ভূমি ও কুসুমঃভুমিলগ্ন মানুষের যৌথতার আখ্যান
সুবীর সরকার

ক।

ভূমি ও কুসুম।সেলিনা হোসেনের রচিত এক আখ্যান। বিষয়ঃ ছিটমহল ও সেখানকার জনমানুষের যন্ত্রণাকর,দিশেহারা জীবন ও যাপন। ঠিকানা ছিটমহল। কিন্তু ছিটমহলের মানুষদের আদতে নিজস্ব কোন প্রকৃত পরিচয় নেই। ছিটমহলের পটভূমিতে এটাই একমাত্র আখ্যান। সম্প্রতি অমর মিত্র এই বিষয় নিয়ে একটি লেখা শুরু করেছেন বলে জানা যায়।সম্প্রতি পাঠ করলাম ‘ভূমি ও কুসুম’।এবং আবিষ্ট হলাম। হাজার ক্ষয়,ক্ষত ও অন্ধকার পেরিয়ে ভুমিলগ্ন মানুষেরা আসলে তুমুল যৌথতায় কি নিবিড় বাঁচতে চায়!
ছিটমহল আসলে কি? ভারত ও বাংলাদেশের ছিটমহলগুলো দু’দেশেরসীমান্ত এলাকায় অবস্থিত। একটি ছিটমহল অন্য রাষ্ট দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে।তাই ছিটের মানুষেরা এক ধরণের বন্দী জীবনযাপন করে। কারণ তার নিজের রাষ্টে যেতে হলে তাকে অন্য রাষ্টের সীমানা অতিক্রম করতে হয়। কিন্তু সীমানা পার হবার জন্য যে অনুমতি দরকার সেটি সহজে পাওয়া যায় না। ফলে ছিটের বাসিন্দারা নিজ রাষ্টের সুযোগ সুবিধা থেকে চূড়ান্ত বঞ্চিত হয়।
তারপরেও এইসব প্রান্তিক, ভুমিলগ্ন মানুষের জীবনে আশ্চর্য গল্প থাকে। যেমন সীমান্ত ও সীমান্তরক্ষী, যা জনজীবনের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠতে থাকে ক্রমপরম্পরায়।
খ।
সেলিনা হোসেন গল্প শুরু করেন দেশভাগের সামান্য কয়েকদিন আগের থেকে। আর শেষ করেন স্বাধীন বাংলাদেশ হবার কয়েক বছর পরে, ছিট্মহল নিয়ে ‘ইন্দিরা-মুজিব’ চুক্তির পরে পরে। ইতিমধ্যে সেলিনা কাহিনির ফাঁকে ফাঁকে বলে যান ছিটমহলের জন্মের, মানে ছিটমহল হয়ে ওঠার বৃত্তান্তটিও। যেখানে অন্তরায় হিষেবে চলে আসে, বৃট্রিশ ভারত ও দেশীয় রাজন্য-নবাব শাষিত ভারতের কথা। যার সূত্রে ‘দহগ্রাম ও আঙরপোতা’ চারপাশে ভারত ঘেরা বিচ্ছিন্ন ছিট হয়ে, তীব্র হাহাকার হয়ে উঠে আসে।তারপরতো যাপন, লড়াই ও বেঁচে থাকার হরেকরকম ঘটনাক্রমের সিজিলমিছিল!
