, এবং বিজয়ী নিজেরই অতি উৎপাদনে শ্বাসরুদ্ধ, ফলে আস্তিনের নীচ থেকে বের করতে বাধ্য হয় নিজেরই কবরখননকারীকে, যার নাম প্রোলেতারিয়েত।
এই নতুন শক্তি এবার দৃশ্যে প্রবেশ করে: প্রথমে তা বহুধা বিভক্ত ও দিশেহারা। সংগঠিত তন্ত্র ধ্বংসের জন্যে তাকে গড়েপিটে নেওয়া হয়, আর তারপর তার শত্রুর শত্রুদের (পরম রাজতন্ত্র, ভূস্বামী, পাতি বুর্জ়োয়া) বিরুদ্ধে বুর্জ়োয়ারা তাকে ঝটিকাবাহিনী হিসেবে লড়তে বাধ্য করে, যতক্ষণ না কারিগর, দোকানদার আর কৃষিজীবী ভূস্বামী, যারা একসময় তার প্রতিপক্ষ ছিল, এখন ক্রমশ তারই মধ্যে মিশে যেতে থাকে এবং বুর্জ়োয়াদের ষড়যন্ত্রে প্রোলেতারিয়েতে পরিণত হয়। বিক্ষোভ বদলে যায় সংগ্রামে, এর জন্যে বুর্জ়োয়াদের নিজস্ব মুনাফার জন্যে তৈরি করা আরেক শক্তি – যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি শ্রমজীবী সংগঠন কৃতজ্ঞ থাকে। ‘ইস্তাহার’ এখানে রেলওয়ের দৃষ্টান্ত দিয়েছে, কিন্তু লেখকদ্বয় নতুন সংবাদ মাধ্যমের কথাও ভেবেছেন (ভুললে চলবে না, ‘পবিত্র পরিবার’ গ্রন্থে মার্ক্স ও এঙ্গেলস সে-যুগের ‘টেলিভিশনের’ কথা পেরেছিলেন। আসলে ধারাবাহিক উপন্যাস, যৌথ কল্পনার নমুনা। যে ভাষা ও ঘটনাসংস্থান ব্যবহার করে এইসব ধারাবাহিক জনপ্রিয় হয়েছিল, সেই ভাবধারার সমালোচনা করেছিলেন লেখকদ্বয়)।
ঠিক এই মুহূর্তে সাম্যবাদী বা কম্যুনিস্টরা মঞ্চে প্রবেশ করে। ওরা কে এবং কী চায় – কার্যক্রম পদ্ধতিতে এসব বলার আগে ‘ইস্তাহার’ (অতি উচ্চাঙ্গের বাগ্মিতার চালে) ওদের যারা ভয় পায়, সেই বুর্জ়োয়াদের অবস্থানে নিজেকে রাখে আর কিছু সন্ত্রস্ত প্রশ্ন তোলে: তোমরা কি সম্পত্তির বিলোপ চাও? চাও কি নারীর সার্বজনিক অভিগম্যতা? ধর্ম, জাতি, পরিবার এসবও ধ্বংস করতে চাও বুঝি?
এখানে বিষয়রাজি আরও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে, কারণ ‘ইস্তাহার’কে মনে হয় সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে ভরসাজনক ভঙ্গিতে, তার প্রতিপক্ষদের বুঝি প্রশমিত করবে। কিন্তু এরপর অতর্কিতে অবস্থান পাল্টে এক ধাক্কায় তাদের উদরজালকে আঘাত করে, আর জিতে নেয় প্রোলেতারিয়েত জনতার উল্লাসধ্বনি। আমরা কি সম্পত্তির বিলোপ চাই? অবশ্যই না। কিন্তু সম্পত্তি-সম্পর্ক সর্বদা পরিবর্তন মেনে চলে: বুর্জ়োয়া-সম্পত্তির অনুকূলে ফরাসি বিপ্লব কি সামন্ত-সম্পত্তির বিলোপ ঘটায়নি? আমরা কি ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিলোপ করতে চাই? কী উন্মত্ত ধারণা! তার কোনও সম্ভাবনাই নেই, কারণ এই সম্পত্তি জনসংখ্যার এক-দশমাংশের, অবশিষ্ট নয়-দশমাংশের বিরুদ্ধে তা ক্রিয়াশীল। ‘তোমাদের’ সম্পত্তির বিলোপ চাই বলে আমাদের নিন্দে করছ? বেশ, হ্যাঁ, ঠিক এটাই আমরা করতে চাই।
নারীর সার্বজনিক অভিগম্যতা? আরে, আমরা তো নারীকে উৎপাদনের হাতিয়ার হিসেবে তার ভূমিকা থেকেই অব্যাহতি দিতে চাই। তোমরা কি আমাদের মধ্যে নারীর সার্বজনিক অভিগম্যতা দেখেছ? নারীর যৌথ ভোগদখল তো তোমাদের উদ্ভাবন, যখন নিজের-নিজের স্ত্রীকে ব্যবহারের পরেও শ্রমিকের স্ত্রীর কাছ থেকে সুযোগ নিতে ছাড়ো না, আর তোমাদের চরম আমোদ হিসেবে অভিজাতদের স্ত্রীকেও ফুসলানোর ছলাকলা চর্চা করো। জাতি ধ্বংস? শ্রমজীবীদের যা কখনোই ছিল না, তাদের কাছ থেকে কীভাবে তা নেবে? তবে হ্যাঁ, আমরা নিজেদের এক জাতিতে পরিণত করতে চাই, আর চাই জয় …
এভাবে চলতে চলতে ধর্মসংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে তা আবার হয়ে ওঠে বাকসংযমের চূড়ান্ত কৃতি। আমরা আঁচ করি, উত্তরটা হবে, ‘আমরা এই ধর্ম ধ্বংস করতে চাই’, কিন্তু এ বই সে-কথা বলে না। বরং এই স্পর্শকাতর বিষয়ে যখন আলোচনা শুরু হয়, তখন তা অবলীলায় এর মধ্যে দিয়ে চলে গিয়ে আমাদের এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে দেয় যে সব পরিবর্তনই চড়া দামে আসে, কিন্তু দোহাই, এমন সংবেদনশীল প্রসঙ্গ এত তাড়াতাড়ি উত্থাপন না করাই শ্রেয়।
এরপর আসে সর্বাপেক্ষা মতাদর্শগত অংশ – আন্দোলনের কার্যক্রম, বিভিন্নরকম সমাজতন্ত্রের পর্যালোচনা, কিন্তু এ অবস্থায় এসে পাঠক আগের সব পাতার ঠমকে ইতিমধ্যেই মোহাবিষ্ট হয়ে গেছে। আর পাছে কার্যক্রমভিত্তিক অংশ বেশি জটিল হয়ে যায়, তাই এখানে ল্যাজে দেখি সেই মোক্ষম শেষ কামড় – দুটো অপূর্ব উত্তেজনাকর শ্লোগান – সহজ, স্মরণযোগ্য আর অসামান্য ভবিষ্যতের জন্যে নিয়তিনির্ধারিত (আমার তো তাই মনে হয়): ‘শৃঙ্খল ছাড়া শ্রমজীবীদের আর কিছুই হারাবার নেই,’ আর ‘দুনিয়ার শ্রমজীবী এক হও!’
মনে রাখার মতো মেটাফর উদ্ভাবনে এর প্রকৃত কাব্যিক ক্ষমতার কথা বাদ দিলেও বলতে হয় ‘ইস্তাহার’ রাজনৈতিক (কিন্তু শুধু রাজনৈতিক নয়) বাগ্মিতার মহৎকৃতি হয়ে রয়ে গেছে এবং কিকেরোর ‘ইন কাতিলিনা’ (‘কাতিলিনার বিরুদ্ধে’) সেনেট বক্তৃতাবলী ও শেক্সপিয়রের নাটকে জুলিয়াস সিজ়ারের মৃতদেহ নিয়ে মার্ক অ্যান্টনির ভাষণের সঙ্গে তা একযোগে বিদ্যায়তনে পাঠ্য হওয়া উচিত, বিশেষত যখন ক্লাসিকল সংস্কৃতির সঙ্গে মার্ক্সের সুপরিচিতির কথা আমরা জানি, তখন এ বই লেখার সময় ওইসব পাঠকৃতির কথা তাঁর মাথায় থাকাও অসম্ভব নয়।
…………………………………….
*স্পষ্টতই, এই প্রবন্ধ যখন লিখি, তখন ‘ভুবনায়ন’ (‘গ্লোবালাইজেশন’) – এই বিশেষার্থবোধক শব্দ ইতিমধ্যেই আসীন, আর এই অভিব্যক্তি দৈবাৎ ব্যবহারও করিনি। কিন্তু আজ আমরা সকলেই যখন এই সমস্যার ক্ষেত্রে স্পর্শকাতর, তখন নিশ্চয়ই ‘ইস্তাহারের’ ওইসব পৃষ্ঠায় ফিরে তাকালে মন্দ হয় না। বেশ বিস্ময়কর, কীভাবে
‘ইস্তাহার’ নিজের সময়ের থেকে দেড়শো বছর এগিয়ে গিয়ে ভুবনায়ন যুগের সৃষ্টি ও তার লেলিয়ে দেওয়া অন্যান্য বিকল্প শক্তি প্রত্যক্ষ করেছিল। বলতে গেলে, ‘ইস্তাহার’ এই প্রসঙ্গও তোলে যে ‘ভুবনায়ন’ কোনও দুর্ঘটনা নয়, যা পুঁজিতান্ত্রিক সম্প্রসারণের সময় ঘটছে (ঠিক যে-কারণে বার্লিনের দেওয়াল ভাঙে এবং ইন্টারনেট বা আন্তর্জালের আবির্ভাব হয়), বরং তা এক অনিবার্য বিন্যাস বা আকল্প, উত্থানশীল শ্রেণী যার অনুসারী হতে ব্যর্থ হবে না, এমনকি একদা বাজার সম্প্রসারণের দৌলতে এই পরিণামের সবচেয়ে সুবিধেজনক (একইসঙ্গে যদিও সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী) পন্থাকে বলা হত উপনিবেশন। এই বইয়ে এমন কথাও সবিস্তারে বলা হয়েছে (আর তা কেবল বুর্জ়োয়া নয়, অন্যান্য সব শ্রেণীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য) যে ভুবনায়নের কুচকাওয়াজের বিরুদ্ধে প্রতিটি শক্তিই প্রাথমিকভাবে বিভক্ত ও বিশৃঙ্খল থাকবে, চালিত হবে নিছক লুডিজ়ম বা ক্রীড়াশীলতায়, আর শত্রুর কারসাজিতে নিজেদের মধ্যেই যুদ্ধে লিপ্ত হবে।
লেখাটি যদি ভালো লাগে, আবহমানে নিজের ইচ্ছেমতো ফোন পের মাধ্যমে
অবদান রাখতে পারেন, এই কিউ আর কোড স্ক্যান করে। ফোন পে করুন 9051781537
অথবা স্ক্যান করুন পেমেন্টের লিংক