
মৈনাক দাস-এর কবিতা
বারোমাস্যা
–
জানুয়ারি
সন্ধের দিকে প্রতিদিন জ্বর আসে
জ্বলজ্বল করে হরিদ্রাভ কাদামাটি
গোলাপ ছুঁয়ে যে শপথ করেছিল— শিকড়ে শিকড়ে বাঁধব জীবন,
সে আজ রক্ত দেখলে ভয় পায়।
ফ্রেব্রুয়ারি
প্রেমের বন-মন পেরিয়ে, নিজের রাস্তা
দেখে নেয় ভাষা
প্রেমিক থেকে কবি
রাজনীতি থেকে বাংলার ‘ব’
সবই থাকে হানাদার মঞ্চে
এদের মাঝে স্টেশন ছেড়ে যায় জন্মদিন…
মার্চ
বসন্ত এলে বাড়ে প্রেম
চলে গেলে কমে নিয়মিত
বন্ধুত্ব শীতের পাতা
আগমনে কমে, বিদায়ে জ্বরের মতো বাড়ে
এপ্রিল
মাঠে এসেছে
শঙ্খ ঘোষের শেষ বয়সের শত্রু
রাজনৈতিক সভা
দৌড়ে গিয়ে দেখতে যাই।
জানা ছিলনা তখন—
পেন নয়, কবিতা লিখতে লাগে চোখ।
মে
মে-র প্রথম দিন,
বাবার আজ ছুটি
বাড়িতে বিরাট আয়োজন।
বাবা ঘরে—
তাই বেশ পরিপাটি সব।
বিকেলে খেলতে গিয়ে শুনি
ওর বাবার কাজে যাওয়া গামছা নিয়েই
ঝরে গেছে
পাশের বাড়ির বকুল
জুন
ভালোবাসা প্রভৃতি তো হয়নি বলেই
বিষণ্ণ ছিলাম গত জুনে
মনে ছিলো না
এই সবই গ্ৰীষ্মের বরফ
গলে পড়ে আইসক্রিমের মতো
জুলাই
কলেজে ফর্ম ফিলাপ…
পুরনো ফুলেরা ফের কুঁড়ি হয়ে
ফুটবে নতুন সব গাছে—
তবুও বৃষ্টির দিনে ঘামে-ভেজা স্কুল ড্রেস ডাকে
বাড়ি ফিরতে দেরি হলে
যেভাবে ডাকে মা
আগস্ট
মিছিলে হাঁটার মাস
শুধু মনে পড়ে
সে মিছিল শেষ হওয়ার আগেই
খসে গিয়েছিল ওই
উড়ে আসা বোহেমিয়ান
সেপ্টেম্বর
সিগারেট ধরিয়ে নেওয়া সহজ
কঠিন এটা ভাবা—
কখন ফিল্টারটুকু ঠোঁট থেকে পায়ে পৌঁছে যায়
অক্টোবর
আফসোসের চেয়ে বড়ো সত্যি
আর জোরের চেয়ে বড়ো মিথ্যে
পৃথিবীতে নেই
জোর করে ফ্রিজে ঢুকিয়ে দেওয়া চকোলেটও
ক্রমে একরোখা হয়ে ওঠে…
নভেম্বর
প্রেম অনেকটা বাসের মতো দেখতে…
ভুল জানতাম। কালীঘাটের বাস
স্টপ ছেড়ে পৌঁছে যায় গিরীশ পার্ক
সোজা মেট্রো ধরে
প্রেম কি তবে মেট্রোর টোকেন,
বেরোনোর আগে ফেলে আসতে হয়…
ডিসেম্বর
যেসব কথা বলে উঠতে পারিনি, সেসবও কবিতা
নিরক্ষরের দম কত,
সেই কথা জানে কি সাক্ষর?