গ।
দহগ্রাম ও আঙরপোতা বর্তমানে বাংলাদেশের মূল ভুখন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য তিনবিঘা করিডোর সর্বসময়ের জন্য ব্যাবহারের সুযোগ পেয়েছে। ফলে তাদের নিজভূমে পরবাসীর যন্ত্রণার ভয়াবহতা এখন আর নেই। কিন্তু ১৯৪৭ এর পরে দীর্ঘ কয়েক দশক দহগ্রামের, আঙরপোতার মানুষ; যারা ছিটের মানুষ হবার কারণে অসহায় এক বন্দীশিবিরে পরিণত হয়েছিল, সীমান্ত রক্ষীদের অত্যাচার অপমান তান্ডবের শিকার হয়েছিল বারংবার। তাদের নারীরা ধর্ষীতা হয়েছিল। গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। চলেছিল লুঠতরাজ। হাহাকার ও কান্নার সুরে দুলে উঠেছিল তিস্তার জলপ্রবাহ।তবে দহগ্রাম ছিটের মানুষেরা কিন্তু তাদের নিজেদের মতন বাঁচতে বাঁচতে তুমুল যৌথতায় একধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। তাদের জীবন প্রবাহে ঘাসফড়িঙ কাঁচপোকা লোকগান দোতারা বাঁশি ও নলঘোঙা পাখির অন্তহীনতা এসে জায়মানতার স্থিরচিত্র এঁকে যায় বারবার। এখানেই আখ্যানের প্রকৃত আখ্যান হয়ে ওঠা। সব হারানো ঠিকানাহীন মানুষেরা নিজের মতোন বাঁচতে চায়।ভূমিলগ্ন মানুষ ও তাদের চার দিক বিদেশী রাষ্ট্র ঘেরা, সেই জনপদের জীবনের অন্তহীন গল্প বলেছেন সেলিনা হোসেন। গল্পের পরতে পরতে জুড়ে থেকেছে দেশ কাল রক্ত হাসিকান্না যুদ্ধ ও পতাকার কথা।
ঘ।
উপন্যাসের গোলাম আলি। মৃদু ও অর্থপূর্ণ হাসি যাকে সুন্দর করে তোলে। যিনি হেঁটে যেতে থাকেন দহগ্রামের পথে পথে আঙরপোতার দিকে তিনবিঘার সীমান্ত ক্যাম্পের দিকে তিস্তা নদীর দিকে। গোলাম আলি একজন স্বপ্ন কারিগর। নক্সীকাপড় বুন্তে থাকেন। তার চোখের সামনে ১৯৪৭ এর দেশভাগ,দহগ্রাম আঙরপোতার স্বাধীনতা হারিয়ে; স্বাধীন দেশের নাগরিক হওয়া! তারা ভাগ্যের পরিহাসে হয়ে ওঠে ছিটমহল এর বাসিন্দা। বন্দী। তবু তো বাঁচতে হয়!আত্মপরিচয় হারানো কিম্বা আত্মপরিচয় খুঁজতে থাকা গোলাম আলি ক্রমে প্রান্তিক মানুষদের যৌথতায় বাঁধতে চায়। একসময় গোলাম আলি ছিটের মানুষদের আশাআকাংখার প্রতীক হয়ে ওঠে। ছিটের নুতন রাজা যেন বা। গোলাম আলি বাঁচবার এক স্বপ্নপুরুষ হয়ে ওঠেন আর বুকের ভিতরে টেনে নেন দহগ্রামের সবটুকু দিনের আলো। তিনি হাঁটেন আর নিজের অতীতকে হাতড়াতে থাকেন,যে অতীতে তিস্তার বাতাসের মতন ফিরে ফিরে আসে তার মায়ের স্মৃতি। মায়ের সখি ও সখিকন্যা নমিতার সংলগ্নতা। অনেক অনেক দশক পরে নমিতার সঙ্গে ঘর বাঁধতে হয়েছিল গোলাম আলিকে। আখানের শুরুতেই আমরা পেয়ে যাই মনজিলাকে। এই মনজিলা গোটা আখ্যান জুড়েই থাকে।তীব্র জ্বলজ্বলে প্রতীকী চরিত্র এই মনজিলা! তার যাপন, সন্তানকে মাতৃপরিচয়ে বড় করে তোলা,তার স্বপ্ন, প্রেম, দেহজ বাসনা, তার লড়াই বিস্মিত করে। নারীর শক্তিময়তা কি অসামান্য, নারীর সৌন্দর্য, সবকিছু আগলে রেখে, মমতায় ঢেকে রেখে জীবনকে কতোদূরে নিয়ে যাওয়া যায়, অর্থবহ করে তোলা যায় তার প্রমাণ মনজিলা ও নমিতা চরিত্র দুটি; ভাঙনের বিরুদ্ধে শক্তপোক্ত বাঁধ হয়ে যারা অটল দাঁড়িয়ে থাকে। অরবিন্দ ও মনজিলার চকিত মিলনে মনজিলা গর্ভবতী হয়। অরবিন্দকে, পিতৃপরিচয় অস্বীকার করবে বলায় মনজিলা তাকে অপমানের জবাব দেয়; তার সন্তানকে মাতৃপরিচয় দেবে স্থির করে সে নমিতার স্নেহের আশ্রয়ে চলে আসে। তার কন্যাসন্তান হয়। গোলাম আলির উপন্যাসের শুরুর ভবিষ্যবাণী মিলে যায় এভাবে। মেয়ের নাম গোলাম আলি আগেই ঠিক করেছিল তনজিলা। তনজিলার আরো এক নাম হয় বর্ণমালা। নমিতার দেয়া নাম। বর্ণমালা ক্রমে দহগ্রাম ছিটের উজ্বল রোদ হয়ে বেড়ে উঠাতে থাকে। এইভাবে প্রতিদিনের জ্বালাযন্ত্রণার অপমানের জীবনে বয়ে যায় ছিটের মানুষদের। হিন্দুদের কয়েক ঘর নিরাপত্তার জন্য ছিট ছেড়ে মেখলিগঞ্জ,কুচলিবাড়ি চলে যায়। গোলাম আলিরা তাদের এগিয়ে দিয়ে আসে ভাঙ্গা বুক নিয়ে।সময় পেরোতে থাকে। বর্ণমালা বেড়ে ওঠে।দহগ্রামে স্কুল হয়। সীমান্তরক্ষীদের সাথে বিরোধ বাঁধে মাঝেমাঝে। গুলি চলে। ছিটের মানুষ সেই গুলিতে মরে। ছিটের মেয়েকে ধরে নিয়ে ধর্ষণ করে সীমান্তের পাশের মাঠে ফেলে রাখা হয়। তিস্তায় নৌকা চালায় মাছ ধরে দহগ্রামের মানুষ। ভারত-পাক যুদ্ধ বাঁধে দু’দুবার। এক জেনারেল যান,আরেকজন আসেন। ছিটের কেউ কেউ লুকিয়ে লুকিয়ে পাটগ্রাম যায়, মেখলিগঞ্জ যায়, কুচলিবাড়ি যায়। নিতাই বাউল পথে পথে ঘোরে। হাতের দোতরায় কত কিসিমের গান। নিতাইএর প্রেমে পাগলিনি কমলা ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে। কমলার স্বপ্নের বয়নে মনজিলা নমিতা গোলাম আলি কলকল্লোলের মত মিশে যায়। মাঝে মাঝে গোলাম আলির ডাকে ছিটে সভা বসে। ঢোল বাজে। সুরেন মালাকারের ঢোল। মালতির রক্তমাখা শাড়ি ছুঁড়ে দেয়া হয়ে সীমান্তরক্ষীদের ক্যাম্পে।তাহের ও সরমার সংসার পেতে দেয় গোলাম আলি। বিবাহউৎসব হয়।গান বাজে। পঞ্চগড়ের বোদা থেকে জোহরাকে খুঁজতে আসে বাশার। রাতের আন্ধারে গোলাম আলির ঘরে। অনেক পরে জোহরাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায় বাশার। বাশারের সাথে মনজিলার মন দেয়া নেয়া শরীরী সম্পর্ক গড়ে ওঠে।কিন্তু ছিটের বিচারক গোলাম আলির নির্দেশে তাজিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় বাশারের। সীমান্তরক্ষীদল ছিটে আগুন লাগায়। সেই আগুনে মানুষ মরে। গোলাম আলিও অসুখে পড়ে। আজমল-এর সাথে বর্ণমালার বিয়ে হয়। পোড়া হাত আর সারে না আজমলের। তবু সোনার ধান আর সোনার সংসারে সুখ উপচে ওঠে।শঙ্খবড়ু, চাঁদসুরুজ ও কুসুমকলি দহগ্রামের আলো হয়ে দাউদাউ জ্বলে। পাক সরকারের জনগণণাকারী দলকে আটকে দেয়া হয়। তাদের সঙ্গে ভারতীয় প্রহরীদের বচসা বাজে।তার ছিটে ঢুকতে পারে না। কিন্তু ছিটের মানুষ জানিয়ে দেয় ছিটের জনসংখ্যার কথা। কতকিছু ঘটে। ঘটেই যায়।মশালডাঙ্গা, দশিয়ার ছড়া ছিটমহলের কথা,সিঁদল-ভর্তা,চিংড়ি মাছ,তিস্তার মাছ, লাউকুমড়োর গন্ধ ভাসে। গোলাম আলির মরণ হয় একদিন। শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে ইতিমধ্যে পূর্ব পাকিস্থানে গনআন্দোলন,ছয় দফার আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। নির্বাচনে শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও তাদের কে পশ্চিমপাকিস্থানের রাষ্ট্রনায়করা সরকার গঠনের সুযোগ না দেওয়ায় পূর্ব পাকিস্থানের বাঙালীরা প্রতিবাদে গর্জে ওঠে।শেখ মুজিব রমনার জনসভায় ‘স্বাধীনতার সংগ্রামের’ ডাক দেন। শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ। পাশাপাশী তীব্র দমনপীড়ন চালাতে থেকে পশ্চিমারা। দহগ্রাম আংরাপোতায় এই খবর পৌঁছে যায়। চাঞ্চল্য তৈরী হয়। মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং নিতে ছিটের মতলুব,আজমল, করিম,আকালি ভারতীয় ক্যাম্পে চলে যায়। বাশার মুক্তিযোদ্ধা হতে চলে যায় মনজিলার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে। সীমান্ত খুলে দেয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা। শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ। ঢাকায় নির্বিচারে গুলি চালানো হয়।পথে পথে পরে থাকে লাশের পাহাড়। বাঙালীরাও প্রতিরোধ গড়ে তোলে। অস্ত্র ধরে।ছিটের জীবন তার নিজস্ব নিয়মেই গড়াতে থাকে। আকাশে চক্কর কাটে নলঘোঙা পাখি। স্বাধীন বাংলাদেশ হলে ছিটমহলের সমস্যা মিটবে এই স্বপ্নও জেগে থেকে পাশাপাশি। একসময় যুদ্ধ শেষ হয় অনেক রক্তের বিনিময়ে।অনেক অপমান ও ধর্ষনের বিনিময়ে। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়। শেখ মুজিব রাষ্ট্রপিতা হয়ে দেশে ফেরেন।বাঙালী মেতে ওঠে বিজয় উৎসবে। মুক্তিযুদ্ধে একটি হাত ও একটি চোখ হারানো মুক্তিযোদ্ধা বাশার ফিরে আসে দহগ্রামে। মনজিলার কাছে। বর্ণমালা আজমলের অপেক্ষায় প্রহর গোণে। ফিরে আসে মতলুব। ফিরে আসে আকালি। তারা মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনায়। কিন্তু আজমল ফেরে না। এদিকে যুদ্ধে শহীদ হওয়া আজমলের রক্তমাখা জামাকাপড় নিয়ে দহগ্রাম ছিটে ফিরে আসতে থাকে করিম। পাটগ্রামের এক চায়ের দোকানে চা খেতে ঢোকে করিম। দোকানের চা দিতে আসা ছেলেটির সঙ্গে করিমের গল্প হয়। ছেলেটি যুদ্ধের গল্প শোনে করিমের কাছে। করিম ছিটের মানুষ এটাও জেনে নেই। ছেলেটির নাম সাধু, সাইধ্যা কিম্বা সাধন। সে রক্তমাখা পুটুলিটা একজন বীর শহীদের জানতে পেরে উত্তেজিত হয়। করিমের সঙ্গে দহগ্রাম-আংরাপোতা ছীটে করিমকে পৌঁছে দিতে যেতে চায়। করিম আজমলের রক্তমাখা জামাকাপড়ের পুটুলি সাধুর মাথায় চাপিয়ে দহগ্রামে ফিরতে থাকে। সাধু এইভাবে মুক্তিযোদ্ধা সাধুতে রুপান্তরিত হয়।কারন সে যে বহন করেছে শহীদের রক্তমাখা জামাকাপড়। সমগ্র ছিটবাসী তাদের স্বাগত জানায়। তারপরে আজমলের কাহিনি জানবার পরে দহগ্রামে শোকের মাতম লাগে। বর্ণমালার আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে আকাশপ্রান্তর। বর্ণমালা পতাকা তোলে বিজয়ের।স্বাধীন দেশের।স্বপ্নের পতাকা। এরপর দিন যায় দিনের মতোন। ‘ইন্দিরা-মুজিব’ চুক্তি হয় ছিটমহল বিনিময় নিয়ে।বর্ণমালা অসুখে পড়ে। সে ফুলের মালা গাঁথে। সীমান্তের দিকে সেই ফুল নিয়ে যেতে চায় আজমলের শহীদ হবার জায়গায়। সীমান্তরক্ষীরা বাঁধা দিলে, বর্ণমালা তাদের মুখোমুখি প্রতিরোধ নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। তারপর চিৎকার করে বলতে থাকে-‘আমি ছিটের মানুষের স্বাধীনতা চাই। আমাদেরকে বন্দী করে রাখতে পারবে না’।
স্তব্ধ হয়ে থাকে চারদিক।আখ্যান সমাপ্ত হয়।

ঙ।
এ এক মহামহিম আখ্যান।যন্ত্রণাবিষাদবেদনা অতিক্রম করে আসা প্রান্তিক মানুষের অনবরত জীবনের উত্তাপময়তার ফিরতে থাকা।ছিটের জীবন অভিশাপের জীবন।বন্দীজীবন।শিকল জড়িয়ে আত্মপরিচয়হীন এ কেমন বেঁচে থাকা! তবু জীবন থাকে। জীবন থাকে বলেই তো জীবনযাপন থাকে!তিস্তার পাড়ে পাড়ে মাঠপ্রান্তরে বাঁশঝোপে কেবল জেগে থাকে নলঘোঙা পাখিরা। অসামান্য এই আখ্যানের ভিতর সেলিনা হোসেন শেষাবোধি আবহমানের এক জীবনের কথাই বলে যেতে চেয়েছেন।

CATEGORIES
TAGS
Share This
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes