
নয়ের দশকের জার্মান কবি পিটার হেমসবার্গ-এর কবিতা
অনুবাদে হিন্দোল ভট্টাচার্য
পিটার হেমসবার্গ একজন নয়ের দশকের জার্মান কবি। ১৯৭৩ সালে জন্ম। বন শহরে কর্মরত। এখনও পর্যন্ত একটিই কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম দিকে গীতিকবিতা লিখলেও পরের দিকে তিনি বদলে নিয়েছেন তাঁর কাব্যভাষা। জার্মানির আধুনিক যে কোনও কবিতা সঙ্কলনেই এই কবির উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়।
গর্ব
ভাঙাচোরা একটি প্রাসাদের ভিতর লুকিয়ে পড়েছে বরফ
সেই প্রাসাদ ভেঙে দিয়ে গেছে গত শতাব্দী
দরজা জানলাগুলো কুরে কুরে খাচ্ছে মাংসাশী পাখিদের ঝাঁক
এত শীত উপেক্ষা করেও যারা আকাশ থেকে নেমে আসছে দ্রুত
ভাঙাচোরা একটি প্রাসাদের ভিতর থেকে বেরিয়ে পড়েছে কঙ্কাল
রক্তমাংসহীন সিঁড়ি শতাব্দীপ্রাচীন গাধা যেন
এ বাড়ির নীচে কোনও টাইমবোমা নেই, মুখ লুকিয়ে
ঘুমিয়ে পড়েছে ইতিহাস
এখনও বোমার টুকরোগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে
এখনও রক্ত থেকে রক্ত ঝরছে, মাংস থেকে মাংস
সভ্যতা
মানুষ, একটি শব্দ, যার কোনও ছায়া নেই
ছায়া থেকেই ছায়া পড়ে
মানুষের, যে মানুষের দিকে
চেয়ে থাকে শকুনের মতো
অবলম্বন
সময় নেই, এ কথা বলতে বলতে, ভেঙে পড়ল বাঁশের সাঁকো
ক্ষণস্থায়ী নদীর উপরে
মানুষের আশার মতো
যা ভারসাম্য বজায় রাখছিল আমাদের।
একটি প্রেমের কবিতা
তোমার কাছে, আশ্চর্য, আমি মনের কথা বলতে চাইনি’
অপূর্ব এক সন্ধ্যাবেলায় দেখেছিলাম
একটি সমাধির উপর আজও ফুল ঝরে পড়ে।
আমি এর চেয়ে বেশি
ভালোবাসার কথা জানি না প্রেয়সী।
বিচার
তুমি আমার কথা বোঝনি, তাই আমাকেও
বন্দুকের আশ্রয় নিতে হল,-
অথচ দ্যাখো
এই বন্দুকের প্রতিটি বুলেটই
আমাকে উপহার দিয়েছিলে তুমি।
শান্তি
মানুষ মানুষের হাত ধরে আছে
এর চেয়ে বেশি
নীরবতার কথা আমি বুঝি না
কফিন
তুমি একদিন ফিরে আসবে, এ কথা বলতে বলতে
দেখি একটি উল্কা আকাশ থেকে খসে গেল
নক্ষত্র না ক্ষেপণাস্ত্র? প্রশ্ন করলাম,-
আমার চারপাশে উত্তর দেওয়ার মতো কেউই ছিল না
রহস্য
জন্ম নেওয়ার সময় আমি তোমার মুখ দেখিনি
অথচ তুমিই
আমায় দেখিয়েছ কীভাবে
সাঁতার কাটে বরফ
আমি একটু একটু করে
নিজেকেই পুঁতে ফেলি সেখানে
অথচ তুমিই
শিখিয়েছ কীভাবে
মানুষের সমাধির জন্য
মাটি কাটে
অন্য কোনও হাত
খুব ভালো অনুবাদ। ‘অবলম্বন’ কবিতাটি হেরাক্লিতুসের নদীর কথা মনে পড়াল। এমন সব কবিতা পাঠকের গহিন স্পর্শ করে।