শতাব্দী দাশ-এর গল্প

শতাব্দী দাশ-এর গল্প

সামাজিক

তন্নিষ্ঠা ব্যানার্জীর দেওয়াল

আজ সপ্তমী। ফেসবুক চরাচর ফাঁকা। সবাই বুঝি বেড়াতে গেছেন? পুজোর সময় সবাই নস্ট্যালজিক হয়ে পড়েন। সো অ্যলাও মি অ্যাজ ওয়েল৷ জেঠুর মৃত্যুর এক বছর হল। ওঁকে ঘিরেই পুজোর স্মৃতি।

হুমড়ি খেয়ে পুজো দেখার হিড়িক আজও গেলো না বাঙালির, যতই আমরা চৌত্রিশ বছরের বাম জমানা পেরিয়ে আসি। আমার পুজোর স্মৃতি কিন্তু এক্কেবারে আলাদা। এমনিতে বাড়ুজ্জে পরিবারে সকাল-সন্ধে আহ্নিক করতেন ঠাকুরদা। গৃহদেবতা রাধামোহন। নিত্যপূজার এলাহি আয়োজন ছিল। ঠাকুরদা মারা গেলে জেঠু সে ভার নিতে অস্বীকার করেন। ঠাকুমার অনেক উপরোধেও নিজের জায়গায় ছিলেন অনড়। তিনি যুক্তিবাদী। নাস্তিক। জেঠু তখন থেকে আমার রোলমডেল।

পুজোর দিন মা আর দিদিকে নিয়ে মণ্ডপে যেতেন বাবা। সঙ্গে জুটে যেতেন জেঠিমা ও জেঠতুতো দাদা। আমি যেতাম না। জেঠু নানা রকম বই পড়ে শোনাতেন। সারা বছর পণ্ডিত মানুষটার কতটুকু সান্নিধ্য বা পাই? ঘরে ছাত্রদের আনাগোনা লেগে থাকে। পুজোর সন্ধেগুলো জেঠু দিতেন আমায়। ‘প্যারাডাইস লস্ট’ থেকে আবৃত্তি করতেন। পাপ-পুণ্যের, স্বর্গ-নরকের হিসাব যেত ঘুলিয়ে। বলতেন, স্বর্গে দাসত্ব করার চেয়ে নরকেও রাজত্ব শ্রেয়। কেন তবে সমাজের দাসত্ব করব? কেঁপে উঠতাম। জেঠু মাথায় হাত বোলাতেন। জেঠু, তোমায় মিস করছি খুব। স্রোতের উল্টোবাগে চলা চিরস্পর্ধী। নেই, তবু রয়ে গেছ। সগর্বে বলি, আমি রথীন্দ্র ব্যানার্জীর একান্ত শিষ্যা, চিরছাত্রী।

২৩ শে অক্টোবর, ২০২১। সন্ধে ৬.১০।
লাইক : ৫৬
মন্তব্য: ৫
শেয়ার: ৩

মন্তব্য:

অখিল চ্যাটার্জী: রথীন্দ্র বংশের গর্ব ছিল। সত্তর কি একটা যাবার মতো বয়স হল! ভাল থেকো বুড়ি। বাড়ির সবাই ভালো, তো?

পরমা ব্যানার্জী: জেঠুর একটা ছবি দিলে পারতি!
প্রতিমন্তব্য:
শুভ বৈদ্য: এই ছবিটা চলবে? টিচার্স ডে-তে তোলা। (সঙ্গে ছবি)
বি নীতা: Me with Sir, on the day of his superannuation. (সঙ্গে ছবি)

সুলগ্না চৈধুরী: Can’t believe! আপনি ওঁর আত্মীয়! আমার কাছে ওঁর মিল্টনের উপর লেখা বইটা আছে। পিএইচডি এনরোলমেন্ট হল আপনার? গাইড কে যেন?

*********

অতীন্দ্র ব্যানার্জীর দেওয়াল

দাদা, আজ দুবছর হল তুমি নেই। ছোট থেকে তোমাকে ঈর্ষা করেছি। তুলনায় অতিষ্ঠ হয়েছি। কিন্তু পায়ের কাছে বসে শিখেছিও, বলো? অসময়ে চলে গেলে। করোনায় বেডের ক্রাইসিস না হলে…স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, বাবার যোগ্য সন্তান তুমিই। বাবা ছিলেন নরেন দেবের প্রাণের বন্ধু। সমঝদার মানুষ। সরকারি ব্যাঙ্কের এই মাস মাইনের হিসাবরক্ষকের সাধ থাকলেও সাধ্য ছিল না, তোমাদের মমননের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ায়। আজ পুজোর দিন। মনে পড়ছে, যখন ঠাকুর দেখতে বেরোতাম, তখনও তুমি বুঁদ হয়ে থাকতে ছোট লাইব্রেরিতে! এ যদি সাধনা না হয়, সাধনা তবে কী? রেস্ট ইন পিস, দাদা। নরেন দেবের কোলে তুমি, এই ছবিটা অ্যালবামে পেলাম৷ পিছনে দাঁড়িয়ে বাবা। (সঙ্গে ছবি)

২৩ শে অক্টোবর, ২০২১। সন্ধে ৭.০৫।

লাইক : ৬৬
মন্তব্য: ৭
শেয়ার: ৩

মন্তব্য:

ধীমান বসাক: Priceless frame!

অত্রি চৌধুরী: ইনি নবনীতা দেবসেনের বাবা, না?
প্রতিমন্তব্য:
গৌতম দাস: কোত্থেকে আসেন ভাই? নরেন্দ্র দেবের নাম শোনেননি? মেয়ের পরিচয়ে তাঁকে পরিচিত হতে হবে?
পৃথা ধর: অত্রি চৌধুরী, ইয়েস। নন্দনার দাদু।

বৈশাখী মিত্র: ক্ষণজন্মা প্রতিভা!

রৌদ্র ঝলমল: Stay calm. My heartiest condolences.

চিদানন্দ অধিকারী: বাংলার স্বারস্বত মহল জানে, তারা কী হারিয়েছে।

…………….

প্রকাশরঞ্জন পণ্ডার দেওয়াল

রথী,

মনে পড়ে সেইসব কফিহাউসের ঝোড়ো দিন? অদ্ভুত তার্কিক ছিলে তুমি। সেই সঙ্গে আশ্চর্য পাঠক। পড়ুয়া মানুষ বলে সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে রইলে। অধ্যাপনার চাকরি নিলে। কিন্তু যোগাযোগ ছিন্ন হল না৷ যখনই ডেকেছি শিক্ষানবীশদের পার্টি ক্লাসে, বা প্রবীণদের কূট আলোচনায়, এড়িয়ে যাওনি। বোঝা যেত না, তোমার বিষয় সাহিত্য না রাষ্ট্রবিজ্ঞান। তুমি বলতে সাহিত্য পড়তে গেলে সবই জানতে লাগে। আমি মূর্খ মানুষ, অত কি জানি? তোমার কাছেই ‘প্যারাডাউস লস্ট’-এর মার্ক্সিস্ট ব্যাখ্যা প্রথম শুনি! এভাবেও পড়া যায়! দাগা দিয়ে গেলে! (সঙ্গে কফি হাউসের আড্ডার ছবি)

২৩ শে অক্টোবর, ২০২১। সন্ধে ৭.১৬।
লাইক : ৩৫
মন্তব্য: ৫
শেয়ার: ৪

মন্তব্য:

দেবাশিস ঘোষ: মনে আছে, আমাদের মধ্যে মাঝে মাঝে হাজির হত অম্লান? সে আরেক মার্ক্স-পণ্ডিত। ও অবশ্য বিপক্ষেই বলতে পছন্দ করত৷ অম্লান আর রথীন্দ্র মুখোমুখি বসলে বিকেল গড়িয়ে যেত। কফির পর কফি। আস্তিন গুটিয়ে রথীন্দ্রর টেবিল চাপড়ানো। দুজনেই ফেনোমেনা।

প্রবীণ ভাস্কর: লাল সেলাম, কমরেড!

অরি জিৎ: সারপ্লাস-এর উপর ক্লাস নিয়েছিলেন। আহা….

দয়ানন্দ পাঠক: Rest in Rage.

সুভাষিত হাজরা: আসলে ভারতে তর্কের যে ঘরানাটা ছিল…

…………..

বিকাশ পৈড়্যার দেওয়াল

আজ সবাই ড: বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে লিখছে। আমার বাড়ি পাইকপাড়ায়। দুপাড়া পেরিয়ে তাঁর বাড়ি৷ অনেকেই জানেন না, আমার জীবনে তাঁর অবদান অপরিসীম।

ক্লাস নাইনে টিউশন নিতে হল ইংরেজিতে। কিন্তু টিউশন পড়ার খরচ আমাকেই তুলতে বলল বাবা৷ সকালে সাইকেলে পেপার দেওয়া শুরু করলাম৷ রথীনবাবুর বাড়িতেও কাগজ দিতাম৷ খবরকাগজের ব্যাপারে খুঁতখুঁতে ছিলেন। পাটে পাটে ভাঁজ করা না থাকলে বকতেন পরদিন৷ সাইকেল থেকে টিপ করে বারান্দা লক্ষ্য করে পেপারের রোলটাকে ছুঁড়তাম। রেলিং গলে ঠিক বারান্দাতেই পড়ত৷ একদিন শুধু রেলিং-এ ঠোক্কর খেয়ে কাগজ ছিটকে এল উঠোনে৷ মালীর হোসপাইপের জলে কাগজ ভিজে ন্যাতা।

খুব চটেছিলেন। স্ত্রী চা নিয়ে এসে মাথা ঠাণ্ডা করতে বলছিলেন। চায়ের পেয়ালা ছুঁড়ে ভাঙলেন। আমি ভয়ে কাঠ। শেষে বললেন, ক্ষমাপত্র লিখে আনতে হবে। পুলিসে দেওয়ার কথাও বলেছিলেন একবার। সেটা সম্ভব না বুঝেই বোধহয় পরের আদেশ। বাড়ি গিয়ে গোটা গোটা হাতের লেখায় ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কথা লিখেছিলাম। অসুস্থ দিদা, মায়ের টিবি, বাবার চানার দোকান। যখন ফিরলাম, তখন মাথা ঠাণ্ডা হয়েছে। নতুন পেয়ালা-পিরিচ৷ দার্জিলিং চায়ের বাস। হাতের লেখা আর বাক্যের বাঁধুনি পছন্দ হয়েছে, এরকম কিছু বলেছিলেন। আর পেপার ফিরি করতে দেননি৷ ইংরেজির মাস্টার ছাড়িয়ে দিয়েছিলেন। নিজে পড়াতেন ফ্রিতে। শুনেছি আরও অনেককে ফ্রিতে দেখিয়ে দিতেন। ইংরেজিতে ভীতি ঘুচলেও তেমন দড়ো হতে পারিনি। এদিকে সাহিত্যের নেশা ধরিয়েছিলেন তিনি। তাই বাংলা সাহিত্য পড়লাম। এসএসসিতে চান্স পাওয়ার পর ধুতি পাঞ্জাবি দিয়ে এসেছিলাম। যেখানেই থাকুন, ভাল থাকুন স্যার।

২৩ শে অক্টোবর, ২০২১। সন্ধে ৮.১৮।
লাইক : ১৪২
মন্তব্য: ৫
শেয়ার: ৩৫

মন্তব্য:

টুম্পা সেন: এনেছিলে সাথে করে অন্তহীন প্রাণ!
প্রতিমন্তব্য:
সমিধ বসু: ‘মৃত্যুহীন’। ‘মৃত্যুহীন প্রাণ’। ‘অন্তহীন’ নয়।
টুম্পা সেন: কারেক্ট করলাম।

সিসিফাস সরখেল: এঁরাই ছিলেন প্রকৃত শিক্ষক।

স্বপ্নদীপ আগামীর ডাক: ঋদ্ধ হলাম। এখন দেখুন, ঘুষ-দিয়ে-চাকরি-পাওয়া-রা গিজগিজ করছে। আগামী প্রজন্ম বিপন্ন।

*******

পরমা ব্যানার্জীর দেওয়াল

ও চলে গেছে একবছর হল। সন্ধে থেকে কিছু একটা লেখার চেষ্টা করছি। মোবাইল টিপে লিখতে সময় লাগে। ও চলে যাওয়ার পর, ছেলে স্মার্টফোনটা দিয়েছিল। সময় কাটানোর খেলনা৷ এখনও সড়গড় হলাম না৷ সন্ধে থেকে নানাজন লিখছে, এত ভাল লাগছে! লিখতে সাধ হল।
মানে বা জ্ঞানে ওঁর যোগ্য ছিলাম না৷ তবু ঠাঁই দিয়েছিলেন, সে আমার ভাগ্য। শেষ দিন পর্যন্ত, সকালে আমার হাতের চা না হলে চলত না৷ স্নান সেরে, ধোওয়া কাপড়ে, স্বচ্ছ কাপে তাঁর চা নিয়ে হাজির হতাম। অল্প ঠেলায় অনাবিল হাসি ফুটে উঠত মুখে। সেসময় হয়ত খবর কাগজটি কোলে তিনি অল্প ঢুলছেন। ওইটুকু আমার নিজস্ব সময়৷ যত বেলা বাড়ে, তত দূরের হয়ে যান—তখন তিনি ছাত্রদের, কলেজের, বিশ্ববিদ্যালয়ের।

আপনাদের ক্ষণজন্মা পণ্ডিত কিন্তু শিশুর মতো অভিমানী ছিলেন। স্নানের আগে বিছানায় পাটে পাটে ভাঁজ করা কাপড় পাওয়া চাই। নাহলে রাগ করতেন। পুজোর সময় ঠাকুর দেখতে যাব, তাতেও গোঁসা। আমাদের মতে মিলত না এসব বিষয়ে। আমারও গোঁসা হত, পুজোয় বেড়াতে না নিয়ে গিয়ে ঘাড় গুঁজে লাইব্রেরিতে বসে থাকতেন বলে। কিন্তু এত ফাঁকা লাগত না। আজকাল ফাঁকা লাগে। এক বছর হল সব ব্যস্ততা চুকেছে। বেঁচে থাকার অর্থ পাই না আর। ( সঙ্গে বিয়ের ছবি, ক্যাপশন: আমাদের কনকাঞ্জলি)

২৩ শে অক্টোবর, ২০২১। রাত ১০.২৫।
লাইক : ৪১২
মন্তব্য: ৩
শেয়ার: ৪৫

মন্তব্য:

সুপর্ণা নন্দী: আমার তো এখনও বিশ্বাস হয় না বৌদি। শক্ত থাকো।

অনসূয়া বাগচি: কোথা থেকে কী হয়ে গেল! মাত্র সত্তর! হাসপাতালে বেড পাওয়া গেলে..

ভিকি ভট্টাচার্য: সলিডারিটি।

********

সংযুক্তা লাহিড়ীর দেওয়াল

মরে গেলে মোদীও মহান। পিরিয়ড।

২৩ শে অক্টোবর, ২০২১। রাত ১১.১৮।
লাইক : ৩
মন্তব্য: ১০
শেয়ার:

মধু রিমা: কী Cryptic!
প্রতিমন্তব্য:
সংযুক্তা লাহিড়ী: এখানে বলা সম্ভব নয়। ইনবক্সে আয়।
অনি কেত: আমিও জানতে চাই।
সংযুক্তা লাহিড়ী: ইনবক্স।
প্রীতিলতা দত্ত: মিটু।
বরিষণ সরকার: মিটু।
অ্যাঞ্জেলা নস্কর: লেট মি নো।
সংযুক্তা লাহিড়ী: ইনবক্সড অল।

আয়েষা খাতুন: জাস্ট এটাই বলতে যাচ্ছিলাম, সংযুক্তা।

বিজয় মাইতি: Bas***tard. (ইয়ে, স্টার না দিলে ফেবু কমেন্ট ডিল করে দেবে)। I know what you mean, Sanyukta.

**************

তন্নিষ্ঠার রাত

রাতে আমাদের দেখা হল ডাইনিং টেবিলে। পরিবার।
জেঠিমা।
আমি।
বাবা।
মা।
দিদির বিয়ে হয়ে গেছে দু বছর আগে।
দাদা বিদেশ গেল জেঠু বেঁচে থাকতে।
ঠাকুমা বেডরিডেন।

মুখ চাওয়াচাওয়ি করি। মুখ নামিয়ে নিই ফেসবুকে। আমরা এক জটিল বীজগাণিতিক যোগ, যার থেকে জেঠুকে কমন নেওয়া যায়। কমন নিয়ে, জেঠুকে বন্ধনীর বাইরে ঠেলে দিলে, আমরা হালকা হই; যোগ ততটাও জটিল লাগে না।

কিন্তু সে ভ্রমমাত্র। বন্ধনীর বাইরে জেঠু ঘাপটি মেরে থাকে, খ্যাঁক করে যোগফলের ঘাড়টি ধরবে বলে। আমরা জানি এইসব। আমরা তাই আজকাল যোগ বা যোগাযোগের চেষ্টাও করি না।

লোডশেডিং হল। আমরা ভাত খুঁটি। লাইক গুনি। রিচ বাড়াতে আমরা পরস্পরের পোস্টে লাইক করতে থাকি। কমেন্টও। জেঠিমার পোস্টে সঠিক মাত্রায় আবেগ ও বর্ণনা মিশেছিল বলে, কিংবা সে সবচেয়ে কাছের জন বলে, লাইক ও শেয়ার হু হু বাড়ে। আমরাও পিছু পিছু ধাওয়া করি তাকে। জেঠু লোকটার থেকে আমরা যতটা সম্ভব নিংড়ে নিই ক্ষণিকের আলো। কাল অন্য ইস্যু আসবে। জেঠু একবছরের জন্য ঘুমিয়ে পড়বে।

ওই থলথলে, লুঙ্গিপরা লোকটি আমার বাবা। ওর মুখে ল্যাম্পপোস্টের আলো পড়েছে। চিরকাল ল্যাম্পপোস্ট বা অগ্রজের খ্যাতির আলো মেখে বেঁচেছে সে।

যে তাকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে, সে মা। মাকে ক্লান্ত লাগে। মায়ের ফেসবুক করার সময় নেই। আমরা কী যে খুটখুট করি, তা নিয়ে মা বার দুই অনুযোগ করে।

জেঠিমা বরং হালকা আজকাল। ‘ব্যস্ততা ঘুচে গিয়ে’ জেঠিমাকে আসলেই সতেজ লাগে।

আমার একটা জোক মনে পড়ছিল জাস্ট। ‘সেদিন মোবাইল খারপ হয়ে গেছিল। বাড়ির লোকেরা, অনেক দিন পর দেখলাম, মন্দ লোক নয়।’ ফিক করে একলা হাসি। মায়ের ধমক খেয়ে আমরা তখন মোবাইল ছেড়ে ভাতে মন দিয়েছি।

ঠিক সেই সময় নতুন খেলনা পাওয়া জেঠিমা আমার, বালিকার মতো ভুল করে। জেঠিমা আমাকে ‘ধন্যবাদ’ বলে।

‘বুড়ি, ধন্যবাদ।’

বাবার হাতের নড়াচড়া থামে। মায়ের চোখে জিজ্ঞাসা। আমি ধন্যবাদটা নেওয়ার চেষ্টা করি। মাইরি, প্রাণপণে করি।

মা বলে, ‘কেন, কী করল বুড়ি?’

আলো এল। যেমন ঝুপ করে আলো এল, তেমন ঝুপ করে আমার চোখে অন্ধকার নামে৷ হীনবুদ্ধি বাবা গদগদ হয়।

‘বুড়ি আজ দাদাকে নিয়ে দু লাইন লিখেছে, বুঝলে? ভাগ্যিস লিখল। তাই আমরাও…আমি একটা ভিন্টেজ ছবিও দিয়েছি।’

জেঠিমা বলে, ‘তাহলে তুই ক্ষমা করলি, বুড়ি? থ্যাঙ্কিউ।’

মা থম মেরে থাকে। বাবা বলে, ‘ভুল মানুষমাত্রে করে। তারই তো জিন বহন করিস তুই। তোর এত বুদ্ধি, মেধা— তারই জিন তো…’

ভাত বিস্বাদ হয়ে যায়। নিজেকে মনে হয়, সাদা লার্ভা— চালে লেপ্টে আছি এমন, যেন নেই। দেখতে নির্দোষ, আসলে পরজীবী কৃমিকীট।

চিৎকার পায়। সবাইকে ও নিজেকে চিৎকারে ফালাফালা করে দিতে ইচ্ছে করে। উঠে যাই।

*********

তন্নিষ্ঠার ডায়রি

ঠাকুমার ঘর থেকে পেচ্ছাপের গন্ধ আসে। নার্সটা ঘুমোলো বুঝি। মনে খুশি খলবল করে। বুড়ি চড় মেরেছিল আমায়। পুজোর দিন। জেঠু তখন হুল্লাট চেঁচামেচি জুড়েছে। বাঁড়ুজ্জে বাড়ির রাশভারি অধ্যাপক। বাথরুমে স্নানের সময় গিয়ে মগের জলে বদগন্ধ পেয়েছেন। চিৎকারে বাড়ি মাথায় করেছেন তৎক্ষণাৎ।

জেঠু রেগে গেলে ছুঁড়তে আর ভাঙতে ভালবাসত। মগটা ছুঁড়ে ফেলেছে বাবার পায়ের কাছে। বাবা ছিল গৃহদেবতার মন্দিরের উঠোনে। নাস্তিক জেঠু যেদিক মাড়াত না।

চন্দন-সুবাসিত উঠোন থেকে মুতের কটূ গন্ধ উঠছিল। সবাই হতভম্ব। ঠাকুমা শুধু এসে আমাকে চড় কষিয়েছিল। থরথর কাঁপতে কাঁপতে জেঠু বলছিল, ‘আগেও সন্দেহ হয়েছিল। প্রায়ই মগে…আজ শুঁকে দেখি…’

চড় খেয়ে ফ্রক-জামা আমি ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলেছিলাম। বলেছিলাম, ‘তোমাদের বলিনি আমি? তোমরা কিছু করলে না কেন? আমি তো শাস্তি দেবই।’

মা এসে মুখ চাপা দেয়। বলে, ‘ভুলভাল বলবি তো আবার চড় খাবি, বুড়ি।’

মায়ের হাত কামড়ে দিয়ে বলি, ‘বেশ করব। পুজোর দিন তোমরা বেরিয়ে গেলে ও আমায় কোলে বসিয়ে পড়ায় লাইব্রেরিতে। প্রথমে মাথায় হাত, তারপর জামার ভিতর…’

ধাঁ করে রদ্দা মেরেছিল বাবা। জমাদার কানে হাত দিয়ে চলে গিয়েছিল বালতি নিয়ে। জেঠু মাথানীচু দাঁড়িয়েছিল স্থানু। বিদ্যা, জ্ঞান গলে পড়ে লদলদে লার্ভা জন্ম নিচ্ছিল মেঝেতে। জেঠিমা শূন্যে তাকিয়েছিল— কিছু শোনেনি, দেখেনি যেন। জমাদার কুয়ো থেকে জল তুলে মন্দিরের উঠোনে ছুড়ে দিল। কটূ গন্ধ মেলালো ধীরে ধীরে। সেদিন ঠাকুর দেখতে নিয়ে গেছিল আমাকে। বিদগ্ধ পণ্ডিত কিলবিলিয়ে কোন লার্ভাগর্তে লুকিয়ে ছিল কে জানে! ঠাকুমা কান্নাকাটি জুড়লে, দশমীর পর ফিরেছিল।

জেঠু আর ছোঁয়নি এরপর। মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকের আগে যেচেই পড়াল। কামনা ও পুরুষযন্ত্র সিঁটিয়ে গিয়েছিল। চোখ তুলে তাকাতও না। সামনে এলে আমার মাথা দপদপ করত তবুও। বাবা-মা বলত, ‘যা না। কত ভাল পড়ায়! হয়ত তোর ভুল বোঝা। ছোট ছিলি তো।’

দপদপটা ক্রমশ চেপে যাই। জেঠুকে ব্যবহার করি বদলে। খ্যাতি, জ্ঞান, কানেকশন। নিংড়ে নিই। আজও জেঠুকে ছেঁচে নিলাম। ফেসবুকে। বেশ করলাম।

জেঠু আর আমাতে কতটা তফাত? আমাদের লার্ভাজন্মে কতটা অন্তর? আমি তার জিনবাহী। সে আমায় নষ্ট করেছে।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (2)
  • comment-avatar
    রাজেশ গঙ্গোপাধ্যায় 2 years

    বাংলা গল্প এ পথে কখনো হাঁটেনি! এই নতুন পথ চিনিয়ে দেওয়ার কারিগর হিসেবে নিছক ধন্যবাদ যথেষ্ট নয়। গল্পের শুরু হয়েছে এক অতিবাস্তবতায়। ফেসবুককে এভাবে গল্পের প্রেক্ষিত করে তোলার এই ফর্ম – দুর্দান্ত! “আমি তার জিনবাহী। সে আমায় নষ্ট করেছে।” – ‘তার’-কে ‘তাঁর’ লেখা হয়নি, শ্রদ্ধারও স্তর থাকে, কোন স্তরের নীচে হু হু ছুটে যায় একা একটা স্রোত, কে খেয়াল রাখে, জ্যেঠিমা রেখেছিল…তাই কি! সত্যিই রেখেছিল? এই যে চরিত্র নির্মাণ এবং নির্মিত চরিত্রকে লেখা শেষের সঙ্গে ভাসান দেওয়ার রাজকীয়তা…আপনি অনেকদূর যাবেন! শুভকামনা রইল।

  • comment-avatar
    Sankari 2 years

    খুব ভালো ।

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes