নয়া কৃষি বিল (২০২০) – বিশ্বপুঁজির পথে অতল যাত্রা? <br />: জয়ন্ত ভট্টাচার্য

নয়া কৃষি বিল (২০২০) – বিশ্বপুঁজির পথে অতল যাত্রা?
: জয়ন্ত ভট্টাচার্য

আনন্দবাজার পত্রিকার (৪.১২.২০২০) একটি খবরের শিরোনাম – “‘চাষিদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার’ প্রতিবাদে পদ্মবিভূষণ ফেরালেন প্রকাশ সিংহ বাদল”। ৯২ বছরের বৃদ্ধ মানুষটি বলেছেন – “আমি সত্যিই আশ্চর্য হচ্ছি, সরকার কেন এত হৃদয়হীন, অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়ল।” আরেকটি সংবাদে প্রকাশ – ৩.১২.২০২০ তারিখে ভারত সরকারের সাথে ৭ ঘন্টা মিটিং-এর পরেও কোন সমাধান সূত্র মেলেনি। আন্দোলনকারী কৃষকেরা তাদের “কৃষি বিল প্রত্যাহার করতে হবে” এই অবস্থানে অনড়। তারা এই বিলের কোন সংশোধন বা রদবদল চাইছেন না। সম্পূর্ণ বিলটি প্রত্যাহার করতে হবে, এ হল তাদের অবস্থান। এজন্য সরকারের সাথে দ্বিতীয় বৈঠকের মাঝে সরকারের তরফে দেওয়া মধ্যাহ্ন ভোজ এরা প্রত্যাখ্যান করেছেন। নিজেদের লঙ্গরখানায় তৈরি খাবার খেয়েছেন। এর নির্গলিতার্থ – এক অদ্ভুত অবিশ্বাস কাজ করছে কৃষকদের মাঝে। আর সরকারের তরফে রয়েছে অস্বচ্ছতা।
করোনা মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে যে দেশগুলো চোখে পড়ার মতো সাফল্য দেখিয়েছে – যেমন, নিউজিল্যান্ড, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি – সে দেশগুলোতে কয়েকটি বিষয় প্রধান গুরুত্ব পেয়েছে। সেগুলো হল – প্রথম, শক্তিশালী সামাজিক সুরক্ষা; দ্বিতীয়, শক্তপোক্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা, এবং তৃতীয়, নাগরিকের তরফে রাষ্ট্রের প্রতি বিশ্বাস এবং রাষ্ট্র তথা সরকারের তরফে নাগরিকদের কাছে স্বচ্ছতা।
লকডাউনের সময়ে আমাদের এখানে কর্মহীন, ভিটেছাড়া, স্থানান্তরী (migratory-র বাংলা “পরিযায়ী” শব্দটিতে আমি অস্বস্তি বোধ করি, মানুষ আর পাখীকে এক করে দেখতে চাইছিনা।) অসংগঠিত শ্রমিকদের কয়েক’শ মাইল অবধি খিধে-মোচড়ানো পেটে শিশুকে কাঁধে নিয়ে অন্তহীন হেঁটে চলা। আশ্রয় দেবার জন্য সরকার বা রাষ্ট্র নেই। অত্যন্ত নিদারুণভাবে ট্রেনে কাটা পরে ১৬ জন বা তার বেশি শ্রমিক মারা যাবার পরে এ নিরাপত্তাহীনতা আরো বেশি করে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। দেখিয়ে দিল রাষ্ট্রের তরফে এদের জন্য চরম ঔদাসিন্য এবং এ “অব”-মানুষগুলোর রাষ্ট্রের প্রতি ট্রাস্ট না থাকা। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের সদ্য অবসর নেওয়া বিচারপতি বিচারক দীপক গুপ্ত এই মানুষগুলোর ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের ঔদাসিন্যের যে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন তা খুব শ্লাঘার বিষয় নয়।

কী হয়নি এই স্থানান্তরী অসংগঠিত শ্রমিক এবং এদের পরিবারের ওপরে? কয়েক’শ মাইল রাস্তা হেঁটেছে, কোন খাদ্যের কিংবা যানবাহনের ব্যবস্থা সরকারের তরফে করা হয়নি (অসরকারি বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন সময়ে তাদের সাধ্যমতো খাদ্যের জোগান দিয়েছে), পুলিশের লাঠিচার্জ হয়েছে, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে স্রেফ মরে গেছে, স্যানিটাইজার দিয়ে রাষ্ট্রের তরফে “পরিশুদ্ধ” করে নেওয়া হয়েছে, এমনকি ব্লিচিং পাউডার গোলা জলও খাওয়ানো হয়েছে, খোলা আকাশের নীচে রোদে পুড়েছে, বৃষ্টিতে ভিজেছে। আর কত মনোরম সংবর্ধনা ভাবা সম্ভব সাধারণ মেধা নিয়ে জন্মানো একজন মানুষের পক্ষে? এদের জন্য নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার অন্তত ১,০০০ টাকা করে নগদ হাতে দিতে বলেছিলেন। রাষ্ট্র তথা সরকার শোনেনি, পাত্তাও দেয়নি। সম্ভবত ভোটের বাজারে এদের মূল্য প্রায় কিছুই নেই বলে।
আন্দোলন মোকাবিলার শুরুর দিকে ঠিক একই রকমের আচরণ করা হয়েছে আন্দোলনরত কৃষকদের সাথেও। এই ঠাণ্ডার দিনে জলকামান থেকে জল দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়া, লাঠি দিয়ে পেটানো, “দেশদ্রোহী” “খালিস্তানি” ইত্যাদি মারাত্মক বিশেষণে বিশেষিত করা – সবকিছুই করা হয়েছে এদের সাথে। কিন্তু শেষ অব্দি এদের বিপুল সংখ্যার সংহতি এবং বোঝাপড়ার কাছে রাষ্ট্র তথা সরকার কিছুটা হলেও টলেছে। কৃষকদের বর্তমান বিক্ষোভের আগে NRC বা CAA বিরোধী যত আন্দোলন হয়েছে সেগুলোকে কেবল লাঠিপেটা জলকামান গুণ্ডা দিয়ে পেটানো এবং যেমন ইচ্ছে “টুকরে টুকরে গ্যাং” বলে জেলে ঢুকিয়ে দিয়েই সামাল দেওয়া গেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হলনা। শুধু তাই নয়, সরকারকে খানিকটা নামতে হয়েছে। নেমে এসে এদের সাথে বৈঠক করতে হয়েছে।
আমার বলার কথা এটুকু যে রাষ্ট্র তথা সরকারের সাথে জনসমাজের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবসময়েই অবিশ্বাস এবং অস্বচ্ছতা অন্তর্লীন উপাদান হিসেবে থেকে গেছে।
এবার আমরা নতুন কৃষি বিলে সরাসরি প্রবেশ করি। আমি অর্থনীতিবিদ, সমাজতাত্ত্বিক বা পলিটিক্যাল সায়েন্টিস্ট কোনটাই নই। বহু বহু যোগ্য মানুষ এই বিল নিয়ে বিস্তারিত এবং মূল্যবান আলোচনা করেছেন। আমার সে যোগ্যতা নেই। একজন স্বাভাবিক বুদ্ধিসুদ্ধি সম্পন্ন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে যা বুঝেছি সেভাবে আলোচনা করছি বিলটি নিয়ে।
এখানে লক্ষ্যণীয় যে সমগ্র দেশ জুড়ে লকডাউনের অবরুদ্ধ অবস্থায় যখন সবাই নিজেদের এবং আত্মীয়-পরিজন নিয়ে ব্যতিব্যস্ত, কিভাবে সুরক্ষিত থাকা যায় এ চিন্তায় আকুল হয়ে রয়েছে সেসময় কতকগুলো ঘটনা চুপিসাড়ে সংসদে পাস হয়ে গেল – অনেকগুলো কয়লা খনির বেসরকারিকরণ, বিপুল পরিমাণ বিদেশী বিনিয়োগ “মেক ইন ইন্ডিয়া”-য় বাস্তব করে তোলা, রেলের অংশকে বেসরকারি হাতে বেচে দেওয়া, সামরিক খাতে যুদ্ধাস্ত্রের জন্য বহু কোটি টাকার ব্যয় ইত্যাদি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রও এর ব্যতিক্রম নয়। বিজনেস ইনসাইডার পত্রিকার (৩.০৮.২০২০) একটি সংবাদের শিরোনাম – “How billionaires got $637 billion richer during the coronavirus pandemic”। প্রথম দশজন এরকম বিলিয়নেয়ারের মধ্যে ভারতের মুকেশ আম্বানিও আছেন। এ যেন “জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি” আর কি!
এরকম এক পটভূমিতেই ৩ জুন, ২০২০, তিনটি কৃষি বিল অর্ডিন্যান্স হিসেবে সংসদে ভারতীয় জনতা পার্টির “ব্রুট মেজরিটি”র জোরে পাস হয়ে গেল। রাজ্যসভায় বিল পাস হবার পদ্ধতিটিও বিপজ্জনক। ধ্বনি ভোটে বিলের স্বপক্ষে প্রস্তাব গৃহীত হয়। এটা রাজ্যসভার নীতির বিরোধী, যেখানে ভোট নেবার প্রস্তাব এসেছিল। এবং অধিকতর মারাত্মক হল যেসব সদস্যরা এই পদ্ধতির বিরোধিতা করেছিলেন তাদের সাসপেন্ড পর্যন্ত করা হয়। এরপরে নভেম্বর মাসে রাষ্ট্রপতির সইয়ের পরে এগুলো অ্যাক্ট হল। দেশের সর্বত্র সমানভাবে প্রয়োগ করা যাবে, প্রয়োগ হবে। এখানে বলার কথা সংবিধানের সপ্তম শিডিউল কৃষি সংক্রান্ত নিয়মকানুন তৈরির দায়িত্ব রাজ্যগুলির হাতে দেওয়া হয়েছে। এই অ্যাক্ট যেভাবে এবং যেসময়ে পাস করা হল সেটা মাথায় রেখে এবং অ্যাক্টের পরে রাজ্যের গুরুত্ব কমবে এমন আশঙ্কা থাকবে, ভারতের ফেডেরাল কাঠামো কেন্দ্রীভূত হয়ে উঠবে (যেরকম আরও কিছু আইনের ফলে হচ্ছে)। রাজ্যের ক্ষমতা কমে অতিরিক্ত শক্তিশালী কেন্দ্র গড়ে ওঠা ধীরে ধীরে একটি “অতিরাষ্ট্র”-র চেহারাকে জীবন্ত করে তুলছে। ভারতীয় জনসমাজের আগামী কালান্তক বিপদ সম্ভবত এখানে রয়েছে।
ভারতবর্ষের শিক্ষা, শিল্প, বাণিজ্য ইত্যাদি ক্রমাগত নির্দয়ভাবে বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া হলেও ভারতের প্রাণকেন্দ্র কৃষিতে এতদিন হাত পড়েনি। কিন্তু উন্মুক্ত বাজার এবং বিশ্বপুঁজির সর্বগ্রাসী চেহারায় এখন কৃষিকে ছেড়ে রাখা সম্ভব নয়। একটি গ্লোবাল ফুড সাপ্লাই চেইন বা শৃঙ্খলের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে কৃষিকে – যার সরবরাহকারীর ভূমিকা পালন করবে “গ্লোবাল সাউথ” এবং ভোক্তার ভূমিকায় থাকবে “গ্লোবাল নর্থ” এবং এদের অনুগতরা, তারা যে দেশেই থাকুকনা কেন। জন বেলামি ফস্টার তাঁর “COVID-19 and Catastrophe Capitalism” প্রবন্ধে এ বিষয়ে বলছেন – “In this system, exorbitant imperial rents from the control of global production are obtained not only from the global labor arbitrage, through which multinational corporations with their headquarters in the center of the system overexploit industrial labor in the periphery, but also increasingly through the global land arbitrage, in which agribusiness multinationals expropriate cheap land (and labor) in the Global South so as to produce export crops mainly for sale in the Global North.” এরকম এক অবস্থান থেকেই প্রধান মন্ত্রীর মুখে “এক দেশ এক বাজার” এ তত্ত্ব বারেবারে শোনা যাচ্ছে (প্রসঙ্গত, “এক দেশ এক ভোট”-এর প্রস্তাবও মাথায় রাখুন)।
আমার ধারণা, এরকম জায়গাতেই নতুন কৃষি বিল-এর বাস্তবতা ও যৌক্তিকতা। প্রথমে তৃতীয় বিলটি নিয়ে কথা বলি। এ বিলটি হল The Essential Commodities (Amendment) Bill, 2020। এ বিলের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং মারাত্মক অংশ হল চাল, ডাল, আলূ, পেঁয়াজ, আটা, চিনি, ভোজ্য তেলের মতো ২০টির বেশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যকে অত্যাবশকীয় পণ্যের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়া হয়েছে মজুতের ঊর্ধসীমা। ১৯৫৫ সালের এই আইনে সরকার সরাসরি কৃষকদের থেকে খাদ্যশস্য কিনে গণবন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে সংকটের সময় সাধারণ মানুষের মাঝে বণ্টন করত। এই ব্যবস্থাটি ঊঠে গেল। কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য একটি ব্যবস্থা রেখেছে। যদি যুদ্ধ লাগে এবং ভয়ঙ্করভাবে মুল্যবৃদ্ধি ঘটে তাহলে সরকার হস্তক্ষেপ করবে।
আশা করি এরকম দুর্দিনের মুখে আম্বানি, আদানি, মনসান্টো কিংবা পেপসি-কোলাদের পড়তে হবেনা! আর পড়ে গেলেও বিকল্প রাস্তা খুলে দেওয়া হবে নিশ্চয়ই।
কৃষকের নিজের আয় কমে যাওয়ার ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চেপে বসা এরকম উদ্বেগ এবং দিনের পর দিন ধরে পথকে ঘর করে নেবার মূলে রয়েছে আরও দুটি বিল – Farmers’ Produce Trade and Commerce (Promotion and Facilitation) Act, 2020 এবং Farmers’ (Empowerment and Protection) Agreement on Price Assurance and Farm Services Act, 2020। ১৯৬৫ সাল থেকে (অর্থাৎ সবুজ বিপ্লবের সমকালীন) চালু ছিল Agricultural Produce Market Act। এই অ্যাক্টের ফলে কৃষক সরকারের তৈরি নিয়ন্ত্রিত মান্ডিগুলোতে বা বাইরের বাজারে নিজেদের ফসল বেচতে পারে। যে জায়গাগুলোতে “সবুজ বিপ্লব” হয়েছে – পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ – সে অঞ্চলগুলোতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এবং মান্ডিতে কৃষকেরা ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের সাহায্য পেতো। ২০০৪ সালে স্বামীনাথন কমিশন প্রতি ৮৯ কিলোমিটারে একটি করে নিয়ন্ত্রিত বাজার বা মান্ডি থাকার সুপারিশ করেছিল। যদিও একথাও সত্য যে কৃষকদের এক ক্ষুদ্রাংশ (৬%-এর আশেপাশে) মান্ডির সুবিধে পায়, বাকি ৯৪% কৃষক পায়না। এসব সত্ত্বেও মান্ডির উপস্থিতি এবং ন্যূনতম সহায়ক মূল্য কৃষকদের একধরনের ইন্স্যিউরেন্স হিসেবে কাজ করে।
প্রথম বিলটিতে ট্যাক্সের ছাড় দেওয়া হয়েছে, মান্ডিতে হিসেবের খাতা রক্ষা করা আর বাধ্যতামূলক থাকছেনা। উৎপাদক কৃষক, উৎপাদিত পণ্য বা ফসল এবং বিক্রী করা – সবকিছুই সম্পূর্ণত ছেড়ে দেওয়া হবে মুক্ত বাজারের হাতে। ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আর কোন অস্তিত্ব থাকছেনা। কৃষকদের আশঙ্কা, এর ফলে অর্থনীতির বড়ো হাঙ্গরেরা, যাদের নাম আগে উল্লেখিত হয়েছে, তাদের সাথে কোনভাবেই যুঝে উঠতে পারবেনা সাধারণ ছোট ফড়েরা – এ এক নির্মম অসম যুদ্ধ। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এনডিএ সরকারের নির্বাচনী প্রচারের একটি ইস্যু ছিল কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের সংস্থান রাখা। এর ফলে রাজ্যগুলোর কৃষি থেকে আয়ও কমবে। দেশের ফেডেরাল গঠনে এটাও একধরনের শক্ত আক্রমণ।
দ্বিতীয় বিলটিতে কৃষকদের জন্য সংস্থান রাখা হয়েছে তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য বা ফসল দালাল, ব্যবসায়ী, বিজনেস হাউজ এবং বহুজাতিক সংস্থা সবার সাথে আগাম দাম ধরে (pre-greed) পণ্যের দামের চুক্তি (agreed price) করতে পারবে। এখানে দুটি বিচিত্র সংস্থানও রাখা হয়েছে – প্রথম, লিখিত কিংবা মৌখিক চুক্তি করা যাবে এবং দ্বিতীয়, সিভিল কোর্টে দুই পক্ষের বিবাদের কোন বিচার হবেনা। প্রথনটি অনেকটা উপনিবেশিক নীল চাষ বা দাদন চাষের মতো। আর মৌখিক চুক্তি বহুজাতিকের তরফে ভঙ্গ করা হলে ক’জন কৃষক আছে যে উঁচুতলার কোর্ট অব্দি মামলা লড়তে পারবে? তাছাড়া প্রায় দাদন চাষের মতো এই চুক্তিতে GMO বীজ চাষ করতে দেওয়া হবেনা এর গ্যারান্টি কে দেবে? ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং আমেরিকায় এর ফলাফল ভালো হয়নি। কৃষক আত্মহত্যা করেছে।
ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভে-র ২০১৩ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী কৃষকদের পাঁচজনের একটি পরিবারের কৃষি থেকে আয় মাসে মাত্র ৬,৪২৬ টাকা। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো-র রিপোর্ট (২০১৬) অনুযায়ী, ১১,৩৭৯ জন কৃষক ঋণের দায়ে এবং ফসল বিক্রী করতে না পারার দরুন আত্মহত্যা। এতে হিসেবটা দাঁড়ায় প্রতিদিন ৩১ জন করে কৃষক আত্মহত্যা করেছে। করোনায় মৃত্যুর চেয়ে কোন অংশে কম যায়না। কিন্তু মিডিয়ায় কোন খবর নেই, নৈঃশব্দের আঘাতে খবরগুলো জনমানসের দৃষ্টি এবং শ্রুতি পথ থেকে ক্রমাগত হারিয়ে যায়।
কিন্তু এর সমাধান কৃষিকে বাজারের হাতে পুরোপুরি উন্মুক্ত করা বা বহুজাতিক হাঙ্গরদের আহ্বান জানানো নয়। ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের সংস্থান এবং রাষ্ট্রের তরফে কৃষিকে সহযোগিতে করা এর বিকল্প পথ। আমেরিকার হিসেব দেখায়, পূর্ণ মুক্ত বাজারের ঐ দেশে ১৯৬০ সাল কৃষকদের আয় লাগাতার কমে যাচ্ছে। ফলে মুক্ত বাজার এবং বিশ্বপুঁজির উদ্বাহু নৃত্য কৃষকের মুক্তির পথ নয়।
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ার অবদমিত আতঙ্ক এবং বেঁচে থাকার অনিশ্চয়তা কৃষকের আন্দোলনের জন্ম দিয়েছে। এ আন্দোলন তেভাগা বা তেলেঙ্গেনার আন্দোলন নয়। সেরকমটা হবেওনা। কিন্তু কৃষক যে টলে যাওয়া ভবিষ্যতের আশঙ্কা করে পথে নেমেছে সে আশঙ্কা সমাজের সর্বস্তরে সত্যি। কিন্তু সমাজের অন্য অংশগুলো কি কৃষকের পাশে দাঁড়াবে? ছাত্রদের আন্দোলনের পাশে কিন্তু সমাজের অন্য অংশরা দাঁড়ায়নি। এই দূরত্ব এবং বিভাজনের বাস্তব অস্তিত্ব রাষ্ট্রকে অতিরাষ্ট্র করে তোলার পথ সুগম করে। আমরা সাক্ষী হয়ে ত্থাকি!

(আমি আমার এ লেখাটির জন্য অংশত টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রকাশিত “দ্য গ্রেপস অফ রথ” প্রবন্ধটির কাছে ঋণী)

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (26)
  • comment-avatar
    Arin Basu 5 years

    দুটো কথা।
    এক, পরিযায়ী বলতে “অস্বস্তির” চেয়েও প্রতিবাদ বলাটা উচিত ছিল। এঁরা একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক, এঁরা যেখানে খুশি কাজের খোঁজে যেতে পারেন, গোটা দেশটাই তাঁদের দেশ। নিজের দেশে কে কোথাকার পরিযায়ী?
    দুই, এই আন্দোলন কিন্তু শুধু পাঞ্জাব হরিয়ানার আন্দোলন নয়। বিহারে ২০০৬ সাল থেকে APMC সুরক্ষা তুলে দেওয়া হয়েছে, বিহারের ধান উৎপাদনকারী চাষীদের ওপর এর মারাত্বক প্রভাব পড়েছে। সরকার mandi বা APMC কে দালাল বলছেন অথচ বিহার উত্তর প্রদেশের কৃষকরা এখন পুরোপুরি দালালদের খপ্পরে পড়েছেন।

    কৃষি বিল এর পাল্লায় কৃষকদের বিদেশের এমন কিছু দেশের কৃষকদের সঙ্গে পাল্লা দিতে হবে মুক্ত বাজারে যাদের সেসব দেশের সরকার subsidise করেন। যেমন আমেরিকা। যেসব দেশে ,যেমন নিউ জিল্যান্ড এ, সরকার কৃষিতে subsidy তুলে দিয়েছেন, সেখানে সরকারি তরফে প্রচুর checks and balances, funding ইত্যাদির ব্যাপার আছে আমার মনে হয় না ভারত বা অন্য রাজ্য সরকারের পক্ষে দীর্ঘমেয়াদি সূত্রে করা সম্ভব।
    এতে করে হয়তো আদনি আম্বানিদের লাভ হবে, দেশ জুড়ে অপুষ্টি এবং দারিদ্র্য ও খাবারের জিনিসের আকাল দেখা দেবে।

    • comment-avatar
      Jayanta Bhattacharya 5 years

      খুব ভালো মতামত। হ্যাঁ, বৃহৎ পুঁজি ছাড়া অন্য কারো লাভ নেই। আজ মানুষের কাছে জোর দিতে একথা বলার লোকের এত আকাল পড়েছে কেন সত্যিই বুঝিনা!

  • comment-avatar
    সুকুমার ভট্টাচার্য্য 5 years

    ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ তাঁর এই লেখাটির জন্য।
    আইনটি কাদের স্বার্থে তৈরী হোল তা তো পরিষ্কার। 
    সমকালীন আরও অনেক আইনও কাদের স্বার্থ রক্ষা করবে তাও সাধারণ মানুষ জানেন।
    মজার ব্যাপার হোল, কৃষি আইনটির বিরুদ্ধে যে আন্দোলন চলছে তার আবেগ যাদের হাতে তাদের আমরা ‘চাষা’ বলে তুচ্ছ করে থাকি। এখন সেই ‘চাষারাই’ সেই তথাকথিত বাবুদের এবং সাধারণ মানুষদের পথ দেখাচ্ছে।

    • comment-avatar
      Jayanta Bhattacharya 5 years

      আন্তরিক ধন্যবাদ! যদি এ আন্দোলনে সত্যি জনসমাজ যুক্ত হয় তাহলে সুদূরপ্রসারী ফলাফল হবে।

  • comment-avatar
    Kanchan Mukherjee 5 years

    অত্যন্ত যুক্তিসম্মত এবং সংবেদনশীল একটি প্রবন্ধ। কৃষকদের আন্দোলনের কারণগুলো অনেকের কাছেই পরিষ্কার নয়। এ ধরণের লেখা আরও আসা উচিত। 
     ডা: ভট্টাচার্য কে ধন্যবাদ। 

  • comment-avatar
    মণীশ দাস 5 years

    এ সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ লেখা, কৃষি আইন কাদের স্বার্থে সেটা স্পষ্ট করে বোঝা গেল এবং কেন তা রদ করা জরুরী এবং তার জন্য গণ আন্দোলন দরকার সেটাও বোঝা গেল। লেখককে দন্যবাদ।

  • comment-avatar
    Nityananda Sarkar 5 years

    Gonotontro sompurno biponno. Jara onyo jogachhe tader oporei jolkaman chhora hochhe. Jara CAA chaiche na tara pakistani, jara ei sorkarer mithhe kothar protibaad korche tara Deshdrohi, je krishok ra Notun Krishok Aayeen er birodhita korche tara Kholisthani ei tokma deya hochhe. Somosto kichu jor kore chapiye debar chesta cholche. Sadharon manusher mot prokasher swadhinota kere niyeche ei sorkar. R gorur dudhe jara sona khuje pai tara bolche je Banglai naki o Bangalider e obodan besi. Jekhane NETAJI SUBHAS CH. BOSE, SWAMI VIVEKANANDA, ISWAR CH VIDYASAGAR,KHUDIRAM BOSUR moto manush sara prithibite Bangla totha sara Bharatborsho k onnotomo uchhotai pouche diyeche era tader sobai k osikar korche. Ei corporqte premi sarkar k utkhat kortei hobe je sorkar sadharon manush k bipoder mukhe thele dei. Sei sorkqr k manush jogyo jobab debei.

  • comment-avatar
    Tarak Chakraborty 5 years

    সমৃদ্ধ হলাম।।

  • comment-avatar
    ওয়ালিউল ইসলাম 5 years

    মিথ্যে যত প্রতিশ্রুতি ,
    মিথ্যে যত  মোহ–
    যাচ্ছে সরে; সারা দেশে
    প্রতিবাদ  বিদ্রোহ ।

    শয়তানি সব আইন বলে
    চাষীর ভাগে শূন্য
    জাগরণের এই মিছিলে
     দম্ভ সে সব  চূর্ণ ।

    মেহনতি সব জনতা
    নেমেছে রাজপথে
    জীবন বাজির এ লড়াই এ
    মিলছি জন স্রোতে ।

    রক্ত চক্ষু  আঁটুক যতই
    নতুন কালো ফন্দি
    এ জোয়ার কি যায় থামানো ?
    যতই করুক বন্দি ।

    জলকামান ও টিয়ার গ্যাস
    সামনে থেকে ভাগে
    শেকল ভাঙার এ সংগ্রামে
    নতুন ভারত  জাগে।।
    ওয়ালিউল ইসলাম ।

  • comment-avatar
    Sujoy chanda 5 years

    বাস্তব চিত্রটা তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।

  • comment-avatar
    রথীন্দ্র নাথ কুণ্ডু। 5 years

    এ রকম একটি কৃষি আন্দোলনে সত্যিই জনসমাজের যুক্ত হওয়া বিশেষ প্রয়োজন বলে মনে করি। আন্দোলনকে দীর্ঘস্থায়ী হলে তবেই আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যাবে।

  • comment-avatar
    dilip 5 years

    খুব প্রাসঙ্গিক আলোচনা। ভালো লাগলো।

  • comment-avatar
    Mrinmoy Sengupta 5 years

    খুব মূল্যবান বিশ্লেষণ। লেখককে ধন্যবাদ। তিনটি আইন বিচ্ছিন্ন নয়, এদের পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে। কর্পোরেটগুলি চুক্তি চাষের নামে নিজেদের মুনাফার লক্ষ্যে চাষ করাবে, ফসল কিনবে এবং ইছেমতো মজুত করবে ও দাম নির্ধারণ করবে। পরিণামে খাদ্য সঙ্কট হবে এবং জমিসহ প্রাকৃতিক সম্পদ কর্পোরেট দখলে যাবে। কৃষক শ্রমশক্তির বিক্রেতা হয় শ্রমের বাজারে ভিড় বাড়িয়ে শ্র
    ম সস্তা করবে। তাই অতিমারির সুযোগে শ্রম বিধি, পরিবেশ আইনে সংশোধন এসবও কৃষি আইনের থেকে বিচ্ছিন্ন নয়।
    সম্প্রতি আম্বানি, টাটাসহ বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠী খুচরো বাজারে ও অনলাইন ব্যবসায় বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। এদের সাথে অনলাইন ও খুচরা ব্যবসায় বহুজাতিক সংস্থাগুলির বন্ধন গড়ে উঠছে। বিগ বাজার অধিগ্রহণ নিয়ে আমাজন ও আম্বানির লড়াই চলছে। এদের দৃষ্টি কৃষিজ পণ্যের ওপর। তাই এই লড়াই কেবল কৃষকের নয়, ১ শতাংশ অতি ধনীর বিরুদ্ধে ৯৯ শতাংশ মানুষের।

  • comment-avatar
    Goutam 5 years

    Osadharon lekha

  • comment-avatar
    Goutam Guha 5 years

    Ekdom bastab chitra. Media Khub besi gurutwa diche na.

  • comment-avatar
    বিশু ভট্টাচার্য্য 5 years

    খুবই প্রাসঙ্গিক লেখা, সমৃদ্ধ হলাম

  • comment-avatar
    সুভাষ মুখোপাধ্যায় 5 years

    লেখাটি সন্দেহাতীতভাবে সুন্দর,যথাযথ ও ভাবায়। মধ্যসত্বভোগীদের অবস্থান আরো পরিস্কৃত হওয়া প্রয়োজন।

  • comment-avatar
    স্থবির দাশগুপ্ত 5 years

    ভালই লিখেছিস। মন্তব্যের দরকার নেই।
    আমার মনে হয়, এই ধরনের আন্দোলন এর আগে হয়নি। তাই এর গতিবিধি নিয়ে আগে থেকে কিছু বলা যাবে না। দেখে যেতে হবে, সেটাই শিক্ষা।

  • comment-avatar
    Sumit Das 5 years

    খুব ভালো লেখা। এই সরকার কাদের পক্ষে খুব পরিষ্কার করে দিচ্ছে প্রত্যেক দিন। দেশের মানুষ কবে যে বুঝবে একই সংগে আদানি আম্বানি এবং রামা কৈবর্ত রহিম শেখের উন্নতি হতে পারেনা।

  • comment-avatar
    Gautam Chaudhuri 5 years

    অসাধারণ লেখা–বলার কোনো মানে হয়না তাদের, যাদের হাত দিয়ে সাধারণ লেখা বের হয়না।
    আমার কি মনে হচ্ছে জানো? এক রুগীর অবস্থা ভালো না; রুগীর বাড়ির লোকেদের টাকা দিয়ে হাত করে এক শেঠ সেই রুগীকে বলল, তুমি বাঁচবেনা, বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট দেখাব? তুমি বেঁচে থাকতেই তাই আমরা তোমার কিডনি দুটো, লাঙস, হার্ট আর চোখ দুটো তুলে নেব। না না, একটুও লাগবেনা। বিনিময়ে ভালোই টাকা দেব তোমার বাড়ির লোকেদের। তুমি এখন আরামসে ঘুমাও।

  • comment-avatar
    Ashesh Raychaudhury 5 years

    খুবই দরকারি লেখা। লেখক সঠিকভাবে ফেডারেল স্ট্রাকচার ভেঙে ক্ষমতার কেন্দ্রীভবনের প্রচেষ্টার উল্লেখ করেছেন যেটা পুঁজির কেন্দ্রীভবনের সঙ্গে যুক্ত।সমাজের অন্যান্য অংশ এই সময়ে কৃষকের এই আন্দোলনে যুক্ত হওয়া অত্যন্ত আবশ্যক। সেই দিকেই সবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া জরুরী।

  • comment-avatar

    ডা জয়ন্ত ভট্টাচার্য মহাশয়ের প্রবন্ধ “নয়া কৃষি বিল ” এর বক্তব্য স্পষ্ট করে—
    1) মজুত বা অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনের সংশোধনী, আন্তঃরাজ্য কৃষি পণ্যের বাণিজ্য অবাধ করা এবং চুক্তি ভিত্তিক চাষ বর্তমান ভারতের অর্থ-সামাজিক নির্ভর কৃষি ব্যবস্থার পক্ষে তার স্বাস্থ্যোদ্ধার সম্ভব নয়।
    2)করপোরেট পুঁজি সবসময়ই জনকল্যাণমূলক অর্থনীতির পরিপন্থী। তার পক্ষে সম্ভব নয় কোন দেশের ভৌগোলিক অবস্থা, চাহিদা -যোগান এর তুল্যমূল্য বিচার করে পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক চাষ করা। মুনাফাই তার একমাত্র লক্ষ্য।
    3)কোন করপোরেট পুঁজি সবসময়ই তার পুঁজির নিরাপত্তা চায়। এদের স্বার্থ রক্ষার্থেই সরকারকে আইন প্রণয়ন করতে হয়। কৃষক বা আমজনতার স্বার্থে নয়।

  • comment-avatar
    গোরা 5 years

    এই সময়ের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ লেখা।দুর্ভাগ্য আমাদের কলেজ গুলো বন্ধ থাকায় ছাত্রদের একটা বিশাল সংখ্যা এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারছে না বা ছাত্রসমাজকে এর সঙ্গে শামিল করা যাচ্ছে না। যেটা না হলে শহুরে মধ্যবিত্তদের মধ্যে এর উত্তাপ পৌঁছনো কঠিন।
    খুব ভাল লিখেছ জয়ন্তদা,এর প্রয়োজন ছিল।

  • comment-avatar
    Prakash Thapa 5 years

    Sir , Well pointed out the entire Pandemic suffering by migrants people side by side the disasters socio economical side of Farmer’s life and how it will impact our daily . History has witnessed how capitalism effect the life of normal people and also how people has condemn it . Now time has came once again to re unite and fight back .

  • comment-avatar
    Swapna Roy 5 years

    The path to submerge any democratic protest , that the government of India has taken is treacherous, full of deceit , dishonesty & disregard for a democracy.
    The honourable path that the farmers adopted to protect the fairness in their profession & to keep price of food affordable for common people, was a difficult one for the government to negate. 
    So how to demolish the whole protest agenda – ????
    Keeping talks on going till the republic day 
    On republic day some BJP allied youths trespass the Red fort .
    And fly a saffron flag.
    It is the easiest way to tickle the sentiments of the whole Indian population of 137 crore …..
    Farmers dishonoured the Republic day …..
    Whole country will be against the farmers protest and it will be easiest way to ban the protest.
    But the question is- How on Earth farmers could tress pass into red fort , amidst the tightest security of the country?????
    Who wants to believe it ???
    The question remains open ….

  • comment-avatar
    Soumya Chakraborty 5 years

    Everything is well described. Excellent one sir.

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